1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শরণার্থীরা স্বাগত নন

সাব্রিনা পাবসট / আরবি২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪

শরণার্থীরা আশা করেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমান্তে ঢুকতে পারলেই বুঝি নিরাপদ আশ্রয় পাওয়া যাবে৷ কিন্তু বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রেই উলটোটাই দেখা যায়৷ লক্ষ্য করা যায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও সহানুভূতির অভাব ৷

ছবি: picture-alliance/Milestone Media

হিদির কারুল-এরও এই রকম অভিজ্ঞতা হয়েছিল৷ ‘‘হঠাৎ হাতকড়া পড়ে হাতে৷ পাঠানো হয় হাজতে৷'' হামবুর্গে বিদেশিদের জন্য ভারপ্রাপ্ত দপ্তরের কথা স্মরণ করে এইভাবেই বলেন হিদির৷

‘‘আমাকে আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগের অনুমতি দেওয়া হয়নি৷ পরদিন তুরস্কে পাঠিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল৷ অর্থাৎ আমাকে বহিষ্কার করতে চেয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ৷''

গৃহযুদ্ধের ঝুঁকি এড়াতে

হিদির কারুল তুরস্কের নাগরিক৷ কুর্দ অ্যালাওয়াইট সম্প্রদায়ের মানুষ৷ ১৯৯৫ সালে ১৫ বছর বয়সে গৃহযুদ্ধের ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য জার্মানিতে পালিয়ে আসেন তিনি৷ এখানে নিয়মমাফিক সবকিছু করা সত্ত্বেও তাঁকে অবৈধ বলে গণ্য করা হয়৷ বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়৷ যদিও জার্মানিতে পৌঁছানোর সাথে সাথে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছিলেন হিদির৷ নিয়ম মতো একজন অভিভাবকও পেয়েছিলেন৷ পেয়েছিলেন একটি বাসস্থান৷ স্কুলে যাওয়াও বাদ যায়নি৷

আইন অনুযায়ী এক বছর পর জার্মানিতে থাকার অনুমোদন পত্র নবায়নের জন্য বিদেশিদের দপ্তরে গিয়েছিলেন হিদির৷ কিন্তু আচমকা পরতে হলো তাঁকে হাতকড়া৷ যেতে হলো হাজতে৷ পরদিন তাঁকে তুরস্কের প্লেনে উঠিয়ে দেওয়ার কথা ছিল৷ তবে শেষ মুহূর্তে উকিলের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়৷ বহিষ্কার রোধ করা যায়৷ হিদির বলেন, ‘‘স্বাগত বলতে আমি অন্য কিছু বুঝি৷''

সহজেই জার্মানির ভিসা পান

অন্য অনেক শরণার্থীর তুলনায় হিদির কারুল সহজেই জার্মানির ভিসা পেয়েছিলেন৷ তুরস্কে জার্মান দূতাবাসে যাওয়ার কয়েক সপ্তাহ পর ভিসা নিয়ে জার্মানিতে চলে আসেন তিনি৷ সব মিলিয়ে খরচ পড়েছে ৩,০০০ ইউরো৷ যা বহন করা বহু শরণার্থীর জন্য দুরূহ৷ অবৈধ পথে জার্মানিতে বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো দেশে আসার চেষ্টা করেন অনেকে৷ প্রতারক দালালের কবলেও পড়তে হয় অনেক সময়৷ সর্বস্বান্ত হয়ে মারা যাওয়াও কোনো বিরল ঘটনা নয়৷

অনেক দেশে কোনো দূতাবাস নেই, যেখানে ঝুঁকিতে পড়া মানুষজন সাহায্য পেতে পারেনছবি: picture alliance/dpa

সংকটপূর্ণ অনেক দেশে কোনো দূতাবাস নেই, যেখানে ঝুঁকিতে পড়া মানুষজন সাহায্য পেতে পারেন৷ ভাগ্য ভাল থাকলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো দেশের সীমান্ত পার হতে পারেন তাঁরা৷ তবে সেখানেও তাদের অবস্থা অনিশ্চিত৷ একেক দেশে একেক রকমের আচরণের সম্মুখীন হতে হয় তাঁদের৷

