জার্মানি হচ্ছে ইউরোপের মাত্র আটটি দেশের একটি, যেখানে কারো অসম্মতি সত্ত্বেও যৌনমিলনকে ধর্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ তবে, ইউরোপের অধিকাংশ দেশে এখনো ‘সেকেলে’ ধর্ষণ আইন প্রচলিত আছে বলে মনে করে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷
বিজ্ঞাপন
ইউরোপের অনেক দেশে এখনো কারো ইচ্ছার বিরুদ্ধে যৌন সম্পর্ককে ধর্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে না বলে জানিয়েছে অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷ ইউরোপের ৩১টি দেশের মধ্যে ২৩টিতে ধর্ষণ বলতে যৌন সম্পর্কের সঙ্গে সহিংসতা, হুমকি কিংবা অন্যান্য বলপ্রয়োগের বিষয়কে বোঝানো হয়৷ কিন্তু অসম্মতির বিষয়টিকে এক্ষেত্রে বিবেচনায় আনা হয় না৷
ছোট পোশাক পরাই কি ধর্ষণের কারণ?
ভারতে প্রতিদিন অন্তত ৯২ জন নারী ধর্ষণের শিকার হন৷ যখনই এ ধরনের কোন মামলা আদালতে উঠেছে তখন প্রথম যে প্রশ্নটি সামনে এসেছে তা হলো, ধর্ষণের শিকার ঐ নারী কি ধরনের পোশাক পরেছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যুগের সাথে পোশাক
যুগে যুগে পোশাকের ধরনে পরিবর্তন এসেছে৷ আদিমকালে ছিল পশুর চামড়া, গাছের ছাল আর এখন রয়েছে নানা ধরনের পোশাক৷ বর্তমানে দেশ, সংস্কৃতি, সমাজ ব্যবস্থা, কাজের ধরন, অনুষ্ঠান, পছন্দ ও ফ্যাশানের ভিত্তিতে বহু ধরনের পোশাক পরে থাকেন নারীরা৷
ছবি: AP
শরীর প্রদর্শন মানেই কি ধর্ষককে আমন্ত্রণ?
ভারতে বেশিরভাগ ধর্ষণ মামলায় দেখা গেছে, ধর্ষিতা সালোয়ার কামিজ বা শাড়ি পরেছিলেন৷ অর্থাৎ যাকে বলা হয় ভারতীয় নারীর আদর্শ পোশাক, সে ধরনের পোশাকই তাঁরা পরেছিলেন৷ অর্থাৎ এ জরিপ থেকেই প্রমাণিত হচ্ছে যে, শরীর প্রদর্শন না করে বা তথাকথিত ‘আধুনিক’ পোশাক না পরেও শ্লীলতাহানির শিকার হচ্ছেন নারীরা৷
ছবি: Reuters
আইনের ভয় নেই
২০১৩ সালে এক জরিপে দেখা গেছে যে, এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোতে প্রতি চারজনের মধ্যে একজন পুরুষ জীবনে অন্তত একবার কোনো নারীকে ধর্ষণ করেছে৷ এর মধ্যে বেশিরভাগ পুরুষকেই কোনো আইনি ঝামেলা পোহাতে হয়নি৷
ছবি: Fotolia/DW
ধর্ষণ যখন বিনোদনের মাধ্যম
ভারতের উত্তর প্রদেশে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলেছে৷ এর কারণ হিসেবে পুলিশ নারীদের উপর পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাব, মেয়েদের মোবাইল ব্যবহার ও ছোট পোশাক পরিধানকে উল্লেখ করেছে৷ নারীদের নিরাপত্তা দিতে পুরোপুরি ব্যর্থ পুলিশ বলেছে, সেখানকার পুরুষরা তাদের বিনোদনের অভাব পূরণ করছে ধর্ষণের মাধ্যমে৷
ছবি: dapd
নারীদের দাবিয়ে রাখার হাতিয়ার
রাস্তা, অফিস বা যে কোনো পাবলিক প্লেসে পুরুষের যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন নারীরা৷ বিশেষ করে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ হওয়ায় নারীদের দাবিয়ে রাখতে পুরুষরা ধর্ষণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে৷
ছবি: UNI
পরিচিতদের দ্বারাই বেশি ধর্ষণ
