ইউরোপে সরকারি কর্মীদের জন্য নিষিদ্ধ হতে পারে হিজাব
২৯ নভেম্বর ২০২৩
সরকারি কর্মচারীদের ধর্মীয় বিশ্বাস বোঝা যায় এমন ইঙ্গিতপূর্ণ কিছু পরা সদস্য দেশগুলো নিষিদ্ধ করতে পারে বলে রায় দিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর সর্বোচ্চ আদালত৷ এর ফলে সরকারি কর্মচারীদের জন্য হিজাব নিষিদ্ধ হতে পারে৷
বিজ্ঞাপন
এই ইস্যুতে গত কয়েক বছর ধরে বিভক্ত রয়েছে ইউরোপ৷
বেলজিয়ামের পূর্বাঞ্চলের পৌরসভা আন্সের এক কর্মীকে কর্মক্ষেত্রে হিজাব পরতে নিষেধ করলে তিনি ইইউর বিচার আদালতে মামলা করেন৷
পৌরসভাটি পরবর্তীতে কর্মীদের নীতিমালাতেও নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে কোনো ধরনের ধর্মীয় বা আদর্শিক সঙ্কেত বহন করে এমন পোশাক পরা থেকে বিরত থাকার বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত করে৷
ধর্মীয় পোশাক পরায় ৪২ দেশে হয়রানি, না পরায় ১৯ দেশে
পিউ রিসার্চ সেন্টার বলছে, ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ৫৬টি দেশের নারীরা তাদের পোশাক খুব বেশি ধর্মীয় অথবা খুব বেশি ধর্মনিরপেক্ষ হওয়ায় সামাজিক হয়রানির শিকার হয়েছেন৷ জার্মানি, ভারতসহ পাঁচ দেশের নারীদের দুই অভিজ্ঞতাই হয়েছে৷
ছবি: Karim Sahib/AFP
পোশাকের কারণে হয়রানি
যুক্তরাষ্ট্রের থিংক ট্যাংক পিউ রিসার্চ সেন্টার বলছে, ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ৫৬টি দেশের নারীরা তাদের পোশাক খুব বেশি ধর্মীয় অথবা খুব বেশি ধর্মনিরপেক্ষ হওয়ায় সামাজিক হয়রানির শিকার হয়েছেন৷ মৌখিক কটূক্তি থেকে শুরু করে শারীরিক আঘাত, এমনকি হত্যা এমন হয়রানির মধ্যে পড়ে৷ প্রতিবেদনটি পড়তে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: picture-alliance/PYMCA/Liat Chen
হিজাব পরায় হয়রানি, না পরায়ও হয়রানি
৫৬টি দেশের মধ্যে ৪২টি দেশে নারীরা ধর্মনিরপেক্ষ পোশাক রীতি লঙ্ঘন করায়, অর্থাৎ হিজাব বা অন্যান্য ধর্মীয় পোশাক পরায় হয়রানির শিকার হয়েছেন৷ আর ১৯টি দেশের নারীরা ধর্মীয় পোশাক রীতি না মানায়, অর্থাৎ হিজাব না পরায় কিংবা ধর্মীয় রীতির সঙ্গে মেলে না এমন পোশাক পরায় হয়রানির শিকার হয়েছেন৷ জার্মানি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইসরায়েল ও রাশিয়ায় নারীদের দুই অভিজ্ঞতাই হয়েছে৷
ছবি: DW
সবচেয়ে বেশি ইউরোপে
৫৬টি দেশের মধ্যে ইউরোপের দেশ ২২টি৷ এর মধ্যে ২০টি দেশে নারীরা হিজাব বা অন্য ধর্মীয় পোশাক পরায় হয়রানির শিকার হয়েছেন৷ আর দুটি দেশে হিজাব না পরায় নারীদের হয়রানি হতে হয়েছে৷ ২০১৮ সালে ডেনমার্কে এক চালক হিজাব পরা এক মুসলিম নারীকে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা ছেড়ে দিতে অস্বীকার করেন৷ জার্মানিতে এক নারী একজন মুসলিম নারীকে মেরে তার হেডস্কার্ফ খুলে ফেলার চেষ্টা করেন৷
ছবি: Imago/R. Peters
এশিয়া-প্যাসিফিক
এই অঞ্চলের ১৬ দেশে নারীরা হয়রানিতে পড়েছেন৷ ২০১৮ সালে হেডস্কার্ফ না পরায় এক নারীকে হামলা করায় মালয়েশিয়ায় এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল৷ ২০১৬ সালের কিরঘিস্তানে বিলবোর্ডে বিভিন্ন রকম ইসলামি পোশাক পরিহিত নারীর ছবি বিতর্ক তৈরি করেছিল৷
