1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইউনূস-মোদী বৈঠক: দ্বিপাক্ষিক আলোচনার সূত্রপাত

৪ এপ্রিল ২০২৫

ইউনূস-মোদীর বৈঠকে আলোচিত বিষয়ের চেয়ে তা অনুষ্ঠিত হওয়াকেই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন বাংলাদেশের বিশ্লেষকেরা৷

থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের সাংরিলা হোটেলে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন শেষে শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুরের পর দুই প্রতিবেশী দেশের শীর্ষ নেতারা দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেনছবি: Asien, Thailand, Bangkok, 2025, Narendra Modi, Muhammad Yunus, BIMSTEC, Gipfel, Revolution, Indien, Bangladesch, Regionalgipfel, politische Beziehungen, Südostasien, internationale Diplomatie

অন্যদিকে ভারতীয় বিশ্লেষকদের মতে, ভারত যে বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে চায় এই বৈঠক সেই বার্তা দিচ্ছে৷

থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের সাংরিলা হোটেলে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন শেষে শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুরের পর দুই প্রতিবেশী দেশের শীর্ষ নেতারা দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন৷ অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেয়ার পর নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে অধ্যাপক ইউনূসের প্রথম বৈঠক এটি৷

বৈঠকের পর বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করা হয়েছে৷ বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব সফিকুল আলম জানিয়েছেন, ‘‘বৈঠকে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণসহ দ্বিপাক্ষিক বিষয় তুলে ধরা হয়েছে৷'' বৈঠক ‘‘খুবই গঠনমূলক ও ফলপ্রসূ'' বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷

অন্যদিকে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী (নরেন্দ্র মোদী) একটি গণতান্ত্রিক, স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ, প্রগতিশীল এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের প্রতি ভারতের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন৷’’

কী কথা হলো?

বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘‘বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের পারস্পরিক যতগুলো ইস্যু আছে, সবগুলো নিয়েই কথা হয়েছে বৈঠকে৷ আমাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট যতগুলো বিষয় ছিল সবগুলোই প্রধান উপদেষ্টা বৈঠকে বলেছেন৷ যেমন: শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ বিষয়ে কথা হয়েছে৷ শেখ হাসিনা ওখানে বসে যে উসকানিমূলক মন্তব্য করছেন, সেগুলোর বিষয়ে কথা বলেছেন৷ সীমান্ত হত্যা নিয়ে কথা হয়েছে৷ আমাদের দুই দেশের মধ্যে যে গঙ্গা পানি চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে , চুক্তি আবার হওয়ার কথা হচ্ছে, তিস্তার পানি-এই সবগুলো নিয়েই কথা হয়েছে৷’’

গুরুত্বপূর্ণ হলো, ইউনূস-মোদীর দেখা হওয়া, বৈঠক হওয়া অধ্যাক ড. লাইলুফার ইয়াসমিন

This browser does not support the audio element.

অন্যদিকে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী একটি গণতান্ত্রিক, স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ, প্রগতিশীল এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের প্রতি ভারতের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন৷ তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে জনগণকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিশ্বাস করে৷ তিনি দীর্ঘ সময় ধরে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার কথা তুলে ধরেন যা উভয় দেশ ও দেশের জনগণকে বাস্তব সুবিধা দিয়েছে৷ এই আলোকে বাস্তবতার নিরিখে একটি ইতিবাচক ও গঠনমূলক সম্পর্ক গড়তে ভারতের আকাঙ্ক্ষার কথা তিনি প্রফেসর ইউনূসকে জানিয়েছেন৷৷’’

সম্প্রতি চীন সফরে গিয়ে মুহাম্মদ ইউনূস ভারতের সেভেন সিস্টার্সকে ‘স্থলবেষ্টিত' হিসেবে উল্লেখ করে বক্তব্য রাখেন৷ এই অঞ্চলে বাংলাদেশকে ‘সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক' হিসেবেও উল্লেখ করেন তিনি৷ তার এই বক্তব্যকে ভারতের রাজনীতিবিদেরা ভালোভাবে নেননি৷ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করও৷

শুক্রবার বিক্রম মিশ্রি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী আহ্বান জানিয়েছেন (সম্পর্কের) পরিবেশ নষ্ট করে, এমন যে-কোনো বাগাড়ম্বরপূর্ণ বক্তব্য এড়িয়ে চলাই ভালো৷’’

আলোচনায় সীমান্তের প্রসঙ্গ উঠে আসার কথা জানিয়েছেন ভারতের মুখপাত্রও৷ বলেন, ‘‘তিনি সীমান্তে স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা রক্ষায় অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপার প্রতিরোধে , বিশেষ করে রাতে, আইনের কঠোর প্রয়োগের ওপর জোর দিয়েছেন৷’’

