1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশের শঙ্কা

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২

ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর প্রথম দিনেই বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ১০০ মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে৷ বাংলাদেশেও কি ইউক্রেন পরিস্থিতির প্রভাব পড়তে পারে?

ইউক্রেনে সরাসরি সামরিক অভিযানের ঘোষণা রাশিয়ার
ইউক্রেনে সরাসরি সামরিক অভিযানের ঘোষণা রাশিয়ার৷ ছবি: Efrem Lukatsky/AP Photo/picture alliance

বাংলাদেশে গত নভেম্বরে সর্বশেষ জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর পরিবহণ ভাড়াসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যায়। তার ধাক্কা সামলাতে লাগরিকরা হিমসিম খাচ্ছেন৷ ইউক্রেন পরিস্থিতির কারণে তেলের দাম যদি বেড়ে যায় তাহলে পরিস্থিতি আরো জটিল হওয়ার আশঙ্কা আছে৷

বিশ্ব বাজারে বৃহস্পতিবার  প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেলের দাম ১০২. ৩২ ডলারে উঠেছে৷ বুধবার ছিল ৯৯ ডলার৷ আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাস ও স্বর্ণের দামও বাড়ছে৷ তাছাড়া গত কয়েক মাস ধরেই বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম ছিল ঊর্ধ্বমুখী৷

তবে এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো কোনোভাবেই ঠিক হবে না বলে মনে করেন সিপিডির অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম৷ তার মতে, ‘‘এতে চরম অস্থিরতার সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা আছে। কিছু ব্যবসায়ী যে-কোনো অজুহাতে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ানো জন্য বসে থাকেন৷ তেলের দাম বাড়ানো হলে সেটাকে ইস্যু করে সব জিনিসের দাম বাড়িয়ে দেবে তারা৷ গত নভেম্বরে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর কী পরিস্থিতি হয়েছিল, আমরা তা দেখেছি৷’’

পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য ভর্তুকি বাড়াতে হবে: ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম

This browser does not support the audio element.

তার মতে, ‘‘সরকারকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য ভর্তুকি বাড়াতে হবে। এজন্য সরকারকে প্রয়োজনে ঋণ করতে হবে৷ সরবার এডিবি, বিশ্বব্যাংক, অথবা সৌদি আরব, কাতার থেকে দ্বিপক্ষীয় ঋণ নিতে পারে৷ এর আগেও সরকার নিয়েছে৷’’

আর গ্যাসের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘‘আমরা শুধুমাত্র এলএনজি আমদানি করি৷ সেটার দাম বাড়ানোও ঠিক হবে না। সরকার এখন সেবাখাতে তার পাওনা টাকা আদায় করেও তা দিয়ে ভর্তুকি দিতে পারে৷’’

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, ‘‘আমরা কৃষি ক্ষেত্রে ভর্তুকি দিয়ে সুফল পেয়েছি। এখন এই পরিস্থিতিতেও আমাদের জ্বালানি তেলে ভর্তুকি দিতে হবে৷ আর তেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে তিন মাসও হয়নি। তার জের এখনো চলছে৷ তাই নতুন করে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ালে সরকার যে টাকা পাবে, তার চেয়ে ক্ষতি হবে অনেক বেশি৷’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘সরকার যে গ্যাস ও বিদ্যুৎ খাতে ভতুর্কি কমাতে চায় তা-ও পরিকল্পনা করে করতে হবে। অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি কমাতে পারলে এখানে ভর্তুকির চাপ কমবে৷’’

ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এবং অধ্যাপক শামসুল আলম মনে করেন এখন বাজার মনিটরিংও বাড়াতে হবে৷ কারণ, ‘‘অসাধু ব্যবসায়ীরা যে কোনো অজুহাত দেখিয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিতে পারে৷’’

তবে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ মনে করেন, ‘‘এই যুদ্ধ পুরো ইউক্রেন জুড়ে না-ও ছড়াতে পারে। এটা কয়েকটি এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকতে পারে। সেটা হলে এখন জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশ সরকারের এখন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখা দরকার৷’’

আর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, ‘‘ইউক্রেন পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কোনো প্রভাব পড়বে কিনা এ বিষয়ে এখনো মন্তব্য করার সময় আসেনি। তবে এর কারণে জ্বালানিসহ অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়বে৷ এর প্রভাব শুধু বাংলাদেশ নয়, অন্যান্য দেশের ওপরেও পড়বে৷’’

ইউক্রেনে বাংলাদেশিদের অবস্থা

ইউক্রেনে বাংলাদেশের কোনো দূতাবাস নেই৷ পোল্যান্ড থেকে ইউক্রেনে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের দূতবাস সহায়তা দেয়া হয়৷ কিয়েভ থেকে বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টার দিকে পোল্যান্ড সীমান্তের দিকে যাওয়ার সময় সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশি ইউসুফ হোসেন জানান, ‘‘আমরা কেউই ভাবতে পারিনি এভাবে হামলা হবে। ভেবেছি হুমকির মধ্যেই সীমবদ্ধ থাকবে৷ এখন সবাই আতঙ্কে আছে৷ পোল্যান্ডে আমাদের দূতাবাস থেকে মেসেজ দিয়ে পোল্যান্ড সীমান্ত এবং হামলার বাইরের শহরগুলোতে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে৷ পোল্যান্ড সীমান্ত খুলে দেয়া হয়েছে বলে আমাদের  জানানো হয়েছে৷’’

আমরা কেউই ভাবতে পারিনি এভাবে হামলা হবে: ইউসুফ হোসেন

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন, কমপক্ষে ১০ হাজার বাংলাদেশি আছেন, যাদের মধ্যে ছাত্র বেশি৷ তাদের বড় একটি অংশ কিয়েভে থাকেন। এখন সবাই সীমান্তের দিকেই যাচ্ছেন৷ তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘পরিস্থিতি খুব খারাপ না হলে আমি ইউক্রেন ছাড়তে চাই না। কারণ, আমি এখানেই প্রতিষ্ঠিত হতে চাই৷’’

এদিকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আমাদের কাছে যতটুকু খবর আছে, প্রায় ৫০০ জন বাংলাদেশি সেখানে (দনেৎস্ক) অবস্থান করছেন৷ এর মধ্যে প্রায় ২৫০ জনকে নিয়ে  একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে। তাদের সঙ্গে আমাদের পোল্যান্ড মিশন সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে৷’’

তিনি জানান, ‘‘ইউক্রেন থেকে পোল্যান্ড সীমান্ত পর্যন্ত বাংলাদেশিদেরকে নিজস্ব ব্যবস্থায় আসতে হবে। পোল্যান্ডে বেশ কয়েকটি জায়গায় তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷ সেখান থেকে তাদেরকে বিশেষ বিমান পাঠিয়ে দেশে আনা যায় কিনা, সেটি আমরা আলোচনা করছি৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