রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করলেন হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী। গ্যাস, পরমাণু প্রকল্প-সহ একাধিক বিষয় নিয়ে আলোচনা।
বিজ্ঞাপন
হাঙ্গেরি কি রাশিয়াপন্থি? নতুন করে এই প্রশ্ন উঠে এসেছে ইউরোপের রাজনীতিতে। কারণ, ইউক্রেন সংকট নিয়ে যখন কার্যত গোটা ইউরোপ রাশিয়া-বিরোধী অবস্থান নিয়েছে, ঠিক তখনই ভ্লাদিমির পুটিনের সঙ্গে বৈঠকে বসলেন হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবান। তাদের আলোচনায় অবশ্য ইউক্রেন সমস্যার বিষয়টি প্রকাশ্যে উঠে আসেনি। বরং গ্যাস, পরমাণু প্রকল্পের মতো বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, ইউরোপের কূটনীতি যখন ইউক্রেন নিয়ে কার্যত ফুটছে, তখন কেন রাশিয়ার সঙ্গে বৈঠকে বসল হাঙ্গেরি?
হাতে অস্ত্র তুলে নিচ্ছেন ইউক্রেনের মানুষ
পূর্ব ইউক্রেনের সীমান্তে চরম উত্তেজনা। রাশিয়া এক লাখ সেনা মোতায়েন করেছে সীমান্তে। ইউক্রেনও যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।
ছবি: AP/picture alliance
তৈরি ইউক্রেনের সেনা
রাশিয়ার সীমান্তে সেনা মোতায়েন রেখেছে ইউক্রেন। তৈরি ট্যাঙ্কবাহিনী।
ছবি: Efrem Lukatsky/AP Photo/picture alliance
যুদ্ধের মহড়া
যুদ্ধ শুরু হয়নি। কিন্তু দুই পক্ষই সেনা মহড়া চালাচ্ছে। তৈরি করা হয়েছে বাঙ্কারও।
ছবি: Wolfgang Schwan/AA/picture alliance
দফায় দফায় বৈঠক
রাজধানীতে দফায় দফায় বৈঠক করছেন সেনা অফিসাররা। তৈরি হচ্ছে রণকৌশল।
ছবি: Pavlo Bagmut/Photoshot/picture alliance
তৈরি ন্যাটো এবং অ্যামেরিকা
পূর্ব ইউরোপে সেনা সাড়ে আট হাজার সেনা মোতায়েন করেছে অ্যামেরিকা। ন্যাটোও যুদ্ধবিমান এবং যুদ্ধ জাহাজ তৈরি রেখেছে।
ইউক্রেনকে ন্যাটোয় যুক্ত করা নিয়ে আপত্তি রাশিয়ার। সেখান থেকেই উত্তেজনার শুরু। চাপ তৈরি করতে ইউক্রেন সীমান্তে এক লাখ সেনা মোতায়েন করে রাশিয়া। তারপর থেকেই উত্তেজনার পারদ চড়তে থাকে।
২০১০ সালে হাঙ্গেরিতে ক্ষমতায় এসেছিলেন ভিক্টর। প্রথম থেকেই পুটিনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চলেছেন তিনি। ক্রাইমিয়ার যুদ্ধের পরে দেখা গেছিল, গোটা ইউরোপকে উপেক্ষা করে রাশিয়ার সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন ভিক্টর। বস্তুত, তার পর আবার ২০২২ সালে এসে পুটিনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করলেন তিনি। এর থেকেই স্পষ্ট, রাশিয়া-হাঙ্গেরি বৈঠক কেবল একটি নিছক আলোচনা নয়, ইউরোপের কাছে একটি বার্তাও।
সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি সাক্ষাৎকার পোস্ট করেছেন হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী। সেখানে সাম্প্রতিক উত্তেজনার কথা উঠেছিল। হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রীর একলাইনের জবাব, তিনি শান্তির পক্ষে। কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তিনি কোন ব্লকে হাঙ্গেরিকে রাখছেন, তার কোনো স্পষ্ট জবাব দেননি তিনি।
ইউক্রেন অস্ত্র পাচ্ছে, আরও চায়
২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রাইমিয়া দখল করার পর সামরিক শক্তি বাড়িয়েছে ইউক্রেন৷ সম্প্রতি রাশিয়া সীমান্তে সেনা উপস্থিতি বাড়ানোয় উত্তেজনা তৈরি হয়েছে৷ পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনকে অস্ত্র সহায়তা দিচ্ছে৷ তবে আরও দরকার, বলছে ইউক্রেন৷
২০১৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ২১ হাজার ৪৩০ কোটি টাকার অস্ত্র সহায়তা দিয়েছে৷ এর মধ্যে আছে জ্যাভলিন অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক মিসাইল (ছবি), টহল বোট, হামভি, স্নাইপার রাইফেল, ড্রোন, রাডার সিস্টেম, নাইট ভিশন ও রেডিও ইকুইপমেন্ট৷
কয়েক ব্যাচ বায়রাকটার টিবিটু ড্রোন বিক্রি করেছে৷ ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের ডনবাস এলাকায় রুশ সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে এগুলো ব্যবহৃত হয়েছে৷
ছবি: Murat Cetinmuhurdar/Turkish Presidency/handout/picture alliance / AA
জার্মানি
ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে৷ তবে ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিতে যে ৫১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে তার একটা অংশ দিচ্ছে জার্মানি৷
ছবি: Sean Gallup/Getty Images
ইউক্রেন আরও যা চায়
যুক্তরাষ্ট্র থেকে হেলিকপ্টার, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও হালকা সাঁজোয়া যান চায়৷ নরওয়ে থেকে চায় সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল সিস্টেম৷ এছাড়া মাঝারি ও স্বল্প রেঞ্জের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমও চায় ইউক্রেন৷
ছবি: DARKO BANDIC/AFP via Getty Images
6 ছবি1 | 6
ইউক্রেন নিয়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে ইউরোপে স্পষ্ট দুইটি ব্লক তৈরি হয়েছে। একদিকে ন্যাটোর নেতৃত্বে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়ানো একাধিক ইউরোপীয় দেশ। এবং অন্যদিকে রাশিয়া। অ্যামেরিকাও ন্যাটোর পাশে। পরিস্থিতি প্রায় ঠান্ডাযুদ্ধের সময়ে গিয়ে পৌঁছেছে। যে কোনো সময় রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করতে পারে, এমন আশঙ্কা প্রায় প্রতিদিন প্রকাশ করছে ন্যাটোর দেশগুলি। এই পরিস্থিতিতে হাঙ্গেরির সঙ্গে রাশিয়ার বৈঠক কূটনৈতিকস্তরে গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
রাশিয়ার কাছে আরো বেশি গ্যাস চেয়েছে হাঙ্গেরি। পাশাপাশি পাকিস্তানে যে পরমাণু প্রকল্প রূপায়ণ করছে রাশিয়া, মধ্য হাঙ্গেরিতে সেই প্রকল্প তৈরির আবেদন জানানো হয়েছে। আপাত চোখে দুইটি বিষয়ই সাধারণ। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এই সাধারণ বিষয়গুলিই অন্য প্রশ্ন তুলছে। বস্তুত, দুইদিন আগেই ইউরোপে বিকল্প গ্যাস সাপ্লাইয়ের খোঁজ করেছে অ্যামেরিকা। রাশিয়ার গ্যাস বন্ধ করে দিলে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কোথা থেকে গ্যাস যাবে, তা নিয়ে বহু আলোচনা হয়েছে। নর্ডস্ট্রিম দুই বন্ধ করার হুমকি দিয়েছে জার্মানি।
কূটনীতিকদের একাংশের বক্তব্য, এরপর ন্যাটোর আলোচনায় হাঙ্গেরি কী ভূমিকা নেয়, সেটাই এখন দেখার।