ইউরোপে অতিরিক্ত ওজনের মানুষের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে৷ আর এ সব মানুষের মধ্যে নানা রোগ-বালাই ছড়িয়ে পড়ছে৷ জাতিসংঘ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বেশ কিছুদিন আগেই এই বিষয়ে সাবধানবাণী উচ্চারণ করেছে৷
বিজ্ঞাপন
অতিরিক্ত ওজনের সমস্যা বিবেচনায় এক নম্বরে রয়েছে হাঙ্গেরি, তারপর যথাক্রমে ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, মাল্টা এবং লুক্সেমবুর্গ৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে এদের অবস্থা সবচেয়ে সঙ্গিন৷
তবে পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, তুলনামূলকভাবে জার্মানির অবস্থা তেমন একটা খারাপ নয়৷ জার্মানিতে মানুষের বয়সের সাথে সাথে ওজনও বাড়ে৷ ইদানীং অবশ্য কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে মোটা হওয়ার প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ বর্তমানে কিশোর-কিশোরীদের অতিরিক্ত ওজনের সংখ্যা প্রায় চার মিলিয়ন৷ জার্মানিতে ১৯৯০ সালের পর থেকে ১৭ বছর বয়সি কিশোর-কিশোরীদের অতিরিক্ত মোটা হওয়ার সংখ্যা বেড়ে শতকরা ৫০ হয়েছে৷ অন্যদিকে, অ্যামেরিকা এবং ব্রিটেনে অতিরিক্ত মোটা কিশোর-কিশোরীর সংখ্যা আগের মতোই রয়েছে, অর্থাৎ শতকরা ৬০ ভাগের ওপরে৷
পরিমাণ মতো খান, ওজন কমান
মোটা রোগীরা যখন ডাক্তারের কাছে যান, ডাক্তাররা প্রথমেই ওজন কমানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন৷ অতিরিক্ত ওজনের মানুষদেরই উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিস হবার আশঙ্কা থাকে৷ প্রতিদিন খাবারে তালিকায় দুধ বা দুধ জাতীয় খাবার রাখতে হবে৷ নিয়মিত খেতে হবে তাজা শাক-সবজি, রুটি, নুডলসসহ বিভিন্ন শস্যদানা, আলু ইত্যাদি৷ তবে মাছ, মাংশ, ডিমের প্রয়োজন প্রতিদিন নেই, সপ্তাহে এক বা দু'দিন হলেই যথেষ্ট৷
‘ইউরোপের ৫০ শতাংশ মানুষই মোটা’
স্বপ্নের পৃথিবী গড়তে চাইলে থাকতে হবে সুস্থ৷ আর সুস্থ থাকার জন্য খাওয়া থেকে শুরু করে জীবনযাত্রার মান – সবকিছুতেই চাই পরিমিতি বোধ৷
ছবি: Fotolia/Yuri Arcurs
জাতিসংঘ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবধানবাণী উচ্চারণ
ইউরোপে অতিরিক্ত ওজনের মানুষের সংখ্যা দিনদিন বেড়ে চলেছে৷ দেখা দিচ্ছে মোটা মানুষের মধ্যে নানা অসুখ-বিসুখ – যা অবশ্যই চিন্তার বিষয়৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবগুলো দেশেই গত কয়েক শতক ধরে এই সমস্যা শুরু হয়েছে৷ জাতিসংঘ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অতিরিক্ত মোটা হওয়ার সমস্যার বিরুদ্ধে সাবধানবাণী উচ্চারণ করেছে৷
ছবি: Getty Images
হাঙ্গেরিতে মোটা মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি
ইউরোপের সবগুলো দেশের মধ্যে অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় এক নম্বরে রয়েছে হাঙ্গেরি, তারপর ইংল্যান্ড, তৃতীয় নম্বরে আয়ারল্যান্ড আর চতুর্থ নম্বরে মালটা৷ পাঁচ নম্বরে লুক্সেমবুর্গের স্থান৷
ছবি: Fotolia/Xuejun li
জার্মানি রয়েছে ১৮ নম্বরে
তুলনামূলকভাবে জার্মানির অবস্থা এতটা খারাপ নয়৷ পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে জার্মানিতে মানুষের বয়সের সাথে সাথে ওজনও বাড়ে৷ তবে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে মোটা হওয়ার প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যায়৷ আনুমানিক হিসেব – ইউরোপে মোটা মানুষের সংখ্যা বছরে এক মিলিয়ন বাড়ছে৷
ডাক্তারের পরামর্শ
মোটা রোগীরা যখন ডাক্তারের কাছে যান, ডাক্তাররা প্রথমেই ওজন কমানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন৷ অতিরিক্ত ওজনের মানুষদেরই উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিস হবার আশঙ্কা থাকে৷ প্রতিদিন খাবারে তালিকায় দুধ বা দুধ জাতীয় খাবার রাখতে হবে৷ তবে মাছ, মাংশ ডিমের প্রয়োজন প্রতিদিন নেই, সপ্তাহে এক বা দু’দিন হলেই যথেষ্ট৷
