ইউক্রেনের যুদ্ধে অন্তত দু'লাখ পনেরো হাজার শিশু স্বদেশেই বাস্তুহারা হয়েছে; যুদ্ধের বিভীষিকায় মানসিকভাবে পীড়িত আরো অনেক শিশু৷ ইউনিসেফ এদের সাহায্য করার জন্য ‘‘অবাধ প্রবেশাধিকার'' চায়৷
বিজ্ঞাপন
‘‘সরকারের নিয়ন্ত্রিত নয় এবং রণাঙ্গণের নিকটবর্তী এলাকা সমূহের ৫,৮০,০০০ শিশু ইউক্রেন সংঘাতের দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছে'', ইউনিসেফ তার বিবরণে বলেছে৷
ইউক্রেনের ক্রেমলিন-সমর্থিত প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ-এর বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের গণতন্ত্র আন্দোলনের পর পূর্ব ইউক্রেনে যে সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহ শুরু হয়, তার ফলশ্রুতি স্বরূপ প্রায় ২,১৫,০০০ শিশু গৃহহারা হয়েছে, বলে জানিয়েছে ইউনিসেফ৷
‘‘দু'বছর ধরে সহিংসতা, গোলাবর্ষণ আর আতঙ্ক পূর্ব ইউক্রেনের হাজার হাজার শিশুর মনে অনপনেয় ছাপ রেখে গেছে'', বলেছেন ইউক্রেনে ইউনিসেফ-এর প্রতিনিধি জোভান্না বারবেরিস৷ ‘‘যত এই সংঘাত চলবে, ততই আমাদের এই সব শিশুদের কাছে পৌঁছানো জরুরি হয়ে পড়বে, যাতে আমরা তাদের শারীরিক ও মানসিক সুবিধা-অসুবিধার দেখাশোনা করতে পারি'', বলেন তিনি৷
ইউনিসেফ-এর রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৫ সালে পূর্ব ইউক্রেনের সংঘাতে অন্তত ২০ জন শিশু নিহত ও আরো ৪০ জন শিশু নিহত হয়েছে৷ এছাড়া মাইন ও অবিস্ফোরিত গোলাগুলি ফেটে ২৮ জন শিশু নিহত হয়েছে৷ ‘‘ইউনিসেফ ইউক্রেন সংঘাতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রতি পীড়িত শিশুদের সাহায্যের জন্য নিরাপদ গতিবিধি ও মানবিক ত্রাণ পৌঁছনোর অবাধ প্রবেশাধিকার দানের আহ্বান জানাচ্ছে'', বলেছেন বারবেরিস৷
যুদ্ধ অব্যাহত, স্বপ্ন ও দুঃস্বপ্নের মাঝে ইউক্রেনবাসী
রুশপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের রকেট হামলা আর গোলাগুলিতে জর্জরিত ইউক্রেন৷ এর মধ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত পূর্বাঞ্চলের ‘ফ্রন্ট’ বরাবর কয়েক মাস কাটিয়েছেন ফিলিপ ভোরিক৷ পেশায় ফটো সাংবাদিক৷ সাধারণ মানুষের কষ্ট তাঁর ক্যামেরার চোখ এড়ায়নি৷
ছবি: DW/F. Warwick
অকথ্য যন্ত্রণা
ইনি মারিউপোলের বাসিন্দা৷ একটি রকেট হামলায় তাঁর নয় তলার ফ্ল্যাট বাড়িটি গুড়িয়ে গেছে৷ সব হারিয়ে আজ তিনি দিশেহারা৷
ছবি: DW/F. Warwick
হঠাৎ করেই নিঃস্ব
৮৩ বছরের এই বৃদ্ধা নিজের বাড়ির সামনেই দাঁড়িয়ে৷ তবে বাড়ি বললে বোধহয় ভুল বলা হবে এখন, কারণ, রকেট হামলা তাঁর শেষ সম্বল এই বাসস্থানও কেড়ে নিয়েছে৷
ছবি: DW/F. Warwick
জীবনের ঝুঁকি
ডেবাল্টসেভে শহরের একটা রাস্তা৷ মেয়েটি যে বাড়ির জানালা পরিষ্কার করছে ভোরের দিকে সেখানে একটি ‘মিসাইল’ আছড়ে পড়েছিল৷ আজকাল এখানে সারাদিনই গুলির আওয়াজ শোনা যায়৷
ছবি: DW/F. Warwick
যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই
বোমা হামলা থেকে বাঁচতে আজ এখানে আশ্রয় নিয়েছে তাঁরা৷ সকাল সকাল বেসরকারি একটি সংস্থার কাছে থেকে জল, খাবার-দাবার আর রাতের জন্য কম্বলখানা জোগাড় করে আবার এখানেই ফিরতে হবে৷ মনে একটাই প্রশ্ন – এ যুদ্ধ শেষ হবে তো?
