1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ‘আপত্তি’ সত্ত্বেও আদিলুরের কারাদণ্ড

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩

মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’-এর সম্পাদক আদিলুর রহমান খান শুভ্র এবং পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানকে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের ৫৭ ধারার মামলায় দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত৷

প্রিজন ভ্যানে আদিলুর রহমান খান
প্রিজন ভ্যানে তোলার সময় আদিলুর বলেন, ‘‘আমি ন্যায় বিচার পাইনি৷ এ রায়ের বিরুদ্ধে আমি উচ্চ আদালতে যাবো৷’’ছবি: AFP

এ মামলায় অধিকারের পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিনকেও দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

এ রায়ের আগে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রস্তাবে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়৷ সেই বিষয়ে
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ঢালাও কোনো মন্তব্য করার সুযোগ নেই৷ পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক ভালো৷” কিন্তু আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক ও মানবাধিকার কর্মী নূর খান বলেছেন, ‘‘মানবাধিকার পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো হয়েছে সেটা বলার কোনো সুযোগ নেই৷ গুম বন্ধ হয়নি৷ বিরুদ্ধ মতকে দমন করা হচ্ছে৷”

আদিলুর ও এলান কারাগারে

সরকার ‘অধিকার’-এর নিবন্ধন আগেই বাতিল করেছে৷ গত বছরের জুন মাসে অধিকার-এর এনজিও ব্যুরোর নিবন্ধন বাতিল করা হয়৷ আর বৃহস্পতিবার ২০১৩  সালের ৪ মে শাপলা চত্তরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে অভিযানে নিহতের সংখ্যা প্রকাশ নিয়ে দায়ের করা মামলায় আদিলুর ও এলানের দুই বছর করে কারাদণ্ড দেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াত

রায়ে কারাদণ্ডের পাশাপাশি দুইজনকেই ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং অনাদায়ে আরো এক মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়৷ রায়ের সময় দণ্ডপ্রাপ্তরা আদালতে হাজির ছিলেন৷ রায়ের পর তাদের কারাগারে পাঠানো হয়৷

আদিলুর ও এলানের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ১০ আগস্ট গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন ডিবির তখনকার এসআই আশরাফুল ইসলাম৷ তদন্ত শেষে ওই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর আদিলুর ও এলানের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়৷ অভিযোগপত্রে বলা হয়, আদিলুর ও এলান শাপলা চত্বরে ৬১ জনের মৃত্যুর বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রতিবেদন তৈরি ও প্রচার করে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি করে আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নের অপচেষ্টা চালান, যা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, সরকার ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি দেশে-বিদেশে চরমভাবে ক্ষুন্ন করে৷

বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণার পর কারাগারে নেয়ার জন্য প্রিজন ভ্যানে তোলার সময় আদিলুর বলেন, ‘‘আমি ন্যায় বিচার পাইনি৷ এ রায়ের বিরুদ্ধে আমি উচ্চ আদালতে যাবো৷’’

তার আইনজীবী মোহাম্মদ রুহুল আমিন ভূঁইয়া বলেন, ‘‘এই আদালত থেকে ন্যায় বিচার পাননি আদিলুর ও এলান৷ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে৷” অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আাইনজীবী নজরুল ইসলাম বলেছেন, "আসামিদের সাজা বাড়ানোর জন্য উচ্চ আদালতে আবেদন করা হবে৷” ওই দুইজনকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৫৭ ধারায় দণ্ড দিয়েছেন আদালত৷

মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের উদ্বেগ
ইউরোপীয় পার্লামেন্ট এক যৌথ প্রস্তাবে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে৷ বাংলাদেশের শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা অব্যাহত রাখা হবে কিনা সেটি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানানো হয়েছে৷

প্রস্তাবে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার চর্চার বিষয়ে আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুসরণের আহ্বান জানানো হয়৷ একইসঙ্গে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা, মানবাধিকারকর্মী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের কাজের নিরাপদ ও অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয়৷

স্থানীয় সময় বুধবার রাতে ফ্রান্সের স্ট্রাসবুর্গে প্রস্তাবটি নিয়ে পার্লামেন্ট অধিবেশনের বিতর্কে ছয় সদস্য অংশ নেন৷ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মধ্য ডানপন্থি, সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট, বামপন্থিসহ সাতটি গ্রুপ এই প্রস্তাব এনেছে৷ 

‘শুধু ‘অধিকার' নয়, আরো অনেক মানবাধিকার সংগঠন চাপের মুখে আছে’

This browser does not support the audio element.

