ক্রাইমিয়া কি ইউক্রেনে থাকবে, নাকি রাশিয়ার শাসনাধীনে চলে যাবে, সে ব্যাপারে আগামী রবিবার এক গণভোট অনুষ্ঠিত হবে৷ অবশ্য জার্মানি সহ পশ্চিমা বিশ্ব গণভোট আয়োজনকে অবৈধ বলছে৷
বিজ্ঞাপন
ইউক্রেন সংকট নিয়ে অন্যান্য দেশের তুলনায় ধীরগতি অবলম্বন করা জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল এবার সরব হয়েছেন৷ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনকে তিনি বলেছেন, ক্রাইমিয়ায় গণভোট আয়োজন ‘অবৈধ' এবং সেটা ইউক্রেনের সংবিধানের পরিপন্থি৷
জবাবে রুশ প্রেসিডেন্ট ম্যার্কেলকে জানিয়েছেন, ‘‘ক্রাইমিয়ার কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক আইন মেনেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং সেখানকার জনগণের স্বার্থ নিশ্চিত করার জন্য এটা প্রয়োজন৷''
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামরেনকেও পুটিন একই কথা বলেছেন বলে জানিয়েছে ক্রেমলিন৷
সংকটের সঙ্গে গ্যাসের যোগাযোগ
সমস্যার সমাধানের পথে একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে গ্যাস৷ বিষয়টা এরকম – ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর নাগরিকদের দৈনন্দিন জীবনের একটা অপরিহার্য বিষয় হলো গ্যাস৷ আর সেই গ্যাসের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ আসে রাশিয়া থেকে৷ বিশেষ করে, জার্মানি রাশিয়া থেকে অনেক গ্যাস আমদানি করে৷ এই কথা বিবেচনা করেই জার্মানি অন্যান্য দেশের মতো ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়ার উপর বড় চাপ দিতে পারছে না৷ কেননা রাশিয়া যদি গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয় তাহলে জার্মান নাগরিকদের উপত তার সরাসরি প্রভাব পড়বে৷
ক্রাইমিয়ায় সব শান্ত?
সবার মনোযোগ এখন ইউক্রেনের ক্রাইমিয়ার দিকে৷ ক্রাইমিয়ায় যা ঘটেছে তাকে রাশিয়ার আগ্রাসন বলা হলেও রুশ সেনাদের কিন্তু সাদরে গ্রহণ করে নিয়েছে স্থানীয়রা৷ ছবিঘরে দেখুন ক্রাইমিয়ার পরিস্থিতি৷
ছবি: DW/F. Warwick
কোসাকদের আগমন
রাশিয়ার ক্রাসনোডার থেকে এসেছে ২৫০ জনের মতো কুবান কোসাক৷ সামরিক বাহিনীর পোশাক পরেননি তাঁরা৷ সেভাস্টোপোলের রুশপন্থি কর্তৃপক্ষ কোসাকদের শপথ পাঠ করিয়েছে৷ স্বেচ্ছাসেবী কোসাকরা জানিয়েছে, ক্রাইমিয়াবাসীদের রক্ষা করার জন্য তারা স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে কাজ করবে৷
কুবান কোসাকরা সেভাস্টোপোলের পুলিশের সঙ্গে টহলে অংশ নিচ্ছে৷ মাথায় উলের টুপি পরে রবি বার থেকে রাস্তায় টহল দিচ্ছে কোসাকরা৷ ২০০৫ সালে এথনিক সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী এবং শক্তিশালী সামরিক শক্তি হিসেবে কোসাকদের স্বীকৃতি দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন৷
ছবি: DW/F. Warwick
কঠিন সময়ে নিরাপত্তা
রাশিয়া এবং ক্রাইমিয়ার টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন কোসাকদের নেতা কর্নেল সের্গেই সাভোনিন ইউরিয়েভিচ৷ তিনি বলেন, কোসাকরা সেভাস্টোপোলের মানুষদের রক্ষা করার জন্য এসেছে৷
ছবি: DW/F. Warwick
‘স্বায়ত্তশাসন, বিচ্ছিন্নতাবাদ নয়’
ক্রাইমিয়ায় অনেকের হাতেই দেখা যায় ক্রাইমিয়া এবং রাশিয়ার পতাকা৷ এর অর্থ এই নয় যে, ক্রাইমিয়া ইউক্রেন থেকে আলাদা হয়ে গেছে৷ সেভাস্টোপোলের এই তরুণ-তরুণীরা জানালেন, তাঁরা ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ চাননা, কেননা ইউক্রেনকে তাঁরা ভ্রাতৃপ্রতীম রাষ্ট্র মনে করেন৷ তাঁদের দাবি একটাই – স্বায়ত্তশাসন এবং এথনিক রুশ হিসেবে প্রাপ্য মর্যাদা৷
ছবি: DW/F. Warwick
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি?
এই প্রবীণ এসেছেন কোসাকদের সমর্থন জানাতে৷ রাশিয়ার প্রতি তাঁর পূর্ণ সমর্থন রয়েছে৷ পরনে রুশ সেনাবাহিনীর মতো কমলা আর কালো রংয়ের পোশাক৷ তিনি নিজেও সোভিয়েত ইউনিয়নের রেড আর্মির সাবেক কর্মকর্তা৷
ছবি: DW/F. Warwick
রাস্তায় তল্লাশি
সিমফারোপোল এবং সেভাস্টোপোলের মাঝের হাইওয়েতে গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে রুশপন্থি বেসামরিক বাহিনীর সদস্যরা৷
ছবি: DW/F. Warwick
ব্যবসার জন্য খারাপ সময়?
লিলিয়া ভজনুক একজন স্যুভেনির বিক্রেতা৷ রাবারের তৈরি মুখোশগুলোর মধ্যে পুটিনের চেহারার মুখোশটার এখন দারুণ কাটতি৷ তবু খুব চিন্তায় আছেন লিলিয়া৷ চলমান সংকট ব্যবসার বড় রকমের ক্ষতি করবে বলে আশঙ্কা তাঁর৷
ছবি: DW/F. Warwick
হৃদয়-মন জয় করেছে তাঁরা
সেভাস্টোপোলে গেলেই ব্ল্যাক সি ফ্লিট অঁসম্বল-এর কনসার্ট দেখতে পাবেন৷ নাচ-গানের এই স্থানীয় সংগঠনটি তাদের পরিবেশনা দিয়ে সবার মন জয় করেছে৷ রুশ লোকসংগীতে সাগরের প্রশংসা করে যেসব গান রচনা করা হয়েছে মূলত সেগুলোই পরিবেশন করে ব্ল্যাক সি ফ্লিট অঁসম্বল৷ রাশিয়ার ঐতিহ্যবাহী ইয়াব্লোচকো বা ‘ছোট্ট আপেল’ নাচটা সত্যই মনোমুগ্ধকর৷
ছবি: DW/F. Warwick
চাই শুধু স্বায়ত্তশাসন
সেভাস্টোপোলের অধিকাংশ মানুষই রুশ জাতীয়তাবাদের সমর্থক৷ ইউক্রেনীয়দের তারা অবিশ্বাস করে, মনে করে ইউক্রেনীয়রা চরম ডানপন্থি৷ সেভাস্টোপোলের মানুষ মনে করে রুশ বাহিনীর উপস্থিতি এ অঞ্চলের স্বায়ত্তশাসন এবং নিরাপত্তার রক্ষাকবচ৷
ছবি: DW/F. Warwick
10 ছবি1 | 10
ইতিমধ্যে, রাশিয়ার গ্যাস সংস্থা কদিন আগে একটা মৃদু সতর্কবার্তা দিয়ে বলেছে, তারা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারে৷ এর মাধ্যমে ২০০৯ সালের স্মৃতি কিছুটা মনে করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে৷ সেসময় রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সমস্যা চলার কারণে তীব্র শীতের মধ্যে গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছিল৷ ইইউ ও রাশিয়ার মধ্যে গ্যাস সরবরাহের একটা উল্লেখযোগ্য রুট হলো ইউক্রেন৷
গ্যাস বিষয়টা এত গুরুত্বপূর্ণ যে, পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী রাশিয়ার উপর থেকে জার্মানি ও ইইউ-র গ্যাস নির্ভরতা কমানোর উপায় খুঁজতে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলকে অনুরোধ জানানোর কথা ভাবছেন৷ বুধবার ম্যার্কেলের পোল্যান্ড সফরের কথা রয়েছে৷
কূটনৈতিক প্রচেষ্টা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে আলোচনা করতে ওয়াশিংটন যাচ্ছেন ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী আরসেনি ইয়াৎসেনইউক৷ বুধবার ওবামার সঙ্গে তাঁর বৈঠক হবার কথা রয়েছে৷ এছাড়া বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভাষণ দেবার কথা রয়েছে ইয়াৎসেনইউকের৷