বগুড়ার বিদ্যুৎ হত্যা মামলার আসামি হেলাল হোসেন ওরফে সেলিম ফকিরকে ইউটিউবে একটি গানের মডেল হিসেবে দেখে তার কথা র্যাবকে জানিয়েছিলেন এক ব্যক্তি৷ সেই সূত্র ধরে বুধবার ভৈরব রেলস্টেশন থেকে হেলালকে গ্রেপ্তার করা হয়৷
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, ‘‘ছয় মাস আগে ইউটিউবে ‘ভাঙ্গা তরী ছেড়া পাল' শিরোনামে একটি গান দেখে এক ব্যক্তি র্যাবকে জানায় যে, ওই গানের মডেল সম্ভবত বগুড়ার বিদ্যুৎ হত্যা মামলার আসামি৷ পরে সেই তথ্য যাচাই বাছাই করে হেলাল ওরফে সেলিমকে গ্রেপ্তার করা হয়৷’’
৪৫ বছর বয়সি হেলাল তিনটি হত্যা মামলা এবং একটি চুরির মামলার আসামি৷ আগেও চুরির একটি মামলায় তিনি সাজা খেটেছেন৷
আল মঈন বলেন, ২০০১ সালের একটি হত্যা মামলায় ২০১৫ সালে তার (হেলালের)যাবজ্জীবন সাজা হয়৷ এরপর তিনি আত্মগোপনে চলে যান৷ পরিচয় গোপন করে বড় চুল আর দাড়ি রেখে ‘বাউল সেলিম' নাম নেন৷
তিনি আরও বলেন, বছর পাঁচেক আগে নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশনে কিশোর পলাশ ওরফে ‘গামছা পলাশের' একটি গানের শুটিংয়ের সময় রেললাইনের পাশে এক লোক বাউল গান গাচ্ছিলেন৷ তখন শুটিংয়ের এক লোক তাকে গানের মিউজিক ভিডিওতে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন৷ পরে সেই ‘বাউলকে' ‘ভাঙ্গা তরী ছেড়া পাল' গানের ‘মডেল' হিসেবে দেখা যায় এবং গানটির সাথে সাথে বাউলবেশী ‘সেলিম ফকিরও' পরিচিতি পান৷
২০১৯ সালের ছবিঘর
প্রতারণার গল্প নিয়ে যত সিনেমা
ব্যাংক হিসাব শূন্য, অথচ চেক দিয়ে কোটি কোটি ডলার তুলছেন৷ আবার তিনিই বনে যাচ্ছেন পাইলট, ডাক্তার কিংবা আইনজীবী৷ মুচি ক্যাপ্টেন বনে গ্রেপ্তার করলেন সিটি মেয়রকে৷ বিশ্বব্যাপী এমন অনেক প্রতারণার গল্প উঠে এসেছে বিভিন্ন সিনেমায়৷
ছবি: imago/EntertainmentPictures
‘ক্যাচ মি ইফ ইউ ক্যান’ (২০০২)
বাবা-মায়ের ডিভোর্সের পর চেক জালিয়াতির মাধ্যমে প্রতারণার সূচনা হয় ফ্রাঙ্ক আবাগনালের৷ মাত্র ১৬ বছর বয়সেই রেখেছিলেন প্রতারক হিসেবে সাফল্যের স্বাক্ষর৷ পর্যায়ক্রমে পাইলট, এরপর ডাক্তার এবং আইনজীবীর ভূমিকা পালন করতে দেখা যায় তাকে৷ স্টিভেন স্পিলবার্গের মনোমুগ্ধকর সিনেমাটিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও৷
ছবি: imago/EntertainmentPictures
‘ক্যান ইউ এভার ফরগিভ মি?’ (২০১৮)
আপনার লেখার হাত যদি ভালো হয়, তাহলে অর্থকষ্ট আপনার কাছে ব্যাপারই না! তেমনই এক দৃষ্টান্ত আর্থার লি ইসরায়েল, যিনি তারকাদের নাম করে ৪০০টি চিঠি লিখেন এবং সেগুলো বিক্রি করে হাতিয়ে নেন বিপুল অর্থ৷ এক সময় এফবিআইয়ের হাতে ধরা পড়লে অপরাধ স্বীকার করে নেন তিনি৷ পরবর্তীতে তার আত্মজীবনীর ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয় সিনেমাটি৷ এটি ২০১৯ সালের অস্কারে ৩টি ক্যাটেগরিতে মনোনয়ন পায়৷
জার্মানির হিয়ারোনিমুস কার্ল ফ্রিডরিশ ফ্রাইহার ফন ম্যুনশাউজেন একজন প্রতিভাবান গল্পকথকও ছিলেন৷ গ্রামের বাড়িতে অভিজাত ব্যক্তিদের নিয়ে তিনি বিভিন্ন পার্টির আয়োজন করতেন এবং ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে নিজের গল্প বলতেন৷ কীভাবে তিনি কামানের গোলায় ভর করে বহুদূর পাড়ি দিয়েছেন, এমন গল্প শুনতেও মানুষ আসতো সেখানে৷ ‘মিথ্যাবাদী’ এই ব্যারনের গল্প বিভিন্ন সিনেমায় ঠাঁই পেয়েছে৷ এর একটি ১৯৪৩ সালের ‘ম্যুনশাউজেন’৷
ছবি: picture-alliance/United Archives
