ইউরেনিয়াম মজুত তিনগুণ বাড়াবার সিদ্ধান্ত নিল ইরান। তাদের পরমাণু কেন্দ্রে ইসরায়েলের সাইবার হানার পর এই সিদ্ধান্ত।
বিজ্ঞাপন
রোববার ইরানের নাতানৎস নিউক্লিয়ার কমপ্লেক্সে ইসরায়েল সাইবার হানা চালিয়েছিল বলে অভিযোগ। তার ফলে সেখানে বিদ্য়ুৎ বন্ধ হয়ে যায়। তার প্রতিশোধ নিতে ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ তিনগুণ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তারা আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, পরমাণু চুক্তির তোয়াক্কা না করে ২০ শতাংশ ইউরেনিয়াম মজুত করা হবে। এখন তা বাড়িয়ে ৬০ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এটা হলে ইউরেনিয়াম মজুতের পরিমাণ বেড়ে যাবে এবং ইরানের পক্ষে পরমাণু বোমা বানানো অনেক সহজ হয়ে যাবে।
এর প্রতিক্রিয়া ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তিতেও পড়তে বাধ্য। ট্রাম্প এই চুক্তি থেকে অ্যামেরিকাকে সরিয়ে নিয়েছিলেন। বাইডেন আসার পর এই চুক্তি নিয়ে আগ্রহ দেখিয়েছেন। এখন ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনাও চলছে। এই সময়ে পরমাণু কেন্দ্রে সাইবার হানা ও তারপর ইরানের এই সিদ্ধান্তের পর চুক্তি নিয়ে আলোচনা কতটা সফল হবে, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
ইসরায়েল অবশ্য রোববারের সাইবার হানার দায় স্বীকার করেনি। তবে তারা ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তির বিরোধী। আর ইরানের অভিযোগ, পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনা ব্যর্থ করতেই ইসরায়েল এই কাজ করেছে।
ইরানের অবশ্য দাবি, তাদের পরমাণু প্রকল্প শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহারের জন্য। তারা এখনো সেই দাবি থেকে সরে আসছে না।
ইরান পরমাণু চুক্তি কী ও কেন?
অ্যামেরিকা একতরফাভাবে ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি বাতিল করলেও বাকি স্বাক্ষরকারী দেশগুলি চুক্তি মেনে চলতে বদ্ধপরিকর৷ ‘জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন’ নামের এই চুক্তির প্রধান শর্তগুলি কী?
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Neubauer
পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ?
২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী ইরান শুধু পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা চালাতে পারবে না৷ তবে আন্তর্জাতিক নজরদারির মধ্যে শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি চালু রাখার অধিকার সে দেশের রয়েছে৷ অর্থাৎ বিদ্যুৎ উৎপাদন ও চিকিৎসার মতো ক্ষেত্রে পরমাণু শক্তি কাজে লাগানো যেতে পারে৷
ছবি: Getty Images/IIPA
ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ
চুক্তির প্রথম আট বছরে ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের সীমা মেনে চলতে রাজি হয়েছিল৷ সেইসঙ্গে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত গবেষণাও বন্ধ থাকবে৷ আন্তর্জাতিক পরমাণু জ্বালানি সংস্থা আইএইএ ইরানের কার্যকলাপের উপর নজর রেখে চলেছে৷ জার্মানি, ফ্রান্স, ব্রিটেন, চীন ও রাশিয়া এক্ষেত্রে আইএইএ-র মূল্যায়নকেই গুরুত্ব দিয়ে আসছে৷
ছবি: Kazem Ghane/AFP/Getty Images
পরমাণু ভাণ্ডারের ভবিষ্যৎ
