ইউক্রেন সংকটের জের ধরে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের অবনতিসহ বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকেটর বেশ বড় রকমের প্রভাব পড়ছে ইউরোজোনের উপরেও৷ ফলে ইউরোপের অর্থনীতি অন্তত এ মুহূর্তে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না৷
বিজ্ঞাপন
চলমান আন্তর্জাতিক ঘটনাপ্রবাহ ইউরো এলাকার অর্থনীতির উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলছে৷ মন্দা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে বৈদেশিক বাণিজ্যের উপর নির্ভরতা ইউরো এলাকার জন্য মোটেই সুখকর হচ্ছে না৷ ইউক্রেন সংকটের ফলে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির ঘটনা কয়েক মাস আগেও অনুমান করা যায়নি৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক ও কয়েকটি উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তিধর দেশে চাহিদা কমে যাওয়ার ফলেও ইউরো এলাকা রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারছে না৷ শুধু ব্রিটেন ও চীনে ইউরোপ থেকে রপ্তানি কিছুটা বেড়েছে৷ ইউরোর উচ্চ বিনিময় মূল্যকেও রপ্তানির পথে অন্তরায় হিসেবে দায়ী করছে ব্যবসায়ী মহল ও কিছু দেশের সরকার৷
ইউক্রেনে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব
তুমুল বিক্ষোভ চলছে ইউক্রেনে৷ সরকার ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ-র সঙ্গে একটি বাণিজ্য ও সহযোগিতা চুক্তি করতে অস্বীকৃতি জানানোর পর, রাস্তায় নেমে আসে বিরোধী দলের হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ সমর্থক৷
ছবি: Reuters
ইউরোপীয় ভবিষ্যতের জন্য লড়াই
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর সঙ্গে একটি বাণিজ্য ও সহযোগিতা চুক্তি করতে সরকার অস্বীকৃতি জানানোর পর থেকে ইউক্রেনে চলছে তুমুল বিক্ষোভ৷ বিক্ষোভকারীরা ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে সরে সরকারের রাশিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়ার প্রবণতা রুখতে বদ্ধপরিকর৷ দাবি আদায়ের লক্ষ্যে হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ জনতা নেমে এসেছে রাস্তায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সড়ক অবরোধ
সরকারি কর্মকর্তারা যাতে কার্যালয়ে যেতে না পারেন, সে জন্য কিয়েভের রাস্তা বন্ধ করে দিচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা৷ প্রচণ্ড শীতে রাতেও বিক্ষোভ জানাচ্ছেন বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা৷
ছবি: Reuters
ইনডিপেনডেন্ট স্কয়্যারে তাঁবুর শহর
কিয়েভের ইনডিপেনডেন্ট স্কয়্যারে এখন শত শত তাঁবু৷ শীতের কষ্ট সহ্য করে সেখানেই থাকছেন অনেকে৷ সারি সারি তাঁবু নয় বছর আগের কমলা বিপ্লবের কথা মনে করিয়ে দেয়৷সেবার কয়েক সপ্তাহ ধরে চলেছিল বিক্ষোভ৷ বিক্ষোভকারীরা এবারও শেষ দেখেই ঘরে ফিরতে চান৷
ছবি: DW/A. Sawizki
চা, কফি আর ইন্টারনেট
বিক্ষোভকারীদের সুবিধার্থে ক্যাফে আর বারগুলো থাকছে খোলা৷ শীতে জমে যাওয়ার উপক্রম হলেই তাঁরা পান করতে পারছেন চা, কফি কিংবা অন্য কোনো পানীয়৷ কোনো কোনো ক্যাফে আর বার-এ বিক্ষাভকারীদের থাকা এবং ওয়াইফাই-এ ইন্টারনেট ব্যবহারের ব্যবস্থাও রয়েছে৷
ছবি: DW/A. Sawizki
গীর্জায় আশ্রয়
সপ্তাহান্তে সবচেয়ে বেশি বিক্ষোভকারীর সমাবেশ হয়েছিল কিয়েভের সেইন্ট মাইকেল’স ক্যাথেড্রালের সামনে৷ সেখানেই রাত কাটিয়েছেন তাঁরা৷ অন্য গীর্জাগুলোও বিক্ষোভকারীদের আশ্রয় দেয়ার জন্য খোলা রাখা হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কে বেশি আগ্রাসী?
বিক্ষোভকারী আর পুলিশের মধ্যে এখন ব্যাপক উত্তেজনা৷ পুলিশ সংসদ ভবনের সামনের রাস্তা মুক্ত করার চেষ্টা করায় শুরু হয়ে যায় সংঘর্ষ৷ সপ্তাহান্তের এ সংঘর্ষে অনেকে আহত হন৷
ছবি: Reuters
‘আর নয় পুলিশি সন্ত্রাস’
পুলিশের বাধার প্রতিবাদ জানাতে একসময় বিক্ষোভকারীরা হাতে তুলে নেন ব্যানার, সেখানে লেখা ছিল, ‘আর নয় পুলিশি সন্ত্রাস’, ‘নিরাপত্তা বাহিনী আমাদের পুতে ফেলবে৷’
ছবি: DW/L. Grischko
ন্যাটোর সমালোচনা
বিক্ষোভকারীদের ওপর সরকারের অতিরিক্ত বল প্রয়োগের সমালোচনা করে বিবৃতি দিয়েছে ন্যাটো৷ রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ আবার সেই বিবৃতির সমালোচনা করে বলেছেন, ন্যাটোর বিবৃতি ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল৷ লাভরভ মনে করেন, বিক্ষোভকারীদের আগ্রাসী আচরণের মাত্রা না বুঝে এ বিবৃতি দেয়া হয়েছে৷
ছবি: GENYA SAVILOV/AFP/Getty Images
সরকারের অনাস্থা ভোট জয়
মিকোলা আজারভ সরকারের জনপ্রিয়তা অনেকটা কমে গেলেও সংসদে বিরোধী দলের তোলা অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে যে ভোটাভুটি হয়েছিল, তাতে তারা জয়ী হয়েছে৷ বিরোধী দল ২২৬ ভোট পেলে বিপদ হতো, কিন্তু সব মিলিয়ে ১৮৬ ভোট পাওয়ায় তাৎক্ষণিক বড় বিপর্যয় এড়াতে পেরেছে সরকার৷
ছবি: Reuters
শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রয়াস
কাউন্সিল অফ ইউরোপ, অর্থাৎ ইউরোপীয় পরিষদ এখন ইউক্রেনের ইউরোপপন্থি বিরোধী দল এবং সরকারের মধ্যে শান্তি ফেরানোর জন্য মধ্যস্ততা করার চেষ্টা করছে৷
ছবি: Reuters
10 ছবি1 | 10
এদিকে ইউরো এলাকার চালিকা শক্তি বলে পরিচিত জার্মানির কেন্দ্রীয় ব্যাংক সোমবার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে৷ তাদের মতে, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির কারণে বর্তমানে জার্মান অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷ তবে এই কালো ছায়া কেটে যাবে বলে আশা করছে বুন্ডেসবাংক৷ চলতি বছরে জার্মানিতে ১.৯ শতাংশ এবং ২০১৫ সালে ২ দশমিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাষ দিয়েছে তারা৷ উল্লেখ্য, ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান মারিও দ্রাগিও সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সংকটগুলি সম্পর্কে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেন৷
প্রয়োজনীয় সংস্কার চালিয়ে পর পর চারটি কোয়ার্টার বা প্রায় এক বছর ধরে ধীরে হলেও মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছিলো গ্রিস সহ ইউরো এলাকার সংকটগ্রস্ত দেশগুলি৷ বর্তমান আন্তর্জাতিক সংকটের ফলে তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷ তবে আগের মতো আর্থিক ও অর্থনৈতিক সংকটের কারণ দেখছেন না বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ৷ অর্থাৎ মন্দার আশঙ্কা আপাতত নেই৷ ইটালি ও ফ্রান্স সংস্কারের ক্ষেত্রে যে শিথিল মনোভাব দেখাচ্ছে, তা কেটে গেলেও ইউরো এলাকার উপকার হবে৷ এই দুই দেশই এই মুহূর্তে ইউরোজোনের সবচেয়ে বড় মাথাব্যথার কারণ৷
এই অবস্থায় সোমবার ইউরোপের পুঁজিবাজার বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠেছিল৷ ইউক্রেন ও ইরাক সংকট কিছুটা শান্ত থাকায় বাজার আবার আশ্বস্ত হয়েছে৷ তবে রাশিয়া ও ইউরোপ পরস্পরের উপর যে নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে, তার কুফল দেখা যাচ্ছে অর্থনীতির উপর৷ গত জুন মাসেই রপ্তানির হার কিছুটা কমে গেছে৷ শুক্রবার ইউরো-র বিনিময় মূল্যও কিছুটা পড়ে গেছে৷