ইউরোপীয় বর্জ্যের ব্যবসা খুবই লাভজনক এবং কম ঝুঁকিপূর্ণ৷ ব্যবসায়ীরা অবৈধ উপায়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ইউরোপের বর্জ্য পাচার করেন৷ এতে পরিবেশ, অর্থনীতি ও স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়৷
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি প্রকাশিত জাতিসংঘের প্রতিবেদন বলছে, একদল অসাধু ব্যবসায়ী বৈধ চ্যানেলের ফাঁকগুলোকে কাজে লাগিয়ে ইউরোপ থেকে বর্জ্য মালয়শিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়াসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে পাচার করছেন৷
সহজে মুনাফা করা যায় বলে এবং আইনের কড়া প্রয়োগ না থাকা বা ধরা পড়লেও খুব অল্প জরিমানায় ছাড় পেয়ে যাওয়ায় তারা এই ব্যবসায় ঝুঁকছেন বলে জানাচ্ছে প্রতিবেদনটি৷
ইউরোপীয় কমিশনের হিসেবে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে রপ্তানি করা ১৫ থেকে ৩০ ভাগ বর্জ্য অবৈধ উপায়ে যাচ্ছে৷ এতে কয়েকশ' কোটি ইউরো মুনাফা করছেন ব্যবসায়ীরা৷
জাতিসংঘ বলছে, ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে আসিয়ান দেশগুলো ১০ কোটি টন ধাতু, কাগজ ও প্লাস্টিক বর্জ্য আমদানি করেছে৷ এর দাম পাঁচ হাজার কোটি ডলার৷
বাড়ছে ই-বর্জ্য, সতর্ক করলো জাতিসংঘ
ইলেকট্রনিক্স বর্জ্যের পরিমাণ ক্রমশ বাড়ছে। খুব সামান্য বর্জ্যই পুর্নব্যবহার করা হচ্ছে। এর ফলে ভয়াবহ ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের।
ছবি: Thomas Imo/dpa/picture alliance
জাতিসংঘের রিপোর্ট
জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন এবং গবেষণা সংস্থা ইউএআইটিএআর যৌথভাবে এই রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, ই-বর্জ্য থেকে এক ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসছে। খুব সামান্য পরিমাণ বর্জ্য পুনর্ব্যবহার করা হচ্ছে।
ছবি: Daniel Schäfer/dpa/picture alliance
বর্জ্যের পরিমাণ
২০২২ সালে গোটা বিশ্বে ৬২ মিলিয়ন অর্থাৎ, ছয় কোটি ২০ লাখ টন ই-বর্জ্য তৈরি হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে এই বর্জ্যের পরিমাণ আট কোটি টনে পৌঁছাতে পারে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
ছবি: Gioia Forster/dpa/picture alliance
মোবাইল-কম্পিউটার
সবচেয়ে বেশি ই-বর্জ্য তৈরি হচ্ছে ফেলে দেয়া মোবাইল, কম্পিউটার, টেলিভিশন সেটের মতো নিত্য ব্যবহার্য জিনিস থেকে। যার মধ্যে পারদ ব্যবহার করা হয়। প্রকৃতির জন্য এই পারদ অত্যন্ত বিপজ্জনক।
ছবি: DW
প্লাস্টিক এবং পারদ
জাতিসংঘ জানাচ্ছে, প্রতি বছর ৪৫ হাজার টন প্লাস্টিক পাওয়া যায় এই ই-বর্জ্য থেকে। যা পুনর্ব্যবহার করা যায় না। অন্যদিকে পারদের পরিমাণ ৫৮ টন। এই পারদ মিশে যাচ্ছে মাটিতে। যা থেকে ভয়াবহ বিপর্যয় হতে পারে।
ছবি: Desmond Tiro/DW
মাত্র ২২ শতাংশের পুনর্ব্যবহার
প্রতি বছর মোট যা ই-বর্জ্য তৈরি হচ্ছে, তার মাত্র ২২ শতাংশ পুনর্ব্যবহার করা হচ্ছে। বাকিটা হয় পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে অথবা খোলা জমিতে ফেলে দেয়া হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে ই-বর্জ্যের পাহাড়।
ছবি: DW
ব্যক্তির ই-বর্জ্য
আধুনিক উন্নত দেশে একজন ব্যক্তি বছরে সাত দশমিক আট কিলোগ্রাম ই-বর্জ্য তৈরি করছেন বলে রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে।
ছবি: Hanan Zaffar/DW
বর্জ্য যাচ্ছে অনুন্নত অথবা উন্নতশীল দেশে
সব চেয়ে বেশি ই-বর্জ্য তৈরি করছে উন্নত দেশ। কিন্তু বর্জ্য জাহাজে করে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে উন্নয়নশীল দেশে। সেখানে সামান্য পরিমাণ বর্জ্য পুনর্ব্যবহার করা হচ্ছে। বাকি বর্জ্য অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে জমানো অথবা পোড়ানো হচ্ছে। যারা এই কাজের সঙ্গে যুক্ত, তাদের শারীরিক সমস্যা দেখা যাচ্ছে।
ছবি: Thomas Imo/dpa/picture alliance
ব্যাটারি, হিট পাম্প, সোলার প্যানেল
বিকল্প শক্তির জন্য এখন ব্যাটারির পরিমাণ বেড়েছে। তৈরি হচ্ছে সোলার প্যানেল, যেখান থেকে সৌর বিদ্যুৎ তৈরি করা হচ্ছে। আছে হিট পাম্প। কিন্তু এই ধরনের জিনিস থেকে যে ই-বর্জ্য তৈরি হচ্ছে এবং হবে তা ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।
ছবি: Axel Heimken/dpa/picture alliance
সরকার এবং বাণিজ্যিক সংস্থার দায়িত্ব
সরকার যদি কড়া পদক্ষেপ না করে এবং বাণিজ্যিক সংস্থাগুলি যদি যথেষ্ট দায়িত্বশীল না হয়, তা হলে ই-বর্জ্যের পরিমাণ কমানো সম্ভব হবে না। বরং উত্তরোত্তর তা বাড়তে থাকবে। এমনই অভিমত বিশেষজ্ঞদের।
ছবি: Gioia Forster/dpa/picture alliance
9 ছবি1 | 9
২০১৮ সালে চীন বর্জ্য আমদানি রোধে উদ্যোগ নেয়৷ ফলে বর্জ্যের বড় বাজারটি সরে যায় দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দিকে৷ ইন্দোনেশিয়া সেক্ষেত্রে বিকল্প প্রধান গন্তব্য হিসেবে তৈরি হতে থাকে৷
তবে অবৈধ এই ব্যবসা বন্ধ করা একেবারে অসম্ভব নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা৷ ইটালির ক্যাটোলিকা ডেল সাক্রো কুওরে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সেরেনা ফাভারিন বলেন, ‘‘সব দেশে একইরকমের আইনের প্রয়োগের জন্য আন্তঃরাষ্ট্রীয় কাঠামোগুলো জোরালো করা দরকার৷ একই রকমের নিয়ম কানুন থাকলে যোগাযোগ করা যেতে পারে৷''