সিগমার গাব্রিয়েল/ডেভিড মিলিব্যান্ড/এসি৫ অক্টোবর ২০১৫
জাতিসংঘ সিরিয়ার উদ্বাস্তুদের জন্য যে অর্থ চায়, তার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশের বেশি এ যাবৎ পাওয়া যায়নি৷ কাজেই উদ্বাস্তুদের জন্য খাদ্য ও ওষুধপত্রে টান পড়তে পারে৷ এভাবে চলতে পারে না, লিখছেন সিগমার গাব্রিয়েল ও ডেভিড মিলিব্যান্ড৷
বিজ্ঞাপন
ইউরোপীয়, অ্যামেরিকান ও আরব দেশগুলির একটি সত্বর দান প্রকল্পের প্রয়োজন, যা-তে যে সব প্রতিষ্ঠান অকুস্থলে উদ্বাস্তুদের সাহায্য করছে, তাদের অর্থ সঙ্কুলান হতে পারে৷ এছাড়া আন্তর্জাতিক দাতা সম্মেলনগুলিকেও সক্রিয় হতে হবে, যা-তে সংশ্লিষ্ট এলাকায় পুনর্নির্মাণ ও পুঁজিবিনিয়োগের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনাকে সাহায্য করা যেতে পারে৷
নিরাপদে ইউরোপে আসার পথ খোলা দরকার
সেই সঙ্গে আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে, উদ্বাস্তুরা নিরাপদ, বৈধ উপায়ে ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ক্যানাডার মতো অপরাপর শিল্পোন্নত দেশে আসতে পারেন৷ বিভিন্ন পুনর্বাসন প্রকল্প, নির্দ্দিষ্ট কোটা, পরিবারের লোকজনের পরে আসার ব্যবস্থা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থাকলে উদ্বাস্তুরা মানুষ পাচারকারীদের হাতে গিয়ে পড়বেন না এবং শোষণ, ব্ল্যাকমেল, নিপীড়ন অথবা যৌন নিপীড়ন থেকে বাঁচবেন৷
কিছু কিছু দেশ মানবিক বিচারে বাস্তবিক নেতৃত্ব দেবার ক্ষমতা প্রদর্শন করেছে, কেননা তারা দীর্ঘমেয়াদি সূত্রে বিপুল সংখ্যক উদ্বাস্তুকে আশ্রয় দেবার প্রস্তুতি ঘোষণা করেছে৷ সেপ্টেম্বরের একটি সপ্তাহান্তে জার্মানিতে যত উদ্বাস্তু এসে পৌঁছেছেন, ব্রিটেন আগামী পাঁচ বছরে তার চেয়ে কম উদ্বাস্তু নিতে রাজি৷ ইউরোপীয় সরকারপ্রধানদের তরফে অধিকতর সমন্বয় ও ন্যায্য ভারবণ্টনের প্রয়োজন৷
কার্যকরিভাবে এই সংকটের মোকাবিলা করার জন্য, যে সব উদ্বাস্তুরা ইতিমধ্যেই ইউরোপে এসে পৌঁছেছেন, তাঁদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করা প্রয়োজন৷ এখানেও ইউরোপীয় দেশগুলির কিছু জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত৷
প্রথমেই নিশ্চিত করতে হবে যে, উদ্বাস্তুরা ইউরোপে আসার পর তাদের সহৃদয়তা ও মানবিক মর্যাদার সঙ্গে অভ্যর্থনা জানানো হচ্ছে৷ দক্ষিণ ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বহির্সীমান্তে একটি কার্যকরি ও সমন্বয়কৃত অভিযান চালু করার জন্য ব্রাসেলস থেকে প্রয়োজনীয় আর্থিক ও ব্যবহারিক সাহায্য দিতে হবে৷ এর অর্থ, আগত উদ্বাস্তুরা খাদ্য ও ওষুধপত্র পাবেন; তাঁদের নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হবে; আসার পর পরই তাঁরা শৌচালয়, স্নানাগার ইত্যাদি ব্যবহারের সুযোগ পাবেন৷
