আগামী সপ্তাহেই অ্যামেরিকা, ইউরোপ, রাশিয়া ও ইউক্রেন আলোচনার মাধ্যমে বর্তমান সংকটের সমাধানসূত্র খোঁজার চেষ্টা চালাবে৷ তবে প্রাথমিক এই সংলাপকে ঘিরে প্রত্যাশা কম রাখা হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
ইউক্রেনকে ঘিরে অনেক তর্জন-গর্জন, উত্তেজনার পর রাশিয়া ও পশ্চিমা জগতের মধ্যে আপোশের একটা ক্ষীণ সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে৷ এই প্রথম রাশিয়া, ইউরোপ, অ্যামেরিকা ও ইউক্রেনের মধ্যে সংলাপ হতে চলেছে৷ এখনো পর্যন্ত রাশিয়া ইউক্রেনের বর্তমান সরকারকে বৈধতা দেয়নি, তাদের সঙ্গে আলোচনা করারও প্রয়োজন মনে করেনি৷ চার পক্ষের এই আলোচনার দিনক্ষণ নিয়েও বিভ্রান্তি রয়ে গেছে৷ শোনা যাচ্ছে, হয় ১৭ই এপ্রিল ভিয়েনা অথবা ১৬ই এপ্রিল জেনিভাতে এই বৈঠক বসতে পারে৷
রাশিয়ার ক্রাইমিয়া অধিগ্রহণ নিয়ে আপাতত কোনো আপোশের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না৷ কিন্তু ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার কার্যকলাপকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা যাতে আরও বেড়ে না যায় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায়, সেটা নিশ্চিত করাই মূল লক্ষ্য৷
ক্রাইমিয়ায় সব শান্ত?
সবার মনোযোগ এখন ইউক্রেনের ক্রাইমিয়ার দিকে৷ ক্রাইমিয়ায় যা ঘটেছে তাকে রাশিয়ার আগ্রাসন বলা হলেও রুশ সেনাদের কিন্তু সাদরে গ্রহণ করে নিয়েছে স্থানীয়রা৷ ছবিঘরে দেখুন ক্রাইমিয়ার পরিস্থিতি৷
ছবি: DW/F. Warwick
কোসাকদের আগমন
রাশিয়ার ক্রাসনোডার থেকে এসেছে ২৫০ জনের মতো কুবান কোসাক৷ সামরিক বাহিনীর পোশাক পরেননি তাঁরা৷ সেভাস্টোপোলের রুশপন্থি কর্তৃপক্ষ কোসাকদের শপথ পাঠ করিয়েছে৷ স্বেচ্ছাসেবী কোসাকরা জানিয়েছে, ক্রাইমিয়াবাসীদের রক্ষা করার জন্য তারা স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে কাজ করবে৷
কুবান কোসাকরা সেভাস্টোপোলের পুলিশের সঙ্গে টহলে অংশ নিচ্ছে৷ মাথায় উলের টুপি পরে রবি বার থেকে রাস্তায় টহল দিচ্ছে কোসাকরা৷ ২০০৫ সালে এথনিক সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী এবং শক্তিশালী সামরিক শক্তি হিসেবে কোসাকদের স্বীকৃতি দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন৷
ছবি: DW/F. Warwick
কঠিন সময়ে নিরাপত্তা
রাশিয়া এবং ক্রাইমিয়ার টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন কোসাকদের নেতা কর্নেল সের্গেই সাভোনিন ইউরিয়েভিচ৷ তিনি বলেন, কোসাকরা সেভাস্টোপোলের মানুষদের রক্ষা করার জন্য এসেছে৷
ছবি: DW/F. Warwick
‘স্বায়ত্তশাসন, বিচ্ছিন্নতাবাদ নয়’
ক্রাইমিয়ায় অনেকের হাতেই দেখা যায় ক্রাইমিয়া এবং রাশিয়ার পতাকা৷ এর অর্থ এই নয় যে, ক্রাইমিয়া ইউক্রেন থেকে আলাদা হয়ে গেছে৷ সেভাস্টোপোলের এই তরুণ-তরুণীরা জানালেন, তাঁরা ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ চাননা, কেননা ইউক্রেনকে তাঁরা ভ্রাতৃপ্রতীম রাষ্ট্র মনে করেন৷ তাঁদের দাবি একটাই – স্বায়ত্তশাসন এবং এথনিক রুশ হিসেবে প্রাপ্য মর্যাদা৷
ছবি: DW/F. Warwick
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি?
এই প্রবীণ এসেছেন কোসাকদের সমর্থন জানাতে৷ রাশিয়ার প্রতি তাঁর পূর্ণ সমর্থন রয়েছে৷ পরনে রুশ সেনাবাহিনীর মতো কমলা আর কালো রংয়ের পোশাক৷ তিনি নিজেও সোভিয়েত ইউনিয়নের রেড আর্মির সাবেক কর্মকর্তা৷
ছবি: DW/F. Warwick
রাস্তায় তল্লাশি
সিমফারোপোল এবং সেভাস্টোপোলের মাঝের হাইওয়েতে গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে রুশপন্থি বেসামরিক বাহিনীর সদস্যরা৷
ছবি: DW/F. Warwick
ব্যবসার জন্য খারাপ সময়?
