সৌরজগতের সপ্তম গ্রহ ইউরেনাসের আকাশে জমাট বাঁধা মেঘ নিয়ে রহস্য ছিল দীর্ঘদিনের৷ অবশেষে সে রহস্য উদ্ধার হলো৷ জানা গেল, সেখানে হাইড্রোজেন সালফাইড আছে৷ যার মানে গ্রহটির গন্ধ ঠিক পচা ডিমের মতো!
বিজ্ঞাপন
বায়ুমণ্ডলে হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস বেশি থাকায় সৌর জগতের সাত নম্বর গ্রহ ইউরেনাসের গন্ধ পচা ডিমের মতোই উৎকট বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা৷
মঙ্গলবার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলে, ‘কয়েক দশক ধরে গবেষণা এবং মহাকাশযান ভয়েজার টু পাঠানোর পরও ইউরেনাসের বায়ুমণ্ডলে জমে থাকা রহস্যময় মেঘ সম্পর্কে পুরোপুরি জানা যাচ্ছিল না৷'
অবশেষে বিশ্বের নানা দেশের বিজ্ঞানীদের সমন্বয়ে গঠিত একটি দল রহস্য ভেদ করে ন্যাচার অ্যাস্ট্রনমি জার্নালে একটি গবেষণা প্রকাশ করে৷
অ্যামেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার জেট প্রোপালসন ল্যাবরেটরির পদাথর্বিদ গ্লেন অর্টন বিজ্ঞানীদের এই দলে ছিলেন৷
Can the Hubble Telescope look back in time?
01:49
তিনি জানান, বিজ্ঞানীরা ইউরেনাসের থেকে বিচ্ছুরিত ইনফ্রারেড রশ্মি বিশ্লেষণ করে গ্রহটির জমাট মেঘের রহস্য বের করে৷ এই গবেষণায় হাওয়াই দ্বীপের মাওনা কিয়া অঞ্চলে বসানো জেমিনি নর্থ টেলিস্কোপ ব্যবহার করা হয়েছে৷
মহাকাশ গবেষকরা মনে করেন, ইউরেনাসের প্রতিবেশী নেপচুনের মেঘেও হাইড্রোজেন সালফাইডের পরিমাণ বেশি৷ আর এ কারণটাই এই দু'টি গ্রহকে সৌরজগতের অপর দু'টি গ্রহ শনিআর বৃহস্পতির চেয়ে ‘সম্পূর্ণ আলাদা' করেছে৷শনি আর বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডলে বিজ্ঞানীরা অ্যামোনিয়ার আধিক্য পেয়েছিলেন৷ কিন্তু হাইড্রোজেন সালফাইড সেখানে অনুপস্থিত ছিল৷
নাসা তাদের বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, বায়ুমণ্ডলের এ ধরনের মিশ্রণ গ্রহের গঠন ও ইতিহাস সম্পর্কে জানার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷
এইচআই/ডিজি (ডিপিএ, এপি)
মহাশূন্যে প্রথম মানব ইউরি গাগারিন
রুশ নভশ্চর ইউরি গাগারিন প্রথম মানুষ হিসেবে মহাকাশযানে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করেন ১৯৬১ সালে৷ সেভাবেই পূর্ব আর পশ্চিমের মধ্যে মহাকাশযাত্রা প্রতিযোগিতার সূচনা৷ ১৯৬৮ সালের ২৭শে মার্চ একটি বিমান দুর্ঘটনায় গাগারিনের জীবনাবসান ঘটে৷
ছবি: picture alliance/dpa
মহাকাশে উড়াল
১৯৬১ সালের ১২ই এপ্রিল একটি ভস্টক-১ রকেটে চড়ে ইউরি গাগারিন কক্ষপথে পৌঁছান ও পৃথিবী প্রদক্ষিণ করেন৷ মহাশূন্যে তিনিই ছিলেন প্রথম মানব৷ পেশায় ফাউন্ড্রি ইঞ্জিনিয়ার গাগারিন যুদ্ধবিমানের চালক হিসেবে প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন৷ মহাকাশযাত্রার জন্য তাঁকে নির্বাচন করা হয়৷ মহাকাশযাত্রার সাত বছর পরে, ১৯৬৮ সালের ২৭শে মার্চ তারিখে একটি মহড়া চলার সময় তাঁর মিগ-১৫ জঙ্গিজেট ভূপাতিত হওয়ায় প্রাণ হারান গাগারিন৷
ছবি: AFP/Getty Images
বেলকা আর স্ট্রেলকা
গাগারিনের আগে যে আর কোনো জীব মহাকাশযাত্রা করেনি, এমন নয়৷ বেলকা আর স্ট্রেলকা নামের দু’টি কুকুর ও সেই সঙ্গে একটি খরগোশ, ৪০টি নেংটি ইঁদুর ও দু’টি ধেড়ে ইঁদুর মহাকাশে ঘুরে আসে ১৯৬০ সালের ১৯শে আগস্ট তারিখে৷ জীবজগতের এই প্রতিনিধিরা একটি স্পুটনিক-৫ স্যাটেলাইটে চেপে মহাকাশযাত্রা করে ও ল্যান্ডিং ক্যাপসুলের মাধ্যমে নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরে আসে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ Heritage Images
মহাকাশের প্রথম সেলিব্রিটি
ভূপৃষ্ঠে ফেরার পর স্বভাবতই গাগারিন একজন সেলিব্রিটি হয়ে ওঠেন ও সোভিয়েত মহাকাশ কর্মসূচির দূত হিসেবে সারা বিশ্বে যাত্রা করেন৷ পেশাগতভাবে তাঁর ভবিষ্যৎ নভশ্চরদের প্রশিক্ষণ দেবার কথা ছিল, কিন্তু গাগারিন যুদ্ধবিমানের বৈমানিক হিসেবে তাঁর প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করতে চেয়েছিলেন৷ এভাবেই একটি ট্রেনিং ফ্লাইটে সম্ভবত কোনো ঝুঁকিপূর্ণ মহড়া নেবার সময় দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে গাগারিন প্রাণ হারান৷