ছবি: DW/F. Warwick
ভয়ের পরে ভয় জমেছে
ক’দিন আগে মারিউপোলের এই পরিবারটিকে বাড়ির ‘বেসমেন্ট’-এ আশ্রয় নিতে হয়েছিল৷ সারাদিন ধরে রকেট হামলা চলছিল – ভয় তো পাওয়ারই কথা৷ পরে একটি স্বেচ্ছাসেবক দল তাদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেয়৷ বাড়ি ফেরার কথা শুনলে আজও তাদের বুক কাঁপে৷
ছবি: DW/F. Warwick
বিপদ সংকেত
ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাড়ি-ঘর, দোকান-পাট পাহারা দিচ্ছে পুলিশ৷ যে কোনো সময় আবারো রকেট আর বোমা হামলার আশঙ্কা যে এখনো আছে...!
ছবি: DW/F. Warwick
শুধু ধ্বংসস্তূপ
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের পোপাসনা অঞ্চল৷ সেখানকারই বাসিন্দা এই নারী৷ নিজের বসতবাড়িটি আজ ধ্বংসস্তূপ ছাড়া কিছুই নয়৷ অবশিষ্ট পাথর-নুড়ির মধ্যেই কী যে খুঁজছেন তিনি!
ছবি: DW/F. Warwick
কোনো রকমে বেঁচে থাকা
বোমা হামলায় জানলাটা গেছে৷ জানালা ভাঙা ঘরেই থাকতে হবে, কারণ যাওয়ার যে কোনো জায়গা নেই! কাঠ দিয়ে কোনো রকমে জানলাটা ঢাকার চেষ্টা চলছে৷ রাতে যে ভীষণ শীত পড়ে!
ছবি: DW/F. Warwick
খেটে খাওয়া প্রজন্ম
ছবির এই বাচ্চা থেলেটির নাম ডানিলো৷ বয়স ৯, বাড়ি পোপাসনায়৷ ওরও আজ মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই৷ বাবা-মা ওকে এমনটাই বলেছে৷
ছবি: DW/F. Warwick
সমব্যথীর হাত...
ফেটে যাওয়া গ্যাস পাইপ মেরামতের চেষ্টা করছেন পোপাসনার এক বাসিন্দা৷ মর্টার এবং রকেট হামলায় বিদ্ধস্ত গোটা এলাকাটা৷ সরকারের জরুরি উদ্ধার ও ত্রাণ কর্তৃপক্ষের কাজ শুরু করাটা খুব দুষ্কর ও সময় সাপেক্ষ, তাই স্থানীয়রাই বাড়িয়েছে সাহায্যের হাত৷
ছবি: DW/F. Warwick
স্বস্তিতে নেই কেউ
পোপাসনার একটা মানসিক হাসপাতাল৷ সেখানে রোগীদের তালিকা দেখছেন এক ডাক্তার৷ অনেক রোগী সেখানে৷ সবার মনেই আতঙ্ক৷ কিছুক্ষণ পর পরই যে শোনা যাচ্ছে রকেট, মর্টার আর বোমা বিস্ফোরণের শব্দ!