দায়িত্ব ভাগ করে নাও, কিন্তু মান একই থাকবে
ভূমধ্যসাগরের উপকূলবর্তী দেশগুলির একমাত্র সমস্যা যে এই উদ্বাস্তু সংকট, এই ভ্রান্ত ধারণাটিকে বিদায় দেওয়া দরকার৷ এ বছর গ্রিসে প্রায় দু'লাখ পঁয়তাল্লিশ হাজার উদ্বাস্তু পৌঁছেছেন; বড়দিন অবধি আরো দু'লক্ষ উদ্বাস্তু গ্রিসে আসবেন, বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে৷ কিন্তু ইইউ-এর সদস্যদেশগুলি এ যাবৎ গ্রিস ও ইটালি থেকে শুধুমাত্র এক লক্ষ বিশ হাজার উদ্বাস্তু নেওয়া সম্পর্কে একমত হতে পেরেছে৷ এই পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটানো দরকার৷ ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জঁ-ক্লোদ ইয়ুংকার যে পরিকল্পনা দিয়েছেন, তা উদ্বাস্তু বণ্টনের নির্দিষ্ট কোটা পদ্ধতিতে উত্তরণের একটা পন্থা হতে পারে৷
সবচেয়ে কম শরণার্থী নেবে মাল্টা, সবচেয়ে বেশি জার্মানি
১ লাখ ২০ হাজার শরণার্থী নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছিল৷ তা কেটে গেছে৷ ভোটাভুটির মাধ্যমে ঠিক হয়েছে এই ১ লাখ ২০ হাজার শরণার্থীকে ভাগ করে নেবে ইইউ-র দেশগুলো৷ এ পর্যায়েও সবচেয়ে বেশি শরণার্থী নেবে জার্মানি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. Zak
জার্মানির স্বস্তি
অনেক শরণার্থী এসেছে জার্মানিতে৷ অথচ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশির ভাগ দেশ শরণার্থী নিতে নারাজ৷ এ অবস্থায় ইইউ-র সব সদস্য দেশকে কোটা অনুযায়ী শরণার্থী নিতে হবে – এমন দাবি জানিয়েছিল জার্মানি৷ মঙ্গলবারের বৈঠকে দাবি পূরণ হয়েছে৷ সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে সিদ্ধান্ত হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার শরণার্থীকে ভাগ করে দেয়া হবে৷ জার্মানি নেবে ৩১ হাজার ৪৪৩ জন৷ বছর শেষে জার্মানিতে আগত মোট শরণার্থী ৮ লাখে হয়ে যেতে পারে৷
ছবি: Reuters/O. Orsal
জার্মানির পরই ফ্রান্স
কোটা অনুযায়ী শরণার্থী বণ্টনের দাবিতে ফ্রান্সও ছিল জার্মানির সঙ্গে৷ মঙ্গলবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শরণার্থীর চাপটা তাদের ওপরও খুব কম পড়বে না৷ এই দফায় ২৪ হাজার ৩১ জন শরণার্থী নেবে ফ্রান্স৷ছবিতে হাঙ্গেরি সীমান্তের এক শরণার্থী শিশু৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Nimani
চারটি দেশের ঘোর আপত্তি
পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো শুরু থেকেই শরণার্থী নেয়ার বিপক্ষে৷ মঙ্গলবার হাঙ্গেরি, রোমানিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র ও স্লোভাকিয়া শরণার্থী নেয়ার বিপক্ষে ভোট দেয়৷ ভোটের পর চেক প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী বহুস্লাভ সবটকা বলেন, ‘‘এটা খুবই খারাপ সিদ্ধান্ত৷’’ সরাসরি আপত্তি জানালেও এখন রোমানিয়া ৪ হাজার ৬৪৬ জন, চেক প্রজাতন্ত্র ২ হাজার ৯৭৮ জন এবং স্লোভাকিয়া ১ হাজার ৫০২ জন শরণার্থী নেবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Dospiva
দায়িত্ব মনে করে শরণার্থী নেবে লুক্সেমবুর্গ
৫ লক্ষ ৬২ হাজার জনসংখ্যার দেশ লুক্সেমবুর্গও শরণার্থী নেবে৷ ছোট দেশ তাই মাত্র ৪৪০ জন নেবে তারা৷ তবে দেশটির সরকার মনে করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ঐক্য ধরে রাখতে সব সদস্য দেশের শরণার্থী নেয়াটা এখন কর্তব্যের পর্যায়ে পড়ে৷ এমনিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নে ছোট দেশটির এখন বড় ভূমিকা পালন করাই স্বাভাবিক, কেননা, এ মুহূর্তে ইইউর সভাপতি দেশও লুক্সেমবুর্গ৷
ছবি: AP
সবচেয়ে কম শরণার্থী নেবে মাল্টা
ইইউ অঞ্চলের আরেক ছোট দেশ মাল্টা৷ আয়তন মাত্র ৩১৬ বর্গ কিলোমিটার আর জনসংখ্যা ৪৪ হাজারের একটু বেশি৷ এমন ছোট দেশটিও ১৩৩ জন শরণার্থী নেবে৷
ছবি: picture alliance /Robert Harding
আর যেসব দেশ শরণার্থী নেবে
ইইউ-র আরো কয়েকটি দেশও শরণার্থী নেবে৷ স্পেন নেবে ১৪ হাজার ৯৩১ জন, পোল্যান্ড ৯ হাজার ২৮৭ জন, নেদারল্যান্ডস ৭ হাজার ২১৪ জন, বেলজিয়াম ৪ হাজার ৫৬৪ জন, সুইডেন ৪ হাজার ৪৬৮ জন, অস্ট্রিয়া ৩ হাজার ৬৪০ জন, পর্তুগাল ৩ হাজার ৭৪ জন, ফিনল্যান্ড ২ হাজার ৩৮৮ জন, বুলগেরিয়া ১৬০০ জন, ক্রোয়েশিয়া ১ হাজার ৬৪ জন, লিথুয়ানিয়া ৭৮০ জন, স্লোভেনিয়া ৬৩১ জন, লাটভিয়া ৫২৬ জন, এস্তোনিয়া ৩৭৩ এবং সাইপ্রাস নেবে ২৭৪ জন শরণার্থী৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. Zak
6 ছবি1 | 6
ইয়ুংকার-এর পরিকল্পনায় সঠিকভাবেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, যাঁদের রাজনৈতিক আশ্রয় পাবার কোনো অধিকার নেই, তাঁদের ফেরৎ পাঠাতে হবে৷
সংহতির সময় এসেছে
এই আয়তনের একটি সংকটের সমাধান করা কোনো দেশের পক্ষে একা সম্ভব নয়, যাবতীয় সদিচ্ছা সত্ত্বেও, খোদ ইউরোপের পক্ষেও নয়৷ একটি বিশ্বব্যাপী সমস্যার একটি বিশ্বব্যাপী সমাধান প্রয়োজন৷ কিন্তু ইউরোপ যদি এই সমস্যার আকার ও আয়তন অনুযায়ী তার নিজের নীতি ও আচরণ নির্ধারণ করে, তাহলে তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, উপসাগরীয় দেশগুলি এবং অপরাপর দেশের প্রতীতি জন্মাতে সাহায্য করবে৷
সিগমার গাব্রিয়েল, ভাইস চ্যান্সেলর, ফেডারাল জার্মান প্রজাতন্ত্র; ফেডারাল অর্থনীতিমন্ত্রী এবং সামাজিক গণতন্ত্রী দলের সভাপতি৷
ডেভিড মিলিব্যান্ড, সাবেক ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী (২০০৭-২০১০); বর্তমানে নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক আন্তর্জাতিক ত্রাণ পরিষদের সভাপতি৷
