ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্টসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদের জন্য প্রার্থী বাছাইয়ের প্রচেষ্টা আপাতত চলতি মাসের শেষ পর্যন্ত মুলতবি রাখা হলো৷ বিষয়টি নিয়ে জার্মানি ও ফ্রান্সের মধ্যে সংঘাত দেখা দিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
প্রাক্তন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার একবার প্রশ্ন তুলেছিলেন, ইউরোপের সঙ্গে কথা বলতে গেলে কাকে টেলিফোন করতে হবে? এই প্রশ্নের কোনো সহজ জবাব না থাকলেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিগত কয়েক দশকে ক্ষমতার বণ্টন ও ভারসাম্যের ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রসর হয়েছে৷ পার্লামেন্ট, কমিশন ও সদস্য দেশের সরকারগুলির পরিষদ এই ক্ষমতা ভাগ করে নেয়৷
সেই ক্ষমতাকেন্দ্রে এখন চলছে রদবদলের পালা৷ গত মাসেই ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ এবার ব্রাসেলসে ইইউ কমিশনসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদগুলিতে নতুন মুখ আসতে চলেছে৷ একদিকে সদস্য রাষ্ট্রগুলির সরকার, অন্যদিকে ইইউ পার্লামেন্টের সদস্যদের অনুমোদন ছাড়া কোনো প্রার্থী এই সব পদে আসতে পারবেন না৷ সাধারণত বিভিন্ন রাজনৈতিক শিবিরের মধ্যে ঐকমত্যের ভিত্তিতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে থাকে৷ এবার তার বদলে জোরালো মতপার্থক্য দেখা যাচ্ছে৷ ফলে বৃহস্পতিবার ব্রাসেলসে ইইউ শীর্ষ সম্মেলনে উপস্থিত নেতারা কোনো অগ্রগতি ছাড়া খালি হাতেই দেশে ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন৷ আগামী কয়েক দিনে ঐকমত্য অর্জনের চেষ্টা চালিয়ে আগামী ৩০শে জুন তাঁরা আবার মিলিত হবেন৷ আগামী ২রা জুলাই নবনির্বাচিত ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশনের আগেই বিষয়টির নিষ্পত্তি করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে৷
সবচেয়ে বড় সমস্যা দেখা যাচ্ছে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট পদকে ঘিরে৷ নতুন নেতাকে ব্রেক্সিট, ইইউ বাজেট, জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা ইত্যাদি নানা বিষয়ের নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হবে৷ তাই জঁ ক্লোদ ইয়ুংকারের মতো বহু ভাষায় পারদর্শী, পোড় খাওয়া রাজনীতিকের বিদায়ের পর কে এই পদে আসীন হবেন, তা নিয়ে বেশ টানাপড়েন চলছে৷ পার্লামেন্ট নির্বাচনে দুর্বল হয়ে পড়লেও রক্ষণশীল শিবির এখনো সংখ্যাগরিষ্ঠতা বজায় রাখতে পেরেছে৷ তা সত্ত্বেও তাদের প্রার্থী জার্মানির মানফ্রেড ভেবার যথেষ্ট সমর্থন আদায় করতে ব্যর্থ হয়েছেন৷ জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল বৃহস্পতিবারের পর এ বিষয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে৷ সমালোচকদের মতে, দেশের পর ইউরোপীয় স্তরেও তাঁর নেতৃত্ব দুর্বল হয়ে পড়ছে৷ সমাজতন্ত্রী ও উদারপন্থি শিবিরের দুই প্রার্থী এখনো প্রতিযোগিতা থেকে বিদায় নিতে প্রস্তুত নন৷
বর্তমান অচলাবস্থার জন্য অনেকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ-কে দায়ী করছেন৷ কারণ তিনি প্রার্থী বাছাইয়ের বর্তমান প্রক্রিয়া বাতিল করতে বদ্ধপরিকর৷ রাজনৈতিক শিবিরগুলির প্রার্থীর বদলে তিনি দক্ষতার ভিত্তিতে প্রার্থী বাছাইয়ের পক্ষে৷ আগামী ১০ দিনের মধ্যে এমন প্রার্থী খোঁজা সম্ভব হবে বলেও তাঁর বিশ্বাস৷ সরকার বা প্রশাসনে কোনো অভিজ্ঞতা না থাকায় মাক্রোঁ মানফ্রেড ভেবার-এর প্রার্থিতার বিরোধিতা করছেন৷
ইইউ কমিশন প্রেসিডেন্টের পদ নিয়ে ঐকমত্য অর্জন করা সম্ভব হলে অন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদের জন্যও নাম চূড়ান্ত করতে হবে৷ পররাষ্ট্র বিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তা, ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট এবং ইইউ সদস্য দেশের সরকারগুলির পরিষদের প্রধানের পদেও নতুন মুখ আসতে চলেছে৷ সব রাজনৈকিক শিবির ও সরকারের মধ্যে বোঝাপড়ার মাধ্যমে তাঁদের নাম চূড়ান্ত হবে৷ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের অনুমোদন পেলে তবেই তাঁরা কার্যভার গ্রহণ করতে পারবেন৷
সবার জন্য ইউরোপ: ইইউ নির্বাচনের আগে গর্বিত ইউরোপীয়দের সমাবেশ
আগামী ২৩ থেকে ২৬ মে অবধি অনুষ্ঠিতব্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর নির্বাচনের আগে জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন শহরে সমবেত হয়েছেন অনেক মানুষ৷ উদ্দেশ্য ইইউ’র প্রতি সমর্থন জানানো৷
ছবি: Getty Images/T. Lohnes
সবার জন্য একটি ইউরোপ
‘সবার জন্য একটি ইউরোপ’ শিরোনামে জার্মানির রাজধানী বার্লিনে রবিবার জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ ব্রেক্সিটের পর জার্মানির ঐতিহাসিক রাজধানীটি হবে ইইউ’র সবচেয়ে বড় শহর, যেখানে বিদেশি বংশোদ্ভূত অনেক মানুষ বসবাস করেন৷ তাঁদের অধিকাংশই এসেছেন ইইউভুক্ত দেশ, বিশেষ করে পোল্যান্ড, ইটালি, ফ্রান্স এবং ক্রোয়েশিয়া থেকে৷
ছবি: Getty images/AFP/O. Messinger
রাজপথে হাজার হাজার মানুষ
রবিবার সকালে বার্লিন মার্চে অংশ নিতে আগে থেকেই নিবন্ধন করিয়েছিলেন তিন হাজারের মতো মানুষ৷ ইউরোপীয় সংসদের ৭৫১টি আসনের মধ্যে জার্মানিতে নির্বাচিত সংসদ সদস্যের সংখ্যা ৯৬, যা ব্লকটির মধ্যে একক কোনো দেশের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সংখ্যা৷
ছবি: Getty images/AFP/O. Messinger
ইউরোপের পক্ষে ফ্রাঙ্কফুর্ট
ফ্রাঙ্কফুর্টে অবস্থিত ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘সিটে’ ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষে সমর্থন জানাতে শহরটিতে কয়েক হাজার মানুষ মিছিল করেছেন৷ সেখানে পরিবেশবাদী বিভিন্ন গোষ্ঠীর পাশাপাশি রাজনৈতিক দল, গির্জা সংগঠন এবং নারী অধিকার অ্যাক্টিভিস্টদেরও দেখা গেছে৷
ছবি: Getty Images/T. Lohnes
কোলনে সমবেত ৪৫,০০০ মানুষ
কোলনে ‘সবার জন্য একটি ইউরোপ’ সমাবেশ ৪৫,০০০-এর মতো মানুষ অংশ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা৷ অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে জার্মানির সামাজিক গণতন্ত্রী দল (এসপিডি)-র শীর্ষনেতা আন্দ্রেয়া নালেস এবং জার্মান বিচারমন্ত্রী কাটারিনা বার্লের মতো বড় মাপের রাজনীতিবিদরাও ছিলেন৷
ছবি: DW/R.Staudenmaier
‘ইউরোপকে উদ্ধার করুন’
কোলনের ব়্যালিতে ‘ইউরোপীয় শান্তি প্রকল্পকে উদ্ধার করুন’ শীর্ষক ব্যানারও দেখা গেছে৷ অনেক ইউরোপীয় এ কারণে উদ্বিগ্ন যে জার্মানির উগ্র ডানপন্থি এএফডি দলের মতো রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনি ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে ইউরোপবিরোধী অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে পারে যেমনটা যুক্তরাজ্যে ব্রেক্সিটের সমর্থকরা করেছেন৷
ছবি: Reuters/T. Schmuelgen
‘স্ট্রাখে, আপনি নব্য নাৎসি’
অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনাতে ইউরোপের পক্ষে সমাবেশ করেছেন কয়েক হাজার মানুষ৷ তাঁরা দুর্নীতির দায়ে সদ্য পদত্যাগ করা দেশটির উগ্র ডানপন্থি ভাইস চ্যান্সেলর হাইন্স ক্রিস্টিয়ান স্ট্রাখেকে ‘নব্য নাৎসি’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন৷ অস্ট্রিয়ায় ১৯৫৬ সালে প্রাক্তন নাৎসিদের তৈরি উগ্র ডানপন্থি দল ফ্রিডম পার্টি ২০১৭ সালের অক্টোবর থেকে ক্ষমতাসীন জোটের অংশ হিসেবে দেশটি শাসন করছে৷
ছবি: picture-alliance/PA/picturedesk/H. P. Oczeret
বর্ণবাদের বিরুদ্ধে অস্ট্রীয়রা
অস্ট্রিয়ার ক্ষমতাসীন জোটের বিরুদ্ধে ইউরোপন্থিদের যেসব অভিযোগ রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ইউরোপের বাইরে থেকে আসা অভিবাসীদের কমাতে নানারকম উদ্যোগ নিয়েছে জোটটি৷ ইউরোপের অন্যান্য কয়েকটি দেশের উগ্র ডানপন্থি দলগুলোকেও সাহস জোগাচ্ছে তারা৷
ছবি: Reuters/L. Niesner
ইউরোপের মধ্যে পোল্যান্ড
ইইউ সদস্যভুক্ত দেশ ইটালি, স্পেন, নেদারল্যান্ডস, এবং পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশ’তেও ব়্যালি দেখা গেছে৷ বিচার ব্যবস্থায় বিতর্কিত এক সংস্কার নিয়ে দেশটির সঙ্গে, যেখানে ক্ষমতায় রয়েছে ডানপস্থি জাতীয়তাবাদী দল, ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক আইনি লড়াই চলছে এখন৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Skarzynski
ইইউ’র প্রেসিডেন্ট থেকে পোলিশ প্রেসিডেন্ট?
ইইউ কাউন্সিলের বর্তমান প্রেসেডেন্ট ডোনাল্ড টুস্ক নিজের দেশ পোল্যান্ডে ব়্যালিতে অংশ নিয়েছিলেন৷ পোল্যান্ডের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর কাউন্সিল প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব শেষ হবে ডিসেম্বর মাসে এবং ধারণা করা হচ্ছে যে, তিনি ২০২০ সালে পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট পদের জন্য লড়বেন৷