ছবি: DW/F. Warwick
11 ছবি1 | 11
গত জানুয়ারি মাসে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাংক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার বলেন যে, ওএসসিই অর্থাৎ ইউরোপীয় ও নিরাপত্তা সংগঠনের সভাপতিত্ব করার সময় জার্মানি ইউক্রেন সংঘাতকে অগ্রাধিকার দেবে৷ ‘‘আমাদের আলাপ-আলোচনা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করার কোনো দরকার নেই, বরং (আমাদের চাই) এমন একটা সংলাপ,যা ওএসসিই সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় দায়িত্বগুলোকে ধামাচাপা দেবে না – যেমন জবরদখলের মতো অপরাধ'', স্টাইনমায়ার বলেন, রাশিয়া যে ক্রাইমিয়া জবরদখল করেছে, তার প্রতি ইঙ্গিত হিসেবে৷
ইউক্রেন সংঘাতে এ পর্যন্ত প্রায় ন'হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন৷ রাশিয়া পূর্ব ইউক্রেনের বিদ্রোহীদের সাহায্য করছে, বলে অভিযোগ আছে, যদিও মস্কো সে অভিযোগ অস্বীকার করে৷
এই শিশুদের কি কোনোভাবে বাঁচানো যায় না? কিন্তু কিভাবে? জানান নীচের ঘরে৷
ইউক্রেনীয়-রুশি প্রেমকাহিনী
ইউক্রেন আর রাশিয়ার সংঘাত দু’দেশের মানুষকে পরস্পরের কাছ থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে৷ তবে দম্পতি আর প্রেমিক-প্রেমিকারা সেতুবন্ধনের কাজ করে চলেছেন ঠিক আগের মতোই৷
ছবি: Oksana Yushko
আর্টুর আর অক্সানা
‘আমি (এই ছবিঘরের স্রষ্টা) নিজে রুশি৷ আর্টুর হলো ইউক্রেনীয়৷ তিন বছর আগে একটা ফটোগ্রাফি ওয়ার্কশপ করার সময় আমাদের বন্ধুত্ব হয়৷ তারপর বিদেশে৷ সবশেষে আর্টুর মস্কোয় এসে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়৷ আজ আমার একসঙ্গে থাকি, বিদেশে যাই, রাশিয়া কিংবা ইউক্রেনে গিয়ে পরিবারের লোকজনদের সঙ্গে দেখা করি৷’
ছবি: Oksana Yushko
অল্গা আর ভ্লাদিমির
ভ্লাদিমির একজন আধুনিক শিল্পী, অল্গা ব্যালেরিনা৷ অল্গার জন্ম ইউক্রেনের কিরোভোগ্রাদস্কায়া অঞ্চলে৷ ওরা ওদের সদ্যোজাত শিশুসন্তান নিয়ে রাশিয়ার খিমকিতে থাকে৷ এক বন্ধু ফেসবুকে অক্সানার ছবি পোস্ট করার পর অল্গা আর ভ্লাদিমিরই প্রথম তাদের ছবি তুলতে দিতে রাজি হয়৷
ছবি: Oksana Yushko
ইউলিয়া আর এডিক