চুক্তির আওতায় ইরান ৩,৬৭ শতাংশ সমৃদ্ধকৃত ইউরেনিয়ামের ভাণ্ডার ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত কমানোর অঙ্গীকার করেছিল৷ অর্থাৎ ১৫ বছরের জন্য ৩০০ কিলোগ্রামের বেশি এমন মানের ইউরেনিয়াম ইরানের হাতে থাকার কথা নয়৷ ফলে পরমাণু অস্ত্র তৈরির পথ আপাতত বন্ধ থাকছে৷
ছবি: BEHROUZ MEHRI/AFP/Getty Images
নিষেধাজ্ঞা শিথিল
ইরান শর্ত পূরণ করার পরিবর্তে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ সে দেশের উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল৷ ফলে ইরান আবার আন্তর্জাতিক বাজারে পেট্রোলিয়াম বিক্রি ও আন্তর্জাতিক অর্থ বাজারে প্রবেশের সুযোগ পেয়েছিল৷ অ্যামেরিকার চাপের মুখে সেই সুবিধা হাতছাড়া করতে চায় না ইরান৷
ছবি: FARS
চুক্তিভঙ্গের পরিণতি
পরমাণু কর্মসূচির উপর আন্তর্জাতিক নজরদারির ফলে একটি পরমাণু বোমা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান তৈরি করতে ইরানের কমপক্ষে এক বছর লাগবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন৷ সে রকম প্রচেষ্টা চালালে আবার সে দেশের উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা চাপানোর বিধান মেনে নিয়েছে ইরান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Jenis
চুক্তির মেয়াদ শেষের অবস্থা
সমালোচকরা বার বার চুক্তির ‘সানসেট ক্লজ’ বা মেয়াদ শেষের অবস্থার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকেন৷ তাদের অভিযোগ, শান্তিপূর্ণ লক্ষ্যে পরমাণু কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা সত্ত্বেও ইরান চুক্তির মেয়াদ শেষে আবার অস্ত্র তৈরির কাজ শুরু করবে৷ তবে চুক্তির প্রবক্তারা মনে করিয়ে দেন, যে বিভিন্ন ধরনের কার্যকলাপের উপর ১০, ১৫, ২০ বা ২৫ বছর পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা বজায় থাকবে৷
ছবি: Fars
ক্ষেপণাস্ত্র ও আঞ্চলিক প্রভাব
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তাঁর সমর্থকরা ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির বাড়বাড়ন্ত ও মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে সে দেশের প্রভাব প্রতিপত্তির কড়া সমালোচনা করেন৷ ইউরোপসহ অন্যান্য অনেক দেশও বিষয়ে একমত৷ তবে ‘সফল’ পরমাণু চুক্তি বাতিল করার বদলে তা কাজে লাগিয়ে ইরানের উপর চাপ সৃষ্টি করতে চায় তারা৷
ছবি: Reuters/O. Sanadiki
7 ছবি1 | 7
মার্কিন প্রতিক্রিয়া
অ্যামেরিকা জানিয়েছে, তারা এখনো আলোচনার পক্ষে। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র বলেছেন, কিছু উস্কানিমূলক বিবৃতি দেয়া হচ্ছে। কিন্তু তারা মনে করেন, কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানই একমাত্র রাস্তা। সেই আলোচনা সরাসরি হতে পারে, আবার পরোক্ষভাবেও হতে পারে। আলোচনা হওয়াটাই জরুরি।
ইরান কী বলছে
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মেদ জাভেদ জারিফ বলেছেন, তারা প্রতিশোধ নিয়েই ছাড়বেন। ইসরায়েল এই কাজ করেছে। তারা আলোচনা বানচাল করতে চায়। ইসরায়েলের এই আচরণ ইরান মুখ বুজে মেনে নেবে না। তারা প্রতিশোধ নেবে।
ভিয়েনায় ইরান, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধিরা বুধবার আলোচনায় বসছেন। তারা পরমাণু চুক্তি নিয়ে কথা বলবেন। গত সপ্তাহেও তারা কথা বলেছেন। সেই আলোচনা গঠনমূলক হয়েছিল বলে জানানো হয়েছে।