যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বলছে, ইউরোপে অভিবাসন আইন কঠোর করা হলেও অভিবাসনপ্রত্যাশীরা আসতে থাকবে এবং মুসলমানদের সংখ্যাও বাড়তে থাকবে৷
বিজ্ঞাপন
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা পিউ রিসার্চ সেন্টার এক প্রতিবেদনে বলেছে, ২০৫০ সালের মধ্যে ইউরোপের মোট জনসংখ্যার শতকরা দশ ভাগেরও বেশি হবে মুসলমান৷ পিউ রিসার্চ এ বছরই আরেক প্রতিবেদনে বলেছিল, ২০৭০ সাল নাগাদ বিশ্বে ইসলাম ধর্মাবলম্বী, অর্থাৎ মুসলমানই সবচেয়ে বেশি থাকবে৷
২০১৫ সালের পর থেকে ইউরোপে ব্যাপক হারে শরণার্থী আসা শুরু হলেও পরবর্তীতে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া হয়৷ ফলে শরণার্থীদের আগমন প্রায় বন্ধ৷ কিন্তু পিউ রিসার্চের গবেষকরা বলছেন, তারপরও ইউরোপের অভিবাসীদের সংখ্যা বৃদ্ধি হবে এবং সবচেয়ে বেশি বাড়বে মুসলমান৷
২০৭০ সালে ইসলাম হবে বিশ্বের সবচেয়ে ‘বড় ধর্ম’
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা পিউ রিসার্চ সেন্টার এক প্রতিবেদনে বলেছে, আগামী ২০৭০ সালে অনুসারীর সংখ্যায় বিশ্বের অন্য সব ধর্মকে ছাড়িয়ে যাবে ইসলাম৷ অর্থাৎ ৫৩ বছর পর বিশ্বে সবচেয়ে বেশি থাকবে মুসলমান৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Getty Images/AFP/Stringer
খ্রিষ্টানদের ছাড়িয়ে যাবে...
২০১০ সালে সারা বিশ্বে মোট ২১৭ কোটি মানুষ খ্রিষ্ট ধর্ম অনুসরণ করতো৷ তারপরই ছিল ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা৷ তখন বিশ্বে মোট ১৬০ কোটি ইসলাম ধর্মাবলম্বী ছিল৷ কিন্তু পিউ রিসার্চ সেন্টারের প্রতিবেদন বলছে, ৫ দশক পর খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের পিছনে ফেলে সংখ্যায় সবচেয়ে বেশি হয়ে যাবে মুসলমান৷
ছবি: Reuters/A. Bianchi
জন্মহার সবচেয়ে বেশি
কেন এত দ্রুত ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা বাড়বে? বলা হচ্ছে, সারা বিশ্বে মুসলমানদের জন্মহার বেশি আর মূলত এ কারণেই সংখ্যায় সব ধর্মকে পিছনে ফেলবে তারা৷ মুসলমানদের শিশু জন্মহার ৩ দশমিক ১ শতাংশ আর খ্রিষ্টানদের ২ দশমিক ৭ শতাংশ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Taherkenareh
তরুণ অনুসারী বেশি
অন্য সব ধর্মের তুলনায় ইসলাম ধর্মের তরুণ অনুসারী বেশি৷ এ মুহূর্তে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ২৫ শতাংশের বয়স ১৫ বছরের নীচে৷ অন্যদিকে ৩৪ শতাংশ ইসলাম ধর্মবলম্বীর বয়স ১৫ বছরের কম৷ তার মানে, অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের তুলনায় ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের বেশি দিন সন্তান জন্ম দেয়ার সুযোগও বেশি৷
ছবি: AP
নাস্তিক কমবে
পিউ রিসার্চ সেন্টারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০৫০ সালের মধ্যে সারা বিশ্বে নাস্তিক অনেক কমবে৷ এখন যেখানে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ নাস্তিক, সেখানে ২০৫০ নাগাদ তা কমে হবে ১৩ দশমিক ২ শতাংশ৷
ছবি: facebook.com/We.R.Atheists
২০৭০ সালে সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মুসলমান
পিউ রিসার্চ সেন্টারের জনসংখ্যাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে আরো যে বিষয়টি বেরিয়ে এসেছে, তা হলো, ২০১০ সাল থেকে ২০৫০ সাল পর্যন্ত সারা বিশ্বে খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বী ৩৭ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে৷ এই সময়ে ইসলাম ধর্মাবলম্বী বাড়বে ৭৩ শতাংশ৷ ফলে এক সময় স্বাভাবিক কারণেই সংখ্যায় খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের ছাড়িয়ে যাবে ইসলাম৷ পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, ২০৭০ নাগাদ সারা বিশ্বে মুসলমানই সবচেয়ে বেশি থাকবে৷
ছবি: Reuters/S. Andrade
5 ছবি1 | 5
ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৮টি দেশ এবং নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ড – এই ৩০ দেশকে নিয়ে গবেষণাটি করেছে পিউ৷ তারা দেখেছে, ইউরোপে জনসংখ্যার স্বাভাবিক বৃদ্ধি, বাইরের মানুষদের লেখাপড়া বা কাজ করতে বৈধভাবে আসা এবং শরণার্থী – এই তিনভাবে জনসংখ্যা বাড়ছে৷ ২০১৬ সালে ইউরোপে ছিল ৪ দশমিক ৯ ভাগ মুসলমান৷ ২০৫০ সালে তা বেড়ে হবে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ৷
জার্মানিতে এ মুহূর্তে মুসলমান আছে শতকরা ৬ ভাগ, ২০৫০ সালে তা বেড়ে হবে মোট জনসংখ্যার শতকরা ৯ ভাগ৷
এমনিতে মুসলিমদের সন্তান জন্ম দেয়ার ক্ষমতাও এ মুহূর্তে বেশি, কারণ ইউরোপে মুসলিমদেরই গড় বয়স সবচেয়ে কম৷ মুসলিমদের গড় বয়স এখন ৩০ দশমিক ৪ বছর এবং অমুসলিমদের গড় বয়স ৪৩ দশমিক ৮ বছর৷ ফলে গবেষকরা বলছেন, খ্রিষ্টানদের মাঝে জন্মহার যেখানে ১ দশমিক ৬, মুসলমানদের তা ২ দশমিক ৬ ভাগ৷
মূলত গত কয়েক বছরে ব্যাপক হারে মুসলমানদের আগমনের কারণেই ইউরোপের জনসংখ্যায় এমন প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ হিসেব বলছে, ২০১০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মোট ৭০ লক্ষ অভিবাসনপ্রত্যাশী এসেছে ইউরোপে, যার মধ্যে অন্তত ৩ দশমিক ৪ ভাগরই মুসলমান৷ জার্মানিতে আসা শরণার্থীদের মধ্যে মুসলমানের সংখ্যা আনুপাতিকভাবে আরো বেশি৷ ২০১০ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে মোট প্রায় ৬ লক্ষ ৭০ হাজার শরণার্থী এসেছে জার্মানিতে, এর মধ্যে শতকরা ৮৬ ভাগই মুসলমান৷
চেজ ভিন্টার/এসিবি
মুসলমানদের জন্য সেরা ১৫টি দেশ
প্রকাশিত হয়েছে ‘গ্লোবাল ইসলামিক ইকোনমি রিপোর্ট ২০১৬-১৭’৷ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে সবচেয়ে বেশি মুসলিমবান্ধব দেশগুলোর নাম৷ সেখানে বাংলাদেশও আছে৷ দেখুন...
ছবি: Getty Images/AFP/M. Al-Shaikh
দশম স্থানে ইন্দোনেশিয়া
৩৬ পয়েন্ট নিয়ে ইন্দোনেশিয়া আছে দশ নম্বরে৷ ইসলামি বিনিয়োগে দেশটি আছে নয় নম্বরে৷ এছাড়া হালাল কসমেটিক্স এবং হালাল ওষুধ বেশি পাওয়া যায় এমন দেশগুলোর মাঝে ইন্দোনেশিয়া আছে অষ্টম স্থানে৷
ছবি: SUDIARNO/AFP/Getty Images
নবম স্থানে জর্ডান
মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটি ৩৭ পয়েন্ট নিয়ে ইন্দোনেশিয়ার ঠিক আগে আছে৷ ইসলামি বিনিয়োগে দেশটি আছে নয় নম্বরে৷
ছবি: Reuters
অষ্টম স্থানে কাতার
কাতারের মোট পয়েন্ট ৪৩৷ হালাল ও ইসলামি বিনিয়োগ আর বেশি ইসলামি মিডিয়া আছে এমন দেশগুলোর তালিকার শীর্ষ দশে আছে দেশটি৷
ছবি: picture-alliance/ dpa
কুয়েত সপ্তম
কুয়েতের মোট পয়েন্ট ৪৪৷ ইসলামি বিনিয়োগে ষষ্ঠ এবং বেশি ইসলামি মিডিয়া আছে এমন দেশগুলোর তালিকার শীর্ষ দশে আছে এই দেশটি৷
ছবি: Getty Images/AFP/Y. Al-Zayat
ষষ্ঠ স্থানে পাকিস্তান
সেরা মুসলিমবান্ধব দেশগুলোর তালিকায় মোট ৪৫ পয়েন্ট নিয়ে পাকিস্তান আছে ষষ্ঠ স্থানে৷ হালাল খাবার বেশি পাওয়া যায় এমন দেশগুলোর তালিকায় তৃতীয় স্থানে আছে দেশটি৷ বেশি ইসলামি বিনিয়োগে পাকিস্তান আছে সপ্তম স্থানে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Akber
ওমান পঞ্চম
পাকিস্তানের চেয়ে তিন পয়েন্ট বেশি নিয়ে ওমান আছে পঞ্চম স্থানে৷
ছবি: J. Sorges
চতুর্থ স্থানে সৌদি আরব
সৌদি আরবের মোট পয়েন্ট ৬৩৷ তারা আছে চতুর্থ স্থানে৷
ছবি: Reuters/File Photo/A. Jadallah
বাহরাইন সৌদি আরবের চেয়ে এগিয়ে
সৌদি আরবের চেয়ে তিন পয়েন্ট বেশি নিয়ে বাহরাইন আছে তৃতীয় স্থানে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Al-Shaikh
দ্বিতীয় স্থানে সংযুক্ত আরব আমিরাত
মোট ৮৬ পয়েন্ট পেয়ে দ্বিতীয় সেরা মুসলিমবান্ধব দেশ হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত৷
ছবি: picture-alliance/DPPI/A. Francolini
সবার সেরা মালয়েশিয়া!
হ্যাঁ, তালিকায় সবার ওপরে আছে মালয়েশিয়া৷ তাদের মোট পয়েন্ট ১২১!
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Kahnert
এবং বাংলাদেশ
২৬ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশ আছে ১৫ নম্বরে৷ ১৫টি সেরা মুসলিমবান্ধব দেশের তালিকায় বাংলাদেশের আগে আছে শুধু ইরান, সুদান, ব্রুনেই এবং সিঙ্গাপুর৷