মানবেতর জীবনযাপন

অনেক শরণার্থীকে কারাবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়৷ এ ব্যাপারে বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরি ও গ্রিস-এর বিরুদ্ধে সমালোচনায় চলছে ইদানীং৷ তবে এইসব দেশকে ভারমুক্ত করার জন্য ইইউ-এর তরফ থেকেও বিশেষ উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায় না৷ ‘‘মানুষজনকে বিপদের সময় সরাসরি সাহায্য করার চেয়ে জার্মানি শরণার্থী ফান্ডে অর্থদান করেই ক্ষান্ত৷'' বলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী পেট্রা বেনডেল৷

হিদির কারুলের ঘটনাটি ইতিবাচক পরিণত পায়৷ এর পেছনে রয়েছেন সহানুভূতিশীল কিছু মানুষ, যারা তাঁর অধিকার আদায়ে সচেষ্ট হয়েছিলেন৷ অপরিচিত কোনো দেশে পালিয়ে এলে সবারই কিন্তু এই রকম সৌভাগ্য হয় না৷ শরণার্থীরা ‘আশ্রয় পাওয়া' দেশের ভাষা জানেন না, আইনকানুন সম্পর্কেও কোনো ধারণা নেই, জানেন না কোন সংস্থায় তাঁরা সাহায্যের জন্য যাবেন৷ বলেন কোলোনের বিদেশিদের জন্য ভারপ্রাপ্ত দপ্তরের প্রধান ডাগমার ডামেন৷ ‘‘তাঁরা এখানে কাজ করতে চান, সরকারের ওপর নির্ভরশীল হতে চান না৷ কিন্তু শরণার্থী হিসাবে স্বীকৃতি না পাওয়া পর্যন্ত তাদের কাজের অনুমতি দেওয়া হয় না৷''

ইন্টিগ্রেশনের জন্য কাজের সুযোগ থাকা উচিত

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী পেট্রা বেনডেল মনে করেন, অনেক তরুণই ইইউ-এর দেশগুলিতে আসেন বিশেষ করে কাজ করতে৷ ইন্টিগ্রেশনের জন্য এটা সবচেয়ে ভাল উপায়৷ শরণার্থীরা কাজ করতে না পেরে ভেঙে পড়েন৷ সারাদিন অনেকের সঙ্গে ঠাসাঠাসি করে আশ্রয়কেন্দ্রে শুয়ে বসে দিন কাটাতে হয় তাঁদের৷

ইউরোপীয় কমিশন বেশ কিছুদিন ধরে একটি আইনের খসড়া নিয়ে কাজ করছে৷ এতে ইউরোপের শরণার্থী ও রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের দক্ষতা যোগ্যতা অনুযায়ী ভাগ করা হয়৷ যাতে প্রয়োজন অনুযায়ী তাঁদের কাজে লাগানো যায়৷ কিন্তু শ্রমনীতির বিষয়টি বিভিন্ন দেশে জাতীয় ব্যাপার৷ এক্ষেত্রে ইইউ-এর দেশগুলি সহযোগিতামূলক কাজ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না৷

জার্মানি ত্যাগ করার ইচ্ছা

হিদির কারুল ২০ ধরে জার্মানিতে আছেন৷ স্কুলে গিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন, ডক্টরেটও করেছেন৷ স্বীকৃত এক রাজনৈতিক শরণার্থী তিনি৷ জার্মানির সমাজে সফলভাবে সম্পৃক্ত৷ কিন্তু তাঁর ঘটনাটি শেষ হয়নি৷ ২০০১ সাল থেকে জার্মান নাগরিকত্ব পাওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি৷ কিন্তু জার্মান আইন অনুযায়ী এটা সম্ভব হচ্ছে না৷ এখনও তিনি জার্মান পাসপোর্ট পাওয়ার ব্যাপারে কাজ করে যাচ্ছেন৷ হিদির কারুলের ভাষায়, ‘‘২০ বছর পর কী করছি এখানে আমি? এখানকার সমাজ তো আমি সম্পৃক্ত৷ কিন্তু মনে হয় জার্মানি আমাকে গ্রহণ করতে চায় না৷ আমি জার্মানি ছাড়ার চিন্তা করছি৷ একেবারে ইউরোপের বাইরে৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