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেন , ‘‘প্রধানমন্ত্রী মোদী বাংলাদেশেহিন্দুসহ সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিয়ে ভারতের উদ্বেগের কথা তুলে ধরেছেন এবং বাংলাদেশ সরকার তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন৷ তিনি নৃশংসতার সব ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের ওপরও জোর দিয়েছেন৷’’

বিশ্লেষকেরা যা বলছেন

‘মোদী-ইউনূস বৈঠক অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ' বলে মনে করেন ভারতীয় সেনা বাহিনীর সাবেক লেফটন্যান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্য৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ঐতিহাসিক৷ সে দেশে যে সরকারই থাকুক না কেন, ভারত সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চায়৷ কারণ, ভারতের ‘প্রতিবেশী প্রথম' নীতিতে বাংলাদেশের গুরুত্ব অপরিসীম৷’’

তার মতে, বৈঠকে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্কের বার্তাই দিয়েছে৷ তবে পাশাপাশি নিজেদের উদ্বেগের বিষয়গুলিও স্পষ্ট করে দিয়েছে৷

ভারতের সাবেক আইপিএস অফিসার এবং ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক বিষয়ে বিশেষজ্ঞ শান্তনু মুখোপাধ্যায়ের কাছে এই বৈঠককে ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ' বলেই মনে হয়েছে৷ কারণ, হিসেবে তিনি বলেন, ‘‘আলোচনায় এমন কোনো কথা ওঠেনি, যা ভারত আগে বাংলাদেশকে জানায়নি৷’’

শান্তনুর মতে, বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বুঝিয়ে দিয়েছেন, ভারত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে কথা বলতে চায় না৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘কিন্তু  (ভারত)প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশের গুরুত্ব স্বীকার করে৷ দুই দেশের সুসম্পর্ক যে ভারতের কাছে গুরুত্বপূর্ণ তা আবার স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে৷ কিন্তু এই পরিস্থিতিতে ভারতের যে আশঙ্কাগুলি তৈরি হয়েছে তা-ও বাংলাদেশকে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী৷’’

একটি সম্মেলনের সাইডলাইনে তারা কথা বলেছেন মাত্র: মোফাজ্জল করিম

This browser does not support the audio element.

তবে কী আলোচনা হয়েছে তার চেয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়াকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে চান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাক ড. লাইলুফার ইয়াসমিন৷ তিনি বলেন, ‘‘কী আলোচনা হলো তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো ইউনূস-মোদীর দেখা হওয়া, বৈঠক হওয়া৷ ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর এই প্রথম দুই দেশের সরকার প্রধানের সঙ্গে বৈঠক হলো৷ সম্পর্কের যে অস্বস্তিকর অবস্থা চলছিলো, আমি মনে করি তার বরফ গলা শুরু হলো৷’’

এর মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে বলে ধারণা করেন এই অধ্যাপক৷ তিনি বলেন, ‘‘দুই দেশের সরকার প্রধান তাদের ইস্যুগুলো বলেছেন৷ এখন সেই ইস্যু নিয়ে কাজ করা যাবে৷ ভারত বাংলাদেশের ইস্যুগুলো জানলো৷ আর বাংলাদেশও ভারতের ইস্যুগুলো জানলো৷ ফলে দুই দেশই বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে পারবে৷ যদি কথা না হয়, আলোচনা না হয়, তাহলে তো সম্পর্ক এগোবে না৷ এই বৈঠকটি তার একটি ক্ষেত্র তৈরি করলো বলে আমি মনে করি৷’’

একই মত সাবেক কূটনীতিক সাকিব আলীরও৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার বিবেচনায় বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে একটি ওয়ার্কিং রিলেশনশিপ থাকা উচিত৷ যেকোনো সংকটে তারা যেন সরাসরি কথা বলতে পারেন৷ দুই দেশের মধ্যে একটা আস্থার সম্পর্ক দরকার৷ আমি মনে করি, এই বৈঠকটি তার সুযোগ তৈরি করেছে৷''

তবে স্বল্প সময়ের এই বৈঠককে ততটা গুরুত্ব দিতে নারাজ সাবেক রাষ্ট্রদূত মোফাজ্জল করিম৷ তিনি বলেন, ‘‘এই বৈঠক কোনো গুরুত্ব বহন করে না৷ একটি সম্মেলনের সাইডলাইনে তারা কথা বলেছেন মাত্র৷ তবে এমন যদি হতো তারা এই বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন যে, অল্প সময়ের মধ্যে তারা একটি পরিপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসবেন, তাহলে সেটাকে অগ্রগতি বলতে পারতাম৷’’

গুজব ও তথ্যের ভুয়া-মিথ্যা: বাংলায় ফ্যাক্টচেক

19:59

This browser does not support the video element.

 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