হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওর্বান তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় বসতে যাচ্ছেন৷ ফলে দেশটিতে গণতান্ত্রিকভাবে বৈধ স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা ওর্বানের অনুকরণকারীদের কাছে আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে বলে মনে করেন ডয়চে ভেলের ফল্কার ভাগেনার৷
বিজ্ঞাপন
রবিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে অর্বানের ফিদেস পার্টি দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসনে জয়ী হয়েছে৷ হাঙ্গেরি হচ্ছে, গণতান্ত্রিকভাবে বৈধতা পাওয়া একদলীয় শাসনব্যবস্থার একটি রাষ্ট্র – অর্থাৎ ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র আর পুটিন ও এর্দোয়ানের স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থার মাঝামাঝি একটি অবস্থানে আছে দেশটি৷
পূর্ব ইউরোপের তারকা রাজনীতিবিদ
ওর্বানের প্রভাব যে শুধু তাঁর দেশের ১০ মিলিয়ন মানুষের উপর আছে তা নয়৷ পোল্যান্ডের শাসক দল ‘ল অ্যান্ড জাস্টিস' পার্টি এবং চেক প্রজাতন্ত্র ও স্লোভাকিয়াও ওর্বানের আদর্শের অনুসারী৷ এই চার দেশ মিলে গড়ে ওঠা ‘ভিসেগ্রাড গ্রুপ' ব্রাসেলস বিরোধী বলে পরিচিত৷ তাদের অভিযোগ, ইউরোপ তাদের উপর নির্দেশ চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে৷ ২০১৬ সালে পোল্যান্ডের ‘ল অ্যান্ড জাস্টিস' পার্টির ইয়ারোস্লাভ কাচিন্সকি ওর্বান সম্পর্কে উৎসাহ নিয়ে বলেছিলেন, ‘‘আমরা তাঁর কাছ থেকে শিখছি৷''
সাম্প্রতিক অতীতে পশ্চিম ও পূর্ব ইউরোপের সম্পর্কের উপর হাঙ্গেরি ছাড়া আর অন্য কোনো দেশের নির্বাচনি ফলাফলের এত বড় প্রভাব পড়েনি৷ ওর্বান আগেই বলেছিলেন, ২০১৮ সাল ‘বড় লড়াইয়ের বছর' হবে৷ এখন নির্বাচনে জেতার কারণে তিনি আরও বেশি করে ব্রাসেলস বিরোধী প্রচারণা চালাবেন বলে ধরে নেয়া যায়৷
যখন থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ পূর্বদিকে তার বিস্তার ঘটানো শুরু করেছে তখন থেকে ইইউ-র কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছেন অর্বান৷ ইইউ-র মানদণ্ড অনুযায়ী, ওর্বান একদলীয় শাসনব্যবস্থার পথপ্রদর্শক৷ আর বৈশ্বিক বিবেচনায় তাঁকে পুটিন, ট্রাম্প আর এর্দোয়ানের মতো স্বৈরশাসকের স্তরে ফেলা যায়৷ তাঁরা প্রত্যেকেই গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আর আইনের শাসনের শত্রু৷
এদিকে, ইউরোপীয় সংসদের রক্ষণশীল দলগুলোর মৌন সমর্থনের জন্য ওর্বানের দল এতদিন ধরে হাঙ্গেরিতে সফল হয়ে আসছে৷ কারণ ইউরোপীয় সংসদের ক্ষমতাকেন্দ্র থেকে সমাজতন্ত্রীদের দূরে রাখতে ‘ইউরোপিয়ান পিপলস পার্টি' বা ইপিপি, বিশেষ করে জার্মানির খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী দলের, ওর্বানের ফিদেস পার্টির প্রতিনিধিদের ভোট প্রয়োজন৷
ইইউ পশ্চিম এবং ইইউ পূর্ব – প্রয়োজন মধ্যস্থতা
ইইউ যদি নিজেদের ভেতরকার সংকট দূর করতে চায় তাহলে আগে সাম্প্রতিক অতীত বুঝতে হবে৷ পূর্ব আর পশ্চিম ইউরোপের সেই অতীত ছিল ভিন্ন৷ পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি কিংবা সার্বিয়ায় স্বৈরতান্ত্রিক ঘরানার শাসনব্যবস্থার কারণ সেসব দেশের মানুষ সাবেক সোভিয়েত আমল থেকে এমন ব্যবস্থার সঙ্গে পরিচিত৷
তবে চুক্তি চুক্তিই৷ হাঙ্গেরি আর পোল্যান্ড যেহেতু ইইউ-তে যোগ দিয়েছে তাই তাদের ইইউ-র নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে৷ কারণ যোগ দেয়ার সময় তাদের এ সব জানা ছিল৷ হয়ত এখনও পূর্ব আর পশ্চিমের মধ্যে মধ্যস্থতার সময় আছে৷ তবে তারপর ফুটবলে যেমন বেশি ফাউল করলে লাল কার্ড দেয়ার নিয়ম, সেটি প্রয়োগ করতে হবে৷
