যুক্তরাষ্ট্রে ফুটবল সম্পর্কে আগ্রহ ও উৎসাহ বাড়ছে৷ কারণ বিশ্বকাপে মার্কিন দলের খেলা ও ফলাফল৷ ২ আগস্ট ম্যান ইউ আর রেয়ালের প্রদর্শনী ম্যাচে দর্শক হয়েছিল এক লাখ৷ এমন সোনার জমিনের ফায়দা তুলতে চায় বার্সা অ্যান্ড কো৷
বিজ্ঞাপন
ক্রিস্টোফার কলম্বাস অ্যামেরিকা আবিষ্কার করেছিলেন, জয় করেননি৷ সেটা করার জন্য ছিল তাঁর ইউরোপীয় সতীর্থরা৷ ঠিক সে'ভাবেই যেন ফুটবল – যাকে অ্যামেরিকানরা বলেন ‘সকার', যা কিনা মেয়েদের খেলা, কেননা পুরুষেরা খেলে অ্যামেরিকান ফুটবল, অর্থাৎ রাগবি – আমাদের আদি ও অকৃত্রিম ফুটবল আজ অ্যামেরিকা জয় করতে চলেছে৷
ফুটবলে অ্যামেরিকা আবিষ্কার আজ অনেকদিনের কথা৷ মার্কিনিদের ফুটবলের নেশা ধরানোর চেষ্টা কি আজকের? পেলে, বেকেনবাওয়ার, লোথার মাথেউস, সকলেই সেই টানে বিগ অ্যাপল-এ গিয়ে খেলে এসেছেন৷ ডেভিড বেকহ্যাম আর লস অ্যাঞ্জেলিস গ্যালাক্সির রোমাঞ্চকর ইতিহাস তো আজ অ্যামেরিকার ছেলেপিলেরাও জানে৷ এবং সেই ছেলেপিলেদের মধ্যে কিছু কিছু নিশ্চয় স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে যে, তারা নিজেরাই ভবিষ্যতের বেকহ্যাম হবে৷
তারকা খেলোয়াড়দের দল-বদল
ইউরোপে এখন গ্রীষ্মকাল৷ ঋতু পরিবর্তনের এ সময়ে ইউরোপীয় ফুটবলে শুরু হয় খেলোয়াড়দের ক্লাব বদল৷ ইউরোপীয় ফুটবলের আলোচিত দল-বদল নিয়েই আজকের ছবিঘর৷
ছবি: Reuters/P. Noble
ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো: রেয়াল মাদ্রিদ থেকে জুভেন্টাস
তার না্মের সাথে জড়িয়ে ছিল ক্লাবটির নাম৷ অর্থাৎ রোনাল্ডো বললেই রেয়ালের নাম মনে পড়ত ভক্তদের৷ কিন্তু এখন থেকে জুভেন্টাসের সঙ্গে তার নাম উচ্চারিত হবে৷ ১০ কোটি ইউরো খরচ করে জুভেন্টাস দলে টেনেছে পর্তুগালের এই তারকাকে৷
ছবি: Reuters/P. Noble
নেইমার: বার্সেলোনা থেকে পিএসজি
২০১৭ সালের আগস্টে বার্সেলোনা থেকে ফরাসি ক্লাব প্যারিস সেন্ট জার্মেইন বা পিএসজিতে যোগ দেন নেইমার৷ এজন্য ক্লাবটিকে গুণতে হয়েছে ২২ কোটি ইউরো৷ বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে দামি তারকা এখন ব্রাজিলিয়ান এই তারকা৷
ছবি: imago/Contrast/O. Behrend
লুইস সুয়ারেজ: লিভারপুল থেকে বার্সেলোনা
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে লিভারপুলের হয়ে যেমন মাঠ মাতিয়েছেন, বিশ্বকাপে উরুগুয়ের হয়েও সেরকমই খেলছিলেন সুয়ারেজ৷ কিন্তু বেশি আলোচনা হয়েছে ইটালির খেলোয়াড় জর্জো কিয়েলিনিকে কামড়ানো নিয়ে৷ পিঠ কামড়ানোর অপরাধে নয়টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে তাঁকে নিষিদ্ধ করে ফিফা৷ তারপরও সুয়ারেজের কদর কমেনি৷ বছরের সর্বোচ্চ ৮১ মিলিয়ন ইউরো, অর্থাৎ ১০৮ দশমিক ১ মিলিয়ন ডলার খরচ করে তাঁকে লিভারপুল থেকে দলে টেনেছে বার্সেলোনা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হামেস রডরিগেস: মোনাকো থেকে রেয়াল মাদ্রিদ
ব্রাজিল বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় চমক হামেস রডরিগেস৷ কলম্বিয়ার এই ফরোয়ার্ড ছয়টি গোল করে হয়েছেন বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা৷ জিতে নিয়েছেন ‘গোল্ডেন বুট’ পুরস্কার৷ এসব সুবাদেই আসে ফ্রান্সের মোনাকো ক্লাব ছেড়ে স্পেনের রেয়াল মাদ্রিদে যাওায়ার সুযোগ৷ ঠিক কত খরচ করে ২২ বছরের এই তরুণকে নিয়েছে তা জানায়নি রেয়াল৷ তবে টাকার অঙ্কটা যে খুব বড় সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
