ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করা নিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।
মঙ্গলবার ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ফোনে কথা বলবেন ট্রাম্প ও পুটিন। ছবি: Lukas Coch/IMAGO
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার তাদের মধ্যে কথা হবে। তার সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্য়ালে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ফোনে পুটিনের সঙ্গে কথা বলবেন। ট্রাম্প বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ দ্রুত বন্ধ করা খুবই জরুরি।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, ''মঙ্গলবার সকালে(যুক্তরাষ্ট্রের সময়) আমি প্রেসিডেন্ট পুটিনের সঙ্গে কথা বলব। চূড়ান্ত চুক্তির অনেকগুলি বিষয়ে মতৈক্য হয়েছে। আবার বেশ কিছু বিষয়ে মতৈক্য হওয়া বাকি আছে।''
ট্রাম্প বলেছেন, ''হাজার হাজার সেনা যুদ্ধে মারা গেছেন। প্রতি সপ্তাহে দুই তরফের আড়াই হাজার সেনার মৃত্যু হচ্ছে।খন এটা বন্ধ হওয়া দরকার। প্রেসিডেন্ট পুটিনের সঙ্গে কথা বলার জন্য মুখিয়ে আছি।''
তবে এই সম্ভাব্য শান্তিচুক্তির ক্ষেত্রে কী কী বিষয়ে দুই পক্ষ কিছুটা ছাড় দেবে সে বিষয়ে পেসকভ কিছু বলেননি।
তিনি শুধু বলেছেন, ''এটা ঠিক যে, দুই প্রেসিডেন্ট মঙ্গলবার কথা বলবেন। তবে কী নিয়ে কথা হবে, তা আমরা কখনোই আগে থেকে বলি না। এটা বলা সম্ভবও নয়।''
পশ্চিমা মিত্ররা ইউক্রেনকে ঠিক কতটা সহায়তা দিয়েছে?
রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প৷ এর ফলে ইউক্রেন যুদ্ধে বড় ধরনের সংকট তৈরির আশঙ্কা করা হচ্ছে৷
ছবি: Gent Shkullaku/IMAGO
কেন সহায়তা স্থগিতের ঘোষণা?
হোয়াইট হাউজে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে কথাকাটাকাটির পর তার যুক্তরাষ্ট্র সফর ভণ্ডুল হয়ে যায়৷ বিরল খনিজ আহরণে যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন চুক্তিও সই হয়নি৷ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের সঙ্গে কোনো সমঝোতা নয়, জেলেনস্কির এমন বক্তব্যের পর এক ঘোষণায় ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা স্থগিত করার কথা বলেছেন ট্রাম্প৷
ছবি: Saul Loeb/AFP/Getty Images
মস্কোর দিকে ঝুঁকছে ওয়াশিংটন?
এই সিদ্ধান্তের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে বলে সতর্ক করেছেন বিশ্লেষকেরা৷ ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা বন্ধের মাধ্যমে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের তিন বছর পর ট্রাম্প মস্কোর দিকে ঝুঁকছেন বলেই ধারণা করছেন তারা৷
ছবি: Aleksander Kalka/NurPhoto/picture alliance
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষার উপর প্রভাব
যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষামূলক এবং আক্রমণাত্মক সক্ষমতা সরবরাহ করে৷ তবে এই সামরিক সহায়তা স্থগিতের প্রভাব যুদ্ধক্ষেত্রে পড়তে সময় লাগবে৷ ইউক্রেন এখন আগের তুলনায় মার্কিন সরবরাহের উপর কম নির্ভরশীল৷ পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর ইউরোপীয় অংশীদাররা এখন ইউক্রেনকে বড় ধরনের সহায়তা দিয়ে থাকে৷
ছবি: Xenia Polska/DW
সার্বিক সহায়তা হিসাবের চ্যালেঞ্জ
ইউরোপের দেয়া সহায়তার পরিমাণ বাস্তবে আরো অনেক বেশিও হতে পারে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ন্যাটোর সদস্য সব দেশ ইউক্রেনের প্রতি তাদের সাহায্যের প্রতিশ্রুতির সম্পূর্ণ পরিমাণ প্রকাশ করে না৷ বিশেষ করে সংবেদনশীল তথ্য বিবেচনায় সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুত পরিমাণ অনেকক্ষেত্রেই গোপন রাখা হয়৷ ফলে প্রদত্ত মোট তহবিলের পরিমাণ হিসাব করাও বেশ কঠিন৷
ছবি: Wojtek Radwanski/AFP/Getty Images
সামগ্রিক আন্তর্জাতিক সাহায্য
কিল ইনস্টিটিউটের গবেষণায় স্বল্পমেয়াদী এবং বহু-বছর মেয়াদী সাহায্য, ঋণ এবং সামরিক সহায়তার প্রকাশিত তহবিলের পরিমাণ জানা যায়৷ এই গবেষণায় দেখা গেছে ইউক্রেনে সহায়তা দেয়ার ক্ষেত্রে অ্যামেরিকার চেয়ে এগিয়ে রয়েছে ইউরোপ৷ ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে আর্থিক, সামরিক এবং মানবিক সহায়তায় ১৩২ বিলিয়ন ইউরো বরাদ্দ করেছে ইউরোপ৷ অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র সব মিলিয়ে সহায়তা দিয়েছে ১১৪ বিলিয়ন ইউরো৷ (১ ইউরো = প্রায় ১৩০ টাকা)
ছবি: DW
সামরিক সহায়তায় এগিয়ে যুক্তরাষ্ট্র
ইউক্রেনকে আর্থিক সহায়তায় ইউরোপ এগিয়ে থাকলেও সামরিক সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে রয়েছে৷ ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং সামরিক সহায়তা বাবদ ৬৪ বিলিয়ন ইউরোর বেশি বরাদ্দ করেছে যুক্তরাষ্ট্র৷ অন্যদিকে সামরিক বরাদ্দে ইউরোপ সহায়তা করেছে ৬২ বিলিয়ন ইউরোর কম৷ যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তার মধ্যে রয়েছে ট্যাংক, ব্র্যাডলি যানবাহন, হাউইটজার, হাইমার্স রকেট লঞ্চার এবং বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা৷
ছবি: European Union 2025 - Source : EP
6 ছবি1 | 6
যুক্তরাজ্যের বক্তব্য
ব্রিটিশ সরকার জানিয়েছে, ৩০টিরও বেশি দেশ ইউক্রেনকে সাহায্য করার জন্য 'কোয়ালিশন অফ দ্য উইলিং'-কে সমর্থন জানিয়েছে। এর মধ্যে অনেকগুলি দেশ যুদ্ধবিরতির পর ইউক্রেনে শান্তিবাহিনী পাঠাবার পক্ষে বলে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমারেরমুখপাত্র জানিয়েছেন।
তিনি জানিয়েছেন, বিভিন্ন দেশ বিভিন্নভাবে ইউক্রেনকে সাহায্য করতে চায়। এখন এই জোটের পক্ষ থেকে ইউক্রেনকে কীভাবে সাহায্য করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে ৩০টিরও বেশি দেশ ইউক্রেনকে সাহায্য করতে চায়। তাদের মধ্যে অনেকে শান্তিসেনা পাঠাতে রাজি।
বেশ কিছু দেশের সামরিক প্রধানরা যুক্তরাজ্যে বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসছেন। তারা এই জোটের পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে কথা বলবেন।
যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স ইউক্রেনে শান্তিসেনা পাঠাতে চায়, কিন্তু রাশিয়া এখনো পর্যন্ত এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধী।