ইউরোপে বড় বড় প্রতিষ্ঠানের সস্তা মুরগির মাংসে উচ্চমাত্রার অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিসট্যান্ট প্যাথোজেন রয়েছে৷ জার্মানওয়াচের গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই তথ্য৷
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জার্মানওয়াচ৷ জার্মানি, ফ্রান্স, পোল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস এবং স্পেনের আলদি, লিডল এবং আরো কিছু মুরগির মাংস উৎপাদন ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের মাংস পরীক্ষা করে তাতে এই বিশেষ ধরনের প্যাথোজেন পাওয়া গেছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে৷ প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ডিসকাউন্ট বা বিশেষ মূল্যছাড়ে যেসব মাংস বিক্রি হয় মূলত সেগুলোতেই মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ানো উপাদানটি বেশি রয়েছে৷
ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু থেকে সাবধান!
খালি চোখে দেখা না গেলেও পরিষ্কার, ঝকঝকে বাড়িতেও কিন্তু বাস করে অসংখ্য রোগ-জীবাণু৷ বাড়ির কোথায়, কেন বেশি জীবাণু থাকে আর এ সব থেকে সতর্ক থাকার উপায়ই বা কী? জানাচ্ছেন একজন মাইক্রো বাইয়োলজিস্ট৷
ছবি: Fotolia/drubig-photo
জীবাণু যেভাবে ঘরে ঢোকে
জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়া বাড়িতে আসে বাড়ির মানুষের সাথে৷ তাছাড়া খাদ্যদ্রব্য তো রয়েছেই৷ খাবার-দাবারের সাথে খুব সহজেই জীবাণু ঘরে ঢুকে পড়ে৷ মাইক্রো বাইয়োলজিস্ট ড. মার্কুস এগার্ট জানান, প্রতিটি মানুষের শরীরে বাস করে প্রায় দেড় কেজি পরিমাণ জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়া৷
ছবি: picture-alliance/Offside/S. Stacpoole
মুরগির মাংস
বাড়িতে বেশিরভাগ জীবাণুর জন্ম হয় রান্নাঘরে, বিভিন্ন খাবার থেকে৷ বিশেষ করে, মুরগির কাঁচা মাংস থাকে জীবাণুতে ভরা৷ তাই এই মাংসের সংস্পর্শে যেসব জিনিস আসে, সেখানেও জন্মায় ব্যাকটেরিয়া, যা বিভিন্ন রোগের জন্ম দিতে পারে৷ জানান প্রফেসর এগার্ট৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Büttner
রান্নাঘরের স্পঞ্জ নিয়মিত বদলাতে হবে
কিচেনে অবশ্য সবচেয়ে বেশি ব্যাকটেরিয়া থাকে বাসন ধোয়ার স্পঞ্জে৷ তাই প্রতিবার ব্যবহারের পর স্পঞ্জের পানি ভালো করে চিপে রাখুন৷ এবং প্রতি সপ্তাহে না হলে, দু’সপ্তাহ অন্তর অন্তর নতুন স্পঞ্জ ব্যবহার করুন৷
ছবি: Colourbox
গরম পানি দিয়ে ধুতে হবে
স্পঞ্জের সাথে বাড়ি-ঘর পরিষ্কার করার অন্যান্য ন্যাকড়া বা ব্রাশও নিয়মিত বদলাতে হবে এবং এগুলি যতদিন ব্যবহার করবেন, ততদিন ব্যবহারের পর তা সাবান দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার রাখতে হবে৷ সম্ভব হলে ফুটন্ত পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে সব রকম ন্যাকড়া, স্পঞ্জ ও ব্রাশ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বাথরুম, টয়লেট
বাথরুম বা টয়লেটে রান্নাঘরের মতো অত বেশি জীবাণু না থালেও সেখানেও থাকে যথেষ্ট ব্যাকটেরিয়া৷ তবে মনে রাখবেন টয়লেট ব্যবহারের পর ফ্লাশ করার সময় অবশ্যই ঢাকনাটি বন্ধ করে দেবেন৷ তা না হলে জীবাণুগুলো চোখে, মুখে বা অন্যান্য জায়গায় ছড়িয়ে যেতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Woitas
হাত ধোয়া খুবই জরুরি
বাইরে গেলে আমাদের হাতে কত কিছুই না লাগে৷ পরে সেই হাতের জীবাণুই আবার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ছড়িয়ে যায়৷ তাই বাড়িতে ঢুকেই প্রথম কাজ যেন হয়, সাবান দিয়ে ভালো করে হাত দু’টো ধোয়া৷
ছবি: picture alliance/dpa/C. Klose
কাপড় ধোয়া
সম্ভব হলে কাপড়-চোপড় গরম পানি দিয়ে ধোয়া উচিত৷ কাপড় ধোয়ার পানি যত গরম হবে ব্যাকটেরিয়া মরবে তত তাড়াতাড়ি৷
ছবি: Dron/Fotolia
আন্ডার গার্মেন্টস
গায়ের সাথে যেসব কাপড় লেগে থাকে, অর্থাৎ আান্ডার গার্মেন্টস বা অন্তর্বাস অবশ্যই গরম পানি দিয়ে ধোয়া উচিত৷ মেশিনে ধোয়ার সময়, এ সব কাপড়ের গায়ে কম তাপে ধোয়ার কথা লেখা থাকলেও গরম পানি দিয়ে ধোয়াই স্রেয়, জানান ড. এগার্ট৷ কারণ এক্ষেত্রে শুধু কাপড়ের সৌন্দর্য দেখলে চলবে না!
ছবি: Fotolia/Ammentorp
মনে রাখতে হবে
তবে সব জীবাণু বিপজ্জনক নয়৷ তাই বেশি ভয় পাওয়া বা বাড়াবাড়ির কিছু নেই বলেও জানান প্রফেসর মার্কুস এগার্ট৷ তাঁর মতে, জীবাণু সম্পর্কে সকলেরই ‘সচেতন’ থাকা প্রয়োজন, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P.Steuer
9 ছবি1 | 9
গবেষকেরা জানান, এমন বিষাক্ত মাংস বেশি উৎপাদন করছে জার্মানির পিএইচডাব্লিউ গ্রুপ৷প্রতিষ্ঠানটি প্রতি সপ্তাহে গড়ে ৪৫ লাখ মুরগির মাংস উৎপাদন করে৷ জার্মানির পিএইচডাব্লিউ গ্রুপের পরেই রয়েছে ফ্রান্সের এলডিসি গ্রুপ এবং নেদারল্যান্ডসের পুলকন ফুড গ্রুপ৷ পিএইচডাব্লিউ গ্রুপের শতকরা ৫৯ ভাগ, এলডিসি গ্রুপের ৫৭ ভাগ এবং পুলকন ফুড গ্রুপের ৩৬ ভাগ নমুনায় উচ্চমাত্রার অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিসট্যান্ট প্যাথোজেন পাওয়ার কথাও জানিয়েছেন গবেষকরা৷
উচ্চমাত্রার অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিসট্যান্ট প্যাথোজেন রয়েছে এমন মাংস স্পর্শ করলে বা খেলে মানুষের দেহে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে৷তাছাড়া সংক্রমণ সারাতে ব্যবহার্য অ্যান্টিবায়োটিককে অকার্যকর করে অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল৷
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)-র তথ্য অনুযায়ী, সিআইএ এইচপি, অর্থাৎ ক্রিটিক্যালি ইমপর্ট্যান্ট অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য খুব দরকারি৷ সংক্রমণ সারাতে আর সব অ্যান্টিবায়োটিক যখন ব্যর্থ হয় তখন কাজে লাগে এই গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিক৷ জার্মানওয়াচের পরীক্ষা করা শতকরা ৩৫ ভাগ মাংসেই সিআইএ এইচপি ছিল৷
গবেষকরা মনে করেন, মুরগির মাংস উৎপাদনে ইউরোপের দেশগুলোতে অভিন্ন আইন হলে মুরগির মাংসের বাজার অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিসট্যান্ট প্যাথোজেনমুক্ত হতে পারে৷