আগামী জুন মাসে সুইজারল্যান্ডে ইউক্রেন সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলনকে ঘিরে জার্মান চ্যান্সেলরের তেমন প্রত্যাশা নেই৷ জার্মানি ও নর্ডিক দেশগুলি ইউক্রেনের জন্য সামরিক সহায়তার অঙ্গীকার করেছে৷
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস আগেভাগেই সুইজারল্যান্ডের সম্মেলন সম্পর্কে অবাস্তব প্রত্যাশা সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন৷ জার্মানির ‘স্ট্যার্ন' পত্রিকার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, সেই সম্মেলনে ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তি সম্পর্কে দরকষাকষি হবে না৷ সব কিছু ভালোভাবে এগোলে বড়জোর রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সরাসরি সংলাপ ঘটতে পারে বলে শলৎস মনে করেন৷ আলোচনার অ্যাজেন্ডার মধ্যে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিরাপত্তা, শস্য রপ্তানি, বন্দি বিনিময় ও পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগের বিষয়ে চূড়ান্ত সংযমের মতো বিষয় থাকছে৷ ইউক্রেনের জন্য ইউরোপের বাকি দেশগুলি যথেষ্ট অস্ত্র দিচ্ছে না বলে শলৎস কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করেন৷
রাশিয়ার ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ সোমবার বলেন, পশ্চিমা বিশ্ব যদি যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনের হয়ে লড়াই করতে চায়, রাশিয়া সেই পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত রয়েছে৷ রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা রিয়া-র সূত্র অনুযায়ী লাভরভ বলেছেন, পশ্চিমা বিশ্বের অবশ্যই ইউক্রেনের হয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে নামার অধিকার রয়েছে৷ তবে সে ক্ষেত্রে ন্যাটোর সঙ্গে সরাসরি সংঘাত সম্পর্কেও সতর্ক করে দিচ্ছে রাশিয়া৷ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ কোনো এক সময়ে ইউক্রেনে পশ্চিমা দেশের সৈন্য পাঠানোর সম্ভাবনার উল্লেখ করার পর থেকে রাশিয়া হুঁশিয়ারি দিয়ে চলেছে৷ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের মতে, সে ক্ষেত্রে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না৷
লাভরভ সুইজারল্যান্ডে ইউক্রেন সংক্রান্ত শান্তি আলোচনা সম্পর্কেও সতর্ক করে দিয়েছেন৷ তাঁর মতে, রাশিয়াকে ছাড়াই এমন আলোচনার অর্থ মস্কোকে সরাসরি ‘আল্টিমেটাম' দেওয়া৷ তিনি এই সম্মেলনকে কোনো স্কুলপড়ুয়ার জন্য শাস্তির সঙ্গে তুলনা করেন৷তাঁর মতে, শিশুকে বাইরে রেখে শিক্ষকরা ঘরের মধ্যে যেভাবে শাস্তি স্থির করেন, বিশেষ করে রাশিয়ার সঙ্গে সে রকম আচরণ করা যাবে না৷
এসবি/এসিবি (রয়টার্স, ডিপিএ)
ইউক্রেনের পঙ্গু সৈনিকদের নতুন জীবন
রাশিয়ার সঙ্গে সম্মুখসমরে অঙ্গ হারিয়েছেন অনেক ইউক্রেনীয় সেনা৷ কেমন করে তারা খাপ খাইয়ে নিচ্ছেন এই নতুন জীবনে?
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
নতুন করে শেখা
ওলেকজান্দর রেভতিউখ (মাঝে) কোচের বক্সিং মিটে সজোরে আঘাত করছেন৷ ৩৩ বছর বয়সি এই ইউক্রেনীয় রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে তার বাঁ হাত ও বাঁ পা হারিয়েছেন৷ দেশটির দক্ষিণাংশে জাপোরিঝঝিয়া অঞ্চলে মাটিতে পুঁতে রাখা মাইনে তার অঙ্গহানি হয়৷ তিনি বলেন, ‘‘অবস্থা অনেকটা নবজাতকের মতো৷ সবকিছু শুরু থেকে শিখতে হচ্ছে৷’’
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
অসংখ্য যোদ্ধার পঙ্গুত্ব বরণ
যুদ্ধে এখন পর্যন্ত কতজন পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন তার আনুষ্ঠানিক কোনো ড্যাটা নেই৷ তবে সংখ্যাটি ২০ থেকে ৫০ হাজার হবে বলে ধারণা মানবাধিকার সংগঠন প্রিন্সিপের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মাসি নায়েম৷ যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তারা একাকীত্বে ভোগেন এবং সামাজিক বৈষম্যের শিকার হন বলে জানান তিনি৷
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
পরিবর্তন ও অন্তর্ভুক্তি
মাইন বিস্ফোরণে দুই পা হারানো আন্দ্রিই পিলিপচুকের বয়স ২৮ বছর৷ তিনি বলেন, ‘‘তারা যখন আমার ডান পা কেটে নিলেন, আমি মন খারাপ করিনি৷ কারণ এটি এতটাই থেঁতলে গিয়েছিল, যে একে বাঁচানো সম্ভব ছিল না৷ কিন্তু তারা যখন আমার বাঁ পাটিও কেটে নিলেন তখন আমি খুব কষ্ট পেয়েছি৷’’
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
কোন পথে ভবিষ্যৎ?
সন্তান ঘরে ফেরার পর তাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন ওলেকজান্দর রেভিতুখের মা৷ রেভিতুখ আগে হাঙ্গেরিতে ইলেকট্রিশিয়ানের কাজ করতেন৷ যুদ্ধ শুরুর দুই মাসের মাথায় তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন৷ এখন তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে প্রবীণ যোদ্ধাদের নানা বিষয়ে পরামর্শ দেন৷ তার ভাবাদর্শ হলো, পথ কোথাও না কোথাও খোলা আছে৷
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
যুদ্ধক্ষেত্রে ফেরত
অঙ্গ হারিয়েও কেউ কেউ যুদ্ধে ফেরত গেছেন৷ ২৮ বছর বয়সি ম্যাঙ্গো মৌরিপোলে একটি হাত হারান৷ এমনকি রাশিয়ানরা বন্দিও করেছিল তাকে৷ ফেরত এসে তিনি তার কমান্ডার ও কর্তৃপক্ষকে বোঝাতে সমর্থ হন যে, তিনি ডিউটিতে ফিরতে পারবেন৷ যদিও তিনি আর ট্যাঙ্ক চালাতে পারবেন না, একটি বায়োনিক হাত পাবার আশা তার৷
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
রোবোড্যাড
রাশিয়ানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে চারটি হাত-পা-ই হারান ৪০ বছর বয়সি আন্তন ইভান্তসিভ৷ ‘‘যখন আমি বুঝতে পারলাম আমি আর কখনো পুরোপুরি আমার সন্তান ও স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরতে পারব না, এটা মেনে নেয়া কঠিন ছিল,’’ বলেন তিনি৷ তার বায়োনিক হাত পা আছে, যা দিয়ে তিনি দৈনন্দিন জীবনে ফিরে আসতে পেরেছেন৷ তবে তখন থেকে তার সন্তানেরা তাকে ‘রোবোড্যাড’ বলে ডাকে৷
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
অল্প অল্প করে ফেরা
আহত হবার পর নৌসেনা রোস্তিস্লাভ প্রিস্তুপা আংশিকভাবে প্যারালাইজড হয়ে গিয়েছিলেন৷ বন্ধুরা তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সহায়তা করছেন৷ তিনিও মনে করেন, বাঁচতে হলে ফিরতে হবে৷ প্রতি বছর যুদ্ধের কারণে প্রতিবন্ধী যুদ্ধফেরত ইউক্রেনীয়দের সংখ্যা বাড়ছে৷
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
নেটওয়ার্ক: বন্ধু ও পরিবার
নিঝিনে ওলেকজান্দর রেভিতুখ তার দাদীর সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন৷ তার পরিবার তাকে সহায়তা করছে৷ তিনিও মনে করেন, ফিরতে পারবেন স্বাভাবিক জীবনে৷ তিনি এখন মোটিভেশনাল কোচ হিসেবে কাজ করার চেষ্টা করছেন৷ ভবিষ্যতে শিক্ষক হতে চান৷