২০১৭ সালেই জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো থেকে নাম প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় ইসরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ অভিযোগ তোলা হয় ইসরায়েল বিদ্বেষের৷ পয়লা জানুয়ারি মধ্যরাত থেকে এই ঘোষণা কার্যকর হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
২০১৮ সাল শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইউনেস্কোর সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্কও শেষ হয়ে গেল৷ তাদের সঙ্গে ইসরায়েল বিরোধিতার অভিযোগ তুলে ইউনেস্কো ছাড়লো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও৷
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বৈষম্যের নীতি গ্রহণ করেছে ইউনেস্কো৷ ইসরায়েল রাষ্ট্র ও ইহুদিদের ঘৃণা করে, এমন লোকরা ইতিহাস বিকৃতিতে সংস্থাটিকে কাজে লাগাচ্ছে৷''
২০১৭ সালে ঘোষণা দিলেও ইউনেস্কোর নিয়ম অনুযায়ী, কোনো সদস্য পদ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিলে সে ঘোষণা কার্যকর হয় পরের বছরের শেষে৷ ফলে, না চাইলেও আরো এক বছর ইউনেস্কোর সদস্য থাকতে হয় ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রকে৷
১৯৪৯ সালে ইউনেস্কোতে যোগ দেয় ইসরায়েল৷ ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ প্রকল্পের জন্য বিশ্বজুড়ে সমাদৃত সংস্থাটি৷ বিভিন্ন দেশে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ঘোষণা ও ঐতিহ্য রক্ষায় সংস্থাটির ভূমিকা অনস্বীকার্য৷ তবে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, নারীর শিক্ষা এবং জঙ্গিবাদ ও ইহুদিবিদ্বেষের বিরুদ্ধেও কাজ করে থাকে সংস্থাটি৷
ইসরায়েলে নয়টি বিশ্ব ঐতিহ্য রয়েছে৷ এর মধ্যে হাইফা অঞ্চলের বাহাই গার্ডেন, মৃত সাগরের পাশে মাসাদার বিবলিক্যাল নিদর্শন এবং তেল আবিবের হোয়াইট সিটি উল্লেখযোগ্য৷
তবে ঝামেলা বাঁধে যখন পূর্ব জেরুসালেমের পুরোনো শহরকে কোনো রাষ্ট্রের অধীনে না দেখিয়ে অন্তর্ভূক্ত করা হয় বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায়৷ এছাড়া, ফিলিস্তিনি সীমানার মধ্যে থাকা তিনটি নিদর্শনকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে৷
তবে ইসরায়েলের সদস্যপদ থাকা না থাকায় সংরক্ষিত নিদর্শনগুলোর ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না৷ ঐতিহ্যগুলোর সংরক্ষণ ও নিরাপত্তার দায়িত্ব স্থানীয় কর্তৃপক্ষের ওপর ন্যস্ত৷ ইউনেস্কোতে না থাকলেও বিশ্ব ঐতিহ্য কনভেশনের সদস্য ঠিকই থাকছে ইসরায়েল৷
ইসরায়েলের কিছু সংরক্ষণবিদ অবশ্য দেশটির এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্বিমত জানিয়েছেন৷ সম্প্রতি ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বেশ কিছু সংরক্ষণের আবেদন করা স্থপতি জিরোয়া সোলার বলছেন, ‘‘এটা রাজনৈতিক৷ আমি ইউনেস্কোর অনেক সিদ্ধান্তের সাথে একমত হই না৷ কিন্তু এই সংস্থা ত্যাগ করায় অন্য কাউকে না, আমরা নিজেদেরকেই শাস্তি দিচ্ছি৷ ইউনেস্কো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে না, যেসব দেশ ভোট দেয়, তাঁরা দেশটির বিপক্ষে৷''
ইসরায়েল: দেশটি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য
ফিলিস্তিনের সঙ্গে এবং সেই কারণে বলতে গেলে প্রায় গোটা মুসলিম বিশ্বের সঙ্গেই ইসরায়েল নামের রাষ্ট্রটির বৈরিতা৷ তবে ইহুদি অধ্যুষিত এ দেশ সম্পর্কে এই তথ্যগুলো কি জানেন? জানলে সত্যিই অবাক হবেন৷
রাষ্ট্র ভাষা কয়টি?
