ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেখা দেয়া খাদ্য ও জ্বালানি সংকটের কারণে বিশেষ করে দেশগুলোতে ‘পারফেক্ট স্ট্রম', অর্থাৎ ভয়াবহ ঝড়ের আভাস দেখছে জাতিসংঘ৷
বিজ্ঞাপন
তাই অতি সত্ত্বর ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস৷
বুধবার নিউইয়র্কে ‘গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপ অন ফুড, এনার্জি অ্যান্ড ফিনান্স'-এর প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়৷ এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘‘যুদ্ধের প্রভাব সারা বিশ্বেই পড়ছে৷ প্রভাবটা পড়ছে পদ্ধতিগতভাবে৷খাদ্য খাদ্য এবং জ্বালানির ঘাটতি আর অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছেন বিশ্বের অন্তত ১৭০ কোটি মানুষ, যাদের এক তৃতীয়াংশই এখন দারিদ্র্যে দিন কাটাচ্ছেন৷''
গুতেরেস বলেন, এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্তত ৩৬টি দেশ ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত, কারণ ওই ৩৬টি দেশ তাদের গমের চাহিদার অর্ধেকই রাশিয়া এবং ইউক্রেন থেকে আমদানি করে৷
বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিতে ইউক্রেনে রুশ হামলার প্রভাব
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর বেশিরভাগ দেশে খাবার এবং ভোজ্য তেলের দাম বেড়েছে৷ বিক্ষুব্ধদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে অনেক দেশে৷ একটা হামলা সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে কীভাবে প্রভাব বিস্তার করছে, দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: Dong Jianghui/dpa/XinHua/picture alliance
জিনিসপত্রের দাম মারাত্মক বেশি
রুশ হামলার ফলে জার্মানির মানুষরা খুব ভুগছেন৷ জিনিসপত্রের দাম আচমকা অনেকটা বেড়ে গেছে৷ ১৯৮১ সালের পর চলতি বছরের মার্চে এত বেশি পরিমাণে মূল্যবৃদ্ধির সাক্ষী রইলো জার্মানি৷ দেশটি এখনো রাশিয়ার গ্যাস এবং তেলের উপর অনেকটাই নির্ভরশীল৷
ছবি: Moritz Frankenberg/dpa/picture alliance
প্রভাব পড়েছে সুদূর কেনিয়ায়
নাইরোবির একটি পেট্রল পাম্পের ছবি৷ সারি বেঁধে গাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে৷ জ্বালানির দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে সারা বিশ্বজুড়ে৷ খাবারের দাম বেড়েছে, খাবারের জোগানও কমেছে৷ কেনিয়ায় জাতিসংঘের দূত মার্টিন কিমানি নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন৷
ছবি: SIMON MAINA/AFP via Getty Images
তুরস্কে কে সরবরাহ করবে?
বিশ্বে বৃহত্তম গম উৎপাদনকারী দেশ রাশিয়া৷ রাশিয়া থেকে আমদানি নিষিদ্ধ করায় অনেক দেশে রুটির দাম বেড়ে গেছে৷ তুরস্কে সরবরাহে ঘাটতি দেখা গিয়েছে৷ ইউক্রেন সারা বিশ্বে প্রথম পাঁচটি গম উৎপাদনকারী দেশের তালিকায় রয়েছে, কিন্তু যুদ্ধের ফলে কৃষ্ণসাগর সংলগ্ন বন্দর দিয়ে শস্য আমদানি করা তাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব৷
ছবি: Burak Kara/Getty Images
ইরাকে বাড়ছে দাম
ছবিতে দেখা যাচ্ছে, বাগদাদের জামিলা মার্কেটে এক কর্মী বস্তা বস্তা আটা সাজিয়ে রাখছেন৷ ইউক্রেনে রুশ হামলার পর ইরাকের বাজারে গমের দাম আকাশছোঁয়া৷ সারা পৃথিবীর গম ব্যবসার প্রায় ৩০ শতাংশই রাশিয়া এবং ইউক্রেনের দখলে৷ ইরাক এই যুদ্ধে নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে৷ তবে পুটিনের সমর্থনে পোস্টারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে৷ যুদ্ধের প্রভাবে জ্বালানি এবং বিদ্যুতের দামেও প্রভাব পড়ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিতে৷
