ঢাকায় জার্মান রাষ্ট্রদূত আলব্রেশট কনসে বলেছেন, গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর নিজের দেশে যোগ্য সম্মান পাচ্ছেন না৷ জার্মান রাষ্ট্রপতির একটি আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দিতে গিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন৷
বিজ্ঞাপন
এদিকে, গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালক তাহসিনা খাতুন ডয়চে ভেলেকে বলেন, তাঁকে তাঁর যোগ্য সম্মান না দিলে দেশের সাধারণ মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷
বৃহস্পতিবার জার্মান রাষ্ট্রপতি ইওয়াখিম গাউকের একটি আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দিতে ড. ইউনূসের সঙ্গে দেখা করেন রাষ্ট্রদূত আলব্রেশট কনসে৷ এসময় তিনি দুঃখ করে বলেন, ‘‘ক্ষুদ্র ঋণ এবং সামাজিক ব্যবসার পথিকৃৎ ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর নিজের দেশে ইদানিং যোগ্য সম্মান পাচ্ছেন না৷ বিষয়টি আমাকে মর্মাহত করেছে৷''
জার্মান দূতাবাসের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জার্মান রাষ্ট্রপতি ইওয়াখিম গাউক আগামী বছরের শুরুর দিকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জার্মানি সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন৷ রাষ্ট্রদূত কনসে বলেন, ড. ইউনূস সমাজের অবহেলিত এবং নিম্নবিত্ত, বিশেষ করে নারীদের জীবনমান উন্নয়নে যে ভূমিকা রেখেছেন জার্মানি তার প্রশংসা করে৷ রাষ্ট্রদূত জানান জার্মান ভিত্তিক ‘গার্মেন্টস ইন্ডাষ্ট্রি ট্রান্সপারেন্সি ইনিশিয়েটিভ' বা জিআইটিই এর উদ্যোক্তা হলেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল এর প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক পেটার আইগেন এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূস৷ এই প্রতিষ্ঠানটি পোশাক কারখানায় গ্রহণযোগ্য ন্যূনতম মজুরি নিয়ে বিশ্বব্যাপী কাজ করে – যা একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ৷ ড. ইউনূসের এই উদ্যোগ রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশের পোশাক শিল্প নিয়ে সারা বিশ্বে যে নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করবে৷
মুহাম্মদ ইউনূসের আরেকটি অর্জন
যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা কংগ্রেশনাল স্বর্ণপদক গ্রহণ করেছেন গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস৷ বুধবার ওয়াশিংটনের ক্যাপিটল ভবনের রোটান্ডায় ইউনূসের হাতে এই সম্মাননা তুলে দেন জন বোয়েনার৷
ছবি: Getty Images
যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ঝুড়িতে আরেকটি সম্মাননা যোগ হলো৷ বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা কংগ্রেশনাল স্বর্ণপদক গ্রহণ করেছেন গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা৷ তবে নিজের দেশে বর্তমানে বেশ চাপের মধ্যে আছেন শান্তিতে নোবেল জয়ী অধ্যাপক ইউনূস৷
ছবি: Getty Images
সম্মাননা গ্রহণ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের উভয় কক্ষের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতে ওয়াশিংটনের ক্যাপিটল ভবনের রোটান্ডায় অধ্যাপক ইউনূসের হাতে সম্মাননা তুলে দেন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার জন বোয়েনার৷ এসময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট নেতা ন্যান্সি পেলোসি (বামে)৷
ছবি: Getty Images
বাংলাদেশের মানুষকে উৎসর্গ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা কংগ্রেশনাল গ্রহণ করার পর ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘‘সকলে আমার কাজে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছেন বলেই ক্ষুদ্রঋণের ধারণাটি আজ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত৷ আমি এ সম্মান বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের জন্যে উৎসর্গ করলাম৷’’
ছবি: Getty Images
‘প্রেসিডেন্ট স্বর্ণপদক’
