ইটালির নতুন প্রধানমন্ত্রী জুসেপে কন্টেকে অভিনন্দন জানিয়ে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল বলেছেন, ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে সে দেশের সরকারের ঋণ মওকুফ করার আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না৷
বিজ্ঞাপন
শনিবার ইটালির জাতীয়তাবাদী নেতা জুসেপে কন্টের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন ম্যার্কেল৷ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় তাঁকে অভিনন্দন জানান তিনি এবং দুই দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে আলোচনার জন্য বার্লিনে আমন্ত্রণ জানান৷
সেদিন চ্যান্সেলরের দপ্তর থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয় যে, ‘পারস্পরিক নিবিড় সুসম্পর্ক বজায় রাখতে' ফোনালাপে দুই নেতাই জোর দেন৷
আইনের শিক্ষক কন্টে গত শুক্রবার শপথ নেবার পর এখন পর্যন্ত তেমন একটা সরব হননি৷ তবে ফেসবুকে তিনি লিখেছেন যে, শনিবার ম্যার্কেল ছাড়াও তিনি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁর সঙ্গে আলাপ হয়েছে৷ আগামী সপ্তাহে ক্যানাডায় জি-৭ সম্মেলনে দুই নেতার সঙ্গে বৈঠক হবে বলে জানিয়ে তিনি ঘোষণা দেন যে, ইটালির জনগণের ‘স্বার্থ' নিয়ে তিনি তাঁদের সঙ্গে কথা বলবেন৷
গত মার্চ মাসে ইটালিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়৷ এরপর কয়েকদফা আলোচনা শেষে জাতীয়তাবাদী দল ‘দ্য লিগ' ও প্রচলিত শাসনব্যবস্থাবিরোধী দল ‘ফাইভ স্টার মুভমেন্ট'-এর মধ্যে জোট সরকার গঠিত হয়েছে৷ এ যাবৎ ইটালির এই সরকার নিয়ে ম্যার্কেলই সবচেয়ে নিরুত্তাপ আছেন৷
এই জোটের দু'টি দলই নির্বাচনের আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রচলিত নীতি ব্যবস্থার সমালোচনায় মুখর ছিলেন৷ এখন দেখার বিষয় ইইউ প্রশাসন ও অর্থনীতির প্রতি এই জোট সরকারের আচরণ কী হয়৷
চ্যান্সেলর ইটালি নিয়ে ঠিক কী ভাবছেন তা এখন পর্যন্ত কেউ বলেননি বা কোথাও প্রকাশ হয়নি৷ তবে জার্মান সাপ্তাহিক ডেয়ার স্পিগেল-এর সবশেষ সংখ্যার প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ছিল, ‘নিজেদের ধ্বংসে মেতেছে ইটালি - এবং ইউরোপকেও টেনে নামাচ্ছে৷' প্রচ্ছদ কার্টুনে দেখা যাচ্ছে, স্পাগেটি ভর্তি একটি কাঁটা চামচ থেকে ফাঁসির মতো নেমে আসছে এক টুকরো স্প্যাগেটি৷
ঋণ মওকুফের আবেদন
কন্টের সঙ্গে ফোনালাপের কিছু পর জানা গেছে যে, ম্যার্কেল ইটালির ঋণ মওকুফের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন৷
জার্মানির পত্রিকা ফ্রাঙ্কফুর্টার আলগেমাইনে সাইটুং-এর রোববারের সংস্করণের জন্য দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন যে, এক মুদ্রার এই মঞ্চ যেন ‘ঋণের ইউনিয়নে' পরিণত না হয়৷
এর আগে বিভিন্ন খবরে প্রকাশিত হয় যে, ইটালির নতুন সরকার তাদের প্রায় আড়াইশ বিলিয়ন ইউরো ঋণ মওকুফের জন্য ফ্রাংকফুর্টস্থ ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক, ইসিবি-র কাছে আবেদন করবে৷
ইসিবি এরই মধ্যে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে, ইউরোপীয় চুক্তি অনুযায়ী এটা সম্ভব নয়৷
ইটালির নতুন সরকার নিয়ে ম্যার্কেলের ভাবনা কী, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন যে, তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে অনুমাননির্ভর কথা না বলে, বরং খোলাখুলিভাবে তাদের সঙ্গে কথা বলা ও কাজ করার প্রতিই তাঁর আগ্রহ৷
জেডএ/ডিজি (ডিপিএ, রয়টার্স, এএফপি)
ইউরো ব্যাংকনোট কিভাবে তৈরি করা হয় জানেন?
ইসিবি, অর্থাৎ ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি নতুন ৫০ ইউরোর নোট বাজারে ছাড়ছে, যা জাল করা আরো বেশি শক্ত হবে৷ কিন্তু আসল নোট তৈরি হয় কিভাবে?
ছবি: Giesecke & Devrient
নরম তুলো থেকে হার্ড ক্যাশ!
ইউরো ব্যাংকনোট তৈরির আসল উপাদান হল কার্পাস তুলো৷ এভাবে তৈরি নোট কাগজের নোটের চেয়ে বেশি টেকসই হয় – এমনকি ভুল করে ওয়াশিং মেশিনে দিয়ে ফেললেও ভিজে ‘তুলোট’ হয়ে যায় না!
