ইউক্রেন যুদ্ধে বাড়ছে বেসরকারি স্যাটেলাইটের গুরুত্ব
৭ জুন ২০২২
স্যাটেলাইটের মাধ্যমে তোলা ছবিই ইউক্রেনের বুচা শহরে গণহত্যার চূড়ান্ত প্রমাণ দিতে পেরেছে৷ এক বেসরকারি স্যাটেলাইট কোম্পানি সে কারণে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসে পড়েছে৷
আজকাল যে কেউ মহাকাশ থেকে তোলা ছবির অর্ডার দিতে পারে৷ ফলে ব্যবসা ফুলেফেঁপে উঠছে৷ প্রায় প্রতিদিনই মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠানো হচ্ছে৷ সেগুলির আকার একটি ওয়াইনের বোতলের মতো৷ ভেতরে হাইটেক ক্যামেরা ভরা থাকে৷ প্রয়োজনে ছবি তোলার দশ মিনিটের মধ্যে সেগুলি ক্রেতার কম্পিউটারে পৌঁছে দেওয়া যায়৷ সেরা ছবিগুলিতে ৩০ সেন্টিমিটারের বেশি ভুলভ্রান্তি থাকে না৷
ফ্রঁসোয়া লঁবার প্লেয়াইডেস নেও নামের কোম্পানির প্রতিনিধি৷ এয়ারবাস কোম্পানির এই শাখা স্যাটেলাইট ছবির বাজারে সবে প্রবেশ করেছে৷ তার মতে, ‘‘সংকটের এই সময়ে নির্দিষ্ট কিছু গ্রাহক স্যাটেলাইটে তোলা ছবির নাগাল পেয়ে দীর্ঘমেয়াদী সমাধানসূত্রের প্রতি বাড়তি আগ্রহ দেখাচ্ছেন৷ তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রকল্পে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন বা নিজস্ব স্যাটেলাইট কিনছেন৷ বাকিদের মধ্যে কেউ কেউ আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে আমাদের ইমেজারির নাগাল পেতে চাইছেন৷''
এই কোম্পানি মূলত গোয়েন্দা সংস্থা ও সরকারের মতো গ্রাহকের দৌলতে সবচেয়ে বেশি অর্থ উপার্জন করছে৷ সে কারণে কোম্পানির প্রধানকে ভাসা ভাসা উত্তর দিতে হচ্ছে৷ কিন্তু অন্য কিছু ক্ষেত্রেও স্যাটেলাইটে তোলা ছবির বিপুল চাহিদা দেখা যাচ্ছে৷
এমন ইমেজারি কাজে লাগিয়ে বিশেষ করে কৃষিক্ষেত্র কিছু উন্নতির মাধ্যমে ফসলের পরিমাণ বাড়িয়ে বাড়তি আয় করতে পারে৷ ইয়ুলিউস ক্যুন ইনস্টিটিউটের গবেষক মার্কুস ম্যোলার বলেন, ‘‘চাষি যেখানে সব সময়ে যেতে পারেন না, সেখানেও স্যাটেলাইটের নজর রয়েছে৷ চাষি একই সঙ্গে সব জায়গায় থাকতে পারেন না৷ কিন্তু স্যাটেলাইটে তোলা ছবির মাধ্যমে গোটা জমির অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা যায়৷''
মার্কুস ম্যোলার এক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে চাষিদের প্রয়োজনীয় পৃথিবী পর্যবেক্ষণের যাবতীয় সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন৷ তিনি বলেন, স্যাটেলাইটে তোলা ছবি কাজে লাগিয়ে যেমন জমিতে সার দেবার আদর্শ সময় স্থির করা হচ্ছে৷ সেই লক্ষ্যে এমন ইনফ্রারেড ছবি কাজে লাগানো হচ্ছে৷ তাতে দেখা যাচ্ছে, যে গাছপালা বেড়ে ওঠার কোন পর্যায়ে সারের প্রয়োজন৷ ম্যোলার বলেন, ‘‘সে ক্ষেত্রে সব সময়ে, যতটা সম্ভব আদর্শ উপায় হলো গোটা জমিতে একই সঙ্গে সার না দিয়ে শুধু নির্দিষ্ট অংশে তা সীমিত রাখা৷ সেটা করলে সম্পদেরও সাশ্রয় হয়৷ আমরা এমন সব বিষয় নিয়ে বেশি মাথা ঘামাই৷''
ছবি তোলার এমন স্যাটেলাইটের আকার এবং ওজন কমেই চলেছে৷ ফলে মহাকাশে পাঠানোর ব্যয়ও কমছে, যার জের ধরে ছবির মূল্যও কমছে৷ বছরে কয়েক হাজার ইউরো ব্যয় করলেই মহাকাশ থেকে তোলা ছবির নাগাল পাওয়া সম্ভব৷ ফ্রঁসোয়া লঁবার মনে করেন, ‘‘আমি লক্ষ্য করছি, স্টার্টআপ কোম্পানির মতো ছোট সংস্থা, এমনকি সাধারণ মানুষ, ইঞ্জিনিয়ার ইমেজারি নিয়ে কিছু করতে চাইছে৷''
ছবির রেজোলিউশনেরও উন্নতি হচ্ছে৷ তাহলে কি অদূর ভবিষ্যতে কম খরচেই মহাকাশ থেকে প্রতিবেশীর উপর নজর রাখা যাবে? লঁবার বলেন, ‘‘ছবিতে কিছু মানুষ আছে কিনা, আপনি তা হয়তো দেখতে পাবেন৷ জনসংখ্যার গতিবিধিও হয়তো দেখতে পাবেন৷ কিন্তু রেজোলিউশনের ক্ষেত্রে আরও বেশি কিছু চাইলে যে ব্যক্তিগত তথ্য দিতে হয়, তা পাওয়া কঠিন হবে৷ তাই এই মুহূর্তে সে বিষয়ে আমাদের মাথা ঘামাতে হচ্ছে না৷ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে অনেক বিধিনিয়ম এখনো সামলাতে হচ্ছে৷''
স্যাটেলাইটে তোলা ছবির বাজার বেড়েই চলেছে৷ সেইসঙ্গে যুদ্ধের সময় সামরিক বাহিনীর রোষের জের ধরে স্যাটেলাইট ধ্বংসের আশঙ্কাও বাড়ছে৷
মিলিটাডেস স্মিট/এসবি