ইউক্রেন যুদ্ধে উত্তর কোরিয়ার সেনার উপস্থিতি স্পষ্ট হলো
৬ নভেম্বর ২০২৪
ইউক্রেন জানিয়েছে, এই প্রথম সরাসরি উত্তর কোরিয়ার সেনার সঙ্গে তাদের সেনার সরাসরি লড়াই হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
এই প্রথম উত্তর কোরিয়ার সেনার প্রকাশ্য উপস্থিতি দেখা গেল ইউক্রেন যুদ্ধে। ইউক্রেনের দাবি, রাশিয়ার সীমান্ত কুরস্কে উত্তর কোরিয়ার সেনার উপর তাদের সেনা গোলাবর্ষণ করেছে। এর আগে ইউক্রেন বার বার অভিযোগ করছিল, উত্তর কোরিয়ার সেনা রাশিয়ার পক্ষ নিয়ে লড়াই করছে।
মঙ্গলবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার সেনার প্রকাশ্য উপস্থিতি এই যুদ্ধে নতুন অধ্যায় খুলে দিল। এর ফলে বুঝতে হবে, রাশিয়া একা নয়, তার বন্ধু দেশও যুদ্ধে অংশ নিয়েছে। অর্থাৎ, এর ফলে ভূরাজনীতির পট পরিবর্তন হলো।
দক্ষিণ কোরিয়ার একটি টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তম উমেরভ জানিয়েছেন, উত্তর কোরিয়ার সেনার সঙ্গে তাদের একটি ছোট সংঘর্ষ হয়েছে। আরেক প্রশাসনিক কর্তার দাবি, কুরস্কে উত্তর কোরিয়ার সেনার উপর তাদের সেনা গোলাবর্ষণ করেছে। গত তিন মাস ধরে এই অঞ্চলে তীব্র লড়াই চলছে। রাশিয়ার ওই অংশের কার্যত দখল নিয়েছে ইউক্রেনের সেনা।
রাশিয়ার কুরস্কে ঢুকে ৭৪টি বসতি তারা দখল করে নিয়েছে বলে দাবি ইউক্রেনের। কী বলছেন কুরস্কের সাধারণ মানুষ?
ছবি: Roman Pilipey/AFP/Getty Images
রাশিয়ার ভূখণ্ডে ইউক্রেনের সেনা
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তারা যুদ্ধটা এবার রাশিয়ার ভূখণ্ডে নিয়ে গেছেন। ইউক্রেন জানিয়েছে, তাদের সেনা ১৩ কিলোমিটার ভিতরে ঢুকে পড়েছে। ৭৪টি বসতি তাদের অধিকারে আছে। এক সপ্তাহ হলো ইউক্রেনের সেনা কুরস্কে ঢুকেছে। রাশিয়ার দাবি, ইউক্রেনের সেনার অগ্রগতি তারা থামাতে পেরেছে।
ছবি: ROMAN PILIPEY/AFP
'প্রথমে সবাই শান্ত ছিলেন'
কুরস্কের বাসিন্দা মার্গারিটা(আসল নাম জানাতে চাননি) ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''গত শুক্রবার যখন সাইরেন বাজলো, তখন মানুষ শান্ত ছিলেন। তারা নিজেদের কাজ করেছেন, বাজার করেছেন, সবই স্বাভাবিক ছিল। রাস্তায়, পার্কে মানুষ স্বাভাবিকভাবে হাঁটছিলেন। পরে সীমা্ন্ত থেকে খবর এলো, ইউক্রেনের সেনা আক্রমণ করেছে।''
ছবি: AP Photo/picture alliance
টিভি বললো, 'সাময়িক সমস্যা'
গোটা এলাকার জন্য সতর্কবার্তা জারি করা হয়। মার্গারিটা জানিয়েছেন, ''গোটা অঞ্চলকে সতর্ক করা হয়েছিল। আর আমরা এখন সাইরেনে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তাই সাইরেন সত্ত্বেও আমরা খুব একটা চিন্তিত হইনি। পরে আত্মীয়রা জানান, সীমান্তে তীব্র লড়াই চলছে। মানুষ ওই এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।''
ছবি: Ilya Pitalev/Sputnik/IMAGO
'পালাবার জন্য হুড়োহুড়ি'
অ্যান্টোনিনা কুরস্কে থাকেন, আর তার বোন থাকতেন সুদঝাতে। অ্যান্টোনিনা জানিয়েছেন, ''সুদঝা এখন ইউক্রেনের দখলে। তার বোন জুলিয়া বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছেন। ইউক্রেনের আক্রমণের পর মানুষ যেভাবে পেরেছে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে।''
ছবি: AP Photo/picture alliance
'সবকিছু ফেলে আসতে হয়েছে'
অ্যান্টোনিনা জানিয়েছেন, তার বোন জুলিয়া এখন আত্মীয়দের কাছে দূরে চলে যেতে পেরেছেন। কিন্তু তিনি ব্যাংক কার্ড-সহ সব ডকুমেন্ট ফেলে এসেছেন। তবে তার সবচেয়ে বেশি চিন্তা পালিত হাঁস, মুরগি ও অন্য পশুদের নিয়ে।
