1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইউরোপীয় সাংসদদের হুঁশিয়ারি

১৬ নভেম্বর ২০১৮

একাদশতম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা৷ তবে তাঁদের উদ্বেগ এবং হুঁশিয়ারিকে পরোয়া করে না বলে জানিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ৷

ছবি: picture-alliance/Winfried Rothermel

ইউরোপীয় পার্লামেন্টে অস্ট্রিয়ার রাজনীতিক জোসেফ ভাইদেনহোলজার বলেন, আসন্ন  জাতীয় নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য অনেক দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ৷ এই নির্বাচনই শেষ সুযোগ, যেখানে নির্ধারিত হবে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ধারা ও আইনের শাসন অব্যাহত থাকবে, নাকি পরিস্থিতি অরাজকতা আর বিশৃঙ্খলার দিকে ধাবিত হবে৷’’

গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না হলে বাংলাদেশে শুল্ক ও বানিজ্য সুবিধা বন্ধ করে দেয়া হবে– ইউরোপীয় পার্লামেন্টের কোনো কোনো সদস্যের বক্তব্যে এমন হুঁশিয়ারি ছিল বলেও  জানা গেছে৷

এ প্রসঙ্গে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র মাহাবুব-উল-আলম হানিফ ডয়চে ভেলেকে বলেন,‘‘এসব হুমকিতে আমরা ভয় পাই না৷ বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে তারা কথা বলেন, অথচ মিয়ানমার এত রোহিঙ্গাকে নির্যাতন করল, আমরা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তা দেখেছি, সেটা নিয়ে তারা কোনো হুমকি দিচ্ছে না৷ তারা মনে করলে আমাদের যে বাণিজ্য-সুবিধা দেয়, সেটা বন্ধ করে দিক৷ অ্যামেরিকা তো জিএসপি বন্ধ করে দিয়েছে, তাতে কী হয়েছে? বরং আমাদের গার্মেন্টস সেক্টর আরো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে৷ আসলে তারা আমাদের যে সুবিধা দেয়, সেটা তাদের স্বার্থেই দেয়৷ কারণ, আমাদের চেয়ে কম দামে আর কোনো দেশ তাদের পোশাক দিতে পারে না৷ বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশ৷ এখন বিদেশিদের হুমকি-ধামকি বা চোখ রাঙানির দিন হয়তোবা শেষ৷’’

এসব হুমকিকে আমরা ভয় পাই না: হানিফ

This browser does not support the audio element.

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্যের মন্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন,‘‘প্রয়োজন হলে তারা পর্যবেক্ষক পাঠাক৷ তাই বলে এখনই নির্বাচন নিয়ে কিছু বলার মতো সময় আসেনি৷ সব দলই তো নির্বাচনে আছে৷ সুন্দরভাবে রাজনৈতিক কার্যক্রম চলছে৷ তাহলে এই সময় তাদের এই হুমকির মানে কী? নির্বাচন শেষেও তারা বলতে পারত৷ আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, দেশে গণতন্ত্র বজায় থাকবে৷ আগামী নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণে একটা ভালো নির্বাচনই হবে৷’’

বৃহস্পতিবার ফ্রান্সের স্ট্রাসবুর্গে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিদ্যমান বাণিজ্য সুবিধা বহাল রাখতে চাইলে বাংলাদেশকে অবশ্যই মানবাধিকার ও অন্যান্য ইস্যুতে তার অঙ্গীকারগুলো পূরণ করতে হবে৷ শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের তাগিদও দিয়েছেন তারা৷ বলেছেন, ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে যে ধরনের সহিংসতা হয়েছিল, তা তারা আর দেখতে চান না৷ প্রখ্যাত আলোকচিত্রী শহীদুল আলমের বন্দিদশা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে তাদের৷

অর্থনৈতিক উন্নয়ন আর মানবাধিকার এক জিনিস নয়: ড. রহমান

This browser does not support the audio element.

