যুদ্ধজাহাজে শীর্ষ নেতাদের বৈঠকের কথা সহজে শোনা যায় না৷ কিন্তু সোমবার জার্মানি, ফ্রান্স ও ইটালির নেতারা ইউরোপের বর্তমান চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনার জন্য এমন এক স্থান বেছে নিলেন৷
বিজ্ঞাপন
ব্রিটেনের মানুষ গণভোটে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে যাবার পক্ষে রায় দিয়েছে৷ সে দেশের সরকার কবে, কীভাবে সেই রায় কার্যকর করবে অথবা আদৌ করবে কিনা, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর হচ্ছে না৷
অন্য অনেক দেশেও ‘পপুলিস্ট' নেতারা তাদের জনমোহিনী বুলিতে অভিবাসন, অর্থনীতি ইত্যাদি সব সমস্যার জন্য ব্রাসেলসকেই দায়ী করছেন৷ এই অবস্থায় ইউরোপের ভবিষ্যৎ কী হবে? স্লোভাকিয়ার রাজধানী ব্রাতিস্লাভা শহরে আগামী মাসে ইইউ শীর্ষ সম্মেলনের আগে ইউরো এলাকার তিন শক্তিশালী দেশের শীর্ষ নেতারা ঘরোয়া আলোচনায় ভবিষ্যৎ গতিপথ নিয়ে আলোচনায় বসলেন৷ তাঁদের স্পষ্ট বক্তব্য – বিগত গত কয়েক দশকের মতো ইউরোপের বর্তমান সমস্যাগুলির জবাব একমাত্র ইউরোপীয় ইউনিয়নই দিতে পারে৷
তাঁরা বর্তমান এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে দু'টি প্রতীকী কাজ করলেন৷ প্রথমে তাঁরা ইউরোপীয় ঐক্যের জনক হিসেবে পরিচিত ইটালির প্রয়াত বুদ্ধিজীবী আলটিয়েরো স্পিনেলির কবরে পুস্পস্তবক অর্পণ করলেন৷ তারপর তাঁরা ইটালির নৌবাহিনীর ‘জুসেপে গারিবাল্ডি' রণতরীতে মিলিত হলেন৷
জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া ওলঁদ এবং ইটালির প্রধানমন্ত্রী মাটেও রেনসি দুটি ক্ষেত্রে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেবার অঙ্গীকার করলেন৷ তাঁদের মতে, প্রথমত, সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কার মুখে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা আরও জোরদার করতে হবে৷ দ্বিতীয়ত, ইউরোপের অনেক দেশে তরুণ প্রজন্ম যেভাবে বেকারত্বের কারণে চরম হতাশার মুখে পড়েছে, সেই সমস্যার দ্রুত সমাধান করতে হবে৷
ইটালির প্রধানমন্ত্রী রেনসি বলেন, অনেক পপুলিস্ট সব সমস্যার দায় ইউরোপের উপর চাপিয়ে দেন৷ ‘‘অভিবাসন ইউরোপের দোষ৷ অর্থনীতির বেহাল অবস্থা, সেটাও ইউরোপের দোষ৷ কিন্তু বাস্তবে মোটেই সেটা সত্য নয়'', বলেন তিনি৷ বেকারত্ব দূর করতে রেনসি'র উদ্যোগের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ম্যার্কেল বলেন, ইউরোপীয় স্থিতিশীলতা চুক্তির কাঠামোর মধ্যেই কর্মসংস্থান বাড়াতে অনেক পদক্ষেপ নেবার সুযোগ আছে৷
রণতরীতে শীর্ষ সম্মেলনের মধ্য দিয়েই কূটনৈতিক তৎপরতা শেষ হয়ে যাচ্ছে না৷ ভবিষ্যতে ইউরোপের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা করতে ম্যার্কেল একে একে ১২টি ইইউ দেশের শীর্ষ নেতার সঙ্গে মিলিত হবেন৷
সন্ত্রাস দমনে ইউরোপের প্রস্তুতি
১৯৭২ সালে মিউনিখ অলিম্পিকে সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে সাম্প্রতিক কালেও একের পর এক সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছে ইউরোপ৷ ইউরোপের একাধিক দেশে এমন পরিস্থিতি সামলাতে প্রস্তুত বিশেষ সন্ত্রাস-দমন বাহিনী৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Roessler
হামলার শিকার ইউরোপ
প্যারিস, ব্রাসেলস, নিস – ইউরোপের একের পর এক শহরের মানুষ ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছে৷ শোক সামলে নেওয়ার পর বার বার প্রশ্ন উঠেছে, এমন হামলা কি প্রতিরোধ করা যেত? অথবা আরও জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া কি সম্ভব হতো?