২০১৩ সালে ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম ব্যুরোর রিপোর্ট বলছে, সে বছর ১০০ জন ধর্ষণের শিকার নারীর মধ্যে ৯৮ জন এমন ব্যক্তিদের দ্বারা ধর্ষিত হয়েছেন, যারা তাঁদের পরিচিত৷ আদালতে যেসব মামলা ওঠে, বা গণমাধ্যমে যেসব ঘটনা প্রকাশ পায় সেগুলো বেশিরভাগই বাইরের লোকের হাতে৷ ফলে পরিচিত ব্যক্তি দ্বারা ধর্ষণের ব্যাপারটি ধামাচাপা পড়ে যায়৷
ছবি: Reuters/Ahmad Masood
যৌন নিগ্রহ সর্বত্র
ভারতে জন্মের আগে ভ্রুণের লিঙ্গ নির্ধারণ বেআইনি হলেও, খুব সাধারণ ঘটনা৷ ফলে পৃথিবীর আলো দেখতে পাওয়া মেয়েদের সংখ্যা এত কম যে, সমাজে নারী-পুরুষের অনুপাতে হেরফের হয়৷ এছাড়া বাল্যবিবাহ, কম বয়সে মা হওয়া, সন্তান জন্ম দিতে গিয়েও মৃত্যুবরণ করছেন নারীরা৷ পরিবারের ভেতরেও চলে যৌন নির্যাতন এবং ধর্ষণ৷ এরপরও কি আপনারা ধর্ষণের জন্য পোশাককে দায়ী করবেন?
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
বাকি আটটি দেশ অর্থাৎ জার্মানি, আয়ারল্যান্ড, ব্রিটেন, সাইপ্রাস, আইসল্যান্ড, লুক্সেমবুর্গ এবং সুইডেনে কারো অসম্মতি সত্ত্বেও যৌনমিলনকেও ধর্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷
অ্যামনেস্টির নারী অধিকার বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আনা ব্লুস এই বিষয়ে বলেন, ‘‘সম্মতি ছাড়া যৌনসম্পর্ক ধর্ষণ৷ এটাই চূড়ান্ত৷ যতদিন পর্যন্ত সরকারগুলো এই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আইন প্রণয়ন না করছে, ততদিন ধর্ষকরা অপরাধ করেও পার পেয়ে যেতে থাকবে৷''
প্রসঙ্গত, জার্মানি ২০১৬ সালে যৌন অপরাধ সংক্রান্ত মামলায় পরিবর্তন আনে৷ এতে বলপ্রয়োগের পাশাপাশি অসম্মতিতে যৌনমিলনকেও ধর্ষণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়৷
তবে, কিছু দেশে এখনো অসম্মতি সত্ত্বেও যৌনমিলনকে জোরপূর্বক অর্থাৎ সহিংস আচরণ, হুমকি কিংবা বলপ্রয়োগের মাধ্যমে যৌনমিলনের তুলনায় কম অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ মাল্টায় যৌন অপরাধকে পরিবার বিষয়ক এক আইনের আওতায় বিচার করা হয়৷ এছাড়া, সম্প্রতি আয়ারল্যান্ডে এক নারীর তোলা ধর্ষণের অভিযোগ আদালতে টেকেনি কেননা যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তার আইনজীবী আদালতে প্রমাণ করতে সক্ষম হন যে অভিযোগকারী নারী অন্তর্বাস হিসেবে ‘থং' পরেছিলেন যা আইনজীবীর ভাষায় ‘যৌনমিলনে সম্মতির ইঙ্গিত বহন করে৷' আদালত তাই ধর্ষণে অভিযোগ ওঠা ব্যক্তিকে রেহাই দিয়ে দেন, যার প্রতিবাদে দেশটিতে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছেন নারী অধিকারকর্মীরা৷
সৌদি আরবে ধর্ষণের শিকার নারী
02:13
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ‘ফান্ডামেন্টাল রাইটস' বিষয়ক এজেন্সির হিসেবে ১৫ বছর বয়স থেকে হিসেব করলে নয় মিলিয়নের মতো নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷ অর্থাৎ ইউরোপে প্রতি বিশজনের মধ্যে একজন নারী ধর্ষণের শিকার৷
উল্লেখ্য, ২৫ নভেম্বর নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতার অবসান ঘটানোর আর্ন্তজাতিক দিবস৷ এই দিবসের প্রাক্কালে অ্যামনেস্টি ইউরোপে ধর্ষণ আইন বিষয়ক পর্যালোচনা প্রকাশ করেছে৷