২০১৩ সালের প্রথমার্ধে ইউরো এলাকায় সংকট কাটার বদলে অনেক ক্ষেত্রে আরও তীব্র হয়েছে৷ কিন্তু জুলাই মাসের শুরুতেই কিছু সুখবর আসায় ক্ষীণ আশার আলো দেখা যাচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
বছরের দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই সোমবার পুঁজিবাজার বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠেছিল৷ তবে বছরের বাকি সময় জুড়েও ইউরোপ এই প্রবণতা ধরে রাখতে পারবে কি না, তা বলা কঠিন৷ ইউরোপে উৎপাদন আবার বাড়তে শুরু করেছে৷ সোমবার এ সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পর ইউরোর বিনিময় মূল্য কিছুটা বেড়ে গেছে৷ বিশেষ করে স্পেন, ইটালি ও ফ্রান্সের মতো দুর্বল দেশে উন্নতির ফলে বাজারও উৎসাহ পাচ্ছে৷ তবে চরম বেকারত্বের হার আগের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে৷ মে মাসে ইউরো এলাকায় বেকারত্বের হার ছিল ১২ দশমিক ১ শতাংশ৷ জুন মাসে সেখানে মূল্যস্ফীতিও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৬ শতাংশ৷
ইউরোপের যা কিছু নজর কাড়ে
ইউরোপের সাংস্কৃতিক জীবনের নানা দিকের ব়্যাংকিং হচ্ছে ‘ইউরোপ লিস্ট’৷ জার্মানির গ্যোটে ইন্সটিটিউট ৩০টি দেশের ২২ হাজার মানুষের মতামতের ভিত্তিতে তৈরি করেছে এই তালিকা৷ এখানে তার সারাংশ উপস্থাপন করা হলো৷
ছবি: Fotolia
গণতন্ত্র, দ্য ভিঞ্চি, ডন কিখোটে
ইউরোপীয়দের মধ্যে যোগসূত্র কি? এই মহাদেশের সেরা শিল্পী কে? কোন দেশের রান্নার সবচেয়ে সেরা? জার্মানির গ্যোটে ইন্সটিটিউট তাদের ‘ইউরোপ লিস্ট’ তৈরির ক্ষেত্রে এই প্রশ্নগুলো বেছে নিয়েছে৷ ৩০টি দেশের এবং ২৪টি ভাষার ২২ হাজার মানুষ এই সমীক্ষায় অংশ নিয়েছেন৷ অনলাইন সমীক্ষায় সবচেয়ে বেশি সমর্থন পেয়েছে: গণতন্ত্র, ডন কিখোটে এবং দ্য ভিঞ্চি৷
ছবি: Fotolia
সংস্কৃতির মাধ্যমে সংযোগ
‘সংস্কৃতি’ হচ্ছে ইউরোপীয়দের মধ্যকার সংযোগসূত্র – সমীক্ষায় অংশ নেওয়া অধিকাংশ মানুষ এমনটাই মত দিয়েছেন৷ ‘কমিউনিটি’ এবং ‘ভ্রমণের স্বাধীনতাও’ তালিকার উপরের দিকে রয়েছে৷ বিশ্বের সংস্কৃতিতে ইউরোপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান হচ্ছে গণতন্ত্র, মনে করেন সমীক্ষায় অংশ নেওয়ারা৷
ছবি: Marco Caselli Nirmal
বিদেশের চোখে
সমীক্ষায় শুধু ইউরোপীয়দের প্রশ্ন করা হয়নি৷ ২৯৪ জনের মতো মিশরীয় এই অনলাইন সমীক্ষায় অংশ নিয়েছেন৷ তাদের মধ্যে ৬৩ শতাংশ জানিয়েছেন, ইউরোপে বসবাসের সুযোগ পেলে সবার আগে জার্মানিকে বেছে নেবেন তারা৷
ছবি: Reuters
আইফেল টাওয়ার
মিশরীয়দের মতে ইউরোপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্য হচ্ছে আইফেল টাওয়ার৷ জরিপে অংশ নেওয়াদের ২৫ শতাংশই এটির পক্ষে ভোট দিয়েছেন৷ তবে জাতিভেদে গ্রিক, ইটালীয় এবং ফরাসিরা তাদের নিজস্ব স্থাপনার পক্ষেও অবস্থান নিয়েছেন৷
ছবি: Loic Venance/AFP/GettyImages
‘লাইফ ইজ বিউটিফুল’
ইউরোপের সেরা ছবি বাছাইয়ের কাজটি বেশ দুরূহ৷ ইটালীয় ছবি ‘লাইফ ইজ বিউটিফুল’ এক্ষেত্রে আট শতাংশ ভোট পেয়ে সেরার আসনটি জয় করেছে৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালে একটি ইহুদি পরিবারের অবস্থা নিয়ে তৈরি হয়েছে ছবিটি৷ জার্মান ছবি ‘দ্য লাইভস অফ আদারস’ এক্ষেত্রে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘মোনালিসা’
সমীক্ষায় ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিল্পী’ বিভাগে ২৫ শতাংশ ভোট পেয়েছেন লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি (১৪৫২-১৫১৯)৷ তিনি ছিলেন একাধারে চিত্রশিল্পী, ভাস্কর, স্থাপত্যবিদ, শরীরতত্ত্ববিদ এবং প্রকৌশলী৷ ‘মোনালিসা’ ছবিরি সৃজনকর্তা দ্য ভিঞ্চি৷
ছবি: Getty Images
ডন কিখোটে
গ্যোটে ইন্সটিটিউটের সমীক্ষায় সাহিত্যের ক্ষেত্রে সবার শীর্ষে রয়েছে স্পেন৷ সাহিত্যিক মিগুয়েল দে কেরভান্তেস-এর লেখা ‘ডন কিখোটে’ বইটির প্রতি আগ্রহ দেখেয়েছেন সমীক্ষায় অংশ নেওয়া অনেকে৷
