সোমবার বেলারুশ সফরে গিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে সে দেশের সক্রিয় অংশগ্রহণের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুটিন৷ এদিকে মলদোভা নতুন বছরে রাশিয়ার হামলার আশঙ্কা করছে৷
সম্প্রতি বেলারুশ সফর করেছেন পুটিন (বামে)ছবি: Konstantin Zavrazhin/Pool Sputnik Kremlin via AP/dpa/picture alliance
বিজ্ঞাপন
আলোচনা বা কূটনৈতিক উদ্যোগের মাধ্যমে ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানের কোনো ইঙ্গিত দিচ্ছেন না রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন৷ বরং অধিকৃত অঞ্চলের উপর নিয়ন্ত্রণ আরও জোরালো করার লক্ষ্যে পদক্ষেপের ডাক দিলেন তিনি৷ সেপ্টেম্বর মাসে ইউক্রেনের ডনিয়েৎস্ক, লুহানস্কসহ চারটি অঞ্চলকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়ার ভূখণ্ডে অন্তর্গত করলেও সেখানকার পরিস্থিতি বেশ কঠিন বলে পুটিন দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেন৷ অর্থাৎ ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান' যে ভালোভাবে চলছে না, প্রকারান্তরে তা স্বীকার করে নিলেন তিনি৷ চলতি মাসের শুরুতেই পুটিন বলেছিলেন, যে যুদ্ধ দীর্ঘ প্রক্রিয়া হতে পারে৷
সোমবার রাশিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী দিবস উপলক্ষ্যে পুটিন গোয়েন্দা সংস্থা এফএসবি-র উদ্দেশ্যে বিদেশ থেকে নতুন হুমকি ও দেশের মধ্যে বিশ্বাসঘাতকদের মোকাবিলা করতে রাশিয়ার সমাজের উপর নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন৷ তবে এ দিন বেলারুশ সফরে গিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট কিন্তু প্রকাশ্যে ইউক্রেনের তেমন উল্লেখই করেন নি৷ বেলারুশের প্রেসিডেন্ট লুকাশেংকোর সঙ্গে আলোচনার পর দুই নেতা দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার সুবিধা তুলে ধরেন৷ এর আগে মস্কোর পক্ষ থেকে ইউক্রেন যুদ্ধে বেলারুশের সক্রিয় অংশগ্রহণ সংক্রান্ত ‘গুজব' সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করা হয়৷ পুটিন বলেন, ‘‘রাশিয়ার কাউকেই শুষে নেবার আগ্রহ নেই৷ এমন পদক্ষেপের কোনো অর্থ হয় না৷''
ইউক্রেন যুদ্ধে পুটিন এমন অবাস্তব দাবি করলেও রাশিয়া বরং যুদ্ধ আরও ছড়িয়ে দিতে চাইছে বলে সন্দেহ বাড়ছে৷ মলদোভার গোয়েন্দা সংস্থা সোমবার জানিয়েছে, যে রাশিয়া সম্ভবত নতুন বছরে ট্রান্সনিস্ট্রিয়া অঞ্চলের উপর হামলার তোড়জোড় করছে৷ ইউক্রেনের দক্ষিণে অধিকৃত এলাকা থেকে এমন হামলা চালিয়ে স্থলপথে মলদোভার সেই অঞ্চল পর্যন্ত ‘ল্যান্ড করিডোর' গড়ে তোলার উদ্যোগ চলছে বলে গোয়েন্দা সংস্থা সন্দেহ করছে৷
এ দিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদোমির জেলেনস্কি সোমবার রাতে তার ভিডিও বার্তায় বলেছেন, যে তিনি দ্রুত যুদ্ধ অবসানের লক্ষ্যে পশ্চিমা বিশ্বের কাছ থেকে আরও অস্ত্রের অনুরোধ করেন৷ সেইসঙ্গে গোলাবারুদ ও ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ক্ষমতা বাড়ানোর আরও পদক্ষেপও দেখতে চান তিনি৷ সোমবার কিয়েভের উপর রাশিয়া ২৮টি ড্রোন হামলা চালিয়েছে বলে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী জানিয়েছে৷ এর মধ্যে ২৩টি ধ্বংস করা সম্ভব হয়েছে৷
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে বাখমুত ও সংলগ্ন এলাকায় রাশিয়া জোরালো হামলা চালিয়ে যাচ্ছে বলে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী জানিয়েছে৷ অন্যদিকে ইউক্রেনের বিমানবাহিনী রাশিয়ার সৈন্য ও সামরিক সরঞ্জামের উপর পালটা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে৷ এমনকি সেই হামলায় দুটি হেলিকপ্টরও ধ্বংস হয়েছে৷
এসবি/এসিবি (রয়টার্স, এএফপি)
রাশিয়ায় ইউক্রেনের ড্রোন হামলা যুদ্ধের গতিপথ বদলাবে?
