ইউক্রেন নিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব ও রাশিয়ার মধ্যে আবারো শুরু হয়েছে বাকযুদ্ধ৷ থেমে নেই শক্তির প্রদর্শনীও৷ এরই মধ্যে রুশপন্থিরা পূর্ব ইউক্রেনের দোনেৎস্ককে স্বাধীন ঘোষণা করেছে৷
বিজ্ঞাপন
সপ্তাহান্তে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের দোনেৎস্ক, খারকিভ ও লুগানস্ক শহরের কয়েকটি সরকারি ভবন দখল করে নেয় রুশপন্থিরা৷ পরে দোনেৎস্ককে তারা স্বাধীন ঘোষণা করে সেখানে সৈন্য পাঠানোর জন্য রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের প্রতি আহ্বান জানায়৷
ইউক্রেনের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট বলেছেন, যারা ভবন দখলের কাজে লিপ্ত তাদের ‘সন্ত্রাসী' হিসেবে বিবেচনা করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে৷ ইতিমধ্যে খারকিভে অভিযান চালিয়ে ৭০ জন ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী'-কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে নিজের ফেসবুক পেজে জানিয়েছেন ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷
ক্রাইমিয়ায় সব শান্ত?
সবার মনোযোগ এখন ইউক্রেনের ক্রাইমিয়ার দিকে৷ ক্রাইমিয়ায় যা ঘটেছে তাকে রাশিয়ার আগ্রাসন বলা হলেও রুশ সেনাদের কিন্তু সাদরে গ্রহণ করে নিয়েছে স্থানীয়রা৷ ছবিঘরে দেখুন ক্রাইমিয়ার পরিস্থিতি৷
ছবি: DW/F. Warwick
কোসাকদের আগমন
রাশিয়ার ক্রাসনোডার থেকে এসেছে ২৫০ জনের মতো কুবান কোসাক৷ সামরিক বাহিনীর পোশাক পরেননি তাঁরা৷ সেভাস্টোপোলের রুশপন্থি কর্তৃপক্ষ কোসাকদের শপথ পাঠ করিয়েছে৷ স্বেচ্ছাসেবী কোসাকরা জানিয়েছে, ক্রাইমিয়াবাসীদের রক্ষা করার জন্য তারা স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে কাজ করবে৷
কুবান কোসাকরা সেভাস্টোপোলের পুলিশের সঙ্গে টহলে অংশ নিচ্ছে৷ মাথায় উলের টুপি পরে রবি বার থেকে রাস্তায় টহল দিচ্ছে কোসাকরা৷ ২০০৫ সালে এথনিক সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী এবং শক্তিশালী সামরিক শক্তি হিসেবে কোসাকদের স্বীকৃতি দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন৷
ছবি: DW/F. Warwick
কঠিন সময়ে নিরাপত্তা
রাশিয়া এবং ক্রাইমিয়ার টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন কোসাকদের নেতা কর্নেল সের্গেই সাভোনিন ইউরিয়েভিচ৷ তিনি বলেন, কোসাকরা সেভাস্টোপোলের মানুষদের রক্ষা করার জন্য এসেছে৷
ছবি: DW/F. Warwick
‘স্বায়ত্তশাসন, বিচ্ছিন্নতাবাদ নয়’
ক্রাইমিয়ায় অনেকের হাতেই দেখা যায় ক্রাইমিয়া এবং রাশিয়ার পতাকা৷ এর অর্থ এই নয় যে, ক্রাইমিয়া ইউক্রেন থেকে আলাদা হয়ে গেছে৷ সেভাস্টোপোলের এই তরুণ-তরুণীরা জানালেন, তাঁরা ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ চাননা, কেননা ইউক্রেনকে তাঁরা ভ্রাতৃপ্রতীম রাষ্ট্র মনে করেন৷ তাঁদের দাবি একটাই – স্বায়ত্তশাসন এবং এথনিক রুশ হিসেবে প্রাপ্য মর্যাদা৷
ছবি: DW/F. Warwick
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি?
