সে যুদ্ধের নানা ফলশ্রুতি: ওলন্দাজ চাষিরা তাঁদের রাশিয়ায় রপ্তানি না হওয়া ফলমূল, শাকসবজি ঢালছেন মাঠে; অন্যদিকে আগামী শীতে রাশিয়া থেকে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হতে পারে, আভাস দিলেন ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী৷
বিজ্ঞাপন
আরো অনেক আছে৷ বুধবার ইউক্রনের এক সামরিক মুখপাত্র জানান, একদল রুশ সৈন্য সাঁজোয়া গাড়ি ও ট্রাক নিয়ে সীমান্ত পার হয়ে পূর্ব ইউক্রেনের আমভ্রোসিয়িভকা শহরে প্রবেশ করেছে৷ নয়ত রাশিয়াপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নতুন সাফল্যের খবরই পাওয়া গিয়েছে: বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মূল ঘাঁটি দোনেৎস্ক-এর দক্ষিণে স্টোরেবেশেভো প্রদেশে ১৩০ জন সরকারি সৈন্য বিদ্রেহীদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে বলে খবর দিয়েছে রুশ ইন্টারফ্যাক্স সংবাদ সংস্থা৷ ইতিপূর্বে বিদ্রোহীরা দাবি করে যে, তারা ইলোভাইস্ক জংশন থেকে সরকারি সৈন্যদের বিতাড়ন করতে সমর্থ হয়েছে৷ এই জংশন স্টেশনটি ছিল এ অঞ্চলে সরকারি সৈন্যদের শেষ খুঁটি৷
ইউক্রেনের তরফ থেকে খবরটা অবশ্য একটু আলাদা: সামরিক মুখপাত্র আন্দ্রিই লিসেঙ্কো জানিয়েছেন যে, হরলিভকা এবং তারও উত্তরের ইলোভাইস্ক শহরকে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ২০০ জন বিচ্ছিন্নতাবাদী নিহত হয়েছে, সরকারি সৈন্যরা বিদ্রোহীদের একাধিক ট্যাংক ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রণালী ধ্বংস করেছে৷ বিগত ২৪ ঘণ্টার যুদ্ধে ১৩ জন ইউক্রেনীয় সৈন্য নিহত ও ৩৬ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন লিসেঙ্কো৷ এ হলো বুধবারের খবর৷ তাহলে মঙ্গলবার যে বেলারুসের রাজধানী মিনস্ক-এ ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট পোরোশেঙ্কোর সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের অত ঘটা করে সাক্ষাৎ হলো, তার কি কিছুই ফলশ্রুতি হয়নি?
২০১৪ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের চ্যালেঞ্জ
ইইউ অঞ্চলের বিদ্যমান সংকট নিরসনে নতুন বছরে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হবে৷ ছবিঘরে সেসব বিষয় সম্পর্কে একটু ধারণা নেয়া যাক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নির্মাণাধীন ভবন
ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিনিয়ত বদলাচ্ছে৷ গড়ে উঠছে নতুন নতুন ভবন৷ ভবন নির্মাণের সময় প্রচুর শব্দ হয়, ধুলাও হয় প্রচুর৷ আর্থিক দিকটা দেখে নির্মাণ প্রতিষ্ঠান আর নির্মাণ শ্রমিকরা নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করেন, আশপাশের এলাকাবাসীর সব রকমের ঝামেলাই মেনে নিতে হয়৷
ছবি: DW
ইউরোপীয়দের আছে বিকল্প
চলমান সংকটের সময় ইইউ-র নানা কর্মসূচিকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে কর্মসূচির কার্যকারীতা নিয়েও সন্দেহ পোষণ করা হয়েছে৷ মে মাসে অনুষ্ঠেয় ইউরোপীয় নির্বাচনেও এর প্রভাব দেখা যেতে পারে৷ গত কয়েক বছর ধরে নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি কমছিল৷ কিন্তু এবার ভোটারদের অংশগ্রহণ বাড়াতে বিভিন্ন ধরণের উদ্যোগ নিচ্ছে ইইউ পার্লামেন্ট৷ এমনকি টেলিভিশনে বিতর্কের মাধ্যমেও অংশগ্রহণ বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে৷
ছবি: Getty Images
ইউরোপীয় বিস্ময়?
