এক জরিপ বলছে, আগামী মে মাসে হতে যাওয়া ইউরোপীয় সংসদের নির্বাচনে কট্টর ডানপন্থি দলগুলোর আসন সংখ্যা আগের চেয়ে দ্বিগুণ হতে যাচ্ছে৷ বিশেষ করে ফ্রান্স, ইটালি ও পোল্যান্ডের এ ঘরানার দলগুলো এ দৌঁড়ে এগিয়ে রয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
আগামী মে মাসের ২৩ থেকে ২৬ তারিখ পর্যন্ত ৭০৫ আসন বিশিষ্ট ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য নির্বাচন করা হবে৷ বর্তমান সংসদে ইউরোপ অফ নেশন্স অ্যান্ড ফ্রিডম বা ইএনএফ নামক অতিডানপন্থি দলগুলোর জোটের প্রতিনিধির সংখ্যা ৩৭৷
জার্মানির বিল্ড পত্রিকার ইউরোপের ছয়টি দেশে ৯ হাজার লোককে নিয়ে একটি জরিপ করেছে৷ সেখানে দেখা গেছে, তিনটি দেশেই ইউরোপের বর্তমান নীতির সমালোচক ডানপন্থিরা এগিয়ে রয়েছে৷
জরিপ অনুযায়ী, ফ্রান্সে মারিন ল্য পেনের ন্যাশনাল .ব্যালি ২৩ ভাগ ভোট পাবে৷ ইটালিতে মাত্তেও সালভিনির লীগ পাবে ৩৩ শতাংশ ভোট৷ আর ইএনএফ-এর সদস্য না হলেও পোল্যান্ডে ইয়ারোশ্লফ কাচিনস্কির দল ল অ্যান্ড জাস্টিস পাবে ৪২ শতাংশ ভোট৷
ইউরোপের কয়েকটি দেশে জাতীয় নির্বাচনে সম্প্রতি উগ্র ডানপন্থি বা ইউরো নীতির সমালোচক দলগুলো রক্ষণশীল ও বামঘেঁষা দলগুলোকে পেছনে ফেলেছে৷ জরিপ বলছে, রক্ষণশীল ইউরোপীয়ান পিপলস পার্টি (ইপিপি) ১৭৪টি আসন পাবে, যা বর্তমান মেয়াদের চেয়ে ৪৩টি আসন কম৷ সোশ্যালিস্ট ও ডেমোক্রেটদের প্রগতিশীল জোট (এসঅ্যান্ডপি) হারাবে ৪৫টি আসন৷ এখন তাদের আসন সংখ্যা ১৮৬টি৷
লিবারেল ও ডেমোক্রেটদের জোট এএলডিই-ও আরো ৩৩টি আসন হারিয়ে ১০১ আসনে নেমে যাবে৷ আর ইউরোপীয় সবুজ জোট ইএফএ ৫২ আসন থেকে নেমে ৪৪-এ এসে ঠেকবে৷
ইটালি, পোল্যান্ড ও ফ্রান্স ছাড়া জরিপের আওতাভুক্ত অন্য দেশগুলো হলো জার্মানি, অস্ট্রিয়া ও স্পেন৷
জার্মানিতে আঙ্গেলা ম্যার্কেলের ক্রিস্টিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ) ও তাদের বাভেরিয়ান সহযোগী ক্রিস্টিয়ান সোশ্যাল ইউনিয়ন (সিএসইউ)'র জোট ২৯ শতাংশ ভোট নিয়ে সবচেয়ে এগিয়ে৷ সামাজিক গণতন্ত্রী পার্টি ও সবুজ দল যথাক্রমে ১৬ ও ১৫ ভাগ এবং বামপন্থিরা ৯ ভাগ ভোট পাবে বলে আশা করছেন জরিপে অংশ নেয়া ইউরোপবাসীরা৷
উগ্র ডানপন্থি দল অলটারনেটিভ ফর ডয়েচল্যান্ড (এএফডি) ইএনএফ-এর সদস্য না হলেও ১২ ভাগ ভোট পাবে বলে ধারণা করছে এই জরিপ৷
কীভাবে বড় হলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন
১৯৫৭ সালে পশ্চিম ইউরোপের ছয় দেশ নিয়ে শুরু হয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ এরপর থেকে এর পরিসর বেড়ে এখন ২৮টি দেশ এর সদস্য৷ বিগত বছরগুলোতে এই জোটের পরিসর কীভাবে পরিবর্তিত হলো তা থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Diezins
১৯৫৭: ছয় দেশের নতুন ইউরোপ
রোম চুক্তি সই করার মধ্য দিয়ে ১৯৫৭ সালের ২৫ মার্চ জোট বাধে জার্মানি, ফ্রান্স, ইটালি, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস ও লুক্সেমবুর্গ৷ সমন্বিতভাবে অভ্যন্তরীণ ও আন্তঃদেশীয় বাণিজ্যে সুবিধা নেয়াই ছিল ইউরোপীয়ান ইকোনোমিক কমিউনিটি বা ইইসি নামের এই জোটের লক্ষ্য৷ ইইসি ও অন্য জোটগুলো মিলে কয়লা, ইস্পাত ও পরমাণু সহযোগিতায় একসঙ্গে কাজ শুরু করলে এর নাম হয় ইউরোপীয়ান কমিউনিটিস বা ইসি৷
ছবি: picture-alliance/AP Images
১৯৭৩: ব্রিটেন, আয়ারল্যান্ড ও ডেনমার্ক