এই প্রবীণ এসেছেন কোসাকদের সমর্থন জানাতে৷ রাশিয়ার প্রতি তাঁর পূর্ণ সমর্থন রয়েছে৷ পরনে রুশ সেনাবাহিনীর মতো কমলা আর কালো রংয়ের পোশাক৷ তিনি নিজেও সোভিয়েত ইউনিয়নের রেড আর্মির সাবেক কর্মকর্তা৷
ছবি: DW/F. Warwick
রাস্তায় তল্লাশি
সিমফারোপোল এবং সেভাস্টোপোলের মাঝের হাইওয়েতে গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে রুশপন্থি বেসামরিক বাহিনীর সদস্যরা৷
ছবি: DW/F. Warwick
ব্যবসার জন্য খারাপ সময়?
লিলিয়া ভজনুক একজন স্যুভেনির বিক্রেতা৷ রাবারের তৈরি মুখোশগুলোর মধ্যে পুটিনের চেহারার মুখোশটার এখন দারুণ কাটতি৷ তবু খুব চিন্তায় আছেন লিলিয়া৷ চলমান সংকট ব্যবসার বড় রকমের ক্ষতি করবে বলে আশঙ্কা তাঁর৷
ছবি: DW/F. Warwick
হৃদয়-মন জয় করেছে তাঁরা
সেভাস্টোপোলে গেলেই ব্ল্যাক সি ফ্লিট অঁসম্বল-এর কনসার্ট দেখতে পাবেন৷ নাচ-গানের এই স্থানীয় সংগঠনটি তাদের পরিবেশনা দিয়ে সবার মন জয় করেছে৷ রুশ লোকসংগীতে সাগরের প্রশংসা করে যেসব গান রচনা করা হয়েছে মূলত সেগুলোই পরিবেশন করে ব্ল্যাক সি ফ্লিট অঁসম্বল৷ রাশিয়ার ঐতিহ্যবাহী ইয়াব্লোচকো বা ‘ছোট্ট আপেল’ নাচটা সত্যই মনোমুগ্ধকর৷
ছবি: DW/F. Warwick
চাই শুধু স্বায়ত্তশাসন
সেভাস্টোপোলের অধিকাংশ মানুষই রুশ জাতীয়তাবাদের সমর্থক৷ ইউক্রেনীয়দের তারা অবিশ্বাস করে, মনে করে ইউক্রেনীয়রা চরম ডানপন্থি৷ সেভাস্টোপোলের মানুষ মনে করে রুশ বাহিনীর উপস্থিতি এ অঞ্চলের স্বায়ত্তশাসন এবং নিরাপত্তার রক্ষাকবচ৷
ছবি: DW/F. Warwick
10 ছবি1 | 10
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য রাশিয়া দায়ী৷ হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জে কার্নে বলেন, ভবন দখলের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের অনেকেই ঐ অঞ্চলে বাস করে না এবং তাদের অর্থের বিনিময়ে কাজে লাগানো হয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে৷ তিনি ইউক্রেনে ‘অস্থিরতা' তৈরির চেষ্টা থেকে রাশিয়াকে বিরত থাকার আহ্বান জানান৷ নইলে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা জারি হতে পারে বলেও হুমকি দেন৷
রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে৷ মঙ্গলবার রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ইউক্রেন যদি পূর্বাঞ্চলে শক্তি প্রয়োগ করে, তবে তা গৃহযুদ্ধের দিকে রূপ নিতে পারে৷
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ মনে করেন, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের অধিবাসীরা যে দাবি জানাচ্ছে ভাষাগত, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক-অর্থনৈতিক কারণে সেটা বৈধ৷ শক্তি প্রয়োগ করে তাঁদের (অধিবাসীদের) এই দাবির প্রতি প্রতিক্রিয়া জানানো ইউক্রেনের অবশ্যই উচিত নয় বলেও মন্তব্য করেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী৷
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়, ইউক্রেন মার্কিন বেসরকারি নিরাপত্তা কর্মীদের নিয়োগ দিয়েছে যারা ইউক্রেনের বিশেষ বাহিনীর পোশাক পরে কাজ করছে৷ ঐ নিরাপত্তা কর্মীরা ‘গ্রেস্টোন লিমিটেড' সংস্থার বলেও বিবৃতিতে দাবি করা হয়৷
এদিকে ইউক্রেন পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে ন্যাটো মহাসচিব আন্ডার্স ফগ রাসমুসেন ইউক্রেন সীমান্ত থেকে সৈন্য সরিয়ে নিতে রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