রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তে রুশ সেনার উপস্থিতি চিন্তায় ফেলছে জার্মানিসহ ন্যাটো সদস্য রাষ্ট্রদের৷ ২০১৪ সালের পরিস্থিতি ফিরে আসবে কি না, সে আশঙ্কাও থেকে যাচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
সোমবার ন্যাটোর সেক্রেটারি জেনারেল ইয়েনস স্টোলটেনবের্গ ইউক্রেন সীমান্তে রুশ সামরিক উপস্থিতি বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন৷ যদি কিয়েভের ওপর কোনো আঘাত আসে, সেক্ষেত্রে ন্যাটো ইউক্রেনের পাশে থাকবে বলেও জানান তিনি৷
ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডিমিত্রো কুলেবার সাথে সাক্ষাতের পর স্টোলটেনবের্গ বলেন, ‘‘ন্যাটো এই মুহূর্তে সতর্ক রয়েছে৷ আমরা খুব গভীরভাবে পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছি৷ যদি রাশিয়ার তরফে কোনো উসকানি বা আগ্রাসী পদক্ষেপ দেখা যায়, সেক্ষেত্রে তা গুরুতর ফলাফল বয়ে আনবে৷ আমরা রাশিয়াকে আহ্বান জানাচ্ছি নিজেদের সামরিক কর্মকাণ্ড বিষয়ে আরো স্বচ্ছ হতে৷''
ইউক্রেনের বয়ান অনুযায়ী, রাশিয়ার সাথে দেশটির সীমান্তে বর্তমানে মোতায়েন আছে প্রায় এক লাখ রুশ সামরিক বাহিনীর সদস্য, যা ‘বিপজ্জনক' দিকে যেতে পারে বলে মনে করছেন স্টোলটেনবের্গ৷
এবিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘অস্বাভাবিক হারে সেনা মোতায়েন করা হচ্ছে সেখানে৷ আমরা জানি যে, রাশিয়া এর আগেও ইউক্রেনের বিরুদ্ধে এই ধরনের আগ্রাসী সামরিক পদক্ষেপ নিতে চেয়েছে৷''
একজোটেজার্মান, ফরাসিওইউক্রেনেরনেতৃত্ব
ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের পর দেশটির পক্ষে তাদের অবস্থান ঘোষণা করে জার্মান ও ফরাসি পররাষ্ট্র মন্ত্রীরা একটি যৌথ বিবৃতি দেন৷ ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত হয় এই বৈঠক৷
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘ইউক্রেনের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার প্রশ্নে ফ্রান্স ও জার্মানি তাদের সমর্থন অক্ষুণ্ণ রাখবে৷''
ছবিতে রুশ-ইউক্রেন দ্বন্দ্ব
কের্শ প্রণালী থেকে তিন ইউক্রেনীয় জাহাজ আটকের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয়েছে৷ এই দ্বন্দ্ব আর শুধু দুই দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, ইউরোপ ছাড়িয়ে এর উত্তাপ ছুঁয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেও৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Volskii
যেভাবে শুরু
ছবিতে দেখা যাচ্ছে রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডের সাথে ক্রাইমিয়া উপদ্বীপের সংযোগ স্থাপনকারী সেতুর ওপর রুশ জেট বিমান উড়ছে৷ ইউক্রেনের তিন কার্গো জাহাজ আটকের পর এভাবেই মহড়া দেয় রুশ বিমানবাহিনী৷
ছবি: Reuters/P. Rebrov
আটক জাহাজ
ইউক্রেনের জাহাজ তিনটি কৃষ্ণ সাগর থেকে কের্শ প্রণালী হয়ে আজভ সাগরে যাচ্ছিল৷ এক চুক্তি অনুযায়ী কের্শ প্রণালীতে রাশিয়া ও ইউক্রেন, দুই দেশেরই নিয়ন্ত্রণ রয়েছে৷ কিন্তু রাশিয়ার দাবি, বারবার সাবধান করা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক সীমা লঙ্ঘন করে রাশিয়ার সীমানায় ঢুকে পড়েছিল জাহাজগুলো৷
ছবি: Reuters/A. Dmitrieva
আটক নাবিক
জাহাজগুলোতে থাকা নাবিকদের আটক করেছে রুশ নৌবাহিনী৷ তাঁদের বিরুদ্ধে ক্রাইমিয়ার আদালতে অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ক্রাইমিয়ার সিম্ফারপোলে আদালতে এক আটক ইউক্রেনীয় নাবিককে নিয়ে যাচ্ছেন রাশিয়ার এফএসবির নিরাপত্তা সদস্য৷
ছবি: Reuters/P. Rebrov
ইচ্ছাকৃত উসকানি!
