ইউক্রেন-রাশিয়া লড়াই। ভারতে শেয়ার বাজারে ধস। সোনার দাম প্রতিদিন বাড়ছে।
বিজ্ঞাপন
গত এক সপ্তাহে ভারতে সোনার দাম ব্যাপক হারে বেড়েছে। গত পাঁচ দিনে সোনার দাম বেড়েছে এক হাজার ৫০ টাকা। জিএসটি ধরলে আরো বেশি। ১০ গ্রাম কাঁচা সোনা বিক্রি হচ্ছে ৫৪ হাজার ১৫০ টাকায়। আর গয়না সোনার দাম জিএসটি ধরে পৌঁছে গেছে ৫৫ হাজার ৭৭৫ টাকায়। সোনা ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, লড়াই চলতে থাকলে এবং শেয়ার বাজারে ধস অব্যাহত থাকলে আগামী এক সপ্তাহে সোনার দাম ৬০ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
বস্তুত গত ছয়মাসে ভারতের শেয়ার বাজারে লাগাতার উত্থান হয়েছে। নিফটি ১৬ হাজার পয়েন্ট ছাড়িয়ে গেছিল এক সময়। গত ১০ দিনে সেই বাজারে লাগাতার ধস নেমেছে। শুধু সোমবারই সেনসেক্স নেমেছে দুই হাজার পয়েন্ট। মঙ্গলবার সকালে বাজার খুলেছে ৫২ হাজার ৮৪২ দশমিক ৭৫ অঙ্কে। গত সপ্তাহের চেয়ে যা প্রায় ১৫০০ পয়েন্ট কম। নিফটি নেমে হয়েছে ১৫ হাজার ৮৬৩ দশমিক ১৫ পয়েন্ট। যার জেরে লগ্নিকারীরা হারিয়েছএন ১১ দশমিক ২৮ লাখ কোটি টাকা।
সবচেয়ে বেশি স্বর্ণের মালিক যে ১০ দেশ
স্বর্ণ মজুদের ক্ষেত্রে শীর্ষ দেশগুলোর একটি তালিকা প্রকাশ করেছে ফোর্বস ম্যাগাজিন৷ তালিকায় শীর্ষ আছে অ্যামেরিকা, আর দশম ভারত৷ ছবিঘরে দেখে নিন কাদের স্বর্ণের পরিমাণ কতো৷
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS.com/Miami Herald
১০. নেদারল্যান্ডস
নেদারল্যান্ডসের প্রধান ব্যাংকে মজুদ আছে ৬১২ টন স্বর্ণ৷ সম্প্রতি ব্যাংকটি বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত এনেছে৷
ছবি: imago/J. Tack
৯. ভারত
ভারতীয়দের স্বর্ণের প্রীতি সর্বজনবিদিত৷ পৃথিবীতে স্বর্ণের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোক্তাও দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি৷ বর্তমানে ৭৮৭ টন স্বর্ণের মজুদ আছে ভারতের৷
ছবি: dapd
৮. জাপান
বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ অর্থনীতির দেশ জাপানে স্বর্ণের মজুদ আছে ৮৪৬ টন৷ ২০১৬ সালে স্বর্ণ রিজার্ভে সুদের হার শূন্যতে নামিয়ে আনে দেশটি, যার ফলে বিশ্বব্যাপী স্বর্ণের আদান-প্রদান বেড়ে যায়৷
ছবি: DW
৭. সুইজারল্যান্ড
১ হাজার ৪০ টন স্বর্ণের মজুদ আছে সুইজারল্যান্ডের৷ মজুদের পরিমাণের বিচারে সপ্তম অবস্থানে থাকলেও মাথাপিছু মজুদের ক্ষেত্রে দেশটি এক নম্বরে আছে৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ইউরোপের স্বর্ণ বেচাকেনার প্রধান কেন্দ্র ছিল সুইজারল্যান্ড, একইসঙ্গে মিত্রশক্তি ও অক্ষশক্তি উভয়ের লেনদেন ছিল তাদের সঙ্গে৷
ছবি: Reuters/R. Sprich
৬. চীন
চীনে স্বর্ণের মজুদ আছে ২০১১ টন৷ স্বর্ণ মজুদের ক্ষেত্রে পিপলস ব্যাংক অব চায়না ষষ্ঠ অবস্থানে থাকলেও তা দেশটির মোট রিজার্ভের মাত্র ২ দশমিক ৪ শতাংশ৷ বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর হিসাবে স্বর্ণ রিজার্ভে ব্যাংকটির অবস্থান ১০ম৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Schiefelbein
৫. রাশিয়া