ইইউ-র সংশয়বাদী অংশগুলো নিজেদের ভোট বাড়ানো জন্য উঠেপড়ে লেগেছে৷ ব্রিটেনের ইউকে ইন্ডিপেনডেন্ট পার্টি, ফ্রান্সের ন্যাশনাল ফ্রন্ট কিংবা জার্মানির অল্টারনেটিভ ফর ডয়েচলান্ড – সবাই চায় ‘স্বল্প ইউরোপ’৷ প্রশ্ন হলো, তারা কি একটি স্থিতিশীল প্যান-ইউরোপিয়ান জোট গড়তে পারবে?
ছবি: picture alliance/ZUMA Press
সংকট ব্যাবস্থাপনা
কয়েক বিলিয়ন বেইলআউট সংকটাপন্ন ইউরোপে কিছুটা স্থিতিশীলতা এনেছে৷ আর্থিক অনুদান এবং সংস্কার কর্মসূচির মাধ্যমে আয়ারল্যান্ড ইইউ-র বিশেষ অর্থায়নের সহায়তা ছাড়াই চলতে পারছে৷ অন্য দেশগুলোতেও কৃচ্ছতা সাধন এবং আর্থিক সংস্কার কর্মসূচিতে কঠোরতা আসার অপেক্ষায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সংকট নিরসনে অলৌকিকের সহায়তা?
সংকট নিরসনের আগে কারণটা জানতে হয়৷ ইইউ অঞ্চলে ব্যাংকিং ব্যবস্থার দুর্বলতা দূর করার চেষ্টা চলছে৷ যেসব ব্যাংকের অস্তিত্ব বিপন্ন, তাদের কখনোই দেশের অর্থনৈতিক সংকট চরমে তোলার মতো পদক্ষেপ নেয়া উচিত নয়, নাগরিকদের উচিত নয় করের টাকায় ব্যাংকগুলোকে বেইলআউটের দিকে এগিয়ে দেয়া৷ প্রস্তাবিত ব্যাংকিং ইউনিয়ন গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেউলিয়া হওয়া থেকে বাঁচাতে ইইউকে আগেই হস্তক্ষেপ করার সুযোগ দেবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চাকুরি প্রত্যাশীদের জন্য সুখবর
ইইউ অঞ্চলের ২ কোটি ৬০ লাখেরও বেশি বেকারের জন্য পরিস্থিতি কিছুটা ভালো হতে পারে৷ অতীতে সংকটের সময় কর্মহীনদের কাজ দেয়ার ব্যাপারে সহায়তা না করায় কঠোর আর্থিক পরিকল্পনা এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের সমালোচনা হয়েছে৷ এবার ব্রাসেলস থেকে সাহায্যের হাত বাড়ানো হবে, সংকটাপন্ন দেশগুলোর তরুণদের সহায়তা করবে ইইউ-র বিভিন্ন কর্মসূচি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চাই আরো প্রতিযোগিতার মনোভাব
বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে ইইউ অঞ্চলের অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করতে হবে৷ এ লক্ষ্যে উন্মুক্ত অভ্যন্তরীণ বাজার এবং তৃতীয় দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্যকে উৎসাহিত করার কথা ভাবছে ইউরোপীয় কমিশন৷ এছাড়া ইইউ-র সংকটগ্রস্ত সদস্য দেশগুলোকে নিজ নিজ সমস্যা সমাধানে অবশ্যই আরো বেশি উদ্যোগী হতে হবে৷
ছবি: Getty Images
তথ্য নিরাপত্তা ২.০
ইইউ অঞ্চলে দু’বছর পর্যন্ত সবার টেলিফোন এবং ইন্টারনেট তথ্যের রেকর্ড রাখা আইনসম্মত৷ তবে এক্ষেত্রে পরিবর্তন আসতে পারে৷ ইউরোপীয় কোর্ট অফ জাস্টিস এ বছরের শুরুতেই তথ্য ধারণ সংক্রান্ত আইনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে৷ বিচারকদের অনেকেই মনে করেন, দীর্ঘমেয়াদে তথ্য ধারণ করে রাখলে মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়৷ তাই তথ্য ধারণ সংক্রান্ত প্রচলিত নিয়মে পরিবর্তন আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