ছবি: AP Photo/picture alliance
অর্থ ও রেশনের প্রতীক্ষায়
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, যাদের বাড়ি থেকে চলে আসতে হয়েছে, তাদের রেশন দেয়া হবে এবং ১০ হাজার রুবল দেয়া হবে। কিছু অসুবিধার জন্য জুলিয়ারা এখনো রেশন পাননি। তারা অপেক্ষা করছেন। অনেকে বলছেন, এই অর্থ দিয়ে এক বা দুই দিনের জন্য খাবার ও ওষুধ কেনা যেতে পারে। ফলে তা যথেষ্ট নয়।
ছবি: AP Photo/picture alliance
প্রতিবেশী এলাকাতেও আশংকা
কুরস্কের প্রতিবেশী বেলগোরোদের নিনা ডিডাব্লিওউকে বলেছেন, তারাও সমানে এয়ার রেইড সাইরেন শুনতে পাচ্ছেন। ডিডাব্লিউর সঙ্গে কথা বলার সময়ও সাইরেন বাজার শব্দ পাওয়া গেলো। নিনা জানিয়েছেন, তারা এখন সাইরেনে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। ইউক্রেন কুরস্কে ঢুকে পড়ার পর এখানে প্রচুর রাশিয়ার সেনা এসেছে।
সুদঝা অঞ্চলে নিখোঁজ মানুষদের নিয়ে সামাজিক মাধ্যম সরগরম। বলা হচ্ছে, ৪০ জন নিখোঁজ। অনেকে আত্মীয়দের নিয়ে আসার জন্য গেছিলেন। তাদের খোঁজ নেই। সামাজিক মাধ্যমে একজন লিখেছেন, ইউক্রেনের সেনা যাতে বিপাকে পড়ে, সেজন্য রাশিয়া গ্রামগুলিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। অনেক জায়গায় ফোনে যোগাযোগও করা যাচ্ছে না।
ছবি: Evgeniy Maloletka/AP Photo/picture alliance
'আগাম সতর্কতা ছিল না'
সামাজিক মাধ্যমে মানুষ প্রশ্ন তুলছেন, কেন গোয়েন্দারা ইউক্রেনের আক্রমণের খবর দেয়নি বা দিতে পারেনি? জুলিয়ানা বলেছেন, ''মানুষের আশংকা ছিল, কিন্তু কর্তৃপক্ষ আগাম কোনো সতর্কতা জারি করেনি।'' শ্বেতলানা বলেছেন, ''কোথায় গেল সিক্রেট সার্ভিস? তারা তো মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে?'' স্থানীয় প্রশাসন মানুষকে শান্ত থাকতে বলেছেন।
ছবি: Anatoliy Zhdanov/REUTERS
9 ছবি1 | 9
জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তিনি তার বন্ধু দেশগুলিকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন। এক মাস আগেই ইউক্রেনের অভিযোগের ভিত্তিতে তারা পদক্ষেপ নিয়েছিল। রাশিয়াকে সরাসরি যারা এই যুদ্ধে সাহায্য করছে, তাদের বিরুদ্ধে আরো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
জেলেনস্কি বলেছেন, ''ইউক্রেন এবং সহযোগী দেশগুলিকে তীব্র লড়াই করে রাশিয়ার এই পদক্ষেপ বদলে দিতে হবে। এই যুদ্ধ যাতে আর ছড়িয়ে না পড়ে, তা লক্ষ্য রাখা দরকার।''
ইউক্রেন এই খবর দেওয়ার আগেই মঙ্গলবার জি সেভেনের নেতারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। তাদের বক্তব্য ছিল, রাশিয়া উত্তর কোরিয়ার মতো দেশের সেনা ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যবহার করলে এই লড়াই আরো প্রসারিত হবে। বাস্তবে দেখা গেল সেই ঘটনাই ঘটছে।
অ্যামেরিকা, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জাপান, ইটালি এবং ক্যানাডার পাশাপাশি নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়া একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধে উত্তর কোরিয়ার অংশ গ্রহণ এক মারাত্মক ঘটনা। এর ফলে এই যুদ্ধ আরো প্রসারিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হলো।
এর আগে অভিযোগ উঠেছিল, উত্তর কোরিয়া রাশিয়াকে অস্ত্র এবং মিসাইল দিয়ে সাহায্য করছে।