‘আই লাভ ইউ ফিলিপ মরিস’ (২০০৯)
চার বার জেল থেকে পালাতে পেরেছেন স্টিভেন জে রাসেল৷ এই প্রতারক তার প্রতিভা দিয়ে বিচারক, ডাক্তার ও মিলিয়নেয়ারসহ বিভিন্ন রূপ ধারণ করেছিলেন৷ আর এসব করেই ব্যাংক ও ইন্সুরেন্স কোম্পানি থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছিলেন৷ কমেডি চলচ্চিত্র ‘আই লাভ ইউ ফিলিপ মরিস’-এ রাসেলের চরিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়৷ কারাগারের সহবন্দি ফিলিপ মরিসের সঙ্গে তার প্রেমের নানা দিকও আছে ওই সিনেমায়৷
ছবি: Imago/EntertainmentPictures
‘অ্যামেরিকান হাসেল’ (২০১৩)
দুর্নীতিবাজ রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে ১৯৭০ সালে এফবিআইয়ের একটি অভিযানের উপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছে এই সিনেমা৷ একজন প্রতারককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল সেই অভিযানে৷ সিনেমাটি মোট ১০টি অস্কার নমিনেশন পেলেও পুরস্কার ঘরে তুলতে পারেনি৷
ছবি: imago/Unimedia Images
‘দ্য ক্যাপ্টেন ফ্রম ক্যোপেনিক’ (১৯৫৬)
১৯০৬ সালে ক্যাপ্টেনের সাজ নিয়ে ক্যোপেনিকের টাউন হলে যান মুচি ফ্রিডরিশ ভিলহাইম ফোইগট৷ মেয়রকে গ্রেপ্তারের পর ট্রেজারিতে ডাকাতিও করেন তিনি৷ এই ডাকাতিতে তিনি কিছু সৈন্যকেও কাজে লাগাতে পেরেছিলেন৷ সত্য ওই ঘটনার উপর অনেকগুলো সিনেমা নির্মিত হয়েছে, তার একটি ‘দ্য ক্যাপ্টেন ফ্রম ক্যোপেনিক’৷
ছবি: picture-alliance/United Archives/IFTN
6 ছবি1 | 6
২০০১ সালে বগুড়ার বিদ্যুৎ হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হেলাল ১৯৯৭ সালে বগুড়ার বিষ্ণু হত্যা মামলা এবং ২০০৬ সালে রবিউল হত্যা মামলারও আসামি৷
সংবাদ সম্মেলনে আল মঈন বলেন, ২০০০ সালে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বগুড়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে হেলালের বাম হাতে মারাত্মক জখম হয় ও পরে ওই হাত অকেজো হয়ে যায়৷
ওই ঘটনার পর তিনি ‘দুধর্ষ হেলাল' ও ‘হাত লুলা' হেলাল হিসেবে পরিচিতি পান সেলিম৷ ২০১০ সালে বগুড়া সদর থানার এক চুরির মামলায় ২০১৫ সালে গ্রেপ্তার হন এবং জেলখাটার পর ওই বছরই জামিনে বের হন৷ বিদ্যুৎ হত্যা মামলার রায়ের পর আবার আত্মগোপনে চলে যান হেলাল৷
আল মঈন বলেন, ‘‘প্রথমে তিনি বগুড়া থেকে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে আসেন৷ পরে ট্রেনে চট্টগ্রামে গিয়ে আমানত শাহ মাজারে ছদ্মবেশ ধারণ করে বেশ কিছুদিন অবস্থানের পর সেখান থেকে সিলেটের শাহজালাল মাজারে গিয়ে আরও কিছুদিন কাটান৷’’
সেলিম বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন রেলস্টেশন ও মাজারে ছদ্মবেশে ছিলেন বলে জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক৷
কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেল স্টেশনে নাম ঠিকানা ও পরিচয় গোপন রেখে সেলিম ফকির নাম ধারণ করেন৷ প্রায় সাত বছর বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ফেরারি জীবন যাপন করেন৷ ভৈরব রেলস্টেশনের পাশে এক নারীর সাথে চার বছর সংসার করেছেন বলেও জানান কমান্ডার আল মঈন৷
বাউলবেশী হেলালের লেখাপড়া অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত৷ এলাকায় মুদি দোকানদার ছিলেন৷ পরে বিভিন্ন রেলস্টেশনে বাউল গান গেয়ে জীবন চালাতেন৷ এক পর্যায়ে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েন তিনি৷