ছবি: Getty Images
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি
শীতল যুদ্ধ চলা সত্ত্বেও গাগারিন পূর্ব ও পশ্চিমে সমান খ্যাতি ও স্বীকৃতি পেয়েছেন৷ অপরদিকে তাঁর সাফল্য মার্কিনিদের মহাকাশ কর্মসূচি ত্বরান্বিত করার প্রেরণা জুগিয়েছে৷ হান্ট্সভিল টাইমস পত্রিকার এই সংস্করণে জার্মান-মার্কিন রকেট বিজ্ঞানী ভ্যার্নহের ফন ব্রাউন যুক্তরাষ্ট্রকে সোভিয়েত রকেট কর্মসূচির তুলনায় পিছিয়ে পড়ার ব্যাপারে সাবধান করে দিচ্ছেন৷
ছবি: AFP/Getty Images
গাগারিনের এক বছর পর জন গ্লেন
১৯৬২ সালের ২০শে ফেব্রুয়ারি একটি মার্কারি-অ্যাটলাস-৬ রকেট প্রথম মার্কিন নভশ্চর জন গ্লেনকে মহাকাশে নিয়ে যায়৷ গ্লেন তিনবার পৃথিবী প্রদক্ষিণ করেন৷ গ্লেন গাগারিনের চেয়ে বেশি অভিজ্ঞ বিমানচালক ছিলেন: ইতিপূর্বেই তিনি মার্কিন নৌবাহিনীতে ফাইটার পাইলট ও টেস্ট পাইলট হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন ও তাঁর আমলের সুপারসোনিক ফ্লাইটের রেকর্ডটি ভঙ্গ করেছিলেন৷
ছবি: Reuters/NASA
মহাকাশে প্রথম মহিলা
গাগারিনের দু’বছর পরে সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রথম মহিলা নভশ্চরকে মহাকাশে প্রেরণ করে৷ ভ্যালেন্তিনা তেরেশ্কোভা একটি ভস্টক-৬ রকেটে মোট তিন দিন কাটান ও ৪৮ বার পৃথিবী প্রদক্ষিণ করেন৷ ছবিতে তাঁকে তাঁর দুই নভশ্চর সতীর্থ গাগারিন ও বাইকোভস্কির সঙ্গে দেখা যাচ্ছে৷ তেরেশ্কোভা আজ অবধি একজন সেলিব্রিটি৷ সোচিতে ২০১৪ সালের শীতকালীন অলিম্পিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অলিম্পিক পতাকা বহণ করেন ভ্যালেন্তিনা তেরেশ্কোভা৷
ছবি: picture-alliance/RIA Nowosti
চাঁদের বুকে প্রথম পা রাখলেন আর্মস্ট্রং ও অ্যাল্ড্রিন
মহাকাশযাত্রা প্রতিযোগিতায় অবশেষে মার্কিনদিরই জয় ঘটে, যখন ১৯৬৯ সালের ২০শে জুলাই তারিখে নিল আর্মস্ট্রং ও বাজ অ্যাল্ড্রিন চন্দ্রপৃষ্ঠে পদার্পণ করেন৷ আজ অবধি মার্কিনিরা বা নাসা ছাড়া আর কোনো দেশ বা সংস্থা চাঁদে মানুষ পাঠাতে পারেনি৷ তার পরের চার দশকে চাঁদ যেন বড় কাছের গন্তব্য হয়ে পড়েছে, নজর গেছে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র আইএসএস ও দূর-দূরান্তের গ্রহ-তারকা ও নক্ষত্রপুঞ্জ পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার দিকে৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot/Neil A. Armstrong
কিংবদন্তির গাগারিন
পূর্ব ইউরোপের মানুষদের কাছে গাগারিনের স্মৃতি জাগরূক থাকে, কেননা সোভিয়েত রাশিয়া সাবেক পূর্ব জার্মানি, রোমানিয়া, বুলগেরিয়া, পোল্যান্ড প্রভৃতি লৌহ যবনিকার অভ্যন্তরের সমাজতন্ত্রী বন্ধুদেশগুলির নভশ্চরদের মহাকাশযাত্রার সুযোগ করে দেয়৷
ছবি: DW/R. Goncharenko
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা
পূর্ব-পশ্চিম মুখোমুখি দ্বন্দ্বের অবসানের পর মহাকাশযাত্রার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি পায়৷ আশির দশকের শেষে সোভিয়েত রাশিয়া পশ্চিমি নভশ্চরদের ‘মির’ মহাকাশ কেন্দ্রটি পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানায়৷ বর্তমানে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র বা আইএসএস প্রকল্পে রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া ইউরোপের ইসএ, ক্যানাডা ও জাপান সংশ্লিষ্ট৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ESA/NASA
চন্দ্রপৃষ্ঠে এক উজ্জ্বল, যৌথ ভবিষ্যৎ?
আগামীতে মহাকাশযাত্রার ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়বে বৈ কমবে না – আমাদের কোথায় নিয়ে যাবে সেই সহযোগিতা? আমরা কি আবার চাঁদে ফিরব? আইএসএস-এর পরিবর্তে কি চাঁদের গায়েই গজিয়ে উঠবে এ ধরনের একটি ‘মুন ভিলেজ’?