জানেন ইসরায়েলের রাষ্ট্রভাষা ক’টি? দু’টি৷ আধুনিক হিব্রু ভাষা এবং আরবি৷ হিব্রু ভাষার কথা তো সবাই শুনেছেন, কিন্তু ‘আধুনিক হিব্রু’ বলতে ঠিক কী বোঝানো হচ্ছে তা হয়ত অনেকেই বুঝতে পারবেন না৷ এই ভাষাটি গত ১৯ শতকের শেষভাগ পর্যন্তও বিকশিত হয়েছে৷ আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আধুনিক হিব্রুর শেকড় প্রাচীন হিব্রু হলেও এখন এ ভাষায় ইংরেজি, স্লাভিচ, আরবি এবং জার্মানসহ অনেকগুলো বিদেশি ভাষার প্রভাব রয়েছে৷
ছবি: Fotolia/Ivan Montero
ইসরায়েলের আয়তন কত?
ছোট্ট দেশ৷ কিন্তু কত ছোট? ইসরায়েলের আয়তনই বা কত? কাজির গরু নাকি গোয়ালে থাকে না, গাছে থাকে৷ ইসরায়েলের ক্ষেত্রে কথাটা একটু অন্যভাবে বলা যায়৷ ইসরায়েলের ভূমি চুক্তিতে থাকে না, বাস্তবে থাকে৷ ১৯৪৯ সালে ইসরায়েল, লেবানন, জর্ডান ও সিরিয়ার মধ্যে যে চুক্তি হয়েছিল সেই চু্ক্তি অনুযায়ী দেশটির আয়তন হওয়ার কথা ২০ হাজার ৭৭০ বর্গ কিলোমিটার৷ কিন্তু ইসরায়েলের আয়তন এখন ২৭ হাজার ৭৯৯ বর্গ কিলোমিটার৷
ইসরায়েলের ‘সবাই’ সেনাসদস্য
ইসরায়েল একমাত্র দেশ যেখানে প্রাপ্ত বয়স্ক সব নাগরিকের জন্যই সেনা প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক৷ সুতরাং দেশটিতে যতজন প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক সেনাসদস্যও এক অর্থে ততজন৷ সেনাপ্রশিক্ষণও স্বল্পমেয়াদি হয় না৷ সব প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেকে ৩ বছরের এবং মেয়েকে অন্তত ২ বছরের প্রশিক্ষণ নিতে হয়৷
ছবি: dapd
ইসরায়েলিও ফিলিস্তিনের সমর্থক?
ইহুদিদের একটি ধর্মীয় সংগঠন জিওনিজম মতবাদ এবং ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে৷ সংগঠনটির নাম, ‘নেতুরেই কার্টা’ বা ‘নগর রক্ষক’৷ ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই সংগঠনটি ‘ফিলিস্তিনের সমর্থক’ হিসেবে পরিচিত৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আইনস্টাইন প্রেসিডেন্ট হননি
নোবেল বিজয়ী জার্মান পদার্থ বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইহুদিনিধন বন্ধ করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন৷ ইসরায়েল তাঁর কথা শুধু কৃতজ্ঞচিত্তে মনেই রাখেনি, তাঁকে সম্মানও জানাতে চেয়েছিল প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রস্তাব দিয়ে৷ ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন আইনস্টাইন৷
ছবি: Imago/United Archives International
ঈশ্বরের কাছে চিঠি
ইসরায়েলের মানুষ সত্যি সত্যিই ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে প্রচুর চিঠি লিখে৷ প্রতি বছর জেরুসালেমের ডাক বিভাগ এমন অন্তত হাজার খানেক চিঠি পায় যেখানে প্রাপকের জায়গায় লেখা থাকে ‘ঈশ্বর’!
ছবি: Fotolia/V. Kudryashov
জেরুসালেম যা যা সয়েছে
ইতিহাস বলছে, প্যালেস্টাইনের রাজধানী জেরুসালেমে এ পর্যন্ত ২৩ বার ভয়াবহ আগুন লেগেছে আর বহিঃশক্তির আক্রমণের শিকার হয়েছে ৫২ বার৷ জেরুসলেম দখল এবং পুনরুদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে ৪৪ বার৷
ছবি: DW/S. Legesse
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ নোট
ইসরায়েলে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য রয়েছে বিশেষ মুদ্রা৷ ‘ব্রেইল’-এর মতো বর্ণের সহায়তায় কাগুজে নোটগুলোতে লেখা থাকে বলে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের কেনাকাটা বা মুদ্রা বিনিময়ে কোনো অসুবিধা হয় না৷ সারা বিশ্বে ইসরায়েল ছাড়া ক্যানাডা, মেক্সিকো, ভারত আর রাশিয়াতেও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য এই বিষেষ ব্যবস্থা রয়েছে৷