ইউলিয়ার জন্ম ইউক্রেনে আর এডিক-এর জন্ম রাশিয়ায়৷ দু’জনেই পূর্ব ইউক্রেনের ডনবাস এলাকা থেকে উদ্বাস্তু৷ আজ ওদের চার বছরের ছেলে দিমাকে নিয়ে ওরা থাকে মস্কোয়৷ দিমার কথা ভেবেই ওরা যুদ্ধ থেকে পালিয়েছে৷ লাইফ লিংকস রিপোর্টার এমিলি #প্রাইডঅ্যান্ডপ্রেজুডিস এপিসোডটির জন্য ওদের ছবি তোলেন ঐ মস্কোতেই৷
ছবি: Oksana Yushko
দিমা আর সাশা
দিমা হল রাশিয়ার, সাশার জন্ম ইউক্রেনে৷ সাশা ‘ফেমেন’ গোষ্ঠীর সদস্য৷ দিমা কিয়েভে এসেছিল নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর হয়ে, ফেমেন সম্পর্কে একটা রিপোর্ট করার জন্য৷ ওদের দু’জনের তখনই দেখা – আর বন্ধুত্ব৷ কিছুদিন পরে সাশা ইউক্রেন ছেড়ে ফ্রান্সে রাজনৈতিক আশ্রয় নেয়৷ তখন থেকে দিমা আর সাশা প্যারিসে বাস করছে৷
ছবি: Oksana Yushko
দিমা আর ভ্লাদা
দিমার জন্ম রাশিয়ায়, ভ্লাদা হল কিয়েভের, মানে ইউক্রেনের মেয়ে৷ দুজনের সাক্ষাৎ হয় জর্জিয়ায়, তারপর কিছুদিন দূর থেকে প্রেম৷ শেষমেষ ওরা অ্যামেরিকায় চলে যায়৷ওখানে এক বছর আগে ওদের একটি ছেলে হয়েছে, যার নাম লেভ৷
ছবি: Oksana Yushko
মাক্সিম আর দারিয়া
দারিয়া ইউক্রেনের মেয়ে, মাক্সিম রাশিয়ার ছেলে৷ ওদের প্রেম শুরু হয় গ্রীষ্মের একটি দিনে, রাশিয়ার ভরোনেঝ-এ৷ দু’জনে একই ভাড়াগাড়িতে সাত ঘণ্ঠা কাটায় – একসঙ্গে৷ মাক্সিম নাকি প্রথম সন্দর্শনেই প্রেমে পড়ে৷ ক’দিন দেখা না হলেই ওদের প্রেম যে উথলে ওঠে, সেটা ওদের দেখলেই বোঝা যায়৷
ছবি: Oksana Yushko
ভ্যালেরি আর স্বেতা
ভ্যালেরি হলো ইউক্রেনের ওডেসা থেকে, স্বেতার জন্ম রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে৷ স্বেতা এসেছিল ওডেসায় এক বন্ধুর কাছে – সেই অবকাশে ভ্যালেরির সঙ্গে দেখা৷ এক বছর পরেই বিয়ে৷ দু’জনেই যোগব্যায়ামের ভক্ত; বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি আর উদ্ভুটে ব্যাপারস্যাপারে আগ্রহী৷
ছবি: Oksana Yushko
সাশা আর লেনা
আলেক্সান্ডার হলো রাশিয়ার ক্রাসনোদার থেকে, লেনার জন্ম ইউক্রেনের কিয়েভে৷ দু’জনের দেখা ২০১৩ সালে, গ্রিসে ছুটি কাটানোর সময়৷ এক বছরের মধ্যেই লেনা মস্কোয় গিয়ে আলেক্সান্ডার-এর সঙ্গে যোগ দেয়৷ দুই দেশের মধ্যে সমস্যা যতো বাড়ে, ততই বাড়ে ওদের প্রেম৷
ছবি: Oksana Yushko
লিনা আর ভিটিয়া
‘‘আমার মা রুশি, বাবা ইউক্রেনের মানুষ৷ ওঁদের দু’জনের সাক্ষাৎ খারকোভ স্টেট ইউনিভার্সিটিতে৷ আজ ৫০ বছর ধরে দু’জনে একসঙ্গে৷ মানুষ আর মানুষের মধ্যে বন্ধুত্বের সূত্রটি আমি পেয়েছি ওঁদের কাছ থেকেই৷’’