1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইউনাইটেডের আইসোলেশন সেন্টার ছিল মৃত্যুফাঁদ

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৮ মে ২০২০

ঢাকার বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতালে বুধবার রাতে আগুনে পাঁচ রোগীর মৃত্যু নিয়ে এখন নানা প্রশ্ন৷ ফায়ার সার্ভিস বলছে হাসপাতালের কোনো ফায়ার ফাইটার টিম নেই৷ আর মূল হাসপাতালের বাইরে ওই আইসোলেশন সেন্টারটিই ছিলো মৃত্যুফাঁদ!

ছবি: Reuters

গুলশানের ৭১ নাম্বার সড়কে বহুতল এই হাসপাতালটির জরুরি বিভাগের পাশে মূল ভবনের বাইরে ২০ ফুট বাই ১০ ফুট অস্থায়ী করোনা আইসোলেশন সেন্টারটি করা হয় এক মাস আগে৷ হাসাপাতালের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা মেজর (অব.) মঈনুল হোসেন জানান, ‘‘ওই জায়গায় শীতের সময় ব্যাডমিন্টন খেলি আমরা৷ এবার করোনার জন্য অস্থায়ীভাবে শেড দিয়ে পাঁচটি বেডের একটি ইউনিট করা হয়েছে৷ টিন আর বোর্ড দিয়ে৷ বেডগুলো আলাদা করা হয়েছে শক্ত কার্টেইন দিয়ে৷ স্যাম্পল কালেকশনের জন্যও জায়গা আছে৷’’ 

‘পুরো ইউনিটটিই সর্বোচ্চ মাত্রায় একটি দাহ্য বস্তুতে পরিণত হয়েছিল’

This browser does not support the audio element.

ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক দেবাশীষ বর্ধন বলেন, ‘‘উপরে টিন এবং পাশে জিপসাম দিয়ে তৈরি৷ পার্টিশন ও সিলিং করা হয়েছে বোর্ড দিয়ে৷ এরমধ্যেই এসির লাইন, অক্সিজেন, প্রচুর ইলেকট্রিক লাইন সবকিছু৷ ফলে পুরো ইউনিটটিই সর্বোচ্চ মাত্রায় একটি দাহ্য বস্তুতে পরিণত হয়েছিল৷’’

আগুন লাগার পর কি করেছে হাসাপাতাল কর্তৃপক্ষ?
দেবাশীষ বর্ধন বলেন, ‘‘আগুন লাগার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আসলে কিছুই করেনি৷ তাদের ফায়ার ফাইটিং টিম নেই৷ ফায়ার হাইড্রেন্ট আছে৷ সেগুলো আমরা এসে ব্যবহার করি৷ ওগুলো ব্যবহারের লোক ছিল না তাদের৷ আর ফায়ার এক্সটিংগুইশার ব্যবহারের চেষ্টা হলেও তা কাজে আসেনি কারণ মেয়াদ ছিল না৷’’

হাসপাতালের মূল ভবনের একজন রোগীর ভিডিও থেকে দেখা যায় তিনি রাত ৯টা ২৮ মিনিটে আগুনের ভিডিও ধারণ শুরু করেন৷ তখন আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে৷ তার কমপক্ষে আরো পাঁচ মিনিট আগে আগুন লেগে থাকলে রাত ৯টা ২০ মিনিটের পরেই আগুন লেগেছে৷ আর ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়া হয় আরো ৩৫ মিনিট পর রাত ৯টা ৫৫ মিনিটে৷ তাও হাসপাতাল থেকে দেয়া হয়নি৷ মূল ভবনের রোগীদের মধ্য থেকেই কেউ পুলিশের ৯৯৯ নাম্বরে ফোন দেন৷ ফাযার সার্ভিসও জানিয়েছেন, তারা ৯৯৯ থেকেই কল পান৷ ফায়ার সার্ভিস দ্রুতই হাসপাতালে যায়৷ রাত সাড়ে ১০টার দিকে তারা আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে৷ 

‘‘আমরা গিয়ে দেখি আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে৷ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর পাঁচ রোগীর মরদেহ উদ্ধার করি৷ তারা আগুনের ধোয়ায় সাফোকেশনে মারাগেছে বলে মনে করছি৷ আমরা যাওয়ার আগে কেউ আগুন নিভানোর বা রোগীদের উদ্ধারের চেষ্টা করেননি৷ আর আগুন সময়ে কোনো চিকিৎসক, নার্স বা হাসপাতালের কোনো কর্মচারীও আইসোলেশন ইউনিটে ছিলেন না৷ শুধু পাঁচজন রোগীই ছিলেন৷’’


হাসপাতালে আগুন লাগার সময় নিরাপত্তা কর্মকর্তা মেজর (অব.) মঈনুল হোসেন হাসপাতালে ছিলেন না৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি ডিউটি শেষ করে তখন বাসার পথে ছিলাম৷ তবে খবর পেয়ে ফিরে এসে দেখি ফায়ার সার্ভিস আগুন নিভিয়ে ফেলেছে৷ ফায়ার এক্সটিংগুইশার মেয়াদেত্তীর্ণ হলেও তা ব্যবহার উপযোগী ছিলো৷ মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও এগুলো ভালো থাকে৷ তবে আগুন তীব্র হওয়ায় হাসপাতালের কেউ আগুন নেভাতে যেতে পারেনি৷’’

