তীব্র লড়াইয়ের মধ্যেই ইউক্রেন এবং রাশিয়ার প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনা চলছে। কিন্তু সমাধানসূত্র এখনো অধরা।
বিজ্ঞাপন
চতুর্থ সপ্তাহে পড়ল রাশিয়া এবং ইউক্রেনের লড়াই। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, দুই দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনা চললেও এখনো পর্যন্ত সমাধানসূত্রে পৌঁছানো যায়নি। কোনো পক্ষই আপসে রাজি নয়। ফলে আলোচনা কার্যত থমকে আছে।
বেশ কয়েকবার দুই দেশের প্রতিনিধি বেলারুশে বৈঠক করেছেন। আপাতত তারা ভিডিও কলের মাধ্যমে আলোচনা চালাচ্ছেন।
ইউক্রেনের গৃহহীন শিশুদের কথা
২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর থেকে দেশ ছেড়েছে অন্তত লাখ লাখ মানুষ৷ তাদের মধ্যে নারী আর শিশুই বেশি৷ ছবিঘরে দেখে নিন এমন কিছু শিশুর ছবি আর জানুন তাদের কথা৷
ছবি: KAI PFAFFENBACH/REUTERS
প্রিয় পুতুলের সঙ্গে ঘরছাড়া
রোমানিয়ায় একটি স্পোর্টস অ্যারেনাতে ইউক্রেনের শরণার্থীদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে৷ সেখানেই ঘুমিয়ে আছে শিশুটি৷ নিজের দেশ, প্রিয় ঘর সব ছেড়ে আসতে হয়েছে, কিন্তু সঙ্গে নিতে ভোলেনি প্রিয় বার্বি পুতুলটিকে৷
ছবি: CLODAGH KILCOYNE/REUTERS
দীর্ঘ যাত্রার ক্লান্তি
ইউক্রেন থেকে ট্রেনে দীর্ঘ যাত্রা শেষে রোমানিয়ার বুখারেস্টে এক শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে এই পরিবারটি৷ দীর্ঘ যাত্রার ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়েছে শিশুটি৷ মায়ের মুখে বেদনার ছায়া৷
ছবি: EDGARD GARRIDO/REUTERS
যুদ্ধ কি জানে না যে শিশু
ইউক্রেনের লভিভ থেকে বাসে করেও দেশ ছাড়ছেন অনেকে৷ একটি বাসে বাবার পাশে বসে ক্যামেরার উদ্দেশে মিষ্টি করে হেসে হাত নাড়ছে শিশুটি৷ তার জন্য হয়ত এটা বেড়াতে যাওয়া৷ নিজের দেশ, ঘর ছেড়ে যাওয়ার যন্ত্রণার অনুভূতি এখনো তার অজানা ৷
ছবি: PAVLO PALAMARCHUK/REUTERS
ভাই-বোনের ট্রেনের অপেক্ষা
ইউক্রেনের এলভিভ রেলস্টেশনের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে ভাই৷ কোলে ঘুমন্ত ছোট্ট বোন৷ ইউক্রেন ছাড়ার ট্রেনের অপেক্ষায় তারা৷
ছবি: KAI PFAFFENBACH/REUTERS
গন্তব্যের অপেক্ষা
ইউক্রেনের কিয়েভ থেকে সিরাত সীমান্ত দিয়ে রোমানিয়ায় প্রবেশ করেছে ছোট্ট আলোকসান্দ্রা আর তার মা৷ এখন গন্তব্য রাজধানী বুখারেস্ট৷ ট্রেন স্টেশনে অপেক্ষা করার সময় মায়ের ফোনে কার্টুন দেখছে সে৷
ছবি: CLODAGH KILCOYNE/REUTERS
বার্লিনের পথে
পোল্যান্ডের ক্রাকাও থেকে বার্লিনে যাচ্ছেন ইউক্রেন থেকে পালিয়ে আসা এই মা৷ ট্রেনে ঘুমিয়ে পড়েছে দুই সন্তান৷ কিন্তু মায়ের চোখে ঘুম নেই৷ অজানা ভবিষ্যতের পথে চলেছেন৷ তাই চোখে হতাশা আর উৎকণ্ঠা৷
ছবি: FABRIZIO BENSCH/REUTERS
নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে
পোল্যান্ডের ক্রাকাও থেকে জার্মানির রাজধানী বার্লিন যাচ্ছে ট্রেনটি৷ ইউক্রেন থেকে পালিয়ে আসা অনেক মানুষ এই ট্রেনটিতে৷ গাদাগাদি করে বসেছেন নারী ও শিশুরা৷ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে চলেছেন তারা৷
ছবি: FABRIZIO BENSCH/REUTERS
দেশ ছাড়ার অপেক্ষা
ইউক্রেনের লভিভ রেলস্টেশনে হাজারো মানুষের ভিড়৷ অনেক শিশু রয়েছে সেখানে৷
ছবি: PAVLO PALAMARCHUK/REUTERS
ফেলে আসা প্রিয়জন
৩২ বছর বয়সি আনা, সন্তানদের নিয়ে পোল্যান্ডের ক্রাকাও থেকে বুদাপেস্ট যাওয়ার ট্রেনে উঠেছেন৷ ইউক্রেনে থেকে গেছেন তার স্বামী অর্থোডক্স চার্চের যাজক মিখাইল পিটনিস্কি৷ অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পথে যাত্রা৷ তাই চোখের জল বাঁধ মানছে না আনার৷
