ছোট ভিডিও, সংলাপও কম – তা সত্ত্বেও গোটা বিশ্বে বিশাল সাফল্যের মুখ দেখছে রাশিয়ার এক সিরিজ৷ ছোটদের জন্য তৈরি হলেও বড়রাও অনাবিল আনন্দ নিয়ে সেগুলি দেখে৷ তবে এর পেছনে রয়েছে অনেক পরিশ্রম ও সৃজনশীলতার ছাপ৷
বিজ্ঞাপন
বিশ্বজয় করলো রুশ ভাল্লুকের গল্প
04:33
ছোট হলেও মাশা তার সাফল্যের চাবিকাঠি খুঁজে নিয়েছে৷ রুশ কমিক সিরিজ ‘মাশা ও ভালুক'-এর এই একটি পর্বই ইউটিউবে ১৬০ কোটিরও বেশি ক্লিক পেয়েছে৷ মাশা ও তার বন্ধু সার্কাসের প্রাক্তন ভালুকের অ্যাডভেঞ্চার অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে৷
মস্কো শহরের উপকণ্ঠে এই জুটির কাহিনি সৃষ্টি হয়৷ নতুন পর্বের বিপুল চাহিদা রয়েছে৷ ‘আনিমাকর্ড' স্টুডিওতে শিল্পীরা নতুন কাহিনি সৃষ্টি করেন৷ সাত মিনিটের প্রতিটি পর্বের জন্য এক মাসেরও বেশি সময় লাগে৷ পরিচালক আন্দ্রেই বেলইয়াএভ এই সৃজনশীল টিমের একজন৷ তিনি বলেন, ‘‘শুরু থেকেই এক সৃজনশীল প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকার চেয়ে ভালো অনুভূতি কিছু হতে পারে না৷ সামান্য কয়েকটা বাক্য থেকে একটা আইডিয়া যখন চিত্রনাট্য ও চূড়ান্ত স্টোরিবোর্ড হয়ে ওঠে, সেটাই সেরা মুহূর্ত৷''
‘মাশা ও ভালুক' আটটি ভাষার ইউটিউব চ্যানেলে দেখা যায়৷ সব মিলিয়ে ১,৬০০ কোটি বারেরও বেশি ক্লিক পেয়েছে পর্বগুলি৷ সবচেয়ে পরিচিত ভিডিওটি ইউটিউবের ১০টি সেরা সফল ভিডিওর তালিকায়ও স্থান পেয়েছে৷ একমাত্র মিউজিক ভিডিও এতকাল এমন সাফল্য পেতো৷ এই সাফল্যের পেছনে বুদ্ধিমান বিপণন কৌশল লুকিয়ে রয়েছে৷ কোম্পানির প্রধান দিমিত্রি লোভেইকো বলেন, ‘‘আমরা শুরু থেকেই অনেক একনিষ্ঠ দর্শক চেয়েছিলাম৷ শিশু এবং তাদের বাবা-মা৷ সে কারণে প্রথম তিন বছর আমরা ইন্টারনেট থেকে চুরি ও বেআইনি ডাউনলোডের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেইনি৷ আমরা এই সিরিজ জনপ্রিয় করতে চেয়েছিলাম৷''
পান্ডা বেয়ারও কিন্তু মানুষের মতোই সঙ্গী চায়
এতদিন পর্যন্ত গবেষকরা মনে করতেন পান্ডা বেয়ার বা পান্ডা ভল্লুক বেশিরভাগ সময়ই একা থাকতে ভালোবাসে৷ কিন্তু নতুন গবেষণায় দেখা গেছে যে, এই প্রাণীরাও অন্য প্রাণীদের সাথে মিলে মিশে থাকতেই বেশি পছন্দ৷
ছবি: picture alliance/dpa/Chinafotopress/Li Wei
ভুল ধারণা!
পান্ডা বেয়াররা চীনের পর্বত অরণ্যে একাকী ঘুরে বেড়ায়৷ ওদের মূল আগ্রহ ছোট বাঁশের পাতা বা বাঁশের কোঁড় খাওয়া৷ ওরা কিন্তু দিনে ১০ থেকে ২০ কেজি বাঁশ খেয়ে ফেলতে পারে৷ তবে এতদিন যে মনে করা হতো, ওরা একা থাকতে বেশি পছন্দ করে, সে ধারণা ভুল! অ্যামেকরিকান এবং চীনাদের গবেষণায় জানা গেছে যে, ওরাও মানুষদের মতো একসাথে থাকতেই ভালোবাসে৷
ছবি: Fotolia/xiaoma
সম্ভোগে অলসতা
নতুন গবেষণা অবশ্য বলছে, পান্ডাদের যেমন ভাবা হতো, তার চেয়ে অনেক বেশি মিশুক ওরা৷ তবে ওরা একে-অপরের কাছাকাছি যায় শুধুমাত্র প্রজনন ঋতু বা সন্তান উৎপাদনের সময়৷ আসলে পান্ডারা সেক্স বা যৌন সম্ভোগের ব্যাপারে তেমন আগ্রহী নয়৷ খোলা জায়গায় বাচ্চা হতে দেখা গেলেও, চিড়িয়াখানাগুলোতে পান্ডা বেয়ার সন্তানের জন্ম দিচ্ছে – এমনটা খুব কম দেখা যায়৷
ছবি: picture alliance/dpa/Xu Kangping
বছরে মাত্র দু’দিন সেক্স
নারী পান্ডা বেয়ার পুরুষ ভল্লুককে বছরে মাত্র একবার কাছে যাবার অনুমতি দেয়, সেটাও আবার মাত্র দু’দিনের জন্য৷ এরপরেও যখন সন্তান হয়, তখন সেই বেবি পান্ডারা হয় সত্যিই দেখার মতো!