যুক্তরাজ্য শুরুতে গররাজি থাকলেও ষাট এর দশকে এসে যোগ দেয়৷ ফ্রেঞ্চদের বিরোধিতার কারণে প্রথম দু’বার তাদের যোগ দেয়ার প্রচেষ্টা সফল হয়নি৷ পরে অবশ্য প্যারিস তাদের আপত্তি তুলে নেয় এবং আয়ারল্যান্ড ও ডেনমার্কের সঙ্গে ১৯৭৩ সালে ইসি-তে যোগ দেয় যুক্তরাজ্য৷ তবে সেজন্য ১৯৭৫ সালে নিজ দেশে একটি গণভোটেরও আয়োজন করতে হয় ব্রিটিশদের, যেখানে সিংহভাগ মানুষ এর পক্ষে ভোট দেয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Lipchitz
১৯৮১: গ্রিস
ছয় বছর চেষ্টার পর ১৯৮১ সালে দশম সদস্য হিসেবে ইসি-তে যোগ দেয় গ্রিস৷ ১৯৭৪ সালে ভূমধ্যসাগরের দেশটিতে সামরিক স্বৈরশাসনের পতন ও গণতন্ত্রের পুনর্বহালের সময় চলমান টানাপোড়েন জোটে যোগ দেয়ার বিষয়টিকে বাধাগ্রস্ত করে৷ এমনকি এই অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল দেশটির জোটভুক্ত হওয়া নিয়ে মতভিন্নতা ছিল অন্য দেশগুলোর মধ্যে৷
ছবি: Getty Images/C. Furlong
১৯৮৬: স্পেন ও পর্তুগাল
পাঁচ বছর পর জোটভুক্ত হয় স্পেন ও পর্তুগাল৷ গ্রিসের মতো তারাও ছিল নতুন গণতন্ত্রের দেশ৷ স্পেনের স্বৈরশাসক ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কো মারা যান ১৯৭৫ সালে৷ সে বছর পর্তুগালেও স্বৈরশাসক সরকারের পতনের পর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়৷
ছবি: picture-alliance/G. Silva
১৯৯৫: অস্ট্রিয়া, সুইডেন ও ফিনল্যান্ড
ইসি আজকের দিনের ইউরোপীয় ইউনিয়নে পরিণত হয় ১৯৯২ সালে মাস্ট্রিক্ট চুক্তি অনুযায়ী৷ ১৯৯৫ সালে নতুন রূপের এই জোটে যোগ দেয় অস্ট্রিয়া, সুইডেন ও ফিনল্যান্ড৷ শীতল যুদ্ধের সময় এই তিন দেশই নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে৷ ফলে নর্থ অ্যাটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন বা ন্যাটো জোটভুক্ত হয়নি তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/L. Bry
২০০৪: পূর্ব ইউরোপের দশ দেশ
২০০৪ সালের ১ মে ইইউ-তে সবচেয়ে বড় সম্প্রসারণের ঘটনা ঘটে৷ চেক রিপাবলিক, এস্তোনিয়া, সাইপ্রাস, লাটভিয়া, লিথুনিয়া, হাঙ্গেরি, মাল্টা, পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া ও স্লোভেনিয়া যুক্ত হয়৷ এই দেশগুলোর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অগ্রগতির জন্য এটি একটি বিরাট উদ্যোগ ছিল৷ দুই দশক আগেও এই দেশগুলোতে কমিউনিজম ছিল৷ সেখান থেকে বেরিয়ে এসে গণতন্ত্র ও পুঁজিবাদি রাষ্ট্র হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখেছে এই উদ্যোগ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
২০০৭: রোমানিয়া ও বুলগেরিয়া
২০০৪ সালেই রোমানিয়া ও বুলগেরিয়া জোটভুক্ত হতে চেয়েছিল৷ কিন্তু জোট থেকে দেশ দু’টির বিচার বিভাগ ও রাজনীতিতে যে সংস্কারের শর্ত দেয়া হয়েছিল, তা পূর্ণ করতে দেরি হওয়ায় তাদের জোটভুক্তির প্রক্রিয়াও দেরি হয়৷ এই ব্লকের সবচেয়ে গরিব ও দুর্নীতিপরায়ণ দেশ এরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V. Donev
২০১৩: ক্রোয়েশিয়া
সবশেষ জোটভুক্ত দেশ ক্রোয়েশিয়া৷ স্লোভেনিয়ার পর রক্তক্ষয় করে যুগোস্লাভিয়া থেকে বেরিয়ে আসা দ্বিতীয় দেশ হিসেবে ইইউ-তে যোগ দেয় তারা৷ যুগোস্লাভিয়া থেকে বিচ্ছেদ হওয়া আরো দু’টি দেশ মন্টেনেগ্রো ও সার্বিয়া ২০১২ ও ২০১৪ সাল থেকে জোটে যোগ দেবার চেষ্টা করে যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/D. Puklavec
ভবিষ্যত: মেসিডোনিয়া ও আলবেনিয়া
২০১৮ সালের জুনে ইইউ সিদ্ধান্ত নেয় যে, আরো দু’টি বলকান দেশ, মেসিডোনিয়া ও আলবেনিয়াকে যুক্ত করার বিষয়ে কথাবার্তা শুরু করা যেতে পারে৷ তবে বসনিয়া-হ্যারৎসেগোভিনা ও কসভোর মতো অন্য যুগোস্লাভ দেশগুলোর বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