ইউক্রেন যুদ্ধে 'নিহত' অস্ট্রেলীয়কে জীবিত বলছে রাশিয়া
৩০ জানুয়ারি ২০২৫
রাশিয়ার বরাত দিয়ে অস্ট্রেলিয়া জানিয়েছে, অস্কার জেনকিন্স বেঁচে আছেন। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ অবশ্য হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, তাকে আটকের পর হত্যা করার খবর সত্য প্রমাণিত হলে কঠোর পরিণতি হবে।
বিজ্ঞাপন
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং জানিয়েছেন, ইউক্রেনে যুদ্ধরত একজন অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক ধরা পড়ার পর রাশিয়ান বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছিল। তবে তিনি এখনো বেঁচে আছেন।
ডিসেম্বরে অস্কার জেনকিন্সকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং রাশিয়ান সৈন্যদের আঘাত করার ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ পায়। এরপর এই মাসের শুরুতে খবর আসে যে তাকে আটক করার পর হত্যা করা হয়েছে।
রাশিয়াবলছেজেনকিন্স 'জীবিতএবংহেফাজতে'
পেনি ওং এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, "অস্ট্রেলীয় সরকার রাশিয়ার কাছ থেকে নিশ্চিত হয়েছে যে অস্কার জেনকিন্স জীবিত এবং তাদের হেফাজতে আছেন। যুদ্ধবন্দি হিসাবে জেনকিন্সের জন্য আমরা এখনও উদ্বেগ প্রকাশ করছি।"
তিনি বলেন, "(অস্ট্রেলিয়ার) সরকার জেনকিন্সকে মুক্তি দেওয়ার জন্য রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।"
তবে রাশিয়াকে হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, "যদি রাশিয়া জেনকিন্সকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের অধীনে তার প্রাপ্য সুরক্ষা প্রদান না করে, তাহলে আমাদের প্রতিক্রিয়া দ্ব্যর্থহীন হবে। আমরা ক্যানবেরায় এবং মস্কোতে রাশিয়ার কাছে স্পষ্ট করে জানিয়েছি যে জেনকিন্স একজন যুদ্ধবন্দি এবং রাশিয়া তার সঙ্গে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুসারে আচরণ করতে বাধ্য, যার মধ্যে মানবিক আচরণও অন্তর্ভুক্ত।"
জেনকিন্সেরমৃত্যুরখবরনিশ্চিতকরাযায়নি
এই মাসের শুরুতে ওং বলেছিলেন যে অস্ট্রেলিয়ার সরকার জেনকিন্সের হত্যার খবর নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছে।
জেনকিন্স রুশ বাহিনীর হাতে নিহত হতে পারেন, এমন তথ্য প্রকাশের পর অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে তার সরকার এই বিষয়ে "কঠোরতম ব্যবস্থা নেবে।"
প্রতিক্রিয়ায় মস্কো তখন জানিয়েছিল, অস্ট্রেলিয়া তাদের কাছে এই বিষয়টি উত্থাপন করেছে কিনা তারা সে বিষয়ে "সচেতন নয়"। তবে তারা এও জানিয়েছিল যে ইউক্রেনের পক্ষে লড়াই করা বিদেশিরাও রুশ সেনাদের "লক্ষ্যবস্তু"।
দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, "আমরা ভালোভাবেই জানি যে বিদেশি ভাড়াটে সৈন্যরা কিয়েভ সরকারের পক্ষে সংঘাতে অংশ নিচ্ছে।"
যুদ্ধ করতে ইউক্রেনে পাড়ি জমানো বিদেশিদের কথা
প্রাণ বাঁচাতে লাখো ইউক্রেনীয় যখন দেশ ছাড়ছেন, তখন অনেক বিদেশি যাচ্ছেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরতে৷ ছবিঘরে জানুন তাদের কথা....