ছবি: picture alliance/Arco Images
কি খাচ্ছেন, বুঝে খান
খাদ্য সংস্থার তথ্যে জানানো হয়েছে, খাবার নির্বাচনের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর, অস্বাস্থ্যকর বা নিষিদ্ধ খাবার বলে কিছু নেই৷ আসলে তা নির্ভর করে খাবারের পরিমাণ, খাবার নির্বাচন বা খাবারের উপকরণের ওপর৷ জার্মানির খাদ্য সংস্থা আরো জানিয়েছে, ওজন ঠিক রাখতে হলে মনে রাখতে হবে, রান্নার সময় কম তাপ, অল্প সেদ্ধ, কম তেল আর কম পানির ব্যবহারের কথা৷ এসব দিকে লক্ষ্য রাখলেই কেবল খাবারের আসল স্বাদ ও পুষ্টি ধরে রাখা সম্ভব৷
ছবি: picture alliance/Bildagentur Huber
কে খাচ্ছে সেটাও জরুরি
মানুষের বয়স, ওজন, ছেলে না মেয়ে বা দিনে সে কতটুকু পরিশ্রম করে – তার ওপর নির্ভর করে খাবারে পরিমাণ৷ প্রতিদিনের খাবারে থাকতে হবে তাজা শাক-সবজি, রুটি, নুডলস, বিভিন্ন শস্যদানা, আলু ইত্যাদি৷ এসবে চর্বি নেই বললেই চলে, তবে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন আর মিনারেল, পুষ্টি এবং আঁশ, যা প্রতিদিনই মানুষের শরীরে প্রয়োজন৷ তবে কার জন্য কি প্রয়োজন সেটা জেনে খেতে হবে৷
ছবি: Fotolia/Tatyana Gladskih
বিশেষজ্ঞের মত
একবেলা না খেলেও অসুবিধা নেই তবে সকালের নাস্তা ভালো করে করতে হবে৷ তা না হলে কনসেন্ট্রেশন বা মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটে যা বাড়ন্ত ছেলে-মেয়েদের অত্যন্ত প্রয়োজন৷ বিভিন্ন খাবারের আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন বাচ্চাদের ওপর ভীষণ প্রভাব ফেলে৷ জার্মানির বাডেম ভুর্টেমব্যার্গ শহরের একটি স্কুলের টিফিনের সময় বাচ্চাদের আপেল খাওয়ার অভ্যাস করানো হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ফাস্ট ফুড
ফাস্ট ফুড খাওয়া কমাতে হবে এবং সপ্তাহে অন্তত দু’দিন ব্যায়াম করা প্রয়োজন৷ ওজন কমানোর জন্য শুধু খাদ্যাভাসের পরিবর্তন করলেই হবে না, করতে হবে প্রচুর হাঁটা-চলা, ব্যায়াম৷ এছাড়াও পান করতে হবে প্রচুর পানি৷ একমাত্র তবেই কাঙ্খিত ফিগার পাওয়া সম্ভব৷
ছবি: Fotolia/st-fotograf
প্রবীণদের জন্য ব্যায়াম
বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের ওজন বাড়ে – যা সবারই জানা৷ তাই শরীর ঠিক রাখতে ফিটনেস সেন্টারগুলোতে বয়স্কদের জন্যও রয়েছে আলাদা ব্যবস্থা৷ এ ব্যাপারে তাদের আরো আগ্রহী করে তোলা প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: Fotolia/Robert Kneschke
সুন্দর জীবন
সবশেষে বলা যায় স্বপ্নের পৃথিবী গড়তে চাইলে থাকতে হবে সুস্থ৷ আর সুস্থ থাকার জন্য খাওয়া থেকে শুরু করে জীবনযাত্রার মান – সবকিছুতেই চাই পরিমিতি বোধ৷ তখন মোটা হওয়ার সম্ভবনাও থাকবে না আর ওজন নিয়েও সমস্যা হবে না৷ অনেক স্বপ্নই তখন পূরণ করা সম্ভব হবে৷
ছবি: Fotolia/Yuri Arcurs
10 ছবি1 | 10
জার্মানির খাদ্য সংস্থা জানিয়েছে, খাবার উপভোগ করা মানেই কিন্তু মোটা হওয়া নয়৷ ওজন ঠিক রাখতে হলে মনে রাখতে হবে রান্না করার সময় কম তাপ, অল্প সেদ্ধ, কম তেল আর কম পানি ব্যবহার করার কথা৷ এসব দিকে লক্ষ্য রাখলেই কেবল খাবারের আসল স্বাদ ও পুষ্টি ধরে রাখা সম্ভব৷
খেলাধুলা ও ব্যায়াম করা জরুরি
তাছাড়া কিশোর-কিশোরীদের ওজন কমানোর জন্য অ্যামেরিকার স্কুলগুলোর মতো আরো বেশি খেলাধুলা এবং ব্যায়ামের ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন জার্মানির বখুম শহরের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ব্যার্নহার্ড গিসে৷
সকালের নাস্তা গুরুত্বপূর্ণ
বিশেষজ্ঞদের মতে, সকালের নাস্তা ভালো করে করতে হবে৷ সেক্ষেত্রে দিনে একবেলা কম খেলেও সমস্যা নেই৷ পাশাপাশি ফাস্ট ফুড খাওয়া কমাতে হবে এবং সপ্তাহে অন্তত দু'দিন ব্যায়াম করা প্রয়োজন৷ ওজন কমানোর জন্য শুধু খাদ্যাভাসের পরিবর্তন করলেই হবে না, করতে হবে প্রচুর হাঁটা-চলা এবং ব্যায়াম৷ এছাড়াও পান করতে হবে প্রচুর পানি৷ একমাত্র তবেই কাঙ্খিত স্বাস্থ্য পাওয়া সম্ভব৷