ইউক্রেন সীমান্তে সেনা মোতায়েন করেছে রাশিয়া৷ একটি বিমানবন্দর দখলে নিয়েছে বন্দুকধারীরা৷ এ ঘটনার জন্য রাশিয়াকেই দায়ী করেছে ইউক্রন৷ রাশিয়ার প্রতি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থন না দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে ইউক্রেনের সংসদ৷
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার ভোরে বন্দুকধারীরা ক্রাইমিয়ার মূল বিমানবন্দর ঘিরে ফেলে৷ বার্তাসংস্থা এএফপির প্রতিবেদক জানিয়েছেন, বন্দুকধারীদের প্রত্যেকের হাতে রাশিয়ার তৈরি কালাশনিকভ দেখা গেছে৷ তবে বন্দুকধারীরা বিমানবন্দরের স্বাভাবিক কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটাননি৷
ইউক্রেনে কয়েকমাস ধরে চলে আসা বিক্ষোভের অবসান হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই এ ঘটনা ঘটল৷ এর আগে বিক্ষোভের মুখে রুশপন্থি প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচের বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব এনে তাঁকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করে ইউক্রেনের সংসদ৷ ইয়ানুকোভিচ সঙ্গে সঙ্গে রাজধানী কিয়েভ ছেড়ে দেশের পূর্বাঞ্চলে আত্মগোপন করেন৷ রাশিয়ায় আশ্রয় নিতেই আত্মগোপন করার জন্যই তিনি রুশভাষাভাষি অধ্যুষিত সে এলাকায় গিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছিল৷
ইয়ানুকোভিচের পলায়ন, টিমোশেঙ্কোর মুক্তি
কখনো কখনো সময়ের পরিবর্তন দেখে অবাক হতে হয়৷ ইউক্রেনের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী সাবেক প্রেসিডেন্ট ইয়ানুকোভিচ এখন পলাতক আর তাঁর প্রতিপক্ষ টিমোশেঙ্কো কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ক্ষমতায় ফেরার অপেক্ষায়৷ এই নিয়েই আজকের ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
ভীষণ ক্লান্ত, তাতে কী!
কারাগারে আড়াই বছর কাটিয়ে ইউলিয়া টিমোশেঙ্কো ভীষণ ক্লান্ত৷ তবে বড় কথা হলো, গত শনিবার থেকে তিনি মুক্ত৷ তাঁর রাজনৈতিক শত্রু বলে পরিচিত ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ ক্ষমতা হারানোর পরপরই রাজধানী কিয়েভ ছেড়ে পালিয়েছেন৷ প্রায় একই সময়ে মুক্ত জীবনের আস্বাদ পাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী টিমোশেঙ্কো ফিরেছেন কিয়েভে৷ কে বলবে কয়েকদিন আগেও পিঠের প্রচণ্ড ব্যথা সইতে না পেরে খারকিভের হাসপাতালে ভর্ত্তি হতে হয়েছিল তাঁকে!
ছবি: Reuters
ঐতিহাসিক সংসদ অধিবেশন
গণবিক্ষোভের মুখে প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচের আসন এমনিতেই টলে গিয়েছিল৷ তাই ইউক্রেনের সংসদ ভেরহোভনা রাডায় বিরুদ্ধে অভিসংশনের প্রস্তাব পাশ হওয়ায় পালানো ছাড়া উপায় ছিল না তাঁর৷ একই অধিবেশনে কারাবন্দী টিমোশেঙ্কোকে মুক্তি দেয়ারও সিদ্ধান্ত হয়৷ ঐতিহাসিক এ অধিবেশনে ইউক্রেনের সংসদ সদস্যরা আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিনও চূড়ান্ত করেছেন৷ আগামী ২৫শে মে নির্বাচন হবে পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে৷
ছবি: Reuters
সংগ্রামমুখর কয়েকটি বছর
নিজের মুক্তির দাবি আদায়ের জন্য এতদিন চেষ্টার কোনো ত্রুটি করেননি ৫৩ বছর বয়সি টিমোশেঙ্কো৷ কারাগারে অনশন ধর্মঘট করেছেন বেশ কয়েকবার৷ পরিবারের সদস্যরা তাঁর পক্ষে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা চালিয়েছেন দেশে-বিদেশে৷ কারাগারে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন টিমোশেঙ্কো৷ অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে, সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিতে হয়েছিল বার্লিনের শারিটে হাসপাতাল থেকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রাজনৈতিক সুবিচার