ছবি: Reuters/E. Gaillard
জার্মানির ‘জিএসজি ৯’
বন শহরের কাছে জার্মানির বিশেষ কমান্ডো বাহিনী ‘জিএসজি ৯’-এর ঘাঁটি৷ সন্ত্রাস দমনের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এই ইউনিট জার্মানিতে সন্ত্রাসী হামলা ঘটলে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়, যেমনটা সম্প্রতি মিউনিখে দেখা গেছে৷ ১৯৭২ সালে মিউনিখ অলিম্পিকের সময় ইসরায়েলি পণবন্দি নাটকের পর এই বাহিনী গঠন করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Roessler
অস্ট্রিয়ার ‘একো কোবরা’
অস্ট্রিয়ার কেন্দ্রীয় ফেডারেল পুলিশ বাহিনীর এই ইউনিট সন্ত্রাসী হামলা মোকাবিলার জন্য সর্বদা প্রস্তুত৷ জার্মানির মতোই অস্ট্রিয়াও মিউনিখ অলিম্পিকে হামলার পরও নড়েচড়ে বসে৷ ১৯৭৮ সালে প্রথমে ‘জিইকে’ নামের বাহিনী তৈরি হয়৷ ২০০২ সালে তার নাম বদলে রাখা হয় ‘একো কোবরা’৷
ছবি: Getty Images
ফ্রান্সের ‘জিআইজিএন’
ফ্রান্সের জাতীয় পুলিশ বাহিনীর বিশেষ ‘ইন্টারভেনশন ফোর্স’ সন্ত্রাসী হামলা, জিম্মি পরিস্থিতি, জাতীয় হুমকি ইত্যাদির সময় হস্তক্ষেপ করে৷ এই বাহিনী গঠনের পেছনেও কাজ করেছে ১৯৭২ সালে মিউনিখ হামলার ঘটনা৷ ১৯৭৪ সালে ‘জিআইজিএন’ বাহিনী গড়ে তোলা হয়৷
ফ্রান্সের আদলে ইটালিতেও ১৯৭৭ সাল থেকে এক ‘ইন্টারভেনশন ফোর্স’ সক্রিয় রয়েছে৷ সন্ত্রাসী হামলা ঘটলে আকাশপথে দ্রুত মোতায়েন করা যায় এই বিশেষ বাহিনী৷ ভিআইপি-দের সুরক্ষার কাজেও লাগানো হয় এই বাহিনী৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Solaro
নেদারল্যান্ডস-এর ‘ডিএসআই’
২০০৬ সালে জাতীয় পুলিশ বাহিনীর ছত্রছায়ায় ‘ডিএসআই’ নামের এই বিশেষ ‘ইন্টারভেনশন ফোর্স’ গঠন করা হয়৷ সন্ত্রাসবাদ ও চরম হিংসার পরিস্থিতিতে এই বাহিনী দ্রুত হস্তক্ষেপ করতে পারে৷ এর আগে বিভিন্ন বাহিনীর মধ্যে সমন্বয়ের প্রক্রিয়ার দুর্বলতা কাটিয়ে তুলতে এই ইউনিট গঠন করা হয়৷
ছবি: picture alliance/dpa/M. Van Dijl
স্পেনের ‘ইউইআই’
স্পেনে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার জন্য ‘ইউইআই’ নামের ‘ইন্টারভেনশন ফোর্স’ কাজ করছে ১৯৭৮ থেকে৷ সন্ত্রাসবাদ থেকে শুরু করে জিম্মি নাটক – যে কোনো ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি সামলাতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এই ইউনিটকে৷ এই বাহিনী সম্পর্কে প্রকাশ্যে বেশি তথ্য প্রকাশ করা হয় না৷