ছবি: CC-BY-Verena Hornung 3.0
অভিবাসন নীতিমালা
ইইউ অঞ্চলে শরণার্থী এবং রাজনৈতিক আশ্রয় বিষয়ক নীতিমালা নিয়ে বিতর্ক চলছে৷ ২০১৩ সালের অক্টোবরে ইউরোপে উন্নত জীবনের আশায় এসে ৩৬০ জন আফ্রিকান অভিবাসী ভূমধ্যসাগরে ডুবে মরার পর, ইইউ-র অভিবাসন নীতিমালা পড়েছে তোপের মুখে৷ নতুন বছরে ইইউ তাই অভিবাসন প্রত্যাশীদের মূল দেশ এবং ট্র্যানজিট দেশের সঙ্গে সহযোগীতা বৃদ্ধিতে উদ্যোগী হবে৷ এক্ষেত্রে উল্লেখিত দেশগুলোকে আরো বেশি উন্নয়ন সহায়তা দেয়ার কথাও ভাবছে ইইউ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
9 ছবি1 | 9
দুই নেতা অন্তত তথাকথিত ‘সংযোগ গোষ্ঠী'-র সঙ্গে পুনরায় আলোচনা শুরু করার অভিপ্রায় ঘোষণা করেছেন – যে ‘কন্ট্যাক্ট গ্রুপ'-এ উভয় দেশ ছাড়া ওএসসিই-ও আছে৷ এছাড়া রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে জ্বালানি সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনাও নাকি শীঘ্র পুনরায় চালু হবে৷ কিন্তু মঙ্গলবার গভীর রাতে দুই নেতা যে প্রেস ব্রিফিং দিয়েছেন, তাতে মতৈক্যের চেয়ে মতানৈক্যই বেশি পরিলক্ষিত হয়েছে৷ পুটিন জানান যে, মস্কো যুদ্ধবিরতি সম্পর্কে কিয়েভ-এর সঙ্গে কোনোরকম আলাপ-আলোচনায় যাবে না, কেননা সংঘাতটা ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার৷ অপরদিকে পোরোশেঙ্কো বলেছেন, ওএসসিই-এর তত্ত্বাবধানে যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে উভয় দেশের মধ্যে আলোচনা হবে৷ পুটিন এ কথার কোনো উল্লেখ করেননি৷
এই বুধবারেই আবার পোলিশ প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টুস্ক বলেছেন, রুশ সৈন্যরা যে পূর্ব ইউরোপের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করছে, পোলিশ গুপ্তচর বিভাগের কাছে তার প্রমাণ আছে৷ ওলন্দাজ খামারচাষি এবং খাদ্য রপ্তানি সংস্থাগুলির কাছে সে যুদ্ধ এখন ঘরে এসে পড়েছে: ইউরোপ থেকে খাদ্য আমদানির উপর রুশ নিষেধাজ্ঞার ফলে হল্যান্ডের কৃষি কোম্পানিগুলোকে এই বুধবার থেকে ক্ষতিপূরণের আবেদন করতে হচ্ছে৷ ওদিকে ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী আর্সেনি ইয়াৎসেনিয়ুক নাকি জানতে পেরেছেন যে, রাশিয়া এই শীতে ইউরোপ অভিমুখে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখার পরিকল্পনা করছে৷ অর্থাৎ গরম যুদ্ধ ইউক্রেনে হলেও, এ শীতে ইউরোপের মানুষদের হিটিং বিহীন ঠান্ডা যুদ্ধের মোহড়া নিতে হতে পারে৷