প্রস্তাবে বাংলাদেশে বিরোধী নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার ও বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে বল প্রয়োগের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়৷ ২০২৪ সালে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতেও সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়৷
প্রস্তাবে বলা হয়, বিচারবহির্ভূত হত্যা, বলপূর্বক নিখোঁজ বা গুম, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শ্রমিকদের অধিকার খর্ব করাসহ বাংলাদেশে নানাভাবে মানবাধিকার পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে৷

প্রস্তাবে মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার-’এর প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অবিলম্বে নিঃশর্তভাবে প্রত্যাহার, আদিলুর রহমান খান ও এ এস এম নাসির উদ্দিনের মুক্তি এবং সংগঠনটির নিবন্ধন ফের চালু করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে৷ নাগরিক সমাজের সংগঠনগুলো যেন অনুমোদিত বিদেশি অনুদান কাজে লাগাতে পারে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতেও সরকারকে অনুরোধ করা হয়৷

অধিকারের ঘটনা মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি হিসেবে উল্লেখ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে বাংলাদেশের পাওয়া শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা অব্যাহত থাকা উচিত কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বলেও প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়৷ 

বলপূর্বক নিখোঁজ বা গুমের অভিযোগ তদন্তে একটি বিশেষ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘের সঙ্গে সহযোগিতা করার জন্য প্রস্তাবে বাংলাদেশ সরকারকে উৎসাহ দেয়া হয়৷ পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের আদালতের শুনানিতে অংশগ্রহণের অনুমতি দেয়ার ওপরও জোর দেয়া হয়েছে৷ প্রস্তাবে আবারো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্য রেখে সাইবার নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের কথাও বলা হয়েছে

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা তাদের প্রস্তাবে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে তুলে ধরতে ইউরোপীয় এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিস, ইইউ প্রতিনিধি ও বাংলাদেশে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর দূতাবাসকে অনুরোধ জানিয়েছেন৷

বাংলাদেশের বর্তমান মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে
মানবাধিকার কর্মী নূর খান বলেন, ‘‘দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বলার সুযোগ নেই৷ মানুষ নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে৷ নিপীড়ন ও গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটছে৷ গুম বন্ধ হয়নি৷ অনেক ক্ষেত্রে নির্যাতনের ঘটনা এমনভাবে ঘটছে যে তার তথ্য পর্যন্ত বাইরে যেতে পারে না৷ নির্বাচন সুষ্ঠু ও অংশগ্রণমূলক হওয়ার কোনো পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি৷”

তার কথা, ‘‘আদিলুর রহমান খানকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৫৭ ধারায় দণ্ড দেয়া হয়েছে৷ এই ধারাটি মানবাধিকারবিরোধী ধারা৷ আমরা মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক সবাই এই ধারার বিরোধিতা করেছি৷ সেই ধারায়ই তাকে দণ্ড দেয়া হয়েছে৷ শুধু ‘অধিকার' নয়, আরো অনেক মানবাধিকার সংগঠন চাপের মুখে আছে৷ আইন ও সালিশ কেন্দ্রসহ অনেক মানবাধিকার সংগঠন এবং এনজিও তাদের ফান্ড রিলিজ করতে পারছে না৷ এই কারণে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের কাজ ও কর্ম এলাকা কমিয়ে ফেলতে হয়েছে৷”

‘এমন কিছু ঘটেনি যে, মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি ঘটবে’

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন, ‘‘সরকাররের উচিত হবে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট প্রস্তাবে যেসব উদ্বেগের কথা বলা হয়েছে তা অনুধাবন করা ৷ নির্বাচনের আগেই মানবাধিকার পরিস্থিতিসহ সার্বিক অবস্থার উন্নতি না ঘটলে গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে, দেশবাসী ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷”

এদিকে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের উদ্বেগের ব্যাপারে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, "ওইরকম হোলসেল কথা বলার অবকাশ নেই৷ অনেক কিছু বুঝতে হবে৷ ইতিমধ্যে এমন কিছু তো ঘটেনি যে, মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি ঘটবে৷”

তার কথা, "গুম বা এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্সের ব্যাপারে আমাদের হিসাব আছে৷ কতজনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না৷ কতজনের বিরুদ্ধে মামলা আছে৷ কিছু কিছু যে হয় না সেটা বলা ভুল হবে৷ যেগুলো হচ্ছে, সেগুলোর ব্যাপারে আমাদের দিক থেকে আমরা মামলা নিয়েছি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নোটিস করেছি৷ তারা তদন্ত করে প্রতিবেদন দেবে৷ আমরাও কিছু কিছু তদন্ত করেছি৷”
বিরোধী মত ও বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের দমন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘রাজনৈতিক দল তো একে অপরের সঙ্গে সব সময় ঝগড়াঝাটি করেই৷ এটা আমরা সবসময়ই দেখি৷ নির্বাচনের আগে সেটা বেড়ে যায়৷ তবে সেটা যেন এমন পর্যায়ে না যায় যাতে আমাদের দুর্নাম হয়৷ আমরা তো সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই৷ আমরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলছি৷ চিঠি দিয়েছি৷ একটা গাইডলাইন তৈরি করছি যাতে নির্বাচনের আগে ও পরে হানাহানি না হয়৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