ছবি: Ameer Al Mohammedaw/dpa/picture alliance
লিমায় প্রতিবাদ
সম্প্রতি পেরুর রাজধানী লিমায় পুলিশের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সংঘর্ষ হয়েছে৷ খাবারের দাম বৃদ্ধির কারণে বিক্ষোভ দেখান তারা৷ ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পরই খাবারের দাম অনেকটা বেড়ে গিয়েছে৷
ছবি: ERNESTO BENAVIDES/AFP via Getty Images
শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা
চরম অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে শ্রীলঙ্কা৷ দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পেট্রোল, ডিজেলের মূল্য ২৫ শতাংশ বেড়ে যায় দেশটিতে৷ বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি, হাসপাতালে অপ্রতুল ওষুধ– সবমিলিয়ে রাজধানী কলম্বোয় রাষ্ট্রপতির দপ্তরের সামনে প্রতিবাদে অংশ নেন অসংখ্য মানুষ৷ জরুরি অবস্থা জারি করেন প্রেসিডেন্ট৷ এই পরিস্থিতিতে ভারত ও চীনের কাছে আর্থিক সহায়তা চেয়েছে শ্রীলঙ্কা৷
ছবি: Pradeep Dambarage/Zumapress/picture alliance
প্রভাব পড়েছে স্কটল্যান্ডেও
যুদ্ধের ফলে খাবার এবং তেলের দাম বেড়েছে স্কটল্যান্ডেও৷ ব্রিটেনজুড়েও শ্রমিক সংগঠনগুলি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানাচ্ছে৷ ব্রেক্সিটের ফলে এমনিতেই ব্রিটেনে থাকা-খাওয়ার খরচ অনেকটা বেড়ে গিয়েছিল৷ ইউক্রেনে রুশ হামলার ফলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে৷
ছবি: Jeff J Mitchell/Getty Images
মাছের দাম কেমন?
নিজেদের জাতীয় খাবার নিয়ে যথেষ্ট চিন্তায় পড়েছে যুক্তরাজ্য৷ পরিসংখ্যান বলছে, বছরে প্রায় ৩৮ কোটি ‘ফিস অ্যান্ড চিপস’ খায় ব্রিটিশরা৷ কিন্তু রাশিয়া এবং ইউক্রেনের এই টালমাটাল পরিস্থিতির ফলে জোগানে টান পড়েছে৷ কঠোর নিষেধাজ্ঞার ফলে রাশিয়া থেকে মাছ, ভোজ্য তেল, জ্বালানি ইত্যাদি আসছে না, ফলে সবকিছুর দামই বাড়ছে৷ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে যুক্তরাজ্যে মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল ৬.২ শতাংশ৷এখন তা আরো বেড়েছে৷
ছবি: ADRIAN DENNIS/AFP via Getty Images
নাইজেরিয়ার পরিস্থিতি
নাইজেরিয়ার ইফাবো এলাকার একজন বিক্রেতা বস্তায় আটা ভরছেন৷ দীর্ঘদিন ধরে আমদানি করা খাদ্যের উপর নির্ভরতা কমাতে চাইছে আফ্রিকার দেশটি৷ অন্য ক্ষেত্রেও অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে৷ ইউক্রেন রুশ যুদ্ধের ফলে কি নাইজেরিয়ার সুবিধা হবে? নাইজেরিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি সম্প্রতি দেশের সবচেয়ে বড় সার কারখানা খুলেছেন৷ তিনি প্রচুর ক্রেতা পাবেন বলেই মনে করছেন৷
ছবি: PIUS UTOMI EKPEI/AFP via Getty Images
9 ছবি1 | 9
তিনি আরো বলেন, খাদ্য এবং জ্বালানির সংকট অনেক ‘দরিদ্র' দেশকে সামাজিক এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে, যা খুবই শঙ্কার কথা৷
জাতিসংঘ মহাসচিব মনে করেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ না হলে সংকট ভয়াবহ রূপ নিতে পারে, ‘‘পরিস্থিতি এমন হতে পারে আমাদের এই বিশ্ব যা হয়ত সামাল দিতে পারবে না৷তাই এখনই কিছু একটা করতে হবে আমাদের৷'' এ সময় অতি শিঘ্র ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের দাবির পাশাপাশি রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে বিনিয়োগ এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর আর্থিক সহায়তা বৃদ্ধির আহ্বানও উঠে আসে আন্তনিও গুতেরেসের বক্তব্যে৷