লিলিয়া ভজনুক একজন স্যুভেনির বিক্রেতা৷ রাবারের তৈরি মুখোশগুলোর মধ্যে পুটিনের চেহারার মুখোশটার এখন দারুণ কাটতি৷ তবু খুব চিন্তায় আছেন লিলিয়া৷ চলমান সংকট ব্যবসার বড় রকমের ক্ষতি করবে বলে আশঙ্কা তাঁর৷
ছবি: DW/F. Warwick
হৃদয়-মন জয় করেছে তাঁরা
সেভাস্টোপোলে গেলেই ব্ল্যাক সি ফ্লিট অঁসম্বল-এর কনসার্ট দেখতে পাবেন৷ নাচ-গানের এই স্থানীয় সংগঠনটি তাদের পরিবেশনা দিয়ে সবার মন জয় করেছে৷ রুশ লোকসংগীতে সাগরের প্রশংসা করে যেসব গান রচনা করা হয়েছে মূলত সেগুলোই পরিবেশন করে ব্ল্যাক সি ফ্লিট অঁসম্বল৷ রাশিয়ার ঐতিহ্যবাহী ইয়াব্লোচকো বা ‘ছোট্ট আপেল’ নাচটা সত্যই মনোমুগ্ধকর৷
ছবি: DW/F. Warwick
চাই শুধু স্বায়ত্তশাসন
সেভাস্টোপোলের অধিকাংশ মানুষই রুশ জাতীয়তাবাদের সমর্থক৷ ইউক্রেনীয়দের তারা অবিশ্বাস করে, মনে করে ইউক্রেনীয়রা চরম ডানপন্থি৷ সেভাস্টোপোলের মানুষ মনে করে রুশ বাহিনীর উপস্থিতি এ অঞ্চলের স্বায়ত্তশাসন এবং নিরাপত্তার রক্ষাকবচ৷
ছবি: DW/F. Warwick
10 ছবি1 | 10
অ্যামেরিকা সহ ইউরোপের অনেক দেশের দাবি, রাশিয়া সরাসরি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে কলকাঠি নাড়ছে৷ সেখানে রুশপন্থি জনতা কিয়েভ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রাশিয়ার প্রতি প্রকাশ্য আনুগত্য দেখাচ্ছে৷ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেছেন, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে যে সব ঘটনা দেখা যাচ্ছে, তা মোটেই স্বতঃস্ফূর্ত নয়৷ রাষ্ট্র হিসেবে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সুপরিকল্পিত অভিযানের স্পষ্ট চিহ্ন টের পাওয়া যাচ্ছে৷ প্ররোচনা, বিচ্ছিন্নতাবাদে উদ্বুদ্ধ করা ও অন্তর্ঘাতের মাধ্যমে এ কাজ করা হচ্ছে৷
অন্যদিকে ইউক্রেন সংকটকে অজুহাত হিসেবে তুলে ধরে ন্যাটো পূর্ব ইউরোপে তাদের কর্তৃত্ব আরও জোরদার করার চেষ্টা করছে বলে রাশিয়া অভিযোগ জানিয়েছে৷ কাল্পনিক হুমকি খাড়া করে তারা সদস্য দেশগুলির উপর প্রভাব আরও বাড়াতে চাইছে বলে মন্তব্য করেছে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ রাশিয়ার সঙ্গে শত্রুতার পরিণতি যে ইউরোপের পক্ষে ভালো হবে না, এমন প্রচ্ছন্ন হুমকির সুরও শোনা যাচ্ছে৷ রাশিয়ার উপ প্রধানমন্ত্রী ইগর শুভালভ বার্লিনে বলেছেন, রাশিয়া এতকাল পশ্চিমা দেশগুলির জন্য এক নির্ভরযোগ্য জ্বালানি সরবরাহকারী দেশ হিসেবে আচরণ করে এসেছে৷ কিন্তু মস্কোর জ্বালানি পেতে অন্য অনেক দেশ আগ্রহী৷ ফলে রাশিয়া ইউরোপের উপর যে নির্ভরশীল নয়, তা তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন৷
চার পক্ষের আলোচনার আগে ইউক্রেনের সরকারও দেশের পূর্বাঞ্চলে রাশিয়াপন্থি বিক্ষোভকারীদের প্রতি কিছুটা নমনীয় মনোভাব দেখাচ্ছে৷ যারা সরকারি ভবন দখল করে রেখেছে, তারা অস্ত্র ত্যাগ করলে তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে কিয়েভ সরকার৷