হাঙ্গেরি সার্বিয়ার সঙ্গে তার সীমান্ত বন্ধ করে দেবার পর তথাকথিত বলকান রুটে উদ্বাস্তুর স্রোত ক্রোয়েশিয়ার দিকে যেতে শুরু করেছে৷ অস্ট্রিয়াও এবার হাঙ্গেরি সীমান্তে বাছাই নিয়ন্ত্রণ চালু করেছে৷
দীর্ঘ পথ
তুরস্কের এডির্নে শহরের কাছে সিরীয় উদ্বাস্তুরা ছোটদের কোলে করে পায়ে হেঁটে চলেছেন গ্রিক সীমান্তের দিকে৷
ছবি: Reuters/O. Orsal
সব বাধা পার হয়ে
গ্রিস আর ম্যাসিডোনিয়ার সীমান্তে গেভগেলিয়া শহরে তারের বেড়ার ধারে এক অভিবাসী শিশু৷ শুধুমাত্র ১৪ই সেপ্টেম্বরের রাত্রেই সাড়ে সাত হাজারের বেশি উদ্বাস্তু ম্যাসিডোনিয়ায় ঢোকেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Atanasovski
প্রবেশ নিষেধ
১৫ই সেপ্টেম্বর থেকে সার্বিয়ার সঙ্গে হাঙ্গেরির সীমান্ত চার মিটার উঁচু কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঢাকা৷ শত শত উদ্বাস্তু সীমান্ত কেন্দ্রে নাম লেখাতে পারেন বটে, আবার ক্ষেত্রবিশেষে বহিষ্কৃতও হতে পারেন৷ বেআইনিভাবে সীমান্ত পার হওয়ার সাজা তিন বছর অবধি কারাদণ্ড, কাঁটাতারের বেড়ার ক্ষতি করলে পাঁচ বছর৷
ছবি: DW/N. Rujević
সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ জোরদার হচ্ছে
অস্ট্রিয়া আর হাঙ্গেরির মধ্যে সীমান্তে অস্ট্রিয়ান তরফে হাইলিগেনক্রয়েৎস শহর৷ মঙ্গলবার রাত্রি থেকেই বাছাইভাবে সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ চালু করার কথা ঘোষণা করে ভিয়েনা সরকার৷ স্লোভেনিয়া, ইটালি এবং স্লোভাকিয়ার সঙ্গে সীমান্তেও নাকি অনুরূপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হতে পারে, বলে জানিয়েছে অস্ট্রিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷
ছবি: dpa
রেলস্টেশনে ভিড়
অস্ট্রিয়ার সালৎসবুর্গ শহরের মুখ্য রেলওয়ে স্টেশনে উদ্বাস্তুরা অপেক্ষা করছেন জার্মানিগামী ট্রেনের৷ রবিবার জার্মানি সাময়িকভাবে অস্ট্রিয়ার সঙ্গে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয় মিউনিখ রেলওয়ে স্টেশন – এবং শহরের উপর উদ্বাস্তু সমাগমের চাপ কমানোর আশায়৷ অবশ্য সোমবার সকালেই তা আবার তুলে নেওয়া হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Gindl
মিউনিখে আরেক যাত্রার শুরু
মিউনিখ শহরের প্রধান রেলওয়ে স্টেশনে পথের খোঁজ দিচ্ছেন পুলিশ কর্মকর্তা৷ ট্রেনের জানলার কাচে যে শিশুমুখ, সে-ই তো ভবিষ্যৎ...
ছবি: DW/M. Gopalakrishnan
বলকান রুট
উদ্বাস্তুর স্রোত এবার ক্রোয়েশিয়া হয়ে উত্তরে যাবার চেষ্টা করবে৷ তাদের গন্তব্য: জার্মানি, নেদারল্যান্ডস কিংবা সুইডেনের মতো কোনো সমৃদ্ধ, স্বাগতিক দেশ৷