দ্বার খুলে দিয়েছে তুরস্ক, শত শত শরণার্থী দেশটির উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের দিকে রওয়ানা হয়েছেন৷ বুলগেরিয়া ও গ্রিস হয়ে তারা ইউরোপের উন্নত দেশে পৌঁছানোর চেষ্টা করবেন৷
বিজ্ঞাপন
তবে কি আবারও শরণার্থী সংকটে পড়তে যাচ্ছে ইউরোপ? তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়্যিপ এর্দোয়ান এর আগেও কয়েকবার ইউরোপকে শরণার্থী ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন৷
বৃহস্পতিবার রাতে সিরিয়ার ইদলিবে তুরস্কের সেনাঘাঁটিতে বাশার আল-আসাদ বাহিনীর হামলায় ৩৩ তুর্কি সেনা নিহতের পর থেকে ওই এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে৷ গত আট বছর ধরে গৃহযুদ্ধে জর্জরিত সিরিয়ার সঙ্গে তুরস্কের যুদ্ধ শুরু হওয়ার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে৷
তুরস্কের সেনাঘাঁটিতে হামলার পর শুক্রবার এর্দোয়ানের দলের মুখপাত্র ওমর কেলিক বলেন, তুরস্কের পক্ষে শরণার্থীদের ‘আর ধরে রাখা সম্ভব না'৷
সিএনএন তুর্ককে তিনি বলেন, ‘‘ওই হামলার কারণেই তুরস্কের শরণার্থীরা ইউরোপে রওয়ানা হয়েছে৷ এছাড়া যেসব শরণার্থী এখনো সিরিয়ায় আছে, তারাও তুরস্কে আসতে শুরু করেছে৷
‘‘আমাদের শরণার্থী নীতিতে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি, সেটা আগের মতোই আছে৷ কিন্তু এখন আমরা এমন পরিস্থিতিতে পড়েছি যে, আমাদের পক্ষে আর তাদের ধরে রাখা সম্ভব না৷''
সিরিয়ায় তুরস্কের হামলা, ইইউ-কে এর্দোয়ানের হুমকি
সিরিয়া সীমান্তে কুর্দি নিয়ন্ত্রিত এলাকায় হামলা শুরু করেছে তুরস্ক৷ হামলার নিন্দা উপেক্ষা করে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ান উলটো হুমকি দিয়েছেন ইইউকে৷ বলেছেন, ‘‘আমরা তাহলে ৩৬ লাখ অভিবাসীকে তোমাদের কাছে পাঠিয়ে দেবো৷’’
ছবি: Reuters/C. Allegri
প্রথমে বিমানহামলা
সিরিয়ার উত্তর-পূর্ব থেকে যুক্তরাষ্ট্র সৈন্য সরিয়ে নেয়ার পরই হামলার প্রস্তুতি শুরু করে তুরস্ক৷ রোববার ট্যাঙ্কসহ তুরস্কের সৈন্য বহরের সিরিয়া সীমান্তের দিকে রওনা হওয়ার খবর জানায় তুর্কি সংবাদ সংস্থা ডিএইচএ৷ তবে হামলা শুরু হয় বুধবার থেকে৷ পদাতিক বাহিনীর হামলার সুবিধার জন্য প্রথমে কুর্দিনিয়ন্ত্রিত সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে বিমান থেকে বোমাহামলা চালানো হয়৷
ছবি: AFP/D. Souleiman
বহু মানুষ এলাকাছাড়া
তুরস্কের হামলা শুরুর আগে থেকেই শুরু হয় বেসামরিক কুর্দিদের এলাকা ছেড়ে যাওয়া৷ অনেক মানুষ ট্রাক বা অন্য গাড়িতে চড়ে, অনেকে আবার হেঁটেই শুরু করেন নিরাপদ স্থানের দিকে যাত্রা৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Souleiman
পিছু হঠছে কুর্দি বাহিনী
বুধবার থেকে তুরস্কের পদাতিক বাহিনীও হামলা শুরু করে৷ বৃহস্পতিবার কয়েকটি স্থানে কুর্দিদের নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্স (এসডিসি)-এর সঙ্গে তুমুল সংঘর্ষ হয়৷ বার্তা সংস্থা এপির খবর অনুযায়ী, তুরস্কের পদাতিক বাহিনী এ পর্যন্ত কমপক্ষে একটি গ্রাম থেকে এসডিসি-কে সরে যেতে বাধ্য করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Souleiman
বন্দি আইএস যোদ্ধাদের কী হবে?
এদিকে বাদ্রান জিয়া নামের এক কুর্দি নেতা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, বন্দি আইএস যোদ্ধাদের নিয়ে তারা চিন্তিত৷ তিনি জানান, তুর্কি হামলার ফলে বন্দি আইএস যো্দ্ধাদের পাহারা দিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে৷ তার আশঙ্কা, এর ফলে আইএস যো্দ্ধারা ছাড়া পেয়ে যেতে পারে৷
ছবি: Reuters
হামলার নিন্দা
তুরস্কের এ হামলার নিন্দা জানিয়েছে অনেক দেশ৷ জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী হাইকো মাস বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন৷ ইটালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী লুইহি ডি মাইয়ো বলেছেন, ‘‘এ হামলা অগ্রহণযোগ্য৷’’ চীন হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছে, ‘‘সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হবে৷’’ রাশিয়ার গণমাধ্যম জানাচ্ছে, পুটিন সরকার সিরিয়া ও তুরস্কের মধ্যে সংলাপ আয়োজনের পরিকল্পনা করছে৷
ছবি: picture-alliance/AA/A. Hosbas
তুরস্ককে ইইউ-র বার্তা
এক সংবাদ সম্মেলনে ইইউ-র এক মুখপাত্র বলেন, ‘‘ইইরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দিতে ইচ্ছুক সব প্রার্থীর ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে৷ তুরস্ক যদি সত্যিই (এই জোটে) যুক্ত হতে চায়, তাহলে তাদেরও সেই পথ অনুসরণ করতে হবে৷’’
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/N. Economou
এর্দোয়ানের পালটা হুমকি
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়িপ এর্দোয়ান ইইউ-র বক্তব্যকে দৃশ্যত আমলেই নেননি৷ জাতীয় সংসদে দেয়া ভাষণে তিনি বলেছেন, ‘‘ওহে ইইউ, জেগে ওঠো৷আমি আবার বলছি, আমাদের এ অভিযানকে যদি তোমরা আগ্রাসন হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করো, আমরা তাহলে দরজা খুলে ৩৬ লাখ অভিবাসীকে তোমাদের কাছে পাঠিয়ে দেবো৷’’
ছবি: Reuters/C. Allegri
7 ছবি1 | 7
বৃহস্পতিবার মধ্যরাতেই প্রায় তিনশ' শরণার্থী তুরস্কের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের দিকে রওয়ানা হয়েছে বলে জানায় ডিএইচএ নিউজ৷
শরণার্থীদের ওই দলে নারী ও শিশুরাও আছে৷ তারা তুরস্কের এর্দিনে প্রদেশ থেকে রওয়ানা হয়ে বুলগেরিয়া ও গ্রিস সীমান্তের দিকে যাচ্ছে৷ শরণার্থীদের দলে সিরীয়, ইরানি, ইরাকি, পাকিস্তানি এবং মরোক্কানরা আছেন৷
২০১৫ সালে ইউরোপমুখী শরণার্থীর ঢল নামার পর তাদের আটকাতে তুরস্কের সঙ্গে একটি চুক্তি করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ ওই চুক্তির আওতায় তুরস্ক প্রায় ৩৬ লাখ সিরীয় শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে৷
তারপর থেকে ইউরোপের সঙ্গে যে কোনো দরকষাকষিতে এর্দোয়ান নিয়মিতই ‘শরণার্থীদের ছেড়ে' দেওয়ার হুমকি দিয়ে আসছিলেন৷