অর্থনৈতিক সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ কিন্তু নতুন এক জরিপে দেখা গেছে বেসরকারি খাতে ব্যবসায়িক কার্যকলাপ যতটা সংকুচিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছিল, তার চেয়ে কম হয়েছে৷
রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের ফলে ইউরোজোনে মুদ্রাস্ফীতি এবং জ্বালানি ঘাটতি দেখা দিয়েছে।ছবি: Wolfgang Filser/Zoonar/picture alliance
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি এস অ্যান্ড পি গ্লোবাল তাদের চূড়ান্ত ক্রয় ব্যবস্থাপনা সূচক -পিএমআই প্রকাশ করেছে৷ এতে ডিসেম্বরে ইউরোজোনের সূচক পাঁচ মাসে সর্বোচ্চ ৪৯ দশমিক তিন এ পৌঁছেছে৷ ডিসেম্বর মাসের সূচকের প্রাথমিক পূর্বাভাস ছিল ৪৮ দশমিক আট৷ এস অ্যান্ড পি গ্লোবাল বিশ্বব্যাপী অর্থনীতির নানা দিক নিয়ে গবেষণা তথ্য প্রকাশ করে৷
সূচক ৫০ এর নীচে থাকলে অর্থনৈতিক সংকোচন বোঝা যায়, অন্যদিকে, সূচক ৫০ এর উপরে উঠলে সেটা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির আভাস দেয়৷
এস অ্যান্ড পি-এর জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ জো হায়েসের মতে, ‘‘ডিসেম্বরে ইউরোজোনের অর্থনীতির অবনতি অব্যাহত ছিল৷ কিন্তু মন্দার গতি টানা দ্বিতীয় মাস মন্থর হয়েছে৷ এটা ইঙ্গিত করে যে প্রাথমিকভাবে যা আশঙ্কা করা হচ্ছিলো, তার চেয়ে মন্দার প্রভাব অপেক্ষাকৃত মৃদু হতে পারে৷''
জার্মানি, ফ্রান্স, ইটালি ও স্পেনসহ বেশ কয়েকটি শক্তিশালী অর্থনীতির দেশে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এবং সেবা সংস্থাগুলোর ওপর সমীক্ষা চালিয়েছে এস অ্যান্ড পি৷ বিক্রয়, কর্মসংস্থান এবং দ্রব্যমূল্যের মতো বিষয়গুলোও এতে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে৷
নতুন সমীক্ষার ফল ইউরোজোনে পূর্বাভাসের চেয়ে সামান্য ভালো অর্থনৈতিক চিত্র দেখিয়েছে। কিন্তু হায়েস মনে করেন, ‘‘শিগগিরই ইউরোজোনের অর্থনীতি অর্থবহ ও স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধির দিকে ফিরে আসবে, এমনটা বলার কোনো সুযোগ দেখছি না৷’’
২০২৩ সাল: অর্থনৈতিক মন্দা দেখা বাকি এখনো
চলতি মন্দায় খাদ্য, পরিবহণ, আবাসন ও জ্বালানির মূল্য - বিশ্বজুড়ে সবকিছু এতটাই বেড়েছে, যা আগের বেশ কয়েক দশকে দেখা যায়নি৷ সূচকের সর্বোচ্চ পর্যায় এরই মধ্যে দেখা গেলেও এর প্রভাবে সংকট আরো গভীরতর হবে বলে মনে করা হচ্ছে৷
ছবি: Eric Gaillard/REUTERS
মহামারিতে শুরু
দীর্ঘসময় মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকার পর হঠাৎ করেই কোভিড-১৯-এর আঘাতে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো বিপুল পরিমাণ আর্থিক সহায়তা দিয়ে ব্যবসা ও সাধারণ মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করে৷ ধনী দেশগুলো সেটি সামাল দিয়ে উঠতে পারলেও গরিব দেশগুলো বেশ চাপে পড়ে৷
ছবি: Murad Sezer/REUTERS
যুদ্ধে আবারো
মহামারির পর চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কারখানাগুলো চালু হতে পারছিল না৷ কর্মীসংকটে পড়ে পরিবহণ, চিকিৎসা ও খুচরা খাতগুলো সামাল দিতে পারছিল না৷ ফলে বাড়তে থাকে জ্বালানির দাম৷ সংকট আরো ঘনীভূত হয় যখন রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ করে৷ রাশিয়ার গ্যাস ও তেলের ওপর পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা দাম আরো বাড়িয়ে দেয়৷
ছবি: Eric Gaillard/REUTERS
গরিবের ওপর ট্যাক্স
‘গরিবের ওপর ট্যাক্স’ নামে পরিচিত এই মূল্যস্ফীতি ধনী-গরিবের ব্যবধান আরো বাড়াচ্ছে৷ অ্যামেরিকা, জার্মানি কিংবা ফ্রান্সের মতো ধনী দেশগুলো যেখানে মূল্যস্ফীতি সামলে রাখা কিংবা সহায়তা প্রোগ্রামে অর্থ সরবরাহ বাড়ানোতে জোর দিচ্ছে, তেমনি হাইতি থেকে সুদান এবং লেবানন থেকে শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলোতে দারিদ্র্য বাড়ছে৷
ছবি: Lucy Nicholson/REUTERS
কী হবে ২০২৩-এ?
বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সুদের হার বাড়িয়ে চাহিদা ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে৷ আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল, আইএমএফ-এর হিসেবে ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ মূল্যস্ফীতি অর্ধেক কমে ৪.৭%-এ নেমে আসবে৷
ছবি: Luisa Gonzalez/REUTERS
আরো এক বছর
এর অর্থ, পুরো ২০২৩ জুড়ে অনেকের অবস্থা ফিরবে না৷ বাড়তি দাম পরিশোধ করতে গিয়ে হিমসিম খেতে হবে৷ যদিও মুদ্রাস্ফীতি কমতে থাকবে, অনেকের কাছে ২০২৩ মন্দার বছর মনে হবে৷