ইউক্রেনে মার্কিন দূতাবাসকর্মীদের পরিবারকে দেশে ফেরার নির্দেশ দিল অ্যামেরিকা। মার্কিন নাগরিকদেরও ফেরার অনুরোধ করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
যে কোনো মুহূর্তে রাশিয়া ইউক্রেনের উপর আক্রমণ চালাতে পারে। ফলে মার্কিন নাগরিকদের ইউক্রেন ছেড়ে চলে আসার অনুরোধ জানিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। তাদের ওয়েবসাইটে রোববার এই নির্দেশিকা জারি হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, মার্কিন নাগরিকরা যেন দেশে ফিরে আসেন। কোনোভাবেই যেন তারা ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে পর্যটন না করেন। ক্রিমিয়ার দিকেও যেন তারা না যান। দূতাবাসকর্মীদের পরিবারকে দেশে ফেরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দূতাবাসের কর্মীরাও চাইলে যে কোনো সময় দেশে ফিরতে পারেন বলে ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে। একইসঙ্গে ইউক্রেনে যাতে এই সময় কোনো মার্কিন নাগরিক ভ্রমণে না যায়, তার জন্য আলাদা নির্দেশিকা জারি হয়েছে।
রাশিয়া-ন্যাটো বৈঠকেও মেলেনি সমাধানসূত্র
ইউক্রেন সংকট সেই তিমিরেই। ন্যাটোর বৈঠকেও সমাধানসূত্র মেলেনি। রাশিয়ার সঙ্গে আরো আলোচনার প্রস্তাব ন্যাটো সদস্যদের।
ছবি: Benoit Doppagne/dpa/picture alliance
ঐতিহাসিক বৈঠক
২০১৯ সালে শেষবার ন্যাটোর দেশগুলির সঙ্গে বৈঠকে বসেছিল রাশিয়া। বুধবার ফের তারা ঐতিহাসিক বৈঠকে মিলিত হয়। এদিন ন্যাটোর ৩০টি সদস্য দেশের প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেন রাশিয়ার প্রতিনিধিরা।
ছবি: Olivier Hoslet/AFP
অধরা সমাধানসূত্র
ন্যাটো প্রধান জেন স্টলটেনবার্গ জানিয়েছেন, ইউক্রেনকে ঘিরে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সহজে তার সমাধানসূত্র খুঁজে পাওয়া মুশকিল। প্রথম আলোচনায় তা মিললেও আরো আলোচনার পরিসর তৈরি হয়েছে।
অ্যামেরিকা-সহ ন্যাটোর অভিযোগ, ইউক্রেন সীমান্তে যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি করে রেখেছে রাশিয়া। বিপুল পরিমাণ সেনা মজুত করা হয়েছে সেখানে। রাশিয়ার বক্তব্য, আত্মরক্ষার্থেই তারা সে কাজ করেছে। ইউক্রেনের বক্তব্য, আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করে ইউক্রেনের ভিতরে রাশিয়া সেনা মোতায়েন করেছে।
অ্যামেরিকা-সহ একাধিক পশ্চিমা দেশের দাবি, ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্যপদ দেওয়া হোক। রাশিয়া এর ঘোর বিরোধী। ন্যাটোর বৈঠকে তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, ইউক্রেনকে সদস্যপদ দিলে ফলাফল ভালো হবে না।
ছবি: Nick Connolly/DW
বৈঠকের আলোচনা
স্টলটেনবার্গ জানিয়েছেন, ইউক্রেনের সদস্যপদ, রাশিয়ার সেনা মজুত সব বিষয়েই বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। দুইপক্ষ একটি বিষয়ে সহমত হয়েছে। অস্ত্রের ব্যবহার কমাতে হবে। মিসাইলের ব্যবহার কমাতে হবে। শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমেই সমাধানসূত্র খুঁজতে হবে।
ছবি: Andriy Dubchak/AP Photo/picture alliance
অ্যামেরিকার প্রতিক্রিয়া
এদিনের বৈঠকের পর অ্যামেরিকার প্রতিনিধি জানিয়েছেন, রাশিয়া নিজের অবস্থানে অনড়। কিন্তু রাশিয়ার দাবি কাছে মাথা নত করা হবে না। আরো আলোচনার পক্ষে মত দিয়েছে অ্যামেরিকা।
সোভিয়েত আমলে ইউক্রেন ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ। পরবর্তী সময়ে তা রাশিয়া থেকে আলাদা হয়ে যায় এবং নতুন রাষ্ট্র তৈরি করে। সেই সময় থেকেই রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের বিতর্ক। বিত্রক আরো বাড়ে গত দশকে ক্রাইমিয়া রাশিয়া দখল করার পর। ইউক্রেনের দাবি, অবৈধভাবে রাশিয়া ক্রাইমিয়া দখল করেছে। অ্যামেরিকা এবং ন্যাটোর অধিকাংশ দেশ ইউক্রেনের সমর্থনে কথা বলেছে।
ছবি: AP Photo/picture alliance
তীব্র সংঘাত
এই পরিস্থিতিতে প্রবল বিতর্ক শুরু হয়েছে রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলির। জো বাইডেন এবং ভ্লাদিমির পুটিন একাধিক বৈঠক করেছেন। এবং একে অপরকে সতর্ক করেছেন। হুমকি পাল্টা হুমকির ঘটনা ঘটছে প্রায় রোজই। তারই মধ্যে ব্রাসেলসে ঐতিহাসিক বৈঠকে মিলিত হয়েছেন সকলে।
9 ছবি1 | 9
কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এই নির্দেশিকা জারি করে অ্যামেরিকা রাশিয়ার উপর আরো একটু চাপ বাড়ানোর চেষ্টা করেছে। বস্তুত, রোববার রাতে আরো একটি নির্দেশিকা জারি করেছে মার্কিন প্রশাসন। সেখানে রাশিয়া ভ্রমণের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি জারি হয়েছে। যে মার্কিন নাগরিকরা রাশিয়ায় আছেন, তাদের ফিরে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সীমান্ত অঞ্চলে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।
বাস্তব পরিস্থিতি
পশ্চিমা দেশগুলির বক্তব্য, রাশিয়া ইউক্রেন সীমান্তে এক লাখ সেনা মোতায়েন করেছে। যে কোনো সময় তারা ইউক্রেন আক্রমণ করতে পারে। রাশিয়া চেষ্টা করছে, ইউক্রেনে রাশিয়পন্থি পুতুল শাসক প্রতিষ্ঠা করার। যদিও রাশিয়া এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
আক্রমণ না চালালেও রাশিয়া ইউক্রেন সীমান্তে এক লাখ সেনা মোতায়েন করেছে। দুই দেশের মধ্যে চূড়ান্ত সংঘাতের আবহাওয়া তৈরি হয়ে আছে। পশ্চিমা দেশগুলি এবং অ্যামেরিকা ইউক্রেনের পাশে দাঁড়ানোর কথা জানিয়েছে। রাশিয়াকে সেনা সরানোর হুমকিও দেওয়া হচ্ছে বার বার।