টনি ক্রুস: বায়ার্ন থেকে রেয়াল মাদ্রিদ
জার্মানির নতুন প্রজন্মের অন্যতম সেরা প্রতিভা টনি বা টোনি ক্রুস এবার বায়ার্ন ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ জার্মানির ইতিহাসের সফলতম ক্লাব থেকে স্পেনের সবচেয়ে সফল ক্লাব রেয়াল মাদ্রিদে যাচ্ছেন তিনি৷ ট্র্যান্সফার ফি হিসেবে মাত্র ৩০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করে এমন এক ফুটবলারকে পেয়ে রেয়াল কর্মকর্তারা নিশ্চয়ই খুশি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ডাভিড লুইস: চেলসি থেকে পারি সাঁ জ্যার্মা
ব্রাজিলের ডাভিড লুইসকে এবার ছেড়ে দিয়েছে চেলসি৷ গত মৌসুমে ২৭ বছর বয়সি এই ডিফেন্ডারের পারফরম্যান্সে ধারাবাহিকতার অভাব ছিল সুস্পষ্ট৷ দেশের হয়ে এবারের বিশ্বকাপেও ভালো খেলেননি ডাভিড লুইস৷ তাই ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের পারি সাঁ জ্যার্মা বা পিএসজি ক্লাব তাঁকে ৫০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করে নিতে চাইলে আপত্তি করেনি চেলসি৷
ছবি: Franck Fife/AFP/Getty Images
দিয়েগো কস্তা: অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ থেকে চেলসি
দিয়েগো কস্তা জন্মসূত্রে ব্রাজিলিয়ান হলেও খেলছেন স্পেনের হয়ে৷ স্প্যানিশ লিগ এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগে গত মৌসুমটা দারুণ কেটেছে তাঁর৷ বার্সা, রেয়ালকে হতাশ করে স্প্যানিশ লিগ জিতেছে অ্যাটলেটিকো৷ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে অবশ্য রেয়ালের কাছে হেরে গেছে৷ তবু দিয়েগো কস্তার পারফরম্যান্স সবার নজর কেড়েছে৷ সুবাদে এবার অ্যাটলেটিকো ছেড়ে চেলসিতে নাম লিখিয়েছেন কস্তা৷ তাঁকে পেতে ৩৮ মিলিয়ন ইউরো খরচ করেছে চেলসি৷
ছবি: imago
মারিও মাঞ্জুকিচ: বায়ার্ন থেকে অ্যাটলেটিকো
দিয়েগো কস্তার শূন্যস্থান পূরণ করতে বায়ার্ন মিউনিখ থেকে মারিও মাঞ্জুকিচকে নিয়েছে অ্যাটলেটিকো৷ ক্রোয়েশিয়ার এই ফরোয়ার্ডের জন্য তাদের খরচ হয়েছে ২২ মিলিয়ন ইউরো৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আলেক্সিস সানচেজ: বার্সেলোনা থেকে আর্সেনাল
বিশ্বকাপে চিলির হয়ে চমৎকার খেলার পুরস্কার পেতে আলেক্সিস সানচেজের (লাল জার্সি) বেশি দেরি হয়নি৷ বার্সেলোনার চেয়ে চেলসি হয়ত বড় ক্লাব নয়, তবে নিয়মিত খেলার সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনার কথা ভাবলে সানচেজের এই দলবদলকে ইতিবাচক বলতেই হবে৷ সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, চিলির এই ফরোয়ার্ডের জন্য ৩৭ দশমিক ৮ মিলিয়ন ইউরো খরচ করেছে চেলসি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চিরো ইমোবিলে: টোরিনো থেকে ডর্টমুন্ড