ছবি: Kai Pfaffenbach/REUTERS
জেলেনস্কির আহ্বান
গত সপ্তাহে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদোমির জেলেনস্কি বিশ্ববাসীকে বলেন, ‘‘আপনারা ইউক্রেনের পাশে থেকে রাশিয়ার যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে লড়াই করুন৷’ পরে’ জেলেনস্কি দাবি করেন, তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে অনেক দেশের মানুষই যুদ্ধে অংশ নিতে ইউক্রেনে আসছেন৷ এ পর্যন্ত ১৬ হাজার বিদেশি যুদ্ধে অংশ নিতে চেয়েছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি৷ ১৬ হাজারের মধ্যে কতজন ইউক্রেনে পৌঁছেছেন তা তিনি জানাননি৷
ছবি: REUTERS
যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইউক্রেনে
এক সময় যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়নে বিভিন্ন পণ্য সরবরাহের দায়িত্বে ছিলেন মাইকেল ফারকল৷ সম্প্রতি রোমে প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করার সময় জানতে পারেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বিদেশিদের যুদ্ধে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন৷ তারপরই ইটালি থেকে ইউক্রেনে চলে এসেছেন ২৯ বছর বয়সি তরুণ৷ মাইকেল জানিয়েছেন, অস্ত্র হাতে নেবেন না, তার লক্ষ্য যুদ্ধেক্ষেত্রে প্যারামেডিক, অর্থাৎ স্বাস্থ্যসেবার করা৷
ছবি: Kai Pfaffenbach/REUTERS
কারা আসছেন?
বিদেশ থেকে আসা ২০ জনের সঙ্গে কথা বলেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স৷ তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নেয়ার উপযুক্ত যারা এসেছেন, তাদের বড় একটা অংশই ইরাক বা আফগানিস্তান যুদ্ধে অংশ নেয়া যোদ্ধা৷ নিজের দেশের সরকার এখন আর তাদের অভিজ্ঞতার মূল্যায়ন করে না বলে মনে হয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধ দক্ষতা প্রমাণের বড় একটা সুযোগ৷ সে কারণেই নিজের দেশ থেকে ইউক্রেনে ছুটে এসেছেন৷
ছবি: Kai Pfaffenbach/REUTERS
আনাড়িদের ভিড়
এক সময় ব্রিটেনের সেনাবাহিনীতে কাজ করতেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমন এক ব্যক্তি রয়টার্সকে জানান, জেলেনস্কির আহ্বানে সাড়া দিয়ে যারা ইউক্রেনে আসছেন, তাদের অনেকেই যুদ্ধের ময়দানে বিশেষ কোনো কাজে আসবেন না৷ তার মতে, তারা এত অনভিজ্ঞ এবং অদক্ষ যে তাদের শুধু ‘বুলেট কুড়ানোর’ কাজে লাগাতে হবে৷
ছবি: Kai Pfaffenbach/REUTERS
অপ্রস্তুত ইউক্রেন
কয়েকজন বিদেশি যোদ্ধা জানান, যুদ্ধের নানা সরঞ্জাম এমনকি অত্যাধুনিক অস্ত্র চালাতে পারেন এম লোক খুঁজতে ‘হ্যাভ গান উইল ট্র্যাভেল’ ধরনের নাম দিয়ে ইতিমধ্যে ফেসবুক আর হোয়াটসঅ্যাপে গ্রুপ খোলা হয়েছে৷ বডি আর্মার, নাইট-ভিশন গগলসের মতো জিনিসও কারো কাছে থাকলে দিয়ে যেতে বলছে গ্রুপগুলো৷ এছাড়া পশ্চিমা দেশগুলো যেসব অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়েছে, সেগুলো চালানোর প্রশিক্ষকও খোঁজা হচ্ছে গ্রুপগুলোর মাধ্যমে৷
ছবি: Emilio Morenatti/AP/picture alliance
অদক্ষরাও গুরুত্বপূর্ণ
লভিভ শহরে বিদেশ থেকে যুদ্ধে অংশ নিতে আসাদের তালিকা প্রণয়ন করেন রোমান শেপেলাক৷ বিদেশি যোদ্ধাদের গ্রহণ করা, তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে যুদ্ধের জন্য তৈরি করার প্রস্তুতি যে ইউক্রেন এখনো গুছিয়ে উঠতে পারেনি রোমান তা স্বীকার করেন৷ তবে তার বিশ্বাস, দ্রুতই সব ঠিক হয়ে যাবে৷ অদক্ষ বিদেশিরা আসছে বলেও হতাশ নন৷ তিনি বলেন, ‘‘তারা যে অন্য দেশের জন্য যুদ্ধ করতে চাইছে- এটাই দারুণ ব্যাপার৷ তারাও খুব গুরুত্বপূর্ণ৷’’