রাশিয়া ইউক্রেনের উপর আক্রমণ চালালে অ্যামেরিকা কঠোরতম ব্যবস্থা নেবে বলে জানালেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন।
বিজ্ঞাপন
সুইডেনে মিলিত হয়েছেন ইউরোপের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। আছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীও। সেখানেই বৈঠকের ফাঁকে ইউক্রেন নিয়ে আলোচনা করেছেন মার্কিন এবং রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আলোচনার পর ব্লিংকেন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, রাশিয়াকে কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
কী বলেছেন ব্লিংকেন
ব্লিংকেনের বক্তব্য, রাশিয়া যেভাবে পূর্ব ইউক্রেনের সীমান্তে সেনা জড়ো করেছে, তা যে কোনো সময় ভয়াবহ চেহারা নিতে পারে। পূর্ব ইউক্রেনের কোনো কোনো এলাকায় ছোট ছোট সংঘর্ষ হয়েছে বলে মনেও জানা গেছে। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়া যদি উত্তেজনা বাড়ায়, তা হলে অ্যামেরিকা রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোরতম অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করবে বলে ব্লিংকেন জানিয়েছেন। কার্যত অর্থনৈতিক অবরোধের হুমকি দিয়েছেন তিনি। এর আগেও ইউক্রেন প্রসঙ্গে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিয়েছিল ওয়াশিংটন।
ছবিতে রুশ-ইউক্রেন দ্বন্দ্ব
কের্শ প্রণালী থেকে তিন ইউক্রেনীয় জাহাজ আটকের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয়েছে৷ এই দ্বন্দ্ব আর শুধু দুই দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, ইউরোপ ছাড়িয়ে এর উত্তাপ ছুঁয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেও৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Volskii
যেভাবে শুরু
ছবিতে দেখা যাচ্ছে রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডের সাথে ক্রাইমিয়া উপদ্বীপের সংযোগ স্থাপনকারী সেতুর ওপর রুশ জেট বিমান উড়ছে৷ ইউক্রেনের তিন কার্গো জাহাজ আটকের পর এভাবেই মহড়া দেয় রুশ বিমানবাহিনী৷
ছবি: Reuters/P. Rebrov
আটক জাহাজ
ইউক্রেনের জাহাজ তিনটি কৃষ্ণ সাগর থেকে কের্শ প্রণালী হয়ে আজভ সাগরে যাচ্ছিল৷ এক চুক্তি অনুযায়ী কের্শ প্রণালীতে রাশিয়া ও ইউক্রেন, দুই দেশেরই নিয়ন্ত্রণ রয়েছে৷ কিন্তু রাশিয়ার দাবি, বারবার সাবধান করা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক সীমা লঙ্ঘন করে রাশিয়ার সীমানায় ঢুকে পড়েছিল জাহাজগুলো৷
ছবি: Reuters/A. Dmitrieva
আটক নাবিক
জাহাজগুলোতে থাকা নাবিকদের আটক করেছে রুশ নৌবাহিনী৷ তাঁদের বিরুদ্ধে ক্রাইমিয়ার আদালতে অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ক্রাইমিয়ার সিম্ফারপোলে আদালতে এক আটক ইউক্রেনীয় নাবিককে নিয়ে যাচ্ছেন রাশিয়ার এফএসবির নিরাপত্তা সদস্য৷
ছবি: Reuters/P. Rebrov
ইচ্ছাকৃত উসকানি!
আদালতে শুনানিতে ইউক্রেনের নাবিক ইউরি বুদসিলোকে তাঁর আইনজীবীর সাথে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে৷ পুরো ঘটনার জন্য ইউক্রেন রাশিয়াকে দায়ী করলেও রুশ সেনাবাহিনীর দাবি, বারবার সাবধান করা সত্ত্বেও রুশ জলসীমায় ঢুকে পড়ে ইউক্রেনের জাহাজ৷ এই বক্তব্যের সমর্থনে আটক নাবিকদের স্বীকারোক্তিও প্রচার করা হয়েছে রুশ গণমাধ্যমে৷ তবে ‘ভয় দেখিয়ে’ এমন কথা বলতে নাবিকদের বাধ্য করা হয়েছে, দাবি ইউক্রেনের৷
ছবি: Reuters/P. Rebrov
মার্শাল ল’
রাশিয়ার ‘অনভিপ্রেত’ ও ‘আগ্রাসী’ মনোভাবের কড়া জবাব দেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পেট্রো পোরোশেংকো৷ তাঁর প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে রুশ সীমান্তের বেশ কিছু এলাকায় জরুরি অবস্থা জারি করেছে দেশটির পার্লামেন্ট৷ পাশাপাশি, আজভ সাগরে যুদ্ধজাহাজ পাঠাতে ন্যাটোকে আহ্বান জানিয়েছেন পোরোশেংকো৷
ছবি: Reuters/V. Ogirenko
প্রতিবাদ, বিক্ষোভ
জাহাজ আটকের ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে ইউক্রেনের জনগণের মধ্যে৷ বিশেষ করে উগ্র ডানপন্থি দলগুলো আয়োজন করেছে বিক্ষোভ কর্মসূচির৷ কিয়েভে পার্লামেন্ট ভবন এবং রুশ দূতাবাসের সামনে আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে ডানপন্থিরা৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে, রুশ দূতাবাসে ইউক্রেনের পতাকা ওড়ানোর চেষ্টা করছেন এক বিক্ষোভকারী৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Gimanov
6 ছবি1 | 6
রাশিয়ার বক্তব্য
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ইউক্রেনকে আক্রমণ করার পরিকল্পনা রাশিয়ার নেই। কিন্তু রাশিয়াকে নিজের দেশকে রক্ষা করতে হবে। ইউক্রেন যেভাবে সীমান্তে সেনা মোতায়েন করেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতেই রাশিয়া সীমান্তে সেনা বাড়িয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে এদিন ন্যাটোকে তুলোধোনা করেছেন রাশিয়ার মন্ত্রী। তার বক্তব্য, ইউক্রেনে শান্তি বজায় রাখার জন্য ন্যাটোকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, ন্যাটো তা করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ।
অ্যামেরিকাকেও পাল্টা হুমকি দিয়েছে রাশিয়া। তারা জানিয়েছে, সীমান্তে যাতে শান্তি বজায় থাকে, সে দিকে তাদের নজর আছে। কিন্তু অ্যামেরিকা যদি রাশিয়ার ভূরাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করে, তা হলে তার পরিনাম ভালো হবে না।
রাশিয়া-ইউক্রেন পরিস্থিতি
২০১৪ সালে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে একটি শান্তি চুক্তি সই হয়েছিল। তারপর থেকে দুই দেশ সেই অর্থে কোনো সংঘর্ষে জড়ায়নি। কিন্তু সীমান্তে উত্তেজনা আছে। দুই দেশই হাজার হাজার সেনা সীমান্তে মোতায়েন করেছে। পূর্ব ইউক্রেনে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষও হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দ্রুত শান্তির প্রস্তাব দিয়েছে অ্যামেরিকা। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের কথা বলেছে তারা।