৫ ডিসেম্বর রাশিয়ার দুটি বিমানঘাঁটিতে প্রথমবারের মতো ড্রোন হামলা চালায় ইউক্রেন৷ এই হামলা কি যুদ্ধের গতিপথ বদলাবে?
ছবি: MAXAR TECHNOLOGIES/REUTERS
রাশিয়ার বিমানঘাঁটিতে ইউক্রেনের ড্রোন হামলা
৫ ডিসেম্বর রাশিয়ার এঙ্গেলস ও ডিয়াগিলেভো বিমানঘাঁটিতে ইউক্রেন ড্রোন হামলা চালিয়েছে৷ দূরবর্তী এলাকায় হামলা চালাতে এই দুটি বিমানঘাঁটি ব্যবহার করে রাশিয়া৷
ছবি: MAXAR TECHNOLOGIES/REUTERS
বিশ্লেষকরা বিস্মিত
দুটি বিমানঘাঁটিরই অবস্থান ক্রেমলিন থেকে দূরে৷ তাই সেখানে ইউক্রেনের হামলা চালানোর ক্ষমতা বিশ্লেষকদের বিস্মিত করেছে৷ জার্মানির বুন্ডেসভেয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্রাঙ্ক সাউয়ার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রতিক্রিয়া না দেখানোর বিষয়টি বিস্ময়কর - এটা হতে পারে যে, রাশিয়ার এত ভেতরে এমন হামলা হতে পারে, সেটা রাশিয়া ভাবেনি৷’’
ছবি: MAXAR/REUTERS
হামলা সম্পর্কে রাশিয়ার বক্তব্য
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, ইউক্রেনের ড্রোনগুলো ভূপতিত করা হয়েছে৷ এবং তাদের টুকরোর আঘাতে দুটি রুশ যুদ্ধবিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ তবে অনলাইনে প্রকাশিত ব্যক্তিগত সার্ভিলেন্স ক্যামেরায় তোলা ভিডিওতে দেখা গেছে, আকাশে কোনো বিস্ফোরণ হয়নি, বরং ভূমিতে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে৷
ছবি: MAXAR TECHNOLOGIES/REUTERS
কোন ড্রোন?
রাশিয়া বলছে, হামলার কাজে ১৯৭০-এর দশকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের তৈরি পর্যবেক্ষণকারী ড্রোন টিইউ-১৪১ (ছবিতে ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ দেখা যাচ্ছে) ব্যবহার করা হয়েছে৷ তবে কিয়েভের নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্রের বরাতে নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, পাবলিক-প্রাইভেট যৌথ অংশীদারিত্বের আওতায় ইউক্রেনের তৈরি নতুন ড্রোন দিয়ে ঐ হামলা করা হয়েছে৷
ছবি: Zeljko Hladika/PIXSELL/picture alliance
ইউক্রেনের বক্তব্য
ড্রোন তৈরির কর্মসূচি বিষয়ে ইউক্রেন নীরবতা অনুসরণ করছে৷ তবে ৮ ডিসেম্বর ফেসবুক পোস্টে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেক্সি রেজনিকভ জানান, ‘‘অতীতে আমাদের সামরিক বাহিনীর জন্য বছরে এক-দুটি ড্রোন টাইপের অনুমোদন দেয়া হত৷ তবে গত ৩০ দিনে সাতটি নতুন ড্রোন টাইপের অনুমোদন দেয়া হয়েছে৷’’
ছবি: Kai Pfaffenbach/REUTERS
‘প্রতীকী গুরুত্বের চেয়েও বেশি’
রাশিয়ার এত ভেতরে ইউক্রেনের হামলা চালানোর সক্ষমতার বিষয়টি শুধু প্রতীকী অর্থে নয়, তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ, বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা৷ ইউক্রেনের সামরিক বিশেষজ্ঞ ওলেগ কাটকভ বলেন, ‘‘রাশিয়ার এখন তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুনরায় মোতায়েন করতে হবে, কিংবা তাদের যুদ্ধবিমানগুলো আরও দূরে নিয়ে যেতে হবে৷ সেক্ষেত্রে আরও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করতে হবে, যা খরচ বাড়াবে৷’’
ছবি: Sergei Savostyanov/ITAR/TASS/imago
পশ্চিমা বিশ্বের জন্য সংকেত?
ইউক্রেন অনেকদিন ধরে পশ্চিমের কাছে দূরে হামলা করার অস্ত্র চাইছে৷ যুক্তরাষ্ট্র দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপে সক্ষম ‘হাইমার্স’ ব্যবস্থা দিলেও রাশিয়ার ভয়ে সেটির সীমা কমিয়ে দিয়েছে৷ ফলে শুধু রাশিয়া অধিৃকত এলাকায় সেটি ব্যবহার করা যাবে৷ ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেসন্সের উলরিকে ফ্রাঙ্কে মনে করছেন, রাশিয়ায় হামলা চালিয়ে ইউক্রেন পশ্চিমা বিশ্বকে এই সংকেত দিয়েছে যে, তাদের ছাড়াও তারা হামলা করতে সক্ষম৷