রাশিয়া যদি ইউক্রেনে গ্যাস পাঠানো বন্ধ করে, তাহলে পোল্যান্ড বা গ্রিসের মতো দেশে গ্যাস বাড়ন্ত হতে পারে, বলে আশঙ্কা৷ ওদিকে কিয়েভকে বকেয়া জ্বালানির জন্য শুক্রবারের মধ্যে দুই বিলিয়ন ডলার মূল্যের বিল পরিশোধ করতে হবে৷
বিজ্ঞাপন
ইউক্রেনকে সেইরকমই চরমপত্র দিয়েছে রাশিয়া৷ এবং রাশিয়া যদি সত্যিই ইউক্রেনে গ্যাস পাঠানো বন্ধ করে, তাহলে সেটা হবে ‘ওয়ার্স্ট সিনারিও' – বলেছে গ্রিস৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন গত সোমবারেই জোটের গ্যাস কোঅর্ডিনেশন গ্রুপ বা গ্যাস সমন্বয় গোষ্ঠীর একটি জরুরি বৈঠক আহ্বান করে, ‘‘যদি (গ্যাস সরবরাহে) কোনো বড় ব্যাঘাত ঘটে'', তবে কি করণীয়, তা যাচাই করার জন্য৷ এই গ্যাস সমন্বয় গোষ্ঠী সৃষ্টি হয়েছিল অতীতে মস্কো ও কিয়েভের মধ্যে অনুরূপ জ্বালানি সংক্রান্ত বিরোধ চলাকালীন৷
মস্কো আর কিয়েভের নতুন সরকারের মধ্যে যাবতীয় উত্তেজনা সত্ত্বেও রুশ গ্যাস কোম্পানি ‘গাজপ্রম' এ যাবৎ ইউক্রেনকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করেনি৷ তার একটা কারণ সম্ভবত এই যে, এই প্রাক্তন সোভিয়েত গণরাজ্যটি দিয়েই রুশ প্রাকৃতিক গ্যাস ইউরোপ অভিমুখে বয়৷ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন হলো রুশ গ্যাসের সবচেয়ে বড় খদ্দের৷
ক্রাইমিয়ায় সব শান্ত?
সবার মনোযোগ এখন ইউক্রেনের ক্রাইমিয়ার দিকে৷ ক্রাইমিয়ায় যা ঘটেছে তাকে রাশিয়ার আগ্রাসন বলা হলেও রুশ সেনাদের কিন্তু সাদরে গ্রহণ করে নিয়েছে স্থানীয়রা৷ ছবিঘরে দেখুন ক্রাইমিয়ার পরিস্থিতি৷
ছবি: DW/F. Warwick
কোসাকদের আগমন
রাশিয়ার ক্রাসনোডার থেকে এসেছে ২৫০ জনের মতো কুবান কোসাক৷ সামরিক বাহিনীর পোশাক পরেননি তাঁরা৷ সেভাস্টোপোলের রুশপন্থি কর্তৃপক্ষ কোসাকদের শপথ পাঠ করিয়েছে৷ স্বেচ্ছাসেবী কোসাকরা জানিয়েছে, ক্রাইমিয়াবাসীদের রক্ষা করার জন্য তারা স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে কাজ করবে৷
কুবান কোসাকরা সেভাস্টোপোলের পুলিশের সঙ্গে টহলে অংশ নিচ্ছে৷ মাথায় উলের টুপি পরে রবি বার থেকে রাস্তায় টহল দিচ্ছে কোসাকরা৷ ২০০৫ সালে এথনিক সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী এবং শক্তিশালী সামরিক শক্তি হিসেবে কোসাকদের স্বীকৃতি দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন৷
ছবি: DW/F. Warwick
কঠিন সময়ে নিরাপত্তা
রাশিয়া এবং ক্রাইমিয়ার টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন কোসাকদের নেতা কর্নেল সের্গেই সাভোনিন ইউরিয়েভিচ৷ তিনি বলেন, কোসাকরা সেভাস্টোপোলের মানুষদের রক্ষা করার জন্য এসেছে৷
ছবি: DW/F. Warwick
‘স্বায়ত্তশাসন, বিচ্ছিন্নতাবাদ নয়’
ক্রাইমিয়ায় অনেকের হাতেই দেখা যায় ক্রাইমিয়া এবং রাশিয়ার পতাকা৷ এর অর্থ এই নয় যে, ক্রাইমিয়া ইউক্রেন থেকে আলাদা হয়ে গেছে৷ সেভাস্টোপোলের এই তরুণ-তরুণীরা জানালেন, তাঁরা ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ চাননা, কেননা ইউক্রেনকে তাঁরা ভ্রাতৃপ্রতীম রাষ্ট্র মনে করেন৷ তাঁদের দাবি একটাই – স্বায়ত্তশাসন এবং এথনিক রুশ হিসেবে প্রাপ্য মর্যাদা৷
ছবি: DW/F. Warwick
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি?
এই প্রবীণ এসেছেন কোসাকদের সমর্থন জানাতে৷ রাশিয়ার প্রতি তাঁর পূর্ণ সমর্থন রয়েছে৷ পরনে রুশ সেনাবাহিনীর মতো কমলা আর কালো রংয়ের পোশাক৷ তিনি নিজেও সোভিয়েত ইউনিয়নের রেড আর্মির সাবেক কর্মকর্তা৷
ছবি: DW/F. Warwick
রাস্তায় তল্লাশি
সিমফারোপোল এবং সেভাস্টোপোলের মাঝের হাইওয়েতে গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে রুশপন্থি বেসামরিক বাহিনীর সদস্যরা৷
ছবি: DW/F. Warwick
ব্যবসার জন্য খারাপ সময়?
লিলিয়া ভজনুক একজন স্যুভেনির বিক্রেতা৷ রাবারের তৈরি মুখোশগুলোর মধ্যে পুটিনের চেহারার মুখোশটার এখন দারুণ কাটতি৷ তবু খুব চিন্তায় আছেন লিলিয়া৷ চলমান সংকট ব্যবসার বড় রকমের ক্ষতি করবে বলে আশঙ্কা তাঁর৷
ছবি: DW/F. Warwick
হৃদয়-মন জয় করেছে তাঁরা
সেভাস্টোপোলে গেলেই ব্ল্যাক সি ফ্লিট অঁসম্বল-এর কনসার্ট দেখতে পাবেন৷ নাচ-গানের এই স্থানীয় সংগঠনটি তাদের পরিবেশনা দিয়ে সবার মন জয় করেছে৷ রুশ লোকসংগীতে সাগরের প্রশংসা করে যেসব গান রচনা করা হয়েছে মূলত সেগুলোই পরিবেশন করে ব্ল্যাক সি ফ্লিট অঁসম্বল৷ রাশিয়ার ঐতিহ্যবাহী ইয়াব্লোচকো বা ‘ছোট্ট আপেল’ নাচটা সত্যই মনোমুগ্ধকর৷
ছবি: DW/F. Warwick
চাই শুধু স্বায়ত্তশাসন
সেভাস্টোপোলের অধিকাংশ মানুষই রুশ জাতীয়তাবাদের সমর্থক৷ ইউক্রেনীয়দের তারা অবিশ্বাস করে, মনে করে ইউক্রেনীয়রা চরম ডানপন্থি৷ সেভাস্টোপোলের মানুষ মনে করে রুশ বাহিনীর উপস্থিতি এ অঞ্চলের স্বায়ত্তশাসন এবং নিরাপত্তার রক্ষাকবচ৷
ছবি: DW/F. Warwick
10 ছবি1 | 10
চিন্তায় পড়েছে গ্রিস
ইইউ-এর গ্যাস সমন্বয় গোষ্ঠীর জরুরি বৈঠকে গ্রিসের প্রতিনিধিরা হিসেব কষে দেখান যে, গ্রিসের এলএনজি বা লিকুইফায়েড ন্যাচারাল গ্যাস, অর্থাৎ তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের ভাণ্ডার এখন ৭০ শতাংশ পূর্ণ এবং পরের ডেলিভারির তারিখ হলো ১৪ই মার্চ৷ সোমবারের বৈঠকটি থেকে আরো জানা যায় যে, ইইউ-এর প্রায় সব দেশেই পর্যাপ্ত পরিমাণ গ্যাস মজুদ থাকলেও, তার মধ্যে কতটা তারা ইউক্রেনে ফেরৎ পাঠাতে পারবে, তার নিশ্চয়তা নেই৷ ওদিকে ইউক্রেনের প্রয়োজন হলো দিনে ১৫ থেকে ৩৫ মিলিয়ন কিউবিক মিটার গ্যাস৷
এবার শীত পড়ল কৈ?
এবং শীত না পড়ার ফলে ইইউ-এর ২৮টি দেশে আজ ২০১২ সালের তুলনায় প্রায় পাঁচ বিলিয়ন কিউবিক মিটার, এবং ২০১৩ সালের তুলনায় ১০ বিলিয়ন কিউবিক মিটার বেশি গ্যাস মজুদ আছে৷ এর অর্থ, রাশিয়া থেকে গ্যাস আসা বন্ধ হলে এক সপ্তাহ চালিয়ে নেওয়া যাবে, কিন্তু তিন সপ্তাহ গ্যাস বন্ধ থাকলে – এবং নতুন করে শীত পড়লে – জ্বালানি শক্তির দাম বাড়তে পারে, যেটা ইউরোপীয় আঙ্গিকে একটা ফ্ল্যাশপয়েন্ট৷
রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে এর আগেও গ্যাসের দাম নিয়ে বিরোধ বেঁধেছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে ইইউ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে: গ্যাস সরবরাহ প্রণালীর অবকাঠামোর উন্নতি ঘটিয়েছে, সরবরাহের উৎস বাড়িয়েছে এবং সদস্যদেশগুলিকে আরো বেশি গ্যাস মজুদ রাখতে বলেছে৷
কার, কোথায়, কতটা
ইউরোপীয় কমিশনের প্রশ্নের উত্তরে রোমানিয়া জানিয়েছে, আরো শীত পড়লে তারা আর প্রতিবেশী বুলগেরিয়াকে সাহায্য করতে পারবে না৷ পোল্যান্ড জানিয়েছে, তারা ইউক্রেনের পরিবর্তে বেলারুস হয়ে গ্যাস আমদানি করতে পারে, তবে গ্যাস ডাইভার্ট করার জন্য গাজপ্রমের অনুমতি লাগবে৷ স্লোভাকিয়াও ইউক্রেনে গ্যাস পাঠাতে পারে, তবে তার জন্য একটি রিভার্স-ফ্লো লিংক সংক্রান্ত চুক্তির প্রয়োজন পড়বে৷