ছবি: picture-alliance/dpa
নগ্ন বেয়ার
জন্মের ঠিক পরেই বেবি পান্ডা বেয়ার দেখতে ঠিক এরকমই হয়৷ সে’সময় খুব ছোট্ট থাকে ওরা আর ওজন হয় মাত্র ৯০ থেকে ১২০ গ্রামের মধ্যে৷ লেজটা অবশ্য বেশ লম্বা আর কালো হয়৷ জন্মের সময় যেহেতু ওদের গায়ে কোনো পশম থাকে না, তাই তখন ওদের দেখতে লাগে অনেকটা ইঁদুরছানার মতো৷
ছবি: Reuters
বংশবৃদ্ধি করা
বিলুপ্ত হতে বসা এই পান্ডা ভল্লুককে রক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চীন৷ এরই মধ্যে গবেষকরা পান্ডার বংশবৃদ্ধির ব্যাপারে নিখুঁতভাবে চিন্তা-ভাবনা করছেন নারী পান্ডাদের শরীরের ভাষা বোঝার জন্য৷ কখন তাদের প্রজনন হয়, তখন তাদের শরীরের ভাষা, ভাবসাব কেমন হয় – এই সব নিয়ে চলছে গবেষণা৷ তবে বাকি কাজটা করছেন রিপ্রোডাকটিভ মেডিসিন-এর ডাক্তাররা, কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে৷
ছবি: Reuters
সাফল্য
কৃত্রিম প্রজনন থেকে জন্ম নেওয়া ভল্লুকগুলোকে রাখা হয় সাধারণত চিড়িয়াখানায়৷ চীনে তো পান্ডা বেয়ারকে রক্ষা করা অনেকটা জাতীয় দায়িত্বের মতো হয়ে গেছে৷ আর এতে সাফল্যও দেখা গেছে ইতিমধ্যে৷ গত দশ বছরে পান্ডা ভল্লুকের জন্মের সংখ্যা ২৬৮ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৮৬৪৷
ছবি: picture alliance/dpa/Chinafotopress/Li Wei
6 ছবি1 | 6
এখন এই কোম্পানি বেআইনি ডাউনলোডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে বটে, কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে ডিভিডি বাজারে আসার আগেই তার পর্বগুলি অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে৷ ‘মাশা আর ভালুক' গোটা বিশ্বে সাফল্যের মুখ দেখছে৷ ১০০টি দেশে ২৫টি ভাষায় এই সিরিজ ইন্টারনেট অথবা টেলিভিশনে দেখতে পাওয়া যায়৷ দিমিত্রি লোভেইকো বলেন, ‘‘এই সিরিজে সংলাপ খুব কম – এর ফলে এটা আন্তর্জাতিক প্রকল্প হয়ে উঠেছে৷ তাতে আমাদের সুবিধা হয়৷ সবাই ইশারা-ইঙ্গিত ও মুখের অভিব্যক্তি থেকে হাস্যরস বুঝতে পারে৷''
এই সিরিজ এর মধ্যে এক জনপ্রিয় ব্র্যান্ড হয়ে উঠেছে৷ নরম পুতুল থেকে শুরু করে বাদ্যযন্ত্রে তার চিহ্ন পাওয়া যায়৷ ‘মাশা ও ভালুক' সিরিজ ভিত্তি করে তৈরি সামগ্রী বিক্রি করেই প্রায় ৭০ শতাংশ আয় হয়৷ মস্কোয় রাশিয়ার সবচেয়ে বড় খেলনার দোকানে সেটা টের পাওয়া যায়৷ অনলাইন হোক অথবা টেলিভিশন – গোটা পরিবার শিশুসুলভ আনন্দ নিয়ে এই সিরিজ দেখে৷ গোটা বিশ্বে বাচ্চাদের ঘরে আরও রং আনে এই সিরিজ৷