গত ছয় বছর ধরে বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্বর্ণের ক্রেতা রাশিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংক৷ মোট ২,২২৯ টন স্বর্ণের মজুদ নিয়ে পঞ্চম অবস্থানে আছে দেশটি৷ ২০১৭ সালে ২২৪ টন স্বর্ণ কেনার কারণে চীনকে টপকে পঞ্চম স্থানে আসতে পেরেছে রাশিয়া৷
ছবি: picture-alliance/TASS/S. Bobylev
৪. ফ্রান্স
গত কয়েক বছরে কিছু পরিমাণ বিক্রির পরও স্বর্ণ মজুদে চতুর্থ স্থানে আছে ফ্রান্স৷ বর্তমানে ইউরোপীয় দেশটির স্বর্ণ মজুদের পরিমাণ মোট ২,৪৩৬ টন৷
ছবি: picture-alliance/imagebroker/S. Randebrock
৩. ইটালি
বহু বছর ধরে একই পরিমাণ স্বর্ণের মজুদ বজায় রেখেছে ইটালি৷ বর্তমানে তাদের ২,৪৫১ দশমিক ৮ টন স্বর্ণের মজুদ রয়েছে৷ ডলারের দর উত্থান-পতনের বিপরীতে নিজেদের অবস্থান ঠিক রাখার স্বার্থে মজুদ ধরে রাখার কথা বলে থাকে দেশটি৷
ইউরোপীয় দেশ হিসাবে সবচেয়ে বেশি স্বর্ণের মজুদ আছে জার্মানিতে৷ দেশটির মোট স্বর্ণের মজুদ ৩,৩৭১ টন৷ ২০১৭ সালে দেশটি ফ্রান্স ও অ্যামেরিকার দু’টি ব্যাংক থেকে ৬৭৪ টন স্বর্ণ দেশে ফিরিয়ে এনেছে৷
ছবি: picture-alliance / dpa
১. অ্যামেরিকা
স্বর্ণ মজুদের ক্ষেত্রে অনেক বছর ধরে বিশ্বব্যাপী সর্বোচ্চ অবস্থানে আছে অ্যামেরিকা৷ বর্তমানে দেশটির মোট ৮,১৩৩ দশমিক ৫ টন স্বর্ণের মজুদ রয়েছে৷ তালিকার পরবর্তী তিন দেশের স্বর্ণের পরিমাণ অ্যামেরিকার পরিমাণের প্রায় সমান৷
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS.com/Miami Herald
10 ছবি1 | 10
কেন এই ধস
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, রাশিয়া-ইউক্রেন লড়াই শুরু হওয়ার পর বিশ্ব শেয়ার বাজারে ধস নামতে শুরু করে। তারই রেশ এসে পড়েছে ভারতের বাজারে। বহু বিনিয়োগকারী বাজার থেকে টাকা তুলে নিতে শুরু করেন। ফলে শেয়ার বাজার আরো চাপে পড়ে যায়। লগ্নিকারীরা ক্ষতির ভয়ে টাকা তুলেছেন। অন্যদিকে বিশ্ববাজারে ধস নেমেছে। জোড়া ফলায় কার্যত ধসে গেছে ভারতের শেয়ার বাজার। বস্তুত, লড়াই শুরুর আগের বাজারের সঙ্গে যদি বর্তমান বাজারের তুলনা করা হয়, তাহলে বাজার নেমেছে আড়াই হাজার পয়েন্টরও বেশি।
ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক ডিরেক্টর বিনয় আগরওয়াল জানিয়েছেন, ভারতীয় অর্থনীতির গতি ক্রমশ রুদ্ধ হচ্ছে। লড়াই দীর্ঘস্থায়ী হলে তার আরো বেশি প্রভাব পড়বে শেয়ার বাজারে। ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক সভাপতির মতও একই। তার বক্তব্য, 'তেলের দাম কোথায় গিয়ে পৌঁছায়, তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।'
বস্তুত সোমবার বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ১৩৭ ডলারে পৌঁছেছে। ১০ মার্চ পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হওয়ার পর ভারতে তেলের দাম অনেকটাই বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ। এবং তার জের শেয়ার বাজারে গিয়েও পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
ভারতীয় মধ্যবিত্ত এখন অনেকটাই খোলা বাজারের উপর নির্ভরশীল। সকলেই মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করেন। ফলে শেয়ার বাজারের এই ধস মধ্যবিত্তের কপালেও ভাঁজ ফেলেছে।