রাশিয়া, ইউক্রেনের সরকার, পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদী – সব পক্ষই সংলাপ ও আপোশের ইঙ্গিত দিচ্ছে৷ জার্মানি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের গঠনমূলক ভূমিকার প্রশংসা করেছে৷
বিজ্ঞাপন
ইউক্রেন সংকটের ক্ষেত্রে মস্কোর সুর আচমকা নরম হয়ে উঠেছে৷ বৃহস্পতিবার মস্কোয় নিরাপত্তা ও সহযোগিতা সংগঠন ওএসসিই-র প্রধান দিদিয়ে বুর্কহাল্টার-এর সঙ্গে বৈঠকের পর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের রুশপন্থি বিদ্রোহীদের স্বাধীনতার প্রশ্নে আগামী রবিবার পরিকল্পিত গণভোট আয়োজন এই মুহূর্তে মুলতুবি রাখার ডাক দিয়েছেন৷ বিদ্রোহীরা অবশ্য জানিয়ে দিয়েছে, যে দুটি প্রদেশে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে৷ সেইসঙ্গে পুটিন এও জানিয়েছেন যে, ইউক্রেন সীমান্ত থেকে রুশ সৈন্য প্রত্যাহার করা হয়েছে৷ প্রেসিডেন্টের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, মস্কো চলতি মাসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিতে প্রস্তুত৷ তবে তার আগে দেশের পূর্বাঞ্চলে সামরিক অভিযান বন্ধ করতে হবে৷ সেইসঙ্গে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে সংলাপের পূর্বশর্তও জুড়ে দিয়েছে রুশ সরকার৷
ইউক্রেনে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব
তুমুল বিক্ষোভ চলছে ইউক্রেনে৷ সরকার ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ-র সঙ্গে একটি বাণিজ্য ও সহযোগিতা চুক্তি করতে অস্বীকৃতি জানানোর পর, রাস্তায় নেমে আসে বিরোধী দলের হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ সমর্থক৷
ছবি: Reuters
ইউরোপীয় ভবিষ্যতের জন্য লড়াই
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর সঙ্গে একটি বাণিজ্য ও সহযোগিতা চুক্তি করতে সরকার অস্বীকৃতি জানানোর পর থেকে ইউক্রেনে চলছে তুমুল বিক্ষোভ৷ বিক্ষোভকারীরা ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে সরে সরকারের রাশিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়ার প্রবণতা রুখতে বদ্ধপরিকর৷ দাবি আদায়ের লক্ষ্যে হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ জনতা নেমে এসেছে রাস্তায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সড়ক অবরোধ
সরকারি কর্মকর্তারা যাতে কার্যালয়ে যেতে না পারেন, সে জন্য কিয়েভের রাস্তা বন্ধ করে দিচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা৷ প্রচণ্ড শীতে রাতেও বিক্ষোভ জানাচ্ছেন বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা৷
ছবি: Reuters
ইনডিপেনডেন্ট স্কয়্যারে তাঁবুর শহর
কিয়েভের ইনডিপেনডেন্ট স্কয়্যারে এখন শত শত তাঁবু৷ শীতের কষ্ট সহ্য করে সেখানেই থাকছেন অনেকে৷ সারি সারি তাঁবু নয় বছর আগের কমলা বিপ্লবের কথা মনে করিয়ে দেয়৷সেবার কয়েক সপ্তাহ ধরে চলেছিল বিক্ষোভ৷ বিক্ষোভকারীরা এবারও শেষ দেখেই ঘরে ফিরতে চান৷
ছবি: DW/A. Sawizki
চা, কফি আর ইন্টারনেট
বিক্ষোভকারীদের সুবিধার্থে ক্যাফে আর বারগুলো থাকছে খোলা৷ শীতে জমে যাওয়ার উপক্রম হলেই তাঁরা পান করতে পারছেন চা, কফি কিংবা অন্য কোনো পানীয়৷ কোনো কোনো ক্যাফে আর বার-এ বিক্ষাভকারীদের থাকা এবং ওয়াইফাই-এ ইন্টারনেট ব্যবহারের ব্যবস্থাও রয়েছে৷
ছবি: DW/A. Sawizki
গীর্জায় আশ্রয়
সপ্তাহান্তে সবচেয়ে বেশি বিক্ষোভকারীর সমাবেশ হয়েছিল কিয়েভের সেইন্ট মাইকেল’স ক্যাথেড্রালের সামনে৷ সেখানেই রাত কাটিয়েছেন তাঁরা৷ অন্য গীর্জাগুলোও বিক্ষোভকারীদের আশ্রয় দেয়ার জন্য খোলা রাখা হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কে বেশি আগ্রাসী?