অস্থায়ী শেড যখন হাসপাতাল

ইউনাইটেড হাসপাতালের ওই আইসোলেশন সেন্টারকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছাড়া আর কেউই রোগীদের জন্য নিরাপদ বলছেন না৷ ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম বৃহস্পতিবার সকালে কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার মামুন কে নিয়ে ইউনাইটেড হাসপাতালে যান৷ ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর তিনি বলেন, ‘‘আমি দেখলাম তারা করোনার চিকিৎসার জন্য একটি টেম্পোরারি শেড করেছিলেন৷ এখানো তারা যে পার্টিশনগুলো দিয়েছেন সেগুলো অতি মাত্রায় দাহ্য পদার্থ৷ সিলিংগুলোও একই রকম৷ যা খুবই দুঃখজনক৷ আগুন লাগলে কি হবে এটা তারা চিন্তাও করেননি৷ তাদের ফায়ার ফাইটিং যন্ত্রপাতি মেয়াদোত্তীর্ণ৷ কোনো ফায়ার ফাইটিং টিমও নাই৷ টেম্পোরারি শেডের জন্যও আলাদা কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি৷’’


দেবাশীষ বর্ধণ বলেন, ‘‘আমাদের বিবেচনায় এই আইসোলেশন সেন্টারটি ছিলো খুবই রিস্কি৷ পার্টেক্স বোর্ড দিয়ে পার্টিশন দেয়া হয়েছে যা অতি দাহ্য৷ আগুন লাগার পর সবগুলো একই সাথে জ্বলে উঠেছে৷ ফলে রোগীরা চেষ্টা করে থাকলেও কেউ বের হতে পারেনি৷ এখানে এসি ছিলো, অনেক ইলেট্রিক তার ছিলো৷ ফলে আগুন লাগার অনেক সূত্র আছে৷ এখানে আলাদাভাবেও কোনো ফায়ার সেফটির ব্যবস্থা ছিল না৷’’

ইউনাইটেড হাসপাতালের যোগাযোগ ও ব্যবসা উন্নয়ন বিভাগের প্রধান ডা. শাগুফা আনোয়ার এইসব অভিযোগ অস্বীকার করলেও অভিযোগের জবাবে কোনা সদুত্তর দিতে পারেননি৷ তিনি বলেন, ‘‘এটা আইসোলেশন ইউনিট হওয়ায় হাইফ্লো অক্সিজেন চলে৷ এখানে আইসিইউ ব্যবস্থা আছে৷ রোগীরা সবাই ভেন্টিলেটরে ছিলেন৷ তাদের পক্ষে বের হওয়া সম্ভব ছিলোনা৷ আর মুহূর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ায় আমরা চেষ্টা করেও কিছু করতে পারিনি৷''
ফায়ারা সার্ভিসের তদন্ত কমিটির বাইরেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে৷ আগুনের কারণ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট করে কেউই কিছু বলছেন না৷ 

‘আমাদের কিছু সিস্টেম আছে’

This browser does not support the audio element.

রোগী ধরে রাখা কেন?

আগুনে নিহত পাঁচজনের মধ্যে তিনজন করোনা পজেটিভ ছিলেন৷ আর দুইজন নেগেটিভ৷ আগুনে নিহত মাহবুব এলাহী (৫০) নামের এক রোগীর ছোট ভাই নাঈম আহমেদ জানান, ‘‘১৫ মে তাকে ভর্তি করা হয়৷ তার শ্বাসকষ্ট ছিলো৷ কিন্তু প্রথম টেস্টে নেগেটিভ আসে৷ এরপর ঈদের আগে আরেকটি টেস্ট করা হলেও নেগেটিভ আসে৷ তারপরও তাকে রিলিজ দেয়া হয়নি৷'' যেদিন আগুন লাগে সেদিন তার পরিবারের সদস্যরা তাকে হাসপাতালে রাখতে হলে কেবিনে নেয়ার অনুরোধ করেন যেহেতু তিনি করোনা আক্রান্ত নন৷ তাও শোনেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ৷ আর রাতে তিনি আগুনে মারা গেলেন৷ এমনকি তিনজন করোনা রোগী হলেও বাকি দুইজনকেও করোনা রোগী বলে প্রথমে পরিবারের কাছে লাশ দিতে চায়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি৷

এর জবাবে ডা. শাগুফা আনোয়ার বলেন, ‘‘আমাদের কিছু সিস্টেম আছে৷  আমরা সেটা মেনেই রোগীকে রিলিজ দেই৷’’

এই হাসাপাতালটি কোভিড হাসপাতাল নয়৷ তারপরও কোভিড পজিটিভ হওয়া তিনজনকে কেন কোভিড হাসাপাতালে না পাঠিয়ে এখানে রাখা হয়েছিলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘রোগী ও তাদের আত্মীয়-স্বজনকে রাজি না করিয়ে তো আমরা পাঠাতে পারি না৷’’


২০০৬ সালে এই হাসপাতালটি চালু হয়৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