ছবি: tobias kromke/Fotolia
তুলো থেকে মণ্ড হয়ে কাগজ
তুলো ব্লিচ করে, ধুয়ে, পাল্প বা মণ্ড তৈরি করা হয় – যার ফর্মুলা টপ সিক্রেট৷ তারপর একটি সিলিন্ডার মোল্ড যন্ত্র দিয়ে মণ্ডটি কেটে কাগজের লম্বা লম্বা ফালি করে ফেলা হয়৷ এর মধ্যেই কিন্তু সেই কাগজে ভবিষ্যৎ ইউরো নোটের একাধিক নিরাপত্তা চিহ্ন বসানো হয়ে গেছে, যেমন জলছাপ ও সিকিউরিটি থ্রেড৷
ছবি: Giesecke & Devrient
নোট জাল করা রোখা
ইউরো ব্যাংকনোটে দশটি বিভিন্ন নিরাপত্তা চিহ্ন রাখা হয়েছে৷ তার মধ্যে একটি হলো এক ফয়েল অ্যাপ্লিকেশন, যা একটি বেসরকারি ছাপাখানায় নোটের কাগজের ওপর বসিয়ে দেওয়া হয়৷
ছবি: Giesecke & Devrient
জালিয়াতরাও কিছু কম যায় না
নোট জাল করা যতই কঠিন হোক না কেন, জালিয়াতরা তবু হাজার হাজার জাল নোট বাজারে ছাড়তে পেরেছে৷ ২০০২ সালে ইউরো আসা যাবৎ গতবছর, অর্থাৎ ২০১৫ সালে সবচেয়ে বেশি জাল নোট ধরা পড়েছে৷ সারা বিশ্বে প্রায় ন’লাখ জাল ইউরো নোট ঘুরছে, বলে ইসিবি-র ধারণা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Hoppe
ইউরো নোটে যার আঁকা ছবি
ইউরো ব্যাংকনোটগুলি ডিজাইনের দায়িত্ব রাইনহোল্ড গ্যারস্টেটারের উপর ন্যস্ত৷ সাবেক ডয়েচে মার্ক বিদায় নেবার আগে তার শেষ সিরিজ গ্যারস্টেটারের অঙ্কণশৈলীর পরিচয় বহণ করছে৷ এখনও প্রতিটি ইউরো নোটের উপর ইউরোপীয় স্থাপত্যের কোনো একটি বিশেষ যুগের নিদর্শন থাকে৷ পাঁচ ইউরোর নোটে যদি কোনো সুপ্রাচীন খিলানে ঢাকা পথ দেখা যায়, তো পাঁচশ’ ইউরোর নোটে দেখা যাবে একটি ইস্পাতের সেতু৷
ছবি: Getty Images/AFP
প্রতিটি নোটই অনন্য
কেননা প্রতিটি নোটের নম্বর আলাদা৷ সেই নম্বর দেখলেই বোঝা যায়, ইউরোপের প্রায় এক ডজন সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ছাপাখানার মধ্যে কোন ছাপাখানায় এই বিশেষ নোটটি ছাপা হয়েছে৷ তারপর সেই নোটগুলিকে একটি বিশেষ সূত্র অনুযায়ী বিভিন্ন ইউরো দেশের মধ্যে বেঁটে দেওয়া হয়৷
ছবি: Giesecke & Devrient
একটি পাঁচশ’ ইউরো নোটের দাম
নোটের বান্ডিলগুলোকে বেঁধে শ্রিঙ্ক-ব়্যাপ করে বিভিন্ন দেশের রিজার্ভ ব্যাংকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়৷ একটি ব্যাংকনোট তৈরির খরচ পড়ে সাত থেকে ষোলো সেন্ট৷ নোটের ডিনমিনেশন বা মূ্ল্য যতো বেশি হবে, বানানোর খরচও সেইরকম বেশি হবে৷
ছবি: Giesecke & Devrient
দাম নয়, খরচ কমানো
আগে সব দেশের নিজের ট্যাঁকশাল ছিল৷ আজকাল জার্মানির ফেডারাল বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক জার্মানির বাইরেও নোট ছাপতে দেয়৷ ২০১৫ সালে জার্মান মুদ্রণ সংস্থা গিজেকে ডেভ্রিয়েন্ট মিউনিখে তাদের ছাপাখানা বন্ধ করে, কেননা লাইপজিগে তো বটেই, এমনকি মালয়েশিয়াতেও নোট ছাপানোর খরচ কম৷
ছবি: Giesecke & Devrient
পুরনো বাতিল করে নতুন
২০১৩ সালে নতুন পাঁচ ইউরোর নোট চালু করা হয়৷ ২০১৫ সালে আসে নতুন দশ ইউরোর নোট৷ এরপর ২০১৬-য় এসেছে নতুন ২০ ইউরোর নোট৷ ২০১৭-য় নতুন ৫০ ইউরোর নোট৷ ২০১৮-য় আসছে ১০০ আর ২০০ ইউরোর নতুন নোট৷ আর ২০১৯ সালে নাকি ৫০০ ইউরোর নতুন নোট বেরনোর কথা – অবশ্য তার আগেই যদি ৫০০ ইউরোর নোট বাতিল না করা হয়৷