বিক্ষোভকারী আর পুলিশের মধ্যে এখন ব্যাপক উত্তেজনা৷ পুলিশ সংসদ ভবনের সামনের রাস্তা মুক্ত করার চেষ্টা করায় শুরু হয়ে যায় সংঘর্ষ৷ সপ্তাহান্তের এ সংঘর্ষে অনেকে আহত হন৷
ছবি: Reuters
‘আর নয় পুলিশি সন্ত্রাস’
পুলিশের বাধার প্রতিবাদ জানাতে একসময় বিক্ষোভকারীরা হাতে তুলে নেন ব্যানার, সেখানে লেখা ছিল, ‘আর নয় পুলিশি সন্ত্রাস’, ‘নিরাপত্তা বাহিনী আমাদের পুতে ফেলবে৷’
ছবি: DW/L. Grischko
ন্যাটোর সমালোচনা
বিক্ষোভকারীদের ওপর সরকারের অতিরিক্ত বল প্রয়োগের সমালোচনা করে বিবৃতি দিয়েছে ন্যাটো৷ রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ আবার সেই বিবৃতির সমালোচনা করে বলেছেন, ন্যাটোর বিবৃতি ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল৷ লাভরভ মনে করেন, বিক্ষোভকারীদের আগ্রাসী আচরণের মাত্রা না বুঝে এ বিবৃতি দেয়া হয়েছে৷
ছবি: GENYA SAVILOV/AFP/Getty Images
সরকারের অনাস্থা ভোট জয়
মিকোলা আজারভ সরকারের জনপ্রিয়তা অনেকটা কমে গেলেও সংসদে বিরোধী দলের তোলা অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে যে ভোটাভুটি হয়েছিল, তাতে তারা জয়ী হয়েছে৷ বিরোধী দল ২২৬ ভোট পেলে বিপদ হতো, কিন্তু সব মিলিয়ে ১৮৬ ভোট পাওয়ায় তাৎক্ষণিক বড় বিপর্যয় এড়াতে পেরেছে সরকার৷
ছবি: Reuters
শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রয়াস
কাউন্সিল অফ ইউরোপ, অর্থাৎ ইউরোপীয় পরিষদ এখন ইউক্রেনের ইউরোপপন্থি বিরোধী দল এবং সরকারের মধ্যে শান্তি ফেরানোর জন্য মধ্যস্ততা করার চেষ্টা করছে৷
ছবি: Reuters
10 ছবি1 | 10
সংকট কাটাতে সংলাপের কথা বলছে ইউক্রেনের সরকার ও পূবের বিচ্ছিন্নতাবাদীরাও৷ তবে সরাসরি ‘সন্ত্রাসবাদী'-দের সঙ্গে নয়, পূর্বাঞ্চলের রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে আলোচনা চায় কিয়েভ সরকার৷ তবে সশস্ত্র বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালু থাকবে৷ এদিকে এক বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা রুশ টেলিভিশনে বলেছেন, তাঁরাও ইউক্রেনের সরকারের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী৷
ইউক্রেন সংকটের ক্ষেত্রে পুটিনের সাম্প্রতিক গঠনমূলক ভূমিকার প্রশংসা করেছেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাংক ভাল্টার স্টাইনমায়ার৷ তবে মস্কোয় যা আলোচনা হয়েছে, অবিলম্বে তা কার্যকর করা প্রয়োজন৷ স্টাইনমায়ার আরও বলেন, পরিস্থিতি অত্যন্ত সংকটজনক বটে, তবে আরও হিংসা এড়াতে ও ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ যাতে পুরোপুরি হারিয়ে না যায়, তা নিশ্চিত করার সময় এখনো ফুরিয়ে যায়নি৷
ক্রাইমিয়া আগেই হাতছাড়া হয়ে গেছে৷ রুশপন্থি বিদ্রোহীদের তৎপরতার ফলে শেষ পর্যন্ত ইউক্রেন এবার দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে কিনা, পুটিনের সর্বশেষ বক্তব্য সত্ত্বেও তা নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে৷ এক সমীক্ষা অনুযায়ী ইউক্রেনের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ দেশের ঐক্য ও অখণ্ডতা বজায় রাখতে আগ্রহী৷ এমনকি পূর্বাঞ্চলের রুশ ভাষাভাষী মানুষের মধ্যেও প্রায় ৫৮ শতাংশ দেশ বিভাজনের বিপক্ষে৷ ওয়াশিংটন ভিত্তিক পিউ রিসার্চ সেন্টার গত ৫ থেকে ২৩শে এপ্রিল এই সমীক্ষা পরিচালনা করেছিল৷
এমন এক দিনেও উত্তেজনা পুরোপুরি কাটেনি৷ পুটিন ইউক্রেন সীমান্ত থেকে সেনা প্রত্যাহারের কথা বললেও ন্যাটোর প্রধান আন্ডার্স ফগ রাসমুসেন বলেছেন, তিনি তার কোনো লক্ষণ দেখতে পাচ্ছেন না৷ রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাঁকে ‘অন্ধ' হিসেবে বর্ণনা করেছে৷