এর আগে ২০০৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি মর্যাদাশীল সম্মাননা অর্জন করেন ইউনূস৷ ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে দারিদ্র্য বিমোচনে কাজ করায় যুক্তরাষ্ট্রের ‘প্রেসিডেন্ট স্বর্ণপদক’ পান ড. ইউনূস৷ সাধারণত মার্কিন প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত পছন্দ অনুযায়ী এই সম্মাননা দেওয়া হয়৷
ছবি: AP
অন্য উচ্চতায় ইউনূস
বলাইবাহুল্য, ইউনূস হচ্ছেন প্রথম এবং একমাত্র বাংলাদেশি, যিনি নোবেল পুরস্কার জয়ের পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুটি মর্যাদাশীল সম্মাননা অর্জন করেছেন৷ গোটা বিশ্বে মাত্র সাতজন জীবদ্দশায় এই তিনটি সম্মাননা পেয়েছেন৷ এরা হচ্ছেন নরম্যান বারলগ, মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র, নেলসন ম্যান্ডেলা, এলি উইসেল, অং সান সু চি, মাদার টেরেসা এবং সর্বশেষ মুহাম্মদ ইউনূস৷
ছবি: AP
গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা
গরিব মানুষ বিশেষ করে নারীদের ক্ষুদ্রঋণ দেওয়ার জন্য ১৯৭৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন মুহাম্মদ ইউনূস৷ আধুনিক ক্ষুদ্রঋণের জনক বলা হয় তাঁকে৷ গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ক্ষুদ্রঋণকে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হন তিনি৷ ক্ষুদ্রঋণের এই ধারণা অধ্যাপক ইউনূসকে গোটা বিশ্বেই সম্মানজনক পরিচিতি এনে দিয়েছে৷
ছবি: AP
শান্তিতে নোবেল জয়
২০০৬ সালের যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জয় করেন অধ্যাপক ইউনূস এবং গ্রামীণ ব্যাংক৷ সেবছরের ডিসেম্বরে নরওয়ের রাজধানী অসলো’র টাউন হলে এই সম্মাননা গ্রহণ করেন অধ্যাপক ইউনূস এবং গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিনিধি তসলিমা বেগম৷
ছবি: AP
রাজনীতির ইচ্ছা এবং বিড়ম্বনা
শান্তিতে নোবেল জয়ের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রবেশের ঘোষণা দেন অধ্যাপক ইউনূস৷ তবে এই সিদ্ধান্ত থেকে দ্রুতই সরে আসেন তিনি৷ কিন্তু অনেকেই মনে করেন, রাজনীতিতে নামার এই বাসনার কারণে পরবর্তীতে অনেক রাজনীতিবিদের চক্ষুঃশূল হন তিনি৷
ছবি: AP
গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ‘বিদায়’
শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ইউনূস সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ বেশ খানিকটা চাপের মধ্যে রয়েছেন৷ বয়সসীমা অতিক্রান্ত হওয়ার কারণ দেখিয়ে ২০১১ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে ইউনূসকে অব্যাহতি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক৷ এর বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়েছেন ইউনূস৷ এখন (১৮.০৪.১৩) পর্যন্ত ব্যাংকটিতে নতুন কোন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ সম্ভব হয়নি৷
ছবি: dapd
রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ?
যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কখনো অধ্যাপক ইউনূসকে তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে স্বীকার করেননি৷ তবে একথা বহুদিন ধরে চালু যে, অধ্যাপক ইউনূসের উপর কোন কারণে নাখোশ শেখ হাসিনা৷ যেকারণে চলতি সরকারের মেয়াদে নিজ দেশ বিভিন্ন ইস্যুতে চাপে আছেন মুহাম্মদ ইউনূস৷
ছবি: AP
10 ছবি1 | 10
এদিকে গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালক তাহসিনা খাতুন ডয়চে ভেলেকে বলেন, জার্মান রাষ্ট্রদূত দুঃখ করে যে কথা বলেছেন তা যথার্থ৷ তিনি বলেন কোনো এক অজ্ঞাত কারণে বর্তমান সরকার জেদের বশবর্তী হয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে যোগ্য সম্মান দিচ্ছে না৷ কিন্তু দেশের মানুষের কাছে তিনি সম্মানিত৷ শুধু দেশে নয় বিদেশের মানুষজনও তাঁকে শ্রদ্ধা করে৷ তিনি দেশের মানুষের জন্য কাজ করছেন৷ সরকার তাঁকে শুধু গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকেই সরিয়ে দেয়নি, তাঁকে নানাভাবে হয়রানিরও চেষ্টা করছে, বলে অভিযোগ করেন তাহসিনা খাতুন৷ তিনি বলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতো একজন মানুষকে যোগ্য সম্মান না দিলে তাতে দেশের মানুষেরই ক্ষতি৷ ‘‘তাঁকে অসম্মান করলে আমরাই ছোট হয়ে যাব, তিনি ছোট হবেন না৷''