এ মৌসুমে সবচেয়ে বড় অঙ্কের ট্র্যান্সফার ফি-তে বুন্ডেন্স লিগায় যোগ দেয়া খেলোয়াড় চিরো ইমোবিলে৷ ইটালির টোরিনো থেকে তাঁকে নিতে২০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করেছে ডর্টমুন্ড৷ বুন্ডেসলিগার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ট্র্যান্সফার ফি-র রেকর্ডটা এখনো বায়ার্ন মিউনিখের৷ ২০১২ সালে সাবি মার্তিনেসের জন্য ৪০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করেছিল তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নূরি শাহীন: রেয়াল মাদ্রিদ থেকে ডর্টমুন্ড
আবার ডর্টমুন্ডের হলেন নূরি শাহীন৷ বুন্ডেসলিগার এই ক্লাব থেকেই ফেইনুর্দ হয়ে রেয়ালে গিয়েছিলেন শাহীন৷ কিন্তু সেখানে খেলার সুযোগ তেমন একটা পাননি৷ ফেইনুর্দ ধারে খেলতে দিয়েছিল রেয়ালে৷ পরে লিভারপুলে খেলেছেন ধারে, এমনকি ডর্টমুন্ডও ধার হিসেবে নিয়েই খেলিয়েছে তুর্কি এই ফুটবলারকে৷ তবে এবার আর নিজের পুরোনো দলে ধারে খেলতে আসছেন না, ৭ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে তাঁকে রেয়াল থেকে ফিরিয়ে এনেছে ডর্টমুন্ড৷
ছবি: picture-alliance/dpa
গিলিয়ের্মো ওচোয়া: আইয়াচ্চো থেকে মালাগা
বিশ্বকাপে এবার মেক্সিকোর গোল পোস্টের নীচে প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ওচোয়া৷ অনেকের মতে এ আসরের সেরা গোলরক্ষকও তিনি৷ বিশ্বকাপ মাতানো এই গোলরক্ষক এবার অচেনা ক্লাব আইয়াচ্চো থেকে যাচ্ছেন স্পেনের ক্লাব মালাগায়৷ তাঁকে পেয়ে মালাগা খুব খুশি৷ ফ্রি ট্র্যান্সফার, অর্থাৎ বিনে পয়সায় এমন এক ফুটবলারকে পেয়েছে তারা৷ খুশি তো হবেই!
ছবি: Reuters
12 ছবি1 | 12
ঠিক সেদিকেই ইউরোপের বড় ফুটবল ক্লাবগুলোর নজর, এবং সেটা আজ থেকে নয়৷ বার্সেলোনা, লিভারপুল কিংবা আর্সেনাল আজ বহুদিন যাবৎ মার্কিন মুলুকের ‘সামার ক্যাম্প'-এ কোচ পাঠিয়ে থাকে৷ এবার তারা স্বপ্নের দেশ অ্যামেরিকায় স্থায়ি ফুটবল অ্যাকাডেমি খুলতে চলেছে – যার একটা উদ্দেশ্য হলো, নতুন প্রতিভা আবিষ্কার করা, কিন্তু সেই সঙ্গে নিজেদের ফ্যান বেস বাড়াতে পারলে, আমদানি বাড়াতে পারলেই বা অসুবিধা কি?
বাস্কেটবল, বেসবল, মার্কিন ফুটবলের দেশে যে সকার-এর জনপ্রিয়তা ক্রমেই বাড়ছে, তার নানা লক্ষণ দৃশ্যমান৷ টেলিভিশনে এই গ্রীষ্মের বিশ্বকাপ দেখেছেন রেকর্ড-সংখ্যক মার্কিন দর্শক৷ এনবিসি টেলিভিশন কোম্পানি ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের খেলাগুলো সম্প্রচারের অধিকার কিনেছে ২৫ কোটি ডলার মূল্যে৷ আগস্টের ২ তারিখে মিচিগান স্টেডিয়ামে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড আর রেয়াল মাদ্রিদের প্রদর্শনী খেলা দেখার জন্য উপস্থিত ছিলেন প্রায় এক লাখ দশ হাজার দর্শক৷ মেজর লিগ সকার-এর প্রতিটি ম্যাচে আজকাল দর্শক থাকে প্রায় ১৮ হাজার৷
এমন পরিস্থিতিতে বার্সেলোনা যুক্তরাষ্ট্রে তার প্রথম ফুটবল অ্যাকাডেমি খুলছে – যা কিনা সারা বিশ্বে দ্বাদশ বার্সা অ্যাকাডেমি৷ গত মে মাসে ছিল ট্রাই-আউট – যাতে অংশগ্রহণ করেছিল ছয় শো'র বেশি ছেলেমেয়ে – ১৮৪টি সিটের একটি পাবার আশায়৷ সেই ছেলেমেয়েদের সকলে যে যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা, এমন নয় – কেউ কেউ এসেছে হাইতি, ভেনেজুয়েলা অথবা ক্যানাডা থেকে৷ সকলেরই আশা: দক্ষিণ ফ্লোরিডার ফোর্ট লডারডেল-এ অবস্থিত এফসিবি এস্কোলা ফ্লোরিডায় প্রবেশাধিকার পেলে হয়তে একদিন খোদ লা মাসিয়া থেকে ডাক আসতে পারে, যেমন এসেছিল ১৩ বছর বয়সি এক আর্জেন্টাইন কিশোরের৷