ছবি: Chong Voon Chung/Xinhua/picture alliance
সাব-সাহারা আফ্রিকা
এই অঞ্চলের সাত দেশের নারীরা পোশাকের কারণে হয়রানির শিকার হয়েছেন৷ ২০১৮ সালে কেনিয়ার কিছু অংশে নারী শিক্ষকদের হিজাব পরার নিয়ম করা হয়েছিল৷ আর লাইবেরিয়ায় হেডস্কার্ফ পরায় মুসলিম নারীরা কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Dai Kurokawa
অ্যামেরিকা
ছয়টি দেশে নারীদের হয়রানির মুখোমুখি হতে হয়েছে৷ ২০১৮ সালে ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে এক হিন্দু স্কুলে এক মুসলিম নারীকে হিজাব না খুললে স্কুল থেকে চলে যেতে বলা হয়েছিল৷ ২০১৬ সালে ক্যানাডায় এক নারী এক হিজাব পরিহিতার দিকে থুতু ছুড়ে তার হিজাব ও চুল ধরে টান দিয়েছিলেন৷
ছবি: imago images/tagesspiegel/K. Heinrich
মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা
পাঁচ অঞ্চলের মধ্যে একমাত্র এই অঞ্চলের দেশগুলোতে নারীরা হিজাব বা ধর্মীয় পোশাক পরার চেয়ে না পরায় বেশি হয়রানির শিকার হয়েছেন৷ ২০১৬ সালে কাতারে এক মুসলিম নারী হিজাব না পরে খবর উপস্থাপনা করায় সমালোচিত হয়েছিলেন৷ ২০১৮ সালে ইসরায়েলের একদল অর্থডক্স ইহুদিকে তাদের দৃষ্টিতে ‘অভদ্র’ পোশাক পরায় এক তরুণীর দিকে চিৎকার ও তাকে ধাওয়া করতে দেখা গিয়েছিল৷
ছবি: Karim Sahib/AFP
যেভাবে তথ্য সংগ্রহ করেছে পিউ রিসার্চ
ধর্মীয় বিশ্বাস ও রীতিনীতির উপর সরকার ও সমাজের বিধিনিষেধ নিয়ে প্রতিবছর রিপোর্ট করে পিউ রিসার্চ৷ এ লক্ষ্যে প্রথমে কয়েকটি প্রশ্ন ঠিক করা হয়৷ তারপর মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জাতিসংঘ ও বিভিন্ন সংস্থার প্রকাশিত ১৯টি রিপোর্টে থাকা প্রতিটি দেশের তথ্যের মধ্যে ঐ প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজা হয়৷ এভাবে ‘সরকারি বিধিনিষেধ সূচক’ ও ‘সামাজিক হয়রানি সূচক’ প্রকাশ করা হয়৷ ছবিঘরের তথ্যগুলো ২০২০ সালে প্রকাশিত হয়েছে৷
মুসলিম নারীরা মাথা ও কাঁধ ঢেকে রাখতে সাধারণত ‘ইসলামিক হেড স্কার্ফ', অর্থাৎ হিজাব ব্যবহার করেন৷ এটা পরার অধিকার নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে ইউরোপে ব্যাপক আলোচনা চলছে৷
বিচার আদালত জানিয়েছে, নিরপেক্ষতা প্রদর্শনের স্বার্থে নেয়া নীতিকে আইনিভাবে গ্রহণ করার সুযোগ রয়েছে৷ তবে, যদি কোনো কর্তৃপক্ষ সাধারণ এবং নির্বিচারভাবে বিশ্বাসের ইঙ্গিত মেলে এমন কিছু পরার অনুমতি দেয় সেটাও ন্যায়সঙ্গত হবে৷
আদালত জানিয়েছে, ইইউ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জনসেবা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা বজায় রাখার বিষয়টি নিশ্চিতে নিজেদের বিচক্ষণতা প্রয়োগের সুযোগ রয়েছে৷ তবে, সেটা সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং পদ্ধতিগত হতে হবে এবং এক্ষেত্রে কোনো পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রে সেটা আসলেই প্রয়োজন কিনা তা-ও বিবেচনায় আনতে হবে৷
আর এসব মানা হয়েছে কিনা তা যাচাইয়ের দায়িত্ব জাতীয় আদালতের বলেও জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সর্বোচ্চ আদালত৷