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিদেশিরা না বললেও আমরা যারা দেশে থাকি, তারা বুঝতে পারি, মানবাধিকার পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হচ্ছে না, বরং খারাপের দিকে যাচ্ছে৷ বাংলাদেশের সরকার মনে করে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলে মানবাধিকার পরিস্থিতিরও উন্নতি হবে৷ আসলে এই ভাবনা ঠিক নয়৷ অর্থনৈতিক উন্নয়ন আর মানবাধিকার এক জিনিস নয়৷ দুটোকে একইভাবে সামনের দিকে না নিতে পারলে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হবে না৷ আর গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের যে কথা তারা বলেছে, সেটা তো দেশের মানুষের দাবি৷ সবাই চান অংশগ্রহণমূলক নির্বাচক হোক৷ এখন পর্যন্ত আমরা যা দেখছি তাতে সব দলের অংশগ্রহণ এবার আছে৷ সেটা আরো ভালোভাবে নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনকে সবার জন্য সমান একটা অবস্থান তৈরি করতে হবে৷’’

বর্তমানে বাংলাদেশ ইউরোপের বাজারে শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধায় পণ্য রপ্তানির সুযোগ পায়৷ আলোচনা পর্বে পার্লামেন্ট সদস্য (এমইপি) সাজ্জাদ করিম বলেন, ‘‘ইইউ অব্যাহতভাবে বাংলাদেশকে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে তাগিদ দিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু কোনো ফল আসছে না৷ ইউরোপে বাণিজ্য সুবিধা বাতিল করার বিষয়ে কম্বোডিয়া ও মিয়ানমারের ক্ষেত্রে কাজ শুরু হয়েছে৷ এ তালিকায় পরবর্তী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের নাম আসতে পারে৷’’ বিতর্কে অংশ নিয়ে অষ্ট্রিয়ার রাজনীতিক জোসেফ ভাইডেনহোলজার বলেন, ‘‘আগামী নির্বাচনে হয়ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অংশ নিতে পারবেন না৷ বিরোধীরা অভিযোগ করেছে, তাঁকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রনোদিতভাবে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে৷’’ পার্লামেন্টে তুমুল বিতর্ক শেষে ভোটাভুটির মাধ্যমে এ সব বিষয়ে একটা খসড়া প্রস্তাবও গৃহীত হয়েছে৷

আলোচনায় অংশ নেওয়া এমপিদের প্রায় সবাই আলোকচিত্রী শহীদুল আলমের বন্দি দশা, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিভিন্ন ধারার অপব্যবহার, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম-খুন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বাকবাধীনতা সংকোচনসহ সার্বিক পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন৷ তাঁরা পরিস্থিতির উন্নয়নে বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য বাণিজ্য সুবিধা কাটছাঁটের প্রস্তাব করেছেন৷ অনেকে আবার পোশাকশিল্পে নজরদারিতে অ্যাকর্ডকে কাজ চালিয়ে যাওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন৷ রোহিঙ্গাদের এখনই ফেরত পাঠিয়ে তাঁদের বিপদের মুখে ঠেলে না দিতেও বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এই এমপিরা৷

এটা ইউরোপীয় পার্লামেন্ট না, এটা আমাদেরও কনসার্ন: এম হাফিজ উদ্দিন

This browser does not support the audio element.

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যদের এই হুঁশিয়ারিকে বাংলাদেশের কিভাবে দেখা উচিত? এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও টিআইবির বোর্ড অব ট্রাষ্টি এম হাফিজ উদ্দিন খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দেখেন, এটা ইউরোপীয় পার্লামেন্ট না, এটা আমাদেরও কনসার্ন৷ এখানে নিরপক্ষে ও সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হবে কিনা সেটা আমরা চিন্তা করছি৷ সরকারের উচিত হবে এই হুঁশিয়ারিকে আমলে নিয়ে সব দলের অংশগ্রহণে একটা ভালো নির্বাচন করা৷ তা না হলে কিন্তু সমস্যা হতে পারে৷ শুধু বিদেশিদের বিষয় না, দেশের মধ্যেও অনেক রকম সমস্যা হতে পারে৷ দেখেন, এখানে মানবাধিকার পরিস্থিতি খুবই খারাপ৷’’

বৃহস্পতিবারের আলোচনা শেষে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ১৫ দফা প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে৷ ওই প্রস্তাবে বাংলাদেশকে ইউনিভার্সেল পিরিয়ডিক রিভিউ (ইউপিআর)-এর সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন, মারুফ জামান ও মীর আহমেদ বিন কাশেমসহ অন্য ব্যক্তিদের গুম হওয়ার অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে৷ আলোকচিত্রী শহীদুল আলমকে অবিলম্বে মুক্তি ও তাঁর নামে মামলা প্রত্যাহারেরও জোরালো তাগিদ রয়েছে প্রস্তাবে৷ উল্লেখ্য, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনে করা মামলায় শহীদুল আলম বৃহস্পতিবারই জামিন পেয়েছেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