ছবি: Getty Images/Afp/Str
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিবিদ
‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিবিদ’ বিভাগের ফলাফল অনেক বিস্মিত করতে পারে৷ অতীতের নন বরং এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন বর্তমান জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ সমীক্ষায় অংশ নেওয়াদের ১৮ শতাংশ তাঁকে ভোট দিয়েছেন৷ তারপরেই আছেন ইংরেজ রাজনীতিবিদ উইন্সটন চার্চিল, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অ্যাডল্ফ হিটলারের কাছ থেকে ব্রিটেনকে রক্ষা করেছিলেন৷
ছবি: AFP/Getty Images
সেরা ক্রীড়াবিদ
সার্বিয়ার টেনিস খেলোয়াড় নোভাক জোকোভিচ ইউরোপের শ্রেষ্ঠ ক্রীড়াবিদ হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন৷ সমীক্ষায় অংশ নেওয়া সার্বদের মধ্য থেকে ৭২ শতাংশ তাঁকে ভোট দিয়েছেন৷ ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০১২ সালের জুলাই অবধি এটিপি বিশ্ব ব়্যাংকিংয়ে ১ নম্বরে ছিলেন জোকোভিচ৷ জার্মানির ফর্মুলা ওয়ান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন মিশায়েল শুমাখার এক্ষেত্রে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন৷
ছবি: Getty Images
ইউরোপের বিষয়ে আলোচনা
গ্যাটো ইন্সটিটিউট, ব্রাসেলস-এর পরিচালক বার্থল্ড ফ্রাঙ্কের মতে, ‘‘এই সমীক্ষার মাধ্যমে ইউরোপের সাংস্কৃতিক পরিচয়কে একটি নতুন এবং ভিন্ন আঙ্গিকে বিবেচনা করা হয়েছে৷’’ ভবিষ্যতে এই ‘ইউরোপ লিস্ট’ বিষয়ে গণ্যমান্য ব্যক্তিরা টেলিভিশন এবং ওয়েবসাইটে আলোচনা অংশ নেবেন৷
ছবি: Fotolia
10 ছবি1 | 10
ইউরো এলাকায় চরম বেকারত্বের সমস্যা মোকাবিলা করতে কিছু উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে৷ বুধবার জার্মানির রাজধানী বার্লিনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের শ্রমমন্ত্রীদের এক বৈঠক বসছে৷ চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল নিজে সেই বৈঠক ডেকেছেন৷ বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে বেকারত্ব থেকে উদ্ধার করার কৌশল স্থির করবেন তাঁরা৷ গত সপ্তাহে ইইউ শীর্ষ সম্মেলনে ৬০০ কোটি ইউরো ব্যয় করে এই সমস্যার মোকাবিলার উদ্যোগ শুরু হয়েছে৷ তবে সমালোচকদের আশঙ্কা, এমন বিচ্ছিন্ন উদ্যোগে তেমন কোনো কাজ হবে না৷ আসলে সেই পুরানো বিতর্কই আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে৷ একদল চায়, অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সরকারি পর্যায়ে বাড়তি ব্যয় করা হোক, যাকে স্টিমুলাস বলা হয়৷ বাকিরা ব্যয়-সংকোচন ও সংস্কার চালিয়ে যেতে চায়৷ তাদের যুক্তি, একমাত্র এভাবেই স্থায়ী সমাধান সম্ভব৷ আপাতত সবার নজর বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক-এর ঘোষণার দিকে৷ সুদের হারে হেরফের হলে অর্থনীতির উপর তার প্রভাব পড়বে৷
ইউরোপের সংকটগ্রস্ত দেশগুলির বর্তমান অবস্থায় সার্বিকভাবে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে৷ যেমন পর পর চার মাস ধরে স্পেনে বেকারত্বের হার কমে চলেছে৷ উৎপাদন বাড়ার ফলে আশার আলো দেখা যাচ্ছে৷ দেখা যাচ্ছে পর্যটনের ক্ষেত্রে উন্নতিও৷ শুধু তাই নয়, ইটালির জোট সরকারে সংস্কারের গতি নিয়ে দেখা যাচ্ছে মতপার্থক্য৷ বৃহস্পতিবার এক বৈঠকে তা দূর করতে চান প্রধানমন্ত্রী এনরিকো লেটা৷
এদিকে সংস্কারের ক্ষেত্রে গ্রিসের সরকার কিছু অগ্রগতি দেখালেও তাদের কিছু ব্যর্থতা নিয়ে সমস্যা রয়েছে৷ সোমবার ইউরোগ্রুপের এক আলোচনায় গ্রিসকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়৷ পরবর্তী কিস্তির আন্তর্জাতিক সহায়তা পেতে হলে আগামী শুক্রবারের মধ্যে গ্রিসকে কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