গত কয়েকবছর ধরে ইউক্রেন সরকার এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সম্পর্কের মাঝে কাঁটা হয়ে ছিলেন ইউলিয়া টিমোশেঙ্কো৷ দু’দফা ক্ষমতায় ছিলেন তিনি৷ তখন ইউক্রেনকে ইইউ-র অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করেছেন অবিরাম৷ সদ্য ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট ইয়ানুকোভিচ ইইউ-র সঙ্গে যে চুক্তি স্বাক্ষর না করায় দেশ জুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়, সেই চুক্তির শর্তের মধ্যে টিমোশেঙ্কোর মুক্তির বিষয়টিরও উল্লেখ ছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
স্ট্রাসবুর্গের ভর্ৎসনা
টিমোশেঙ্কোকে কারাদণ্ডাদেশ দিয়ে ইউক্রেনের আদালত শুধু যে ইইউ-র সমালোচনার শিকার হয়েছে, তা কিন্তু নয়৷ ২০১৩ সালে এক ঘোষণায় স্ট্রাসবুর্গে অবস্থিত ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালত জানায়, ইউক্রেনের আদালত টিমোশেঙ্কোর মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে৷ ঘোষণায় আরো বলা হয়, টিমোশেঙ্কোকে অযৌক্তিকভাবে কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছে আদালত৷
ছবি: Patrick Hertzog/AFP/Getty Images
ক্ষমতা অপব্যবহারের অভিযোগে অভিযুক্ত
২০১১ সালের আগস্ট মাসে টিমোশেঙ্কোকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় ক্ষমতা অপব্যবহারের অভিযোগে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয় তাঁকে৷ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকার সময় ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাশিয়ার গ্যাস কম্পানির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করার কারণে এই শাস্তি দিয়েছিল আদালত৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
প্রতীকী ব্যক্তিত্ব
ইউক্রেনের অনেক মানুষের কাছে টিমোশেঙ্কো দশ বছর আগের ‘কমলা বিপ্লব’-এর প্রতীকী ব্যক্তিত্ব৷ গণতন্ত্র মুক্তির সেই আন্দোলনে তাঁর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল৷ সেই সুবাদে দু-দুবার প্রধানমন্ত্রীও হয়েছেন তিনি৷
ছবি: Reuters
ভালো-মন্দে মেশানো অতীত
গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী হিসেবে পশ্চিমা বিশ্বে টিমোশেঙ্কোর এখনো খুব সমাদর৷ তবে বিনুনি কাটা চুলের এই রাজনৈতিক নেত্রী প্রধানমন্ত্রী হবার পর জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারেননি৷ সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখতেও ব্যর্থ হয়েছিলেন তিনি৷
ছবি: SERGEI SUPINSKY/AFP/Getty Images
বিক্ষোভেও তিনি ছিলেন
ইউক্রেনের সাম্প্রতিক বিক্ষোভে বিক্ষোভকারীদের হাতে হাতে ছিল টিমোশেঙ্কোর ছবি৷ কারামুক্তির পর টিমোশেঙ্কো ফিরেছেন কিয়েভে৷ ফিরেই জানিয়েছেন, আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হবেন৷ ক্ষমতা অপব্যবহারের অভিযোগে শাস্তি পাওয়া টিমোশেঙ্কো তাই আবার ক্ষমতায় ফেরার অপেক্ষায়৷
ছবি: Reuters
9 ছবি1 | 9
ইয়ানুকোভিচ ক্ষমতাচ্যুত হবার পর অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হয়েছেন ওলেক্সান্দর তুরচিনভ৷ ইউক্রেন সীমান্তে রুশ সেনা মোতায়েন এবং ক্রাইমিয়ার বিমানবন্দর বন্দুকধারীদের ঘিরে ফেলায় তাই পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে৷
ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আর্সেন আভাকভ বিমানবন্দরের ঘটনার জন্য রাশিয়াকেই দায়ী করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘তাঁরা (বন্দুকধারীরা) যে রুশ ফেডারেশনের সামরিক বাহিনীর সদস্য তা গোপন করার চেষ্টাও করছেনা৷ যা ঘটছে তাকে আমি সামরিক অভিযান এবং জবরদখল বলে মনে করি৷'' তবে রাশিয়া জানিয়েছে, তারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়৷
শুক্রবার ইউক্রেন সংসদে সীমান্তে রুশ সেনা মোতায়েন এবং ক্রাইমিয়ার বিমানবন্দর দখল নিয়ে আলোচনা হয়৷ আলোচনা শেষে রাশিয়ার প্রতি ইউক্রেনের ‘সার্বভৌমত্ব এবং অখণ্ডতার জন্য হুমকিস্বরূপ বলে প্রতীয়মান পদক্ষেপ' থামানোর আহ্বান জানায় ইউক্রেন সংসদ৷