রাশিয়া এবং ইউক্রেনের আলোচনা ঠিক কোন পর্যায়ে আছে, তা নিয়ে নানা মহলে জল্পনাকল্পনা চলছে। এর আগে ইউরোপের বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম জানিয়েছিল, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের বেশ কিছু দাবি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি মেনে নিতে রাজি হয়েছিলেন। রাশিয়ার দাবি ছিল, ইউক্রেন ন্যাটোর অংশ হতে পারবে না। ক্রাইমিয়াকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে মেনে নিতে হবে। বিদেশি কোনো রাষ্ট্রকে ইউক্রেনের সেনা ঘাঁটি বানাতে দেওয়া যাবে না। সম্প্রতি পূর্ব ইউক্রেনের যে দুইটি রাজ্য নিজেদের স্বাধীন ঘোষণা করেছে, ইউক্রেনকে তাদের মান্যতা দিতে হবে।
যুক্তরাজ্যের একটি সংবাদমাধ্যম প্রথম জানিয়েছিল, জেলেনস্কি বলেছেন, ইউক্রেন ন্যাটোর অংশ না হলেও ক্ষতি নেই। দুই দেশের আলোচনা যথেষ্ট এগিয়েছে বলেও সেখানে দাবি কার হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে কি তার কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে?
পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার কি আসন্ন!
ভূরাজনীতি কি আবার ঠান্ডাযুদ্ধের সময়ে পৌঁছে যাচ্ছে? বাড়ছে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের আশঙ্কা?
ছবি: KCNA via KNS/AP Photo/picture alliance
সময়ের চাকা
ঠান্ডা যুদ্ধের সময় পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের আশঙ্কা সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছিল। পরমাণু অস্ত্র প্রদর্শনের আস্ফালনও ছিল চরম। সোভিয়েতের পতনের পর তা খানিকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। বর্তমান সময়ে ফের পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের আশঙ্কা বেড়েছে বলে মনে করছেন কূটনীতিকদের একাংশ।
ছবি: Pavel Golovkin/AP/picture alliance
রাশিয়ার অবস্থান
ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন রাশিয়ার নিউক্লিয়ার ফোর্সের জন্য বিশেষ অ্যালার্ট জারি করেছেন। আর তাতেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে বিশ্বের একাধিক দেশ।
ছবি: Mark Schiefelbein/AP/picture alliance
রাশিয়ার নিউক্লিয়ার ক্ষমতা
রাশিয়ার হাতে সবচেয়ে বেশি পরমাণু অস্ত্র আছে। সবমিলিয়ে তাদের পরমাণু ওয়ারহেড ছয় হাজার ৩০০।
ছবি: Oleg Kuleshov/TASS/dpa/picture alliance
অ্যামেরিকার পারমাণবিক শক্তি
ন্যাটোর সঙ্গে যৌথভাবে অ্যামেরিকার পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা পাঁচ হাজার ৮০০। যদিও এই সংখ্যা আরো বেশ বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। অ্যামেরিকা সব অস্ত্রের খতিয়ান দেয়নি বলেই মনে করা হয়।
ছবি: picture-alliance/AP/US Navy/R. Rebarich
ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্য
ফ্রান্সের হাতে আছে ৩০০ এবং যুক্তরাজ্যের হাতে ২১৫টি পরমাণু অস্ত্র আছে।
ছবি: Ludovic Marin/AFP/Getty Images
চীনের শক্তি
বেজিংয়ের কাছে ৩২০টি পরমাণু অস্ত্র আছে। তবে চীনও গোপনে পরমাণু অস্ত্রের সম্ভার বাড়িয়েছে বলে মার্কিন গোয়েন্দাদের ধারণা।
ছবি: Stephen Shaver/UPI Photo/Newscom/picture alliance
পরমাণু শক্তি ব্যবহারের মানসিকতা
পরমাণু শক্তি ব্যবহার করা হবে কি না, তা নিয়ে বিভিন্ন দেশের মানসিকতা আলাদা। ফ্রান্স এবং ব্রিটেন পরমাণু শক্তি ব্যবহারের পক্ষপাতী নয়। তাদের বক্তব্য, পরমাণু শক্তিকে সামনে রেখে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। পরমাণু শক্তি ব্যবহার করা যাবে না।
ছবি: Takuya Yoshino/AP/picture alliance
মার্কিন অভিমত
অ্যামেরিকা মনে করে, প্রয়োজনে পরমাণু শক্তি ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু তার মাত্রা হবে কম। নির্দিষ্ট লক্ষ্যে তা পৌঁছে যাবে। এ কারণে, কম শক্তির পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে জোর দিয়েছে অ্যামেরিকা। মার্কিন প্রশাসন মনে করে, কোনো না কোনো সময়ে কম শক্তির পরমাণু যুদ্ধ হবে।
ছবি: picture-alliance/AP Photo
জার্মানির কুচকাওয়াজ
জার্মানির টর্নেডো যুদ্ধবিমানের ফাইটার পাইলটদের পরমাণু বোমা ফেলার ট্রেনিং দেওয়া হয়। জার্মানিতে সঞ্চিত মার্কিন পরমাণু বোমা যে কোনো সময় টর্নেডো বিমানের সাহায্যে বিশ্বের যে কোনো জায়গায় ফেলতে পারেন এই পাইলটরা। বছরে একবার নকল বোমা নিয়ে তারা কুচকাওয়াজ করে।
ছবি: Getty Images/AFP/S. Gallup
নেদারল্যান্ড, বেলজিয়াম, ইটালি
এই তিন দেশও ন্যাটোর পরমাণু প্রকল্পের অংশ। এখানেও অ্যামেরিকার ১০০ থেকে ১৫০টি পরমাণু পরমাণু বোমা রাখা আছে। টর্নেডো বিমানে যা বহন করা যায়।
ছবি: Michael Varaklas/AP Photo/picture alliance
পরমাণু অস্ত্র এবং আন্তর্জাতিক আইন
কম শক্তির পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রেও আন্তর্জাতিক আইনে নিষেধ আছে। এর শাস্তি চরম হতে পারে। তবে কম শক্তির পরমাণু অস্ত্র সমুদ্রে ব্যবহার করার সুযোগ এখনো আছে। এমনকী, যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস করতেও তা ব্যবহার করা যেতে পারে।
ছবি: Zaporizhzhya NPP/REUTERS
11 ছবি1 | 11
বিশেষজ্ঞদের একটি অংশের বক্তব্য, যুদ্ধবিরতি ঘোষণা না করে এই ধরনের আলোচনার কোনো অর্থ হয় না। বৈঠক এখনো পর্যন্ত খুব বেশি এগিয়েছে বলে তারা মনে করছেন না। শুধু তা-ই নয়, বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ইউক্রেনও এখনো পর্যন্ত রাশিয়ার সমস্ত দাবি মানতে রাজি হয়নি। এবং সে কারণেই লড়াই অব্যাহত। অদূর ভবিষ্যতে লড়াই থামবে বলেও তারা মনে করছেন না।
বস্তুত, জেলেনস্কির বক্তব্যেও লড়াই থামার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। সম্প্রতি তিনি ভিডিও কলে ইসরায়েলের পার্লামেন্টে বক্তৃতা দিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, ''কেন আমরা ইসরায়েলের কাছ থেকে অস্ত্র পাব না? কেন ইসরায়েল ক্রেমলিনের বিরুদ্ধে কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করবে না?'' ইসরায়েল ইউক্রেনের সাধারণ মানুষ এবং বিশেষত ইউক্রেনের ইহুদিদের রক্ষা করতে পারে বলে দাবি করেছেন জেলেনস্কি। এরপরেই ইসরায়েলের কাছে আয়রন ডোম ডিফেন্স সিস্টেম চান জেলেনস্কি। তবে ইসরায়েল তাদের তা দেবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
জেলেনস্কি যখন এ কথা বলছেন, ঠিক তখনই কিয়েভের সিটি কাউন্সিল জানায়, রাশিয়ার বোমারু আক্রমণে কিয়েভের একটি অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাঁচজনের মৃত্যুর কথাও বলা হয়।
অন্যদিকে ইউক্রেন দাবি করেছে, মারিউপল বন্দরের কাছে রাশিয়ার এক নৌসেনা কম্যান্ডারের মৃত্যু হয়েছে। কৃষ্ণসাগরে ওই অফিসার লড়াই চালাচ্ছিলেন বলে দাবি করা হয়েছে। বস্তুত, কৃষ্ণসাগরে রাশিয়া প্রায় দুইশ জাহাজ আটকে রেখেছে বলে অভিযোগ। রাশিয়া অবশ্য ইউক্রেনের দাবি নিয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো বিবৃতি প্রকাশ করেনি।