আদালতে শুনানিতে ইউক্রেনের নাবিক ইউরি বুদসিলোকে তাঁর আইনজীবীর সাথে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে৷ পুরো ঘটনার জন্য ইউক্রেন রাশিয়াকে দায়ী করলেও রুশ সেনাবাহিনীর দাবি, বারবার সাবধান করা সত্ত্বেও রুশ জলসীমায় ঢুকে পড়ে ইউক্রেনের জাহাজ৷ এই বক্তব্যের সমর্থনে আটক নাবিকদের স্বীকারোক্তিও প্রচার করা হয়েছে রুশ গণমাধ্যমে৷ তবে ‘ভয় দেখিয়ে’ এমন কথা বলতে নাবিকদের বাধ্য করা হয়েছে, দাবি ইউক্রেনের৷
ছবি: Reuters/P. Rebrov
মার্শাল ল’
রাশিয়ার ‘অনভিপ্রেত’ ও ‘আগ্রাসী’ মনোভাবের কড়া জবাব দেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পেট্রো পোরোশেংকো৷ তাঁর প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে রুশ সীমান্তের বেশ কিছু এলাকায় জরুরি অবস্থা জারি করেছে দেশটির পার্লামেন্ট৷ পাশাপাশি, আজভ সাগরে যুদ্ধজাহাজ পাঠাতে ন্যাটোকে আহ্বান জানিয়েছেন পোরোশেংকো৷
ছবি: Reuters/V. Ogirenko
প্রতিবাদ, বিক্ষোভ
জাহাজ আটকের ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে ইউক্রেনের জনগণের মধ্যে৷ বিশেষ করে উগ্র ডানপন্থি দলগুলো আয়োজন করেছে বিক্ষোভ কর্মসূচির৷ কিয়েভে পার্লামেন্ট ভবন এবং রুশ দূতাবাসের সামনে আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে ডানপন্থিরা৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে, রুশ দূতাবাসে ইউক্রেনের পতাকা ওড়ানোর চেষ্টা করছেন এক বিক্ষোভকারী৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Gimanov
6 ছবি1 | 6
পাশাপাশি, রাশিয়াকে তার সামরিক আচরণে রাশ টানতেও বলে এই বিবৃতি৷
সোমবার জার্মান পররাষ্ট্র বিষয়ক মুখপাত্র ক্রিস্টোফার বুর্গার সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘যে পরিস্থিতি ইতোমধ্যে জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে, তাকে আরো গুরুতর না করতে রাশিয়াকে সামরিক নিয়ন্ত্রণ দেখাতে আহ্বান জানাচ্ছি আমরা৷''
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের মুখপাত্রও ইউক্রেনের পাশে দাঁড়ানোর কথা বলেন৷ পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলির ধারণা, ২০১৪ সালে ক্রাইমিয়া দখলের মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে সাম্প্রতিক এই সামরিক অভিযানের ফলে৷ নতুন করে ইউক্রেনের মাটিতে রুশ সেনার প্রবেশ ঘটতে পারে বলে তাদের আশঙ্কা৷