সবচেয়ে কম শরণার্থী নেবে মাল্টা, সবচেয়ে বেশি জার্মানি
১ লাখ ২০ হাজার শরণার্থী নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছিল৷ তা কেটে গেছে৷ ভোটাভুটির মাধ্যমে ঠিক হয়েছে এই ১ লাখ ২০ হাজার শরণার্থীকে ভাগ করে নেবে ইইউ-র দেশগুলো৷ এ পর্যায়েও সবচেয়ে বেশি শরণার্থী নেবে জার্মানি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. Zak
জার্মানির স্বস্তি
অনেক শরণার্থী এসেছে জার্মানিতে৷ অথচ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশির ভাগ দেশ শরণার্থী নিতে নারাজ৷ এ অবস্থায় ইইউ-র সব সদস্য দেশকে কোটা অনুযায়ী শরণার্থী নিতে হবে – এমন দাবি জানিয়েছিল জার্মানি৷ মঙ্গলবারের বৈঠকে দাবি পূরণ হয়েছে৷ সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে সিদ্ধান্ত হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার শরণার্থীকে ভাগ করে দেয়া হবে৷ জার্মানি নেবে ৩১ হাজার ৪৪৩ জন৷ বছর শেষে জার্মানিতে আগত মোট শরণার্থী ৮ লাখে হয়ে যেতে পারে৷
ছবি: Reuters/O. Orsal
জার্মানির পরই ফ্রান্স
কোটা অনুযায়ী শরণার্থী বণ্টনের দাবিতে ফ্রান্সও ছিল জার্মানির সঙ্গে৷ মঙ্গলবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শরণার্থীর চাপটা তাদের ওপরও খুব কম পড়বে না৷ এই দফায় ২৪ হাজার ৩১ জন শরণার্থী নেবে ফ্রান্স৷ছবিতে হাঙ্গেরি সীমান্তের এক শরণার্থী শিশু৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Nimani
চারটি দেশের ঘোর আপত্তি
পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো শুরু থেকেই শরণার্থী নেয়ার বিপক্ষে৷ মঙ্গলবার হাঙ্গেরি, রোমানিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র ও স্লোভাকিয়া শরণার্থী নেয়ার বিপক্ষে ভোট দেয়৷ ভোটের পর চেক প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী বহুস্লাভ সবটকা বলেন, ‘‘এটা খুবই খারাপ সিদ্ধান্ত৷’’ সরাসরি আপত্তি জানালেও এখন রোমানিয়া ৪ হাজার ৬৪৬ জন, চেক প্রজাতন্ত্র ২ হাজার ৯৭৮ জন এবং স্লোভাকিয়া ১ হাজার ৫০২ জন শরণার্থী নেবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Dospiva
দায়িত্ব মনে করে শরণার্থী নেবে লুক্সেমবুর্গ
৫ লক্ষ ৬২ হাজার জনসংখ্যার দেশ লুক্সেমবুর্গও শরণার্থী নেবে৷ ছোট দেশ তাই মাত্র ৪৪০ জন নেবে তারা৷ তবে দেশটির সরকার মনে করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ঐক্য ধরে রাখতে সব সদস্য দেশের শরণার্থী নেয়াটা এখন কর্তব্যের পর্যায়ে পড়ে৷ এমনিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নে ছোট দেশটির এখন বড় ভূমিকা পালন করাই স্বাভাবিক, কেননা, এ মুহূর্তে ইইউর সভাপতি দেশও লুক্সেমবুর্গ৷
ছবি: AP
সবচেয়ে কম শরণার্থী নেবে মাল্টা
ইইউ অঞ্চলের আরেক ছোট দেশ মাল্টা৷ আয়তন মাত্র ৩১৬ বর্গ কিলোমিটার আর জনসংখ্যা ৪৪ হাজারের একটু বেশি৷ এমন ছোট দেশটিও ১৩৩ জন শরণার্থী নেবে৷
ছবি: picture alliance /Robert Harding
আর যেসব দেশ শরণার্থী নেবে
ইইউ-র আরো কয়েকটি দেশও শরণার্থী নেবে৷ স্পেন নেবে ১৪ হাজার ৯৩১ জন, পোল্যান্ড ৯ হাজার ২৮৭ জন, নেদারল্যান্ডস ৭ হাজার ২১৪ জন, বেলজিয়াম ৪ হাজার ৫৬৪ জন, সুইডেন ৪ হাজার ৪৬৮ জন, অস্ট্রিয়া ৩ হাজার ৬৪০ জন, পর্তুগাল ৩ হাজার ৭৪ জন, ফিনল্যান্ড ২ হাজার ৩৮৮ জন, বুলগেরিয়া ১৬০০ জন, ক্রোয়েশিয়া ১ হাজার ৬৪ জন, লিথুয়ানিয়া ৭৮০ জন, স্লোভেনিয়া ৬৩১ জন, লাটভিয়া ৫২৬ জন, এস্তোনিয়া ৩৭৩ এবং সাইপ্রাস নেবে